মৃত্যু পরোয়ানা জারি, ফাঁসির দড়ির সামনে কায়সার
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসিরদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো তার মৃত্যু পরোয়ানা কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বুধবার বিকেলে রায়ের অনুলিপিসহ অন্যান্য নথি হাতে পাই। আজ (গতকাল) নিয়মমাফিক ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামির মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্র্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরোয়ানার অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পাঠানো হয়েছে।’ নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছার পর কারা কর্র্তৃপক্ষ আসামি কায়সারকে তা পড়ে শোনাবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করতে ১৫ দিন সময় পাবেন তিনি। যদি এ সময়ের মধ্যে তিনি রিভিউ আবেদন না করেন তাহলে সরকার যেকোনো সময় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে। তবে শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন কায়সার। যদি তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করেন কিংবা করলে তা নাকচ হয়ে যায় তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।
সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় গত ১৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। সংক্ষিপ্ত রায়ে দুটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এবং একটি অভিযোগে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া তিনটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে সাতটি অভিযোগে প্রাণদণ্ড দেয়। এর মধ্যে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড; অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আরও তিনটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে তাকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়সার ও তার বাহিনীর নৃশংসতার চিত্র উঠে আসে। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন মুসলিম লীগের সাবেক এই নেতা।
একসময় বিএনপি করলেও পরে এরশাদের (প্রয়াত) জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৩ সালের ১৫ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর একই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ আনা হয়। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হলেও ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার দিন তাকে কারাগারের কনডেম সেলে পাঠানো হয়।
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আসা এটি নবম মামলা, যার চূড়ান্ত রায় প্রকাশ ও মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলো। এর আগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের আটটি রায়ের মধ্যে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় হয়। এ ছাড়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত মার্চে তার মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠিয়ে তাকে পড়ে শোনানো হয়। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর গত ১৯ জুলাই আজহার মৃত্যুদণ্ডের রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসিরদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো তার মৃত্যু পরোয়ানা কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বুধবার বিকেলে রায়ের অনুলিপিসহ অন্যান্য নথি হাতে পাই। আজ (গতকাল) নিয়মমাফিক ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামির মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্র্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরোয়ানার অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পাঠানো হয়েছে।’ নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছার পর কারা কর্র্তৃপক্ষ আসামি কায়সারকে তা পড়ে শোনাবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করতে ১৫ দিন সময় পাবেন তিনি। যদি এ সময়ের মধ্যে তিনি রিভিউ আবেদন না করেন তাহলে সরকার যেকোনো সময় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে। তবে শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন কায়সার। যদি তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করেন কিংবা করলে তা নাকচ হয়ে যায় তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।
সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় গত ১৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। সংক্ষিপ্ত রায়ে দুটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এবং একটি অভিযোগে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া তিনটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে সাতটি অভিযোগে প্রাণদণ্ড দেয়। এর মধ্যে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড; অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আরও তিনটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে তাকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়সার ও তার বাহিনীর নৃশংসতার চিত্র উঠে আসে। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন মুসলিম লীগের সাবেক এই নেতা।
একসময় বিএনপি করলেও পরে এরশাদের (প্রয়াত) জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৩ সালের ১৫ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর একই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ আনা হয়। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হলেও ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার দিন তাকে কারাগারের কনডেম সেলে পাঠানো হয়।
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আসা এটি নবম মামলা, যার চূড়ান্ত রায় প্রকাশ ও মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলো। এর আগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের আটটি রায়ের মধ্যে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় হয়। এ ছাড়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত মার্চে তার মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠিয়ে তাকে পড়ে শোনানো হয়। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর গত ১৯ জুলাই আজহার মৃত্যুদণ্ডের রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন।