কেন্দ্রের কাছে বিচার চেয়েছেন জাপ্পি
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি | ২৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০
মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহির বিরুদ্ধে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগী মাহতাবুর আলম জাপ্পি। তিনি গত সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও ওই চিঠির একটি অনুলিপি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে ন্যায়বিচার চেয়ে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জাপ্পি।
এর আগে গত ২৭ জুলাই দৈনিক দেশ রূপান্তরে ‘পদের কথা বলে ২০ লাখ টাকা খেলেন দুই ছাত্রলীগ নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে পুরো জেলায় এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর জাপ্পির করা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মাঠে নামে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে জাপ্পির করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে দুই পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহিবুর রহমান মাহি। তাতে বলা হয়, একটি কুচক্রীমহল ছাত্রলীগের অর্জিত সাফল্যকে মøান করতে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িত নেই। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হয়েছে।
জাপ্পির বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিনের সঙ্গে সাইদুরের মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত আলাপন, টাকা লেনদেনের ব্যাংক চেক এবং সংগঠনের প্যাডে মাধবপুর উপজেলা কমিটি দেওয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মহিবুর রহমান মাহি বলেন, ‘দলীয় প্যাড বানিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। আর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ডও এডিট করা।’
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহতাবুর আলম জাপ্পি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই নেতার (সাইদুর-মাহি) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ সোমবার সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় অফিসে দিয়ে এসেছি। এছাড়া একই দিন রাতে ওই চিঠির একটি কপি টিএসসিতে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের কাছে সরাসরি হস্তান্তর করেছি। একই সঙ্গে একাধিক অডিও রেকর্ড ও আর্থিক লেনদেনের প্রমাণের ফটোকপিও দিয়েছি। সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় আমার আবেদনটি পড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
এদিকে দুই ছাত্রলীগ নেতার টাকা লেনদেন সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর গত সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হবিগঞ্জে প্রায় এক হাজার কপি দেশ রূপান্তর পত্রিকা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকা না পেয়ে অনেক পাঠক সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। এছাড়া সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত পত্রিকার ওয়েবসাইট থেকে এই সংবাদটি ফেইসবুকে ১ হাজার ১ বার শেয়ার হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর প্রকাশের পর সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে খবরের সত্যতা পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’
মাহতাবুর আলম জাপ্পি মাধবপুরের মনতলা কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। গত বছরের শেষের দিকে মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়ার কথা ওঠে। তখন ছোট ভাই জাপ্পির আবদার রাখতে গিয়ে বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবি অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা নগদ ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন শাহিন। ভুক্তভোগী জাপ্পি ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, ২০ লাখ টাকার মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রায় ১১ লাখ এবং ৯ লাখ টাকা নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি। টাকা লেনদেন হওয়ার পর গত ১৮ মে জাপ্পিকে সাধারণ সম্পাদক দেখিয়ে একটি কাগজ পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিনের কাছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এখনো মাধবপুর উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
শেয়ার করুন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি | ২৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০

মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহির বিরুদ্ধে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগী মাহতাবুর আলম জাপ্পি। তিনি গত সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও ওই চিঠির একটি অনুলিপি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে ন্যায়বিচার চেয়ে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জাপ্পি।
এর আগে গত ২৭ জুলাই দৈনিক দেশ রূপান্তরে ‘পদের কথা বলে ২০ লাখ টাকা খেলেন দুই ছাত্রলীগ নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে পুরো জেলায় এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর জাপ্পির করা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মাঠে নামে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে জাপ্পির করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে দুই পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহিবুর রহমান মাহি। তাতে বলা হয়, একটি কুচক্রীমহল ছাত্রলীগের অর্জিত সাফল্যকে মøান করতে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িত নেই। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হয়েছে।
জাপ্পির বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিনের সঙ্গে সাইদুরের মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত আলাপন, টাকা লেনদেনের ব্যাংক চেক এবং সংগঠনের প্যাডে মাধবপুর উপজেলা কমিটি দেওয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মহিবুর রহমান মাহি বলেন, ‘দলীয় প্যাড বানিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। আর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ডও এডিট করা।’
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহতাবুর আলম জাপ্পি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই নেতার (সাইদুর-মাহি) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ সোমবার সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় অফিসে দিয়ে এসেছি। এছাড়া একই দিন রাতে ওই চিঠির একটি কপি টিএসসিতে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের কাছে সরাসরি হস্তান্তর করেছি। একই সঙ্গে একাধিক অডিও রেকর্ড ও আর্থিক লেনদেনের প্রমাণের ফটোকপিও দিয়েছি। সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় আমার আবেদনটি পড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
এদিকে দুই ছাত্রলীগ নেতার টাকা লেনদেন সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর গত সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হবিগঞ্জে প্রায় এক হাজার কপি দেশ রূপান্তর পত্রিকা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকা না পেয়ে অনেক পাঠক সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। এছাড়া সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত পত্রিকার ওয়েবসাইট থেকে এই সংবাদটি ফেইসবুকে ১ হাজার ১ বার শেয়ার হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর প্রকাশের পর সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে খবরের সত্যতা পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’
মাহতাবুর আলম জাপ্পি মাধবপুরের মনতলা কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। গত বছরের শেষের দিকে মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়ার কথা ওঠে। তখন ছোট ভাই জাপ্পির আবদার রাখতে গিয়ে বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবি অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা নগদ ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন শাহিন। ভুক্তভোগী জাপ্পি ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, ২০ লাখ টাকার মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রায় ১১ লাখ এবং ৯ লাখ টাকা নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি। টাকা লেনদেন হওয়ার পর গত ১৮ মে জাপ্পিকে সাধারণ সম্পাদক দেখিয়ে একটি কাগজ পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিনের কাছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এখনো মাধবপুর উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।