কোয়ারেন্টাইন আমান্যকারীর খুলনায় শ্বাসকষ্টে মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
থাইরয়েডের অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন খুলনার মোস্তাহিদুর রহমান (৪৫)। সম্প্রতি একই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা মেনে চলেননি মোস্তাহিদুর। উল্টো সেই তথ্য গোপন করে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত বুধবার গভীর রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গেছেন মোস্তাহিদুর। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে ধারণা করছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। ঢাকার হাসপাতালটির আইসিইউ থেকে মোস্তাহিদুর করোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলেও মনে করছেন তারা। মোস্তাহিদুর খুলনা নগরীর হেলাতলা এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ও করোনা ম্যানেজমেন্টের ফোকাল পারসন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হন মোস্তাহিদুর রহমান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মোস্তাহিদুরের থাইরয়েড সার্জারি করা হয়। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
চিকিৎসক শৈলেন্দ্রনাথ বলেন, ‘ভর্তির সময় জ্বর ও শ্বাসকষ্টের কথা জানিয়েছিলেন মোস্তাহিদুর। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বায়োপসি রিপোর্ট ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই রোগীর (মোস্তাহিদুর) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসকরা তার চিকিৎসাসংক্রান্ত পূর্ববর্তী তথ্য নেন। এ হাসপাতালে আসার আগে ওই রোগী ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। একই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত একজন রোগী মারা গিয়েছিল। কিন্তু মোস্তাহিদুর এখানে ভর্তির সময় সেই তথ্য গোপন করেন। তা না হলে তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হতো।’
খুমেক পরিচালক আরও বলেন, ‘মোস্তাহিদুরকে মডার্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা মানেননি এবং তথ্য গোপন করে এখানে ভর্তি হন। তার কারণে ঝুঁকি বেড়ে গেল। ওই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া ১৫-২০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। ৯০ শতাংশ সন্দেহ ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।’
করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে দুই নারী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে খুমেক হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে দুই নারীকে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে তাদের ভর্তি করা হয়। তারা খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ম্যানেজমেন্টের ফোকাল পারসন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার রাত ১২টার দিকে জ¦র, সর্দি ও কাশি অবস্থায় এক নারীকে তার বান্ধবী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার সিনড্রম দেখে বান্ধবীসহ তাকে করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। যেহেতু তারা একত্রে এসেছেন, তাই দুজনকেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকরা তাদের পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের অবস্থা এখন ভালো আছে। যদি সিনড্রম বাড়ে তাহলে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হবে।’
খাগড়াছড়িতে আইসোলেশনে থাকা যুবকের মৃত্যু : খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। তার বাড়ি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়ির নুনছড়ি গ্রামে।
খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মিটন চাকমা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বুধবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থ ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। তখন করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পূর্ণ জীবন চাকমা জানান, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তির পর যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি গতকাল দুপুরেই আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। মারা যাওয়া যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না তা জানতে তার রক্তের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হবে।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি দাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি আগেও এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন। আপাতত করোনা রোগী ধরেই তার লাশ সৎকার করার জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এদিকে মারা যাওয়া ওই যুবকের সংস্পর্শে আসায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক, দুজন নার্স ও একজন আয়াকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মারা যাওয়া যুবকের করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

থাইরয়েডের অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন খুলনার মোস্তাহিদুর রহমান (৪৫)। সম্প্রতি একই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা মেনে চলেননি মোস্তাহিদুর। উল্টো সেই তথ্য গোপন করে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত বুধবার গভীর রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গেছেন মোস্তাহিদুর। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে ধারণা করছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। ঢাকার হাসপাতালটির আইসিইউ থেকে মোস্তাহিদুর করোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলেও মনে করছেন তারা। মোস্তাহিদুর খুলনা নগরীর হেলাতলা এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ও করোনা ম্যানেজমেন্টের ফোকাল পারসন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হন মোস্তাহিদুর রহমান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মোস্তাহিদুরের থাইরয়েড সার্জারি করা হয়। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
চিকিৎসক শৈলেন্দ্রনাথ বলেন, ‘ভর্তির সময় জ্বর ও শ্বাসকষ্টের কথা জানিয়েছিলেন মোস্তাহিদুর। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বায়োপসি রিপোর্ট ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই রোগীর (মোস্তাহিদুর) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসকরা তার চিকিৎসাসংক্রান্ত পূর্ববর্তী তথ্য নেন। এ হাসপাতালে আসার আগে ওই রোগী ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। একই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত একজন রোগী মারা গিয়েছিল। কিন্তু মোস্তাহিদুর এখানে ভর্তির সময় সেই তথ্য গোপন করেন। তা না হলে তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হতো।’
খুমেক পরিচালক আরও বলেন, ‘মোস্তাহিদুরকে মডার্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা মানেননি এবং তথ্য গোপন করে এখানে ভর্তি হন। তার কারণে ঝুঁকি বেড়ে গেল। ওই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া ১৫-২০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। ৯০ শতাংশ সন্দেহ ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।’
করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে দুই নারী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে খুমেক হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে দুই নারীকে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে তাদের ভর্তি করা হয়। তারা খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ম্যানেজমেন্টের ফোকাল পারসন ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার রাত ১২টার দিকে জ¦র, সর্দি ও কাশি অবস্থায় এক নারীকে তার বান্ধবী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার সিনড্রম দেখে বান্ধবীসহ তাকে করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। যেহেতু তারা একত্রে এসেছেন, তাই দুজনকেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকরা তাদের পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের অবস্থা এখন ভালো আছে। যদি সিনড্রম বাড়ে তাহলে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হবে।’
খাগড়াছড়িতে আইসোলেশনে থাকা যুবকের মৃত্যু : খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। তার বাড়ি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়ির নুনছড়ি গ্রামে।
খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মিটন চাকমা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বুধবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থ ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। তখন করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পূর্ণ জীবন চাকমা জানান, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তির পর যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি গতকাল দুপুরেই আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। মারা যাওয়া যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না তা জানতে তার রক্তের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হবে।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি দাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি আগেও এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন। আপাতত করোনা রোগী ধরেই তার লাশ সৎকার করার জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এদিকে মারা যাওয়া ওই যুবকের সংস্পর্শে আসায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক, দুজন নার্স ও একজন আয়াকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মারা যাওয়া যুবকের করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি।