বইমেলার নামের আগে যুক্ত হচ্ছে বাংলা একাডেমির নাম
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও পাভেল রহমান | ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০
বাংলাভাষা ও ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যে মেলা মিলেমিশে একাকার তা হলো ফেব্রুয়ারির বইমেলা। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে এই মেলা প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সাল থেকে এই মেলা চলে আসছে। এরপর মেলার স্থান এবং কাঠামো সুনির্দিষ্ট করতে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও শিল্প-সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
সারা দেশের লেখক-পাঠকের কাছে অপেক্ষার সময় একুশের এই মাস। বইমেলা বলতে একুশের বইমেলাই বাঙালির কাছে ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা, স্বাধীনতা এবং শেকড়ের কাছে যাওয়ার এক অনন্য সময়। সবাই জানে এই মেলা বাংলা একাডেমিই আয়োজন করে। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করেই বইমেলার নাম পরিবর্তন করে গত ৫ নভেম্বর বাংলা একাডেমি কর্র্তৃপক্ষ জুড়ে দেয়, ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’। বিষয়টি এখনো বইপিপাসু ও লেখক-সাহিত্যিকদের অনেকেরই নজরে আসেনি। কিন্তু সৃজন প্রকাশক এবং এই বইমেলাকে ঘিরে যারা বই প্রকাশ করেন এবং মিলনমেলায় পরিণত করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন সেই প্রকাশকরা এই নাম পরিবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
এরমধ্যে যেসব লেখক, কবি, সাহিত্যিক নাম পরিবর্তনের বিষয়টি জেনেছেন, তারাও আপত্তি জানিয়েছেন। তারা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ করার পক্ষে মত দিলেও অমর একুশের আগে বাংলা একাডেমি শব্দটি এই মেলার নির্যাস নষ্ট করে দেবে। দেশে-বিদেশে সবার কাছে এই নাম যে অর্থ ও সংস্কৃতি এবং বাঙালির মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে ইতিহাস বলে দেয় তার আগে বাংলা একাডেমি শব্দ সেটি খাটো করবে। তারা গ্রন্থ শব্দের স্থলে বই ব্যবহার করে আগের নাম বহাল রাখার আহ্বান জানান।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’ করায় প্রকাশকদের দুই সমিতি থেকে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি বলছে, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বইমেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত। মেলার আয়োজক কমিটি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা গত সোমবার বাংলা একাডেমির সচিব অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছেন।
প্রতিবাদলিপির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করব না। এটা বইমেলা পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। করোনা মহামারীর সময়ে বইমেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আমি চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা হোক। মেলার আয়োজন নিয়ে এবার অনেক রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সে ব্যাপারে আমরা ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছি। সবাইকে নিয়ে মেলাটা সুন্দরভাবে করতে চাই। আর মেলার নামকরণ নিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে, নাম কী হবে? এ বিষয়ে আমি এককভাবে কোনো মন্তব্য করব না।’
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রন্থমেলা নামটি পরিবর্তন করে বইমেলা করার ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই আলাপ হয়েছিল। কিন্তু ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’ করলে, আমি মনে করি এটা সংকুচিত হয়ে যায়। আমি এই বিষয়টিকে সমর্থন করি না। ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামটি পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ করার ব্যাপারে আমি একমত। কিন্তু এর সঙ্গে বাংলা একাডেমি যুক্ত করে দেওয়াটা সমর্থন করছি না।’
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলা সর্বজনীন একটি আয়োজন। এখানে ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’ করা হলে পরিসরটা ছোট হয়ে যায়। বাংলা একাডেমি এটা করতে পারে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা করছি মেলার আয়োজক কমিটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে।’
লিখিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, “গত ৫ নভেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এর বিজ্ঞাপনের শিরোনাম দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। এ বছর বইমেলায় অংশগ্রহণের আবেদনের বিজ্ঞাপনে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২১’। ‘অমর একুশে বইমেলা’ একটি জাতীয় আয়োজন এবং বাংলা একাডেমি এর আয়োজক। ‘বাংলা একাডেমি’ শব্দটি বইমেলার শিরোনামের প্রারম্ভে জুড়ে দিয়ে, জাতীয় আয়োজনের পরিসরকে ছোট করা হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা একটি সর্বজনীন আয়োজন যা ইতিমধ্যে বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতির উৎসভূমি হিসেবে, আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণের বাতিঘর হিসেবে, জনপ্রিয় হয়েছে। যদি