
যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের কাছে ব্রেক্সিট চুক্তি ক্রমেই আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ ব্রেক্সিট ও বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অংশ ছিল যুক্তরাজ্য। ব্রাসেলসের সময় ৩১ তারিখ মধ্যরাতে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হলো যুক্তরাজ্য, ব্রেক্সিট সম্পূর্ণ হলো। এবার ভ্রমণ কিংবা বাণিজ্যে নতুন আইন-কানুন মানতে হবে দুই পক্ষকেই। ঐতিহাসিক এই ‘বিচ্ছেদের’ প্রভাব পড়ছে যুক্তরাজ্য বা ইইউর সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা অঞ্চলের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। ইতিমধ্যে ইইউর সঙ্গে চীন বিনিয়োগ চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছছে। বাংলাদেশ এখনই ব্রেক্সিট নিয়ে খুব বেশি মাথা না ঘামালেও চিন্তায় আছে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) নিয়ে। তবে যুক্তরাজ্য আগেই জানিয়েছিল ব্রেক্সিটের পরেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত ৪৭টি দেশ যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা পাবে।
২০১৬ সালে ঐতিহাসিক গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় যুক্তরাজ্য। কিন্তু উভয়পক্ষ একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হতে না পারায় গত ১১ মাস ধরে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ আটকে ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং বাণিজ্য নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর ইইউর ২৭টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইইউ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেন। পরে ইইউর শীর্ষ কর্মকর্তারা চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সই করেন। তারপর গত বুধবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে ৫২১-৭৩ ভোটে দ্রুতই চুক্তিটি অনুমোদন পায়। সেখান থেকে উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে এ চুক্তি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের পর রানীও তাতে সম্মতি দেন এবং সেটি আইনে পরিণত হয়।
নতুন চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে উৎপাদিত পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ইইউর অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে। তার অর্থ যুক্তরাজ্য এবং ইইউর মধ্যে পণ্য আমদানিতে কোনো কর দিতে হবে না।
কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আগের মতো ব্যবসার প্রয়োজনে বা ইইউর দেশগুলো ভ্রমণে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কাগজপত্র লাগবে না। বরং এখন থেকে তাদের আরও বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়বে। ব্যাংকিং এবং অন্যান্য সেবাখাত কোন নিয়মে চলবে তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। য্ক্তুরাজ্যের অর্থনীতিতে এই দুই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। ৩১ তারিখ রাতেও সে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ইংরেজি নিউ ইয়ার উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য শুধু ফ্রান্সের প্রতিবেশী নয়, বন্ধু দেশ। ব্রেক্সিটের পর কীভাবে সেই সম্পর্ক বজায় থাকবে, তা নিয়ে ফ্রান্স উদ্বিগ্ন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নতুন বছর উপলক্ষে বক্তৃতায় বরিস বলেছেন, যুক্তরাজ্য একটি স্বাধীন, আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী রাষ্ট্রে পরিণত হলো। স্বাধীনভাবে এবার বাণিজ্যে অংশ নেওয়া যাবে।
তবে এবার আর যুক্তরাজ্যের মানুষ ইউরোপে স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারবে না। ভিসা করেই ইউরোপের যেকোনো দেশে ঢুকতে হবে।
চুক্তি অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন টানা যুক্তরাজ্যের কোনো মানুষ ইউরোপের কোনো দেশে থাকতে চাইলে তাকে ভিসা করাতে হবে। অন্যদিকে ইউরোপের কোনো মানুষ যুক্তরাজ্যে টানা ছয় মাস ভিসা ছাড়া থাকতে পারবে। এর বেশি থাকতে চাইলে তার ভিসা লাগবে। ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যে এসে কাজ করতে চাইলে অথবা যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপে গিয়ে কাজ করতে চাইলে ওয়ার্ক ভিসা বাধ্যতামূলক।
ব্রেক্সিটের কয়েক দিন আগে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ফলে মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাবে দুপক্ষই। জিব্রাল্টার নিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ মুহূর্তে আরও একটি চুক্তি হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও স্পেনের মধ্যবর্তী জিব্রাল্টার প্রণালি কার হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। ৩১ তারিখ শেষ মুহূর্তে দুই দেশ সিদ্ধান্ত নেয় জিব্রাল্টার স্পেন ও যুক্তরাজ্য দুই তরফের কাছেই খোলা থাকবে। এখানে যাতায়াতের জন্য আলাদা কোনো অনুমতি লাগবে না।
