এই সুযোগে অপরাধী সিন্ডিকেট ভাঙতে চায় পুলিশ
সরোয়ার আলম ও ইমন রহমান | ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
করোনাভাইরাসের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা। তারা ঘরের বাইরে যেতে না পেরে অনেকটা একঘরে হয়ে আছে। গত এক মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ অর্ধেকে নেমেছে। অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ ও তাদের পুরো সিন্ডিকেট ভাঙতে গত বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। করোনাকে পুঁজি করে যারা পণ্য মজুদের প্রতিযোগিতায় নেমেছে, দ্রুত তাদের তালিকা করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অসুস্থতা ছাড়া পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করণীয় নিয়ে গত বুধবার পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে মজুদদারদের তালিকা করাসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক থেকে এসপিদের সঙ্গে ভিড়িও কনফারেন্সে কথা বলেন আইজিপি। পাশাপাশি ফ্যাক্স বার্তায় রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন র্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, এসবির প্রধান মীর শহীদুল ইসলাম, সিআইডির প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪৪ জন শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৫ জন। করোনা আতঙ্কে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে নেমেছে। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে অপরাধীদের মধ্যেও। তারা বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থেমে নেই। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে কোনো মহল যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে, সে জন্য পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তবে পুলিশের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তারা ছুটি নিতে পারবেন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যে পরিমাণ ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, চলতি মাসে সেই তুলনায় অপরাধ ঘটেনি বললেই চলে। ফাঁকা রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে টহল পুলিশের সজাগ অবস্থান। সকালে মিরপুর মডেল থানা এলাকায় কথা হয় এসআই ইমদাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাজধানী ফাঁকা হয়ে গেছে। আমরা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছি। অপরাধও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈঠকে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে করোনার প্রভাব অপরাধীরাও আড়ালে চলে গেছে বলে জানানো হয়। ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়াযী গত এক মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো ছিল। খুন, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা নেই বললেই চলে। থানায় মামলার সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইজিপি স্যার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন পণ্য মজুদকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের তালিকা দ্রুত করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পরে ওই নির্দেশনাগুলো ডিআইজি ও এসপিদের কাছে কিছু নির্দেশনা ফ্যাক্স বার্তায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে পুলিশের ভয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আইজিপি স্যার বলেছেন, যতকুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। পুলিশ সদস্যদের পিপিই পরে ডিউটি করতে হবে। কোথাও যাতে জনসমাগম না হয়, সেদিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সজাগ থাকতে হবে করোনাভাইরাস নিয়ে। তাকে সাবধানে আটক করে মেডিকেলে নিয়ে চেকআপ করাতে হবে। তাপমাত্রা পরীক্ষার পাশাপাশি তার সর্দি-কাশি দেখতে হবে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো যাবে না। যেভাবেই হোক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই হবে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে আইন প্রয়োগে শিথিলতা চলে এলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। নিজেদের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না।
পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মুহিদ উদ্দিন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে যাতে কেউ কোনো ধরনের গুজব তৈরি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারি চলছে। পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধেও আমরা কঠোর হচ্ছি। পণ্য নিয়ে কোনো চক্র বা মহল যাতে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য পুলিশের অভিযান চলছে। তিনি বলেন, বাইরে ডিউটি করার সময় প্রত্যেক সদস্য যেন পিপিই পরিধান করেন সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা প্রতিরোধ এবং পুলিশ সদস্যদের নিরাপদ রাখতে ব্যারাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ ডিউটি করে এলে কাপড়-চোপড়গুলো এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। পরে সেগুলো অটোমেশিনে ধোয়া হচ্ছে। সদস্যদের জন্য লবণযুক্ত গরম পানির ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যাপ্ত সাবান পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের অভিযান চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য করোনা আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিতে হবে। এজন্য সারা দেশের পুলিশ হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত বেড প্রস্তুত রাখতে হবে। আক্রান্তদের মাধ্যমে অন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে তা যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য ছুটি থেকে এসেই কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবেন না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকদের কাছে নিতে হবে। সন্দেহ হলেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশের কথা বিবেচনা করে পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় টহলে থাকা শাহবাগ থানার এসআই কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ডিউটিতে আছি, রাত ৮টা পর্যন্ত থাকব। আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যারেরাও ফিল্ডে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। এই এলাকা একেবারেই ফাঁকা। অপরাধারীও করোনার ভয়ে বের হচ্ছে না। এ মাসে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধ অনেক কম।’
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীতে দস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। আর ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি। জানুয়ারিতে চুরি হয় ১৩৮টি আর সিঁধেল চুরি হয় ৬৫টি। ফেব্রুয়ারিতে ১১৩টি চুরি ও ৭৪টি সিঁধেল চুরি হয়। ডিএমপির বিভিন্ন জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই নেই বললেই চলে।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আবু আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। পুরো রাজধানীকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।’ ডিএমপির দারুসসালাম জোনের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাস্তাঘাট ও অনেক বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগে যেন অপরাধীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে টহল পুলিশ। নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে ২৪ ঘণ্টায় টহল অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসে কোনো চুরি বা ছিনতাই হয়নি। প্রতিটি বাসার দারোয়ানকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে তাদের।’
