পৃথিবী ছিল তার পায়ের নিচে
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০
অনেক বিশেষজ্ঞ, ফুটবল সমালোচক, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় এবং ফুটবল সমর্থকদের বিবেচনায় সর্বকালের সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তিনি ফিফার বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় পেলের সঙ্গে যৌথভাবে ছিলেন। ম্যারাডোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুবার স্থানান্তর ফির ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। প্রথমবার বার্সেলোনায় স্থানান্তরের সময় ৫ মিলিয়ন ইউরো এবং দ্বিতীয়বার নাপোলিতে স্থানান্তরের সময় ৬.৯ মিলিয়ন ইউরো। নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। ক্লাব পর্যায়ে তিনি তার নাপোলিতে কাটানো সময়ের জন্য বিখ্যাত, যেখানে তিনি অসংখ্য সম্মাননা জেতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪ গোল করেন।
ম্যারাডোনা চারটি ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতেন। ওই প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে জয় পায়। দুটি গোলই করেন ম্যারাডানা। দুটি গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে দুটি ভিন্ন কারণে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল যা ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামেখ্যাত। দ্বিতীয় গোলটি ম্যারাডোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফাডটকমের ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।
ম্যারাডোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং সংবাদ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের অন্যতম মনে করা হয়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেন সেবনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে পজিটিভ ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে কোকেন সেবন বন্ধ করেন। মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে মাঝেমধ্যেই সাংবাদিক এবং ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তার মতভেদের সৃষ্টি হয়। ম্যানেজার হিসেবে খুব কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালের নভেম্বরে তাকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১০ বিশ্বকাপের পর চুক্তি শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি ১৮ মাস এ দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনেস এইরেস প্রদেশের লানুস শহরের পলিক্লিনিকো এভিতা হাসপাতালে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন বুয়েনেস এইরেসের দক্ষিণ প্রান্তের একটি ছোট্ট শহর ভিয়া ফিওরিতোতে। তিন কন্যাসন্তানের পর তিনিই ছিলেন বাবা-মার প্রথম ছেলে সন্তান। তার ছোট দুই ভাই হুগো (এল তুর্কো) ও রাউল (লালো) দুজনই পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। ম্যারাডোনা হলেন ‘চিতরো’ ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও ‘দোনা তোতা’ দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কোর পঞ্চম সন্তান।
১০ বছর বয়সে ম্যারাডোনা যখন এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলছিলেন তখন তাকে খুঁজে বের করেন একজন স্কাউট। তিনি দ্য লিটল অনিঅনের (আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দল) একজন মূল খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ১২ বছর বয়সে বল-বয় হিসেবে, প্রথম বিভাগের খেলার অর্ধ বিরতির সময় বল দিয়ে জাদুকরী কারুকার্য দেখিয়ে তিনি দর্শকদের সন্তুষ্ট করতেন।
ক্লাব ক্যারিয়ার : ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর, নিজের ষোলোতম জন্মদিনের ১০ দিন আগে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়। সেখানে তিনি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন এবং ১৬৭ খেলায় ১১৫টি গোল করেন। এরপর ১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বোকা জুনিয়র্সে পাড়ি জমান। ১৯৮১ মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বোকায় যোগ দিয়ে ১৯৮২ সালে তিনি প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
১৯৮২ বিশ্বকাপের পর ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৩ সালে কোচ সিজার লুইস মেনোত্তির অধীনে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে এবং বিলবাওকে হারিয়ে স্পেনীয় সুপার কাপ জেতেন। তবে বার্সায় ম্যারাডোনা কিছুটা খারাপ সময় কাটিয়েছেন।