বিষয়টি অসাবধানতাবশত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের পত্রের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হবে আশা করি। কিন্তু যদি বাংলা একাডেমি সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টির অবতারণা ঘটিয়ে থাকে, তবে আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই এই ধরনের কর্র্তৃত্ববাদী আচরণ অংশীজনদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রতিবাদলিপিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, ১৯৭২ সালে অমর একুশে বইমেলার শুরু হলেও নানা পর্যায় অতিক্রম করে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি বিধিবদ্ধভাবে বইমেলার দায়িত্ব গ্রহণ করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বইমেলা পরিচালনা করছে। ২০২০ সালের বইমেলার উদ্বোধনপর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে গ্রন্থমেলার পরিবর্তে ‘বইমেলা’ প্রতিশব্দ ব্যবহার অধিক শ্রুতিমধুর ও পাঠকপ্রিয় হবে বলে মতপ্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়কে সাদরে গ্রহণ করে ২০২১ সালে বইমেলার প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ হয় ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২১’। এ বিষয়টি গত ২৮ অক্টোবর তারিখের অনুষ্ঠিত বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভাতেও আলোচিত হয়েছে।
প্রতিবাদ জানিয়ে প্রকাশক সমিতির নেতারা বলেন, পত্রিকার বিজ্ঞাপনে অতীতের সমস্ত প্রথা ভেঙে বইমেলার শিরোনামে বাংলা একাডেমির নাম জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে আমরা জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু প্রকাশক গোষ্ঠী নয়, অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করবে না। বইমেলা সুষ্ঠু, সুন্দর ও পাঠকপ্রিয় করার লক্ষ্যে আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে বইমেলার প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ ‘অমর একুশে বইমেলা’ হিসেবে পুনরায় গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে প্রকাশক সমিতির সদস্যভুক্ত প্রকাশকরা মেলায় অংশগ্রহণ না করার হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, আপনার সদয় জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে সমিতিভুক্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারে। আমরা আশা করব, বইমেলার আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমাদের নিজস্ব চেতনার ঋদ্ধ সাহিত্যসম্ভারের ব্যাপ্তির নিমিত্তে যে বইমেলা তার পরম্পরা ও অগ্রায়ণ নিশ্চিত করবেন।
শেয়ার করুন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও পাভেল রহমান | ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০

বাংলাভাষা ও ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যে মেলা মিলেমিশে একাকার তা হলো ফেব্রুয়ারির বইমেলা। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে এই মেলা প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সাল থেকে এই মেলা চলে আসছে। এরপর মেলার স্থান এবং কাঠামো সুনির্দিষ্ট করতে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও শিল্প-সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
সারা দেশের লেখক-পাঠকের কাছে অপেক্ষার সময় একুশের এই মাস। বইমেলা বলতে একুশের বইমেলাই বাঙালির কাছে ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা, স্বাধীনতা এবং শেকড়ের কাছে যাওয়ার এক অনন্য সময়। সবাই জানে এই মেলা বাংলা একাডেমিই আয়োজন করে। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করেই বইমেলার নাম পরিবর্তন করে গত ৫ নভেম্বর বাংলা একাডেমি কর্র্তৃপক্ষ জুড়ে দেয়, ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’। বিষয়টি এখনো বইপিপাসু ও লেখক-সাহিত্যিকদের অনেকেরই নজরে আসেনি। কিন্তু সৃজন প্রকাশক এবং এই বইমেলাকে ঘিরে যারা বই প্রকাশ করেন এবং মিলনমেলায় পরিণত করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন সেই প্রকাশকরা এই নাম পরিবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
এরমধ্যে যেসব লেখক, কবি, সাহিত্যিক নাম পরিবর্তনের বিষয়টি জেনেছেন, তারাও আপত্তি জানিয়েছেন। তারা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ করার পক্ষে মত দিলেও অমর একুশের আগে বাংলা একাডেমি শব্দটি এই মেলার নির্যাস নষ্ট করে দেবে। দেশে-বিদেশে সবার কাছে এই নাম যে অর্থ ও সংস্কৃতি এবং বাঙালির মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে ইতিহাস বলে দেয় তার আগে বাংলা একাডেমি শব্দ সেটি খাটো করবে। তারা গ্রন্থ শব্দের স্থলে বই ব্যবহার করে আগের নাম বহাল রাখার আহ্বান জানান।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’ করায় প্রকাশকদের দুই সমিতি থেকে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি বলছে, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বইমেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত। মেলার আয়োজক কমিটি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা গত সোমবার বাংলা একাডেমির সচিব অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছেন।
