এবার বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা
রশিদ আল রুহানী | ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার হুমকির মুখে রয়েছে ১ জানুয়ারির বই উৎসব। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর সরকার এ দিনটিকে জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করে আসছে। কিন্তু এ বছর কার্যাদেশ না দিতে পারায় সময়মতো বই ছাপার কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জড়ো করে অন্যান্যবারের মতো বই বিতরণের আয়োজনটি নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। এবার উৎসব বাতিল করা হতে পারে অথবা সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হতে পারে। তবে অন্যবারের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকার আশঙ্কাই বেশি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে চাই। আমাদের মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা রয়েছে। আমরা আশাবাদী, ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’
এনসিটিবিসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি প্রাথমিক স্তরের। আর মাধ্যমিক, দাখিল ও ইবতেদায়ি স্তরের ২৪ কোটি ৪১ লাখ। ৫ থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কার্যাদেশ পেয়েছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মাধ্যমিকের বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে।
বই ছাপার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে মুদ্রণসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সক্ষমতার ঘাটতি থাকায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কাগজ কিনতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে বেশি কাজও করতে পারছে না তারা। কর্মীরা দক্ষ না হওয়ায় নমুনা নেওয়ার সময় অনেক কাগজ নষ্ট হচ্ছে। মূলত যেসব মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান এবার বিনামূল্যের বইয়ের কাজ পায়নি, সেখান থেকেই অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ‘এক একটি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার কাগজের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হচ্ছে। একাধিকবার আবেদন করে অনুমোদন পেতেও তো ২০ থেকে ২৫ দিন লেগে যায়। এতে করে সময় নষ্ট হচ্ছে। এসব কারণে বই ছাপা এবং ছাপা শেষে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।’
প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিকের বই পাঠানো হয়েছে মাত্র ১৫-২০ শতাংশ। এদিকে মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ গেল কয়েক দিন হলো শুরু করেছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। হাতে খুবই অল্প সময় থাকলেও মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ধরনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বলছে, এতে তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ডিসেম্বরের মধ্যে বইয়ের কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সময়মতো বই পৌঁছানোর বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে করোনার কারণে এবার আমাদের কার্যাদেশ দিতেই দেরি হয়েছে। তারপরও কাজ শুরু হয়েছে আগেই। ইতিমধ্যে প্রাথমিকের বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো শুরু হয়েছে। তবে সবার সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে চাই। আমাদের মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা রয়েছে। আমরা আশাবাদী, ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’
এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও যথাসময়েই পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করতে চায় সরকার। অন্যান্যবারের মতো আনুষ্ঠানিকতার ভাবনা মাথায় রেখেই কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয় সে ক্ষেত্রে ভিন্ন চিন্তা করবেন বলেই জানিয়েছেন তারা। যদিও এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না মন্ত্রণালয়। ফলে এ বিষয়ে কেউ এখনই কথা বলতে নারাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন যেকোনোভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অন্যান্যবারের মতো উৎসবের চিন্তা এখনো রয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে উৎসব বাতিল করা হতে পারে অথবা সীমিত পরিসরে আয়োজন হতে পারে। তবে অন্যবারের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকার আশঙ্কাই বেশি।’
শেয়ার করুন
রশিদ আল রুহানী | ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার হুমকির মুখে রয়েছে ১ জানুয়ারির বই উৎসব। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর সরকার এ দিনটিকে জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করে আসছে। কিন্তু এ বছর কার্যাদেশ না দিতে পারায় সময়মতো বই ছাপার কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জড়ো করে অন্যান্যবারের মতো বই বিতরণের আয়োজনটি নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। এবার উৎসব বাতিল করা হতে পারে অথবা সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হতে পারে। তবে অন্যবারের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকার আশঙ্কাই বেশি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে চাই। আমাদের মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা রয়েছে। আমরা আশাবাদী, ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’
এনসিটিবিসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি প্রাথমিক স্তরের। আর মাধ্যমিক, দাখিল ও ইবতেদায়ি স্তরের ২৪ কোটি ৪১ লাখ। ৫ থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কার্যাদেশ পেয়েছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মাধ্যমিকের বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে।
বই ছাপার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে মুদ্রণসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সক্ষমতার ঘাটতি থাকায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কাগজ কিনতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে বেশি কাজও করতে পারছে না তারা। কর্মীরা দক্ষ না হওয়ায় নমুনা নেওয়ার সময় অনেক কাগজ নষ্ট হচ্ছে। মূলত যেসব মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান এবার বিনামূল্যের বইয়ের কাজ পায়নি, সেখান থেকেই অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ‘এক একটি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার কাগজের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হচ্ছে। একাধিকবার আবেদন করে অনুমোদন পেতেও তো ২০ থেকে ২৫ দিন লেগে যায়। এতে করে সময় নষ্ট হচ্ছে। এসব কারণে বই ছাপা এবং ছাপা শেষে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।’
প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিকের বই পাঠানো হয়েছে মাত্র ১৫-২০ শতাংশ। এদিকে মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ গেল কয়েক দিন হলো শুরু করেছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। হাতে খুবই অল্প সময় থাকলেও মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ধরনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বলছে, এতে তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ডিসেম্বরের মধ্যে বইয়ের কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সময়মতো বই পৌঁছানোর বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে করোনার কারণে এবার আমাদের কার্যাদেশ দিতেই দেরি হয়েছে। তারপরও কাজ শুরু হয়েছে আগেই। ইতিমধ্যে প্রাথমিকের বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো শুরু হয়েছে। তবে সবার সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে চাই। আমাদের মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা রয়েছে। আমরা আশাবাদী, ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’
এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও যথাসময়েই পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করতে চায় সরকার। অন্যান্যবারের মতো আনুষ্ঠানিকতার ভাবনা মাথায় রেখেই কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয় সে ক্ষেত্রে ভিন্ন চিন্তা করবেন বলেই জানিয়েছেন তারা। যদিও এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না মন্ত্রণালয়। ফলে এ বিষয়ে কেউ এখনই কথা বলতে নারাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন যেকোনোভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অন্যান্যবারের মতো উৎসবের চিন্তা এখনো রয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে উৎসব বাতিল করা হতে পারে অথবা সীমিত পরিসরে আয়োজন হতে পারে। তবে অন্যবারের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকার আশঙ্কাই বেশি।’