এদিকে গত সপ্তাহে যখন ব্রেক্সিটপরবর্তী বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাজ্য ও ইইউ সম্মতি প্রকাশ করে তার পরই চীন-ইইউ মাল্টি-বিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগ চুক্তিতে সম্মতির কথা জানায়।
তখন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লিয়েন এবং ইইউর সিনিয়র কর্মকর্তারা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে এক টেলিকনফারেন্সে অংশ নিয়ে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
পরে এক টুইট বার্তায় জার্মানির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লিয়েন বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার রয়েছে ইইউর। ব্যবসার জন্য আমরা উন্মুক্ত, তবে সুষম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র এবং মূল্যবোধের বিষয়েও আমরা সম্পৃক্ত।
এদিকে যুক্তরাজ্য-ইইউ আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে বাণিজ্য বিষয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি বেক্সিটপরবর্তী জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে। এ ছাড়া এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনপরবর্তী ১০ বছর যাতে জিএসপি সুবিধাটি থাকে সেই চেষ্টাও চলছে।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এখন আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির পরিবর্তে বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, কোনো ফোরামের সঙ্গে চুক্তি হলে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা করে চুক্তি করার প্রয়োজন হয় না। অবশ্য এখন জাপানসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চলছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত ৪৭টি দেশ যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা পাবে বলে আগেই জানিয়েছিল লন্ডন। ব্রিটিশ সরকারের ভাষ্য, সারা বিশ্বে ভিন্ন শুল্ক কাঠামোতে পণ্য আমদানি করলেও স্বল্পোন্নত আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্য পুরোপুরি শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।
গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাছি সময়ে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়কমন্ত্রী লিস ট্রাস ট্রুজ বলেছিলেন, যুক্তরাজ্য এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে নেই। ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হলে ব্রিটিশ আমদানিকারকরা বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর পোশাক ও শাকসবজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে শূন্য বা হ্রাস শুল্ক প্রদান অব্যাহত রাখবে। এটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোকে সুদৃঢ় শিল্প প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তি হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংকট এখনই কাটছে না। ইউনিয়ন ছেড়ে যুক্তরাজ্যের চলে যাওয়ার পর জোটের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। যুক্তরাজ্যের পথ ধরে ইউনিয়নের আরও দেশ জোট ছাড়তে চাইতে পারে। কারণ ইউনিয়নের কার্যক্রমের বড় হিস্যা ছিল যুক্তরাজ্যের। দেশটি চলে যাওয়ার ফলে ইউরোপের ব্যয় নির্বাহে যেমন চাপ বাড়বে তেমনি সামরিক জোটেও টানাপড়েন সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিমধ্যেই জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিকট ভবিষ্যতে এ উদ্বেগ যে আরও বাড়বে এমনটা বলছেন বিশ্লেষকরা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলছিল বেশ জোরেশোরেই। তবে হঠাৎই তাতে ছন্দপতন ঘটিয়েছে মাটির নিচে পাওয়া বিধ্বংসী ক্ষমতার কিছু বোমা। প্রকল্প এলাকায় মাটি খুঁড়তে গিয়ে এখন পর্যন্ত একে একে মিলেছে পাঁচটি তাজা বোমা। মাটির নিচে পুঁতে থাকা বোমাগুলোর সবই একই প্রকৃতির। ২৫০ কেজি ওজনের বোমাগুলো সতেজ ও বিধ্বংসী ক্ষমতার। সর্বশেষ গত বুধবার মিলেছে একটি বোমা। গত ৯ ডিসেম্বর পাওয়া যায় প্রথম বোমাটি। প্রতিটি বোমাই উদ্ধার হয়েছে শ্রমিকরা মাটি খননের কাজের সময়। এখন পর্যন্ত কোনো বোমায় কিছুই না ঘটলেও প্রকল্প এলাকায় কর্মরতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অজানা শঙ্কা ও ভীতি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কারা কখন বোমাগুলো পুতে রেখেছে বা নিক্ষেপ করেছে, এগুলো কতটা ভয়ংকর বা মাটির নিচে রেখেই যদি তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হয় তা কতটা নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ?