ম্যারাডোনা বার্সেলোনায় ৫৮ খেলায় ৩৮টি গোল করেন। বার্সায় থাকাকালে ক্লাব পরিচালকদের সঙ্গে ঘনঘন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, বিশেষ করে ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ লুইস নুনেজের সঙ্গে। ১৯৮৪ সালে আরেকটি রেকর্ড স্থানান্তর ফিতে (৬.৯ মিলিয়ন ইউরো) সিরি-আ ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন তিনি। ইতালিয়ান ক্লাবটিতে যোগ দিয়ে ম্যারাডোনা তার পেশাদার ক্যারিয়ারের শিখরে পৌঁছান। খুব দ্রুত ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সেই সময়টিই ছিল নাপোলির ইতিহাসের সফলতম যুগ।
ইতালিতে থাকাকালে ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তার কোকেন আসক্তি চলতে থাকে। অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকায় ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে ৭০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়। ইতালিতে ম্যারাডোনাকে সন্তানের জন্মসংক্রান্ত কেলেঙ্কারিরও মুখোমুখি হতে হয়।
ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ১৯৯২ সালে ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়ে দেন। স্পেনীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও ফরাসি ক্লাব অলিম্পিকে মার্শেই তার প্রতি আগ্রহী হলেও তিনি স্পেনীয় ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর ছিলেন। ১৯৯৩ সালে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেন এবং ১৯৯৫ সালে বোকা জুনিয়র্সে ফিরে আসেন এবং সেখানে দুই বছর খেলেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কিছু আগে ম্যারাডোনা টটেনহাম হটস্পারের হয়েও মাঠে নামেন ইন্টারন্যাজিওনালের বিপক্ষে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার : আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ম্যারাডোনা টানা চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৯৮৬-এ আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয় এবং ১৯৯০-তে হয় রানার্সআপ।
১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়। ১৯৭৯ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৭৯ সালের ২ জুন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম গোল করেন ম্যারাডোনা। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ (১৯৭৯) ও ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৮৬) উভয় প্রতিযোগিতায় গোল্ডেন বল জিতেছেন। ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ছিল ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ।
দ্য হ্যান্ড অফ গড : ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। প্রতিযোগিতার ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। প্রতিযোগিতার পুরোটা জুড়েই ছিল ম্যারাডোনার আধিপত্য। দলের প্রতিটি খেলায় পুরোটা সময়ই মাঠে ছিলেন। প্রতিযোগিতায় পাঁচটি গোল করেন এবং সতীর্থদের দিয়ে করান আরও পাঁচটি। প্রতিযোগিতায় প্রথম গোল করেন ইতালির বিপক্ষে, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় খেলায়। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রমাণ করেন। আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলায় উত্তেজনার কমতি ছিল না। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ৫১ মিনিটে ম্যারাডোনা একটি গোল করেন। রিপ্লেতে দেখা যায় গোলটি করার সময় তিনি হাত দিয়ে বলে আঘাত করেছেন। পরে এই গোলের নাম দেওয়া হয় ‘দ্য হ্যান্ড অফ গড’। ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট একটি টেলিভিশন শোতে ম্যারাডোনা স্বীকার করেন যে তিনি গোলটি ইচ্ছাকৃতভাবেই হাত দিয়ে করেছিলেন, তার মাথা বল স্পর্শ করেনি এবং সে মুহূর্তে তিনি জানতেন গোলটি অবৈধ। ইংরেজ খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ করলেও রেফারি গোলের বাঁশি বাজান। এর চার মিনিট পরেই ম্যারাডোনা দ্বিতীয় গোল করেন, যেটিকে ফিফা পরবর্তীতে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করে। মাঠে নিজেদের অর্ধে তিনি বল নিয়ে অর্ধেকেরও বেশি অংশ দৌড়িয়ে, পাঁচ ইংরেজ ডিফেন্ডার ও গোলকিপার পিটার শিলটনকে কাটিয়ে গোল করেন। ২০০২ সালে, ফিফা অনলাইনে ভোটের আয়োজন করলে এই গোলটি ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে নির্বাচিত হয়।