শেয়ার করুন
সরোয়ার আলম ও ইমন রহমান | ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

করোনাভাইরাসের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা। তারা ঘরের বাইরে যেতে না পেরে অনেকটা একঘরে হয়ে আছে। গত এক মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ অর্ধেকে নেমেছে। অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ ও তাদের পুরো সিন্ডিকেট ভাঙতে গত বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। করোনাকে পুঁজি করে যারা পণ্য মজুদের প্রতিযোগিতায় নেমেছে, দ্রুত তাদের তালিকা করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অসুস্থতা ছাড়া পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করণীয় নিয়ে গত বুধবার পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে মজুদদারদের তালিকা করাসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক থেকে এসপিদের সঙ্গে ভিড়িও কনফারেন্সে কথা বলেন আইজিপি। পাশাপাশি ফ্যাক্স বার্তায় রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন র্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, এসবির প্রধান মীর শহীদুল ইসলাম, সিআইডির প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪৪ জন শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৫ জন। করোনা আতঙ্কে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে নেমেছে। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে অপরাধীদের মধ্যেও। তারা বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থেমে নেই। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে কোনো মহল যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে, সে জন্য পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তবে পুলিশের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তারা ছুটি নিতে পারবেন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যে পরিমাণ ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, চলতি মাসে সেই তুলনায় অপরাধ ঘটেনি বললেই চলে। ফাঁকা রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে টহল পুলিশের সজাগ অবস্থান। সকালে মিরপুর মডেল থানা এলাকায় কথা হয় এসআই ইমদাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাজধানী ফাঁকা হয়ে গেছে। আমরা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছি। অপরাধও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈঠকে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে করোনার প্রভাব অপরাধীরাও আড়ালে চলে গেছে বলে জানানো হয়। ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়াযী গত এক মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো ছিল। খুন, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা নেই বললেই চলে। থানায় মামলার সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইজিপি স্যার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন পণ্য মজুদকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের তালিকা দ্রুত করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পরে ওই নির্দেশনাগুলো ডিআইজি ও এসপিদের কাছে কিছু নির্দেশনা ফ্যাক্স বার্তায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে পুলিশের ভয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আইজিপি স্যার বলেছেন, যতকুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। পুলিশ সদস্যদের পিপিই পরে ডিউটি করতে হবে। কোথাও যাতে জনসমাগম না হয়, সেদিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সজাগ থাকতে হবে করোনাভাইরাস নিয়ে। তাকে সাবধানে আটক করে মেডিকেলে নিয়ে চেকআপ করাতে হবে। তাপমাত্রা পরীক্ষার পাশাপাশি তার সর্দি-কাশি দেখতে হবে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো যাবে না। যেভাবেই হোক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই হবে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে আইন প্রয়োগে শিথিলতা চলে এলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। নিজেদের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না।
পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মুহিদ উদ্দিন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে যাতে কেউ কোনো ধরনের গুজব তৈরি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারি চলছে। পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধেও আমরা কঠোর হচ্ছি। পণ্য নিয়ে কোনো চক্র বা মহল যাতে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য পুলিশের অভিযান চলছে। তিনি বলেন, বাইরে ডিউটি করার সময় প্রত্যেক সদস্য যেন পিপিই পরিধান করেন সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা প্রতিরোধ এবং পুলিশ সদস্যদের নিরাপদ রাখতে ব্যারাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ ডিউটি করে এলে কাপড়-চোপড়গুলো এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। পরে সেগুলো অটোমেশিনে ধোয়া হচ্ছে। সদস্যদের জন্য লবণযুক্ত গরম পানির ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যাপ্ত সাবান পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের অভিযান চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য করোনা আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিতে হবে। এজন্য সারা দেশের পুলিশ হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত বেড প্রস্তুত রাখতে হবে। আক্রান্তদের মাধ্যমে অন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে তা যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য ছুটি থেকে এসেই কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবেন না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকদের কাছে নিতে হবে। সন্দেহ হলেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশের কথা বিবেচনা করে পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় টহলে থাকা শাহবাগ থানার এসআই কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ডিউটিতে আছি, রাত ৮টা পর্যন্ত থাকব। আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যারেরাও ফিল্ডে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। এই এলাকা একেবারেই ফাঁকা। অপরাধারীও করোনার ভয়ে বের হচ্ছে না। এ মাসে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধ অনেক কম।’
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীতে দস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। আর ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি। জানুয়ারিতে চুরি হয় ১৩৮টি আর সিঁধেল চুরি হয় ৬৫টি। ফেব্রুয়ারিতে ১১৩টি চুরি ও ৭৪টি সিঁধেল চুরি হয়। ডিএমপির বিভিন্ন জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই নেই বললেই চলে।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আবু আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। পুরো রাজধানীকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।’ ডিএমপির দারুসসালাম জোনের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাস্তাঘাট ও অনেক বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগে যেন অপরাধীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে টহল পুলিশ। নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে ২৪ ঘণ্টায় টহল অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসে কোনো চুরি বা ছিনতাই হয়নি। প্রতিটি বাসার দারোয়ানকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে তাদের।’