এসব প্রশ্ন নিয়ে সামরিক-বেসামরিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে বিভিন্ন তথ্য। তাদের দৃষ্টিতে অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে এসব বোমার কার্যকারিতা বা বিধ্বংসী ক্ষমতা। অস্পর্শ থাকলে মাটির নিচে এসব বোমার খুব একটা বিধ্বংসী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অলৌকিকভাবে যদি ঘটে যায় সেটা ভিন্ন কথা। যদিও তেমন আশঙ্কা নেই বলে মত বিশ্লেষকদের।
থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) একেএম মাকসুদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের বোমা তা ছোটই হোক বা বড়ই হোক, পাওয়া গেলে কিংবা উদ্ধারের পর এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়। এখানেও কর্মরতদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক আছে। একের পর এক বোমা পাওয়া যাচ্ছে। আরও কতগুলো মাটির নিচে পুঁতে রয়েছে সেটা তো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটা নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। বিমানবাহিনীর কাছে যে ধরনের স্ক্যানার রয়েছে তার একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জ রয়েছে। তারপরও বোমা থাকার শঙ্কায় নির্মাণাধীন এলাকা পুরোটা স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, বর্তমানে থার্ড টাার্মিনাল নির্মাণকাজ চলছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে। একসময় এখানে ছিল বিশাল জলাশয়। স্বাধীনতার পর সেখানে গড়ে উঠে বন-জঙ্গল, ঝোপঝাড় ও বিশেষ ধরনের বাগান। যা সরকারের বন বিভাগ তদারকি করত। থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের লাগোয়া পশ্চিমেই অবস্থান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। সর্বপ্রথম গত ৯ ডিসেম্বর ২৫০ কেজি ওজনের বোমাটি উদ্ধারের পর হইচই পড়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা প্রকল্প এলাকায়। যে কারণে প্রথম বোমাটি পাওয়ার পর থেকেই সতর্কতার সঙ্গে চলছে মাটি খোঁড়ার কাজ। জেনারেল পারপাস (জিপি) মডেলের আরও বোমা থাকার শঙ্কায় নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকা স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে নেওয়া হচ্ছে বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহায়তা। পাইলিং করা বা মাটি খোঁড়ার সময় বোমার অস্তিত্ব টের পাওয়ার পরপরই দ্রুত উদ্ধার করেছে তারা। প্রথম থেকেই আইএসপিআর বলে আসছে, প্রতিটি বোমাই ২৫০ কেজি ওজনের। সামরিক ভাষায় এটা জেনারেল পারপাস (জিপি) বোমা। যে কারণে প্রতিবারই বোমার অবস্থান শনাক্ত হলে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর প্রশিক্ষিত বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে। আর বোমাগুলো উদ্ধার করে নিয়ে নিরাপদ স্থানে ধ্বংস করা হয়েছে। বোমাগুলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিমানবাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তা মনে করছেন, এগুলো হতে পারে একাত্তরের বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময়কার। কারণ তখন এই এলাকায় বিমানবন্দর বা মানুষের বসতি ছিল না। তবে এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ক্যান্টেনমেন্টে বিমানবাহিনীর একটি বেজ ও এয়ারপোর্ট ছিল। তখনকার বোমাও হতে পারে এগুলো।