১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু গোড়ালির ইনজুরির কারণে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মতো নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে শুধু দুটি খেলায় মাঠে নামেন। এর মধ্যে গ্রিসের বিপক্ষে একটি গোল করেন। ড্রাগ টেস্টে ইফিড্রিন ডোপিংয়ের কারণে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হলে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪টি গোল করেন।
২০০০ সালে ফিফা ম্যারাডোনাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে। যা নির্বাচিত হয় তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ম্যাগাজিনে ভোট এবং বিচারকের মাধ্যমে। অনলাইন ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন ম্যারাডোনা। তিনি পান ৫৩.৬% ভোট, যেখানে পেলে পেয়েছিলেন ১৮.৫৩% ভোট। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগে ফিফা অপ্রত্যাশিতভাবে সাংবাদিকদের নিয়ে ‘ফুটবল ফ্যামিলি’ নামে একটি কমিটি গঠন করে, যা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পেলেকে নির্বাচিত করে। পরে ফিফা দুজনকেই পুরস্কার প্রদান করে।
আন্তর্জাতিক কোচিং ক্যারিয়ার : ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে প্রথম তিনটি খেলায় জয় পেলেও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলায় আর্জেন্টিনা বড় ব্যবধানে হারে। ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের আর দুটি খেলা অবশিষ্ট ছিল। সে সময় আর্জেন্টিনার অবস্থান ছিল পঞ্চম। ফলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু শেষ দুই খেলায় জয়ের ফলে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
রাজনৈতিক দর্শন : ম্যারাডোনা বামপন্থি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তিনি আর্জেন্টিনার নব্য উদারনীতিবাদী প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমকে সমর্থন করতেন। কিউবায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালে সেখানকার নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ম্যারাডোনার বাম পায়ে কাস্ত্রোর প্রতিকৃতি ট্যাটু আছে এবং ডান হাতে আছে স্বদেশি চে গুয়েভারা ট্যাটুকৃত প্রতিকৃতি। ম্যারাডোনা নিজের আত্মজীবনী এল দিয়েগো উৎসর্গ করেছেন কয়েকজন মানুষের প্রতি, যাদের মধ্য ফিদেল ক্যাস্ত্রো অন্যতম। ম্যারাডোনা ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজেরও সমর্থক ছিলেন।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০

অনেক বিশেষজ্ঞ, ফুটবল সমালোচক, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় এবং ফুটবল সমর্থকদের বিবেচনায় সর্বকালের সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তিনি ফিফার বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় পেলের সঙ্গে যৌথভাবে ছিলেন। ম্যারাডোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুবার স্থানান্তর ফির ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। প্রথমবার বার্সেলোনায় স্থানান্তরের সময় ৫ মিলিয়ন ইউরো এবং দ্বিতীয়বার নাপোলিতে স্থানান্তরের সময় ৬.৯ মিলিয়ন ইউরো। নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। ক্লাব পর্যায়ে তিনি তার নাপোলিতে কাটানো সময়ের জন্য বিখ্যাত, যেখানে তিনি অসংখ্য সম্মাননা জেতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪ গোল করেন।
ম্যারাডোনা চারটি ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতেন। ওই প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে জয় পায়। দুটি গোলই করেন ম্যারাডানা। দুটি গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে দুটি ভিন্ন কারণে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল যা ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামেখ্যাত। দ্বিতীয় গোলটি ম্যারাডোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফাডটকমের ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।
ম্যারাডোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং সংবাদ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের অন্যতম মনে করা হয়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেন সেবনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে পজিটিভ ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে কোকেন সেবন বন্ধ করেন। মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে মাঝেমধ্যেই সাংবাদিক এবং ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তার মতভেদের সৃষ্টি হয়। ম্যানেজার হিসেবে খুব কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালের নভেম্বরে তাকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১০ বিশ্বকাপের পর চুক্তি শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি ১৮ মাস এ দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনেস এইরেস প্রদেশের লানুস শহরের পলিক্লিনিকো এভিতা হাসপাতালে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন বুয়েনেস এইরেসের দক্ষিণ প্রান্তের একটি ছোট্ট শহর ভিয়া ফিওরিতোতে। তিন কন্যাসন্তানের পর তিনিই ছিলেন বাবা-মার প্রথম ছেলে সন্তান। তার ছোট দুই ভাই হুগো (এল তুর্কো) ও রাউল (লালো) দুজনই পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। ম্যারাডোনা হলেন ‘চিতরো’ ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও ‘দোনা তোতা’ দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কোর পঞ্চম সন্তান।
১০ বছর বয়সে ম্যারাডোনা যখন এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলছিলেন তখন তাকে খুঁজে বের করেন একজন স্কাউট। তিনি দ্য লিটল অনিঅনের (আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দল) একজন মূল খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ১২ বছর বয়সে বল-বয় হিসেবে, প্রথম বিভাগের খেলার অর্ধ বিরতির সময় বল দিয়ে জাদুকরী কারুকার্য দেখিয়ে তিনি দর্শকদের সন্তুষ্ট করতেন।
ক্লাব ক্যারিয়ার : ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর, নিজের ষোলোতম জন্মদিনের ১০ দিন আগে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়। সেখানে তিনি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন এবং ১৬৭ খেলায় ১১৫টি গোল করেন। এরপর ১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বোকা জুনিয়র্সে পাড়ি জমান। ১৯৮১ মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বোকায় যোগ দিয়ে ১৯৮২ সালে তিনি প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
১৯৮২ বিশ্বকাপের পর ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৩ সালে কোচ সিজার লুইস মেনোত্তির অধীনে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে এবং বিলবাওকে হারিয়ে স্পেনীয় সুপার কাপ জেতেন। তবে বার্সায় ম্যারাডোনা কিছুটা খারাপ সময় কাটিয়েছেন।
ম্যারাডোনা বার্সেলোনায় ৫৮ খেলায় ৩৮টি গোল করেন। বার্সায় থাকাকালে ক্লাব পরিচালকদের সঙ্গে ঘনঘন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, বিশেষ করে ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ লুইস নুনেজের সঙ্গে। ১৯৮৪ সালে আরেকটি রেকর্ড স্থানান্তর ফিতে (৬.৯ মিলিয়ন ইউরো) সিরি-আ ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন তিনি। ইতালিয়ান ক্লাবটিতে যোগ দিয়ে ম্যারাডোনা তার পেশাদার ক্যারিয়ারের শিখরে পৌঁছান। খুব দ্রুত ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সেই সময়টিই ছিল নাপোলির ইতিহাসের সফলতম যুগ।
ইতালিতে থাকাকালে ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তার কোকেন আসক্তি চলতে থাকে। অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকায় ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে ৭০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়। ইতালিতে ম্যারাডোনাকে সন্তানের জন্মসংক্রান্ত কেলেঙ্কারিরও মুখোমুখি হতে হয়।
ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ১৯৯২ সালে ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়ে দেন। স্পেনীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও ফরাসি ক্লাব অলিম্পিকে মার্শেই তার প্রতি আগ্রহী হলেও তিনি স্পেনীয় ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর ছিলেন। ১৯৯৩ সালে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেন এবং ১৯৯৫ সালে বোকা জুনিয়র্সে ফিরে আসেন এবং সেখানে দুই বছর খেলেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কিছু আগে ম্যারাডোনা টটেনহাম হটস্পারের হয়েও মাঠে নামেন ইন্টারন্যাজিওনালের বিপক্ষে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার : আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ম্যারাডোনা টানা চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৯৮৬-এ আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয় এবং ১৯৯০-তে হয় রানার্সআপ।