প্রতিবাদলিপির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করব না। এটা বইমেলা পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। করোনা মহামারীর সময়ে বইমেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আমি চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা হোক। মেলার আয়োজন নিয়ে এবার অনেক রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সে ব্যাপারে আমরা ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছি। সবাইকে নিয়ে মেলাটা সুন্দরভাবে করতে চাই। আর মেলার নামকরণ নিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে, নাম কী হবে? এ বিষয়ে আমি এককভাবে কোনো মন্তব্য করব না।’
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রন্থমেলা নামটি পরিবর্তন করে বইমেলা করার ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই আলাপ হয়েছিল। কিন্তু ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’ করলে, আমি মনে করি এটা সংকুচিত হয়ে যায়। আমি এই বিষয়টিকে সমর্থন করি না। ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামটি পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ করার ব্যাপারে আমি একমত। কিন্তু এর সঙ্গে বাংলা একাডেমি যুক্ত করে দেওয়াটা সমর্থন করছি না।’
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলা সর্বজনীন একটি আয়োজন। এখানে ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা’ করা হলে পরিসরটা ছোট হয়ে যায়। বাংলা একাডেমি এটা করতে পারে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা করছি মেলার আয়োজক কমিটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে।’
লিখিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, “গত ৫ নভেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এর বিজ্ঞাপনের শিরোনাম দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। এ বছর বইমেলায় অংশগ্রহণের আবেদনের বিজ্ঞাপনে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২১’। ‘অমর একুশে বইমেলা’ একটি জাতীয় আয়োজন এবং বাংলা একাডেমি এর আয়োজক। ‘বাংলা একাডেমি’ শব্দটি বইমেলার শিরোনামের প্রারম্ভে জুড়ে দিয়ে, জাতীয় আয়োজনের পরিসরকে ছোট করা হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা একটি সর্বজনীন আয়োজন যা ইতিমধ্যে বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতির উৎসভূমি হিসেবে, আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণের বাতিঘর হিসেবে, জনপ্রিয় হয়েছে। যদি বিষয়টি অসাবধানতাবশত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের পত্রের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হবে আশা করি। কিন্তু যদি বাংলা একাডেমি সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টির অবতারণা ঘটিয়ে থাকে, তবে আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই এই ধরনের কর্র্তৃত্ববাদী আচরণ অংশীজনদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রতিবাদলিপিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, ১৯৭২ সালে অমর একুশে বইমেলার শুরু হলেও নানা পর্যায় অতিক্রম করে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি বিধিবদ্ধভাবে বইমেলার দায়িত্ব গ্রহণ করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বইমেলা পরিচালনা করছে। ২০২০ সালের বইমেলার উদ্বোধনপর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে গ্রন্থমেলার পরিবর্তে ‘বইমেলা’ প্রতিশব্দ ব্যবহার অধিক শ্রুতিমধুর ও পাঠকপ্রিয় হবে বলে মতপ্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়কে সাদরে গ্রহণ করে ২০২১ সালে বইমেলার প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ হয় ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২১’। এ বিষয়টি গত ২৮ অক্টোবর তারিখের অনুষ্ঠিত বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভাতেও আলোচিত হয়েছে।
প্রতিবাদ জানিয়ে প্রকাশক সমিতির নেতারা বলেন, পত্রিকার বিজ্ঞাপনে অতীতের সমস্ত প্রথা ভেঙে বইমেলার শিরোনামে বাংলা একাডেমির নাম জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে আমরা জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু প্রকাশক গোষ্ঠী নয়, অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করবে না। বইমেলা সুষ্ঠু, সুন্দর ও পাঠকপ্রিয় করার লক্ষ্যে আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে বইমেলার প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ ‘অমর একুশে বইমেলা’ হিসেবে পুনরায় গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে প্রকাশক সমিতির সদস্যভুক্ত প্রকাশকরা মেলায় অংশগ্রহণ না করার হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, আপনার সদয় জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে সমিতিভুক্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারে। আমরা আশা করব, বইমেলার আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমাদের নিজস্ব চেতনার ঋদ্ধ সাহিত্যসম্ভারের ব্যাপ্তির নিমিত্তে যে বইমেলা তার পরম্পরা ও অগ্রায়ণ নিশ্চিত করবেন।