১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়। ১৯৭৯ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৭৯ সালের ২ জুন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম গোল করেন ম্যারাডোনা। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ (১৯৭৯) ও ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৮৬) উভয় প্রতিযোগিতায় গোল্ডেন বল জিতেছেন। ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ছিল ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ।
দ্য হ্যান্ড অফ গড : ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। প্রতিযোগিতার ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। প্রতিযোগিতার পুরোটা জুড়েই ছিল ম্যারাডোনার আধিপত্য। দলের প্রতিটি খেলায় পুরোটা সময়ই মাঠে ছিলেন। প্রতিযোগিতায় পাঁচটি গোল করেন এবং সতীর্থদের দিয়ে করান আরও পাঁচটি। প্রতিযোগিতায় প্রথম গোল করেন ইতালির বিপক্ষে, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় খেলায়। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রমাণ করেন। আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলায় উত্তেজনার কমতি ছিল না। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ৫১ মিনিটে ম্যারাডোনা একটি গোল করেন। রিপ্লেতে দেখা যায় গোলটি করার সময় তিনি হাত দিয়ে বলে আঘাত করেছেন। পরে এই গোলের নাম দেওয়া হয় ‘দ্য হ্যান্ড অফ গড’। ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট একটি টেলিভিশন শোতে ম্যারাডোনা স্বীকার করেন যে তিনি গোলটি ইচ্ছাকৃতভাবেই হাত দিয়ে করেছিলেন, তার মাথা বল স্পর্শ করেনি এবং সে মুহূর্তে তিনি জানতেন গোলটি অবৈধ। ইংরেজ খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ করলেও রেফারি গোলের বাঁশি বাজান। এর চার মিনিট পরেই ম্যারাডোনা দ্বিতীয় গোল করেন, যেটিকে ফিফা পরবর্তীতে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করে। মাঠে নিজেদের অর্ধে তিনি বল নিয়ে অর্ধেকেরও বেশি অংশ দৌড়িয়ে, পাঁচ ইংরেজ ডিফেন্ডার ও গোলকিপার পিটার শিলটনকে কাটিয়ে গোল করেন। ২০০২ সালে, ফিফা অনলাইনে ভোটের আয়োজন করলে এই গোলটি ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে নির্বাচিত হয়।
১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু গোড়ালির ইনজুরির কারণে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মতো নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে শুধু দুটি খেলায় মাঠে নামেন। এর মধ্যে গ্রিসের বিপক্ষে একটি গোল করেন। ড্রাগ টেস্টে ইফিড্রিন ডোপিংয়ের কারণে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হলে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪টি গোল করেন।
২০০০ সালে ফিফা ম্যারাডোনাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে। যা নির্বাচিত হয় তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ম্যাগাজিনে ভোট এবং বিচারকের মাধ্যমে। অনলাইন ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন ম্যারাডোনা। তিনি পান ৫৩.৬% ভোট, যেখানে পেলে পেয়েছিলেন ১৮.৫৩% ভোট। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগে ফিফা অপ্রত্যাশিতভাবে সাংবাদিকদের নিয়ে ‘ফুটবল ফ্যামিলি’ নামে একটি কমিটি গঠন করে, যা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পেলেকে নির্বাচিত করে। পরে ফিফা দুজনকেই পুরস্কার প্রদান করে।
আন্তর্জাতিক কোচিং ক্যারিয়ার : ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে প্রথম তিনটি খেলায় জয় পেলেও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলায় আর্জেন্টিনা বড় ব্যবধানে হারে। ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের আর দুটি খেলা অবশিষ্ট ছিল। সে সময় আর্জেন্টিনার অবস্থান ছিল পঞ্চম। ফলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু শেষ দুই খেলায় জয়ের ফলে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
রাজনৈতিক দর্শন : ম্যারাডোনা বামপন্থি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তিনি আর্জেন্টিনার নব্য উদারনীতিবাদী প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমকে সমর্থন করতেন। কিউবায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালে সেখানকার নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ম্যারাডোনার বাম পায়ে কাস্ত্রোর প্রতিকৃতি ট্যাটু আছে এবং ডান হাতে আছে স্বদেশি চে গুয়েভারা ট্যাটুকৃত প্রতিকৃতি। ম্যারাডোনা নিজের আত্মজীবনী এল দিয়েগো উৎসর্গ করেছেন কয়েকজন মানুষের প্রতি, যাদের মধ্য ফিদেল ক্যাস্ত্রো অন্যতম। ম্যারাডোনা ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজেরও সমর্থক ছিলেন।