জানতে চাইলে বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এয়ার কমোডর জাকিউল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের যেকোনো বোমাই মানুষের মাঝে প্যানিক সৃষ্টি করে, হোক সেটা তাজা অথবা অচল। দেখতে হবে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয়ের সময় কী ধরনের বিধ্বংসী ক্ষমতা ধরা পড়ে কিংবা অন্য কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় কি না। সাধারণত এ ধরনের বোমাগুলো যুদ্ধের সময় প্লেন থেকে ছোড়া হয়। এগুলোর মুখে বোম পিন পিস্তল থাকে যার মাধ্যমে বিস্ফোরিত করা হয়। সেটি যদি নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্টভাবে ডিভাইস দ্বারা বিস্ফোরিত করা না যায় তাহলে অক্ষতই থেকে যায়।’
বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দেখতে হবে বোমাগুলো কোন প্যাটার্নে নিক্ষেপ করা বা ভূপাতিত করা হয়েছিল। যদি একই লাইনে পাওয়া গিয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এগুলো এক প্লেনের এক হামলাতেই ফেলা হয়েছিল। যদি বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে একাধিক প্লেন অ্যাটাকের পরিণতি এটা। তবে যেটাই হোক বোমাগুলো মাটির নিচে থাকায় তেমন ভয়ের কারণ নেই। সাধারণত আমাদের দেশে যে ধরনের স্ক্যানার দিয়ে বোমা সার্চ করা হয় সেগুলোর রেঞ্জ খুব বেশি নয়। যে কারণে এখন ম্যানুয়ালি ধরা পড়ছে বা পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি এগুলো মাটির অনেক নিচেই। সেজন্য ভয়ের কারণ নেই। বোমাগুলো মাটির নিচে বিস্ফোরিত হওয়ার তেমন কারণও নেই। তবে যদি কাজ করার সময় পাইলিং ইক্যুপমেন্টে বড় ধরনের আঘাত লেগে যায় অসাবধানবশত তখন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে কর্মরত শ্রমিকসহ সবাইকে। এজন্য আলাদা নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বোমাগুলো যদি যুদ্ধবিমান থেকেই ফেলা হয়ে থাকে তাহলে বিস্ফোরিত না হওয়ার কারণ কী এমন প্রশ্নের জবাবে জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের বোমা একটি সুনির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে ফেলতে হয়। ভূপাতিত হওয়ার সময় বাতাসের ঘূর্ণনে বোমার নোজ পিনের কার্যকারিতায় বিস্ফোরিত হয়। এগুলো হয়তো সেই উচ্চতা অনুসরণ না করেই অনেক নিচ থেকে ফেলা হয়েছে, ফলে বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই মাটিতে পড়ে গেছে।’
একই ধরনের কথা বলেছেন সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) নাঈম হাসান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল যেখানে নির্মিত হচ্ছে সেটি একসময় নিচু এলাকা বন-জঙ্গল ও জলাশয় ছিল। গোটা কুর্মিটোলা এলাকাটাই ছিল কয়েক দশক আগে জলাধার ও বিলের মতো। এমনকি কিছুদিন আগেও ছিল পানির নিচে। সেজন্য নরম কাদামাটির নিচে সহজেই ভারী বোমাগুলো তলিয়ে গেছে।’
বোমাগুলো নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পুরনো বোমাগুলো এখনকার বোমার মতো শক্তিশালী নয়। এত বছরেও বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটেনি। মাটির নিচে আরও বোমা থাকলেও তা কার্যকারিতা হারাবে। এখনো বিশ্বের অনেক দেশেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বোমা উদ্ধার হচ্ছে। তবে অবশ্যই কাজ করার সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশেষ সেফটি নিয়ে রাখতে হবে।’
জানা গেছে, সর্বশেষ গত বুধবার শনাক্ত হওয়া পঞ্চম বোমাটিও একই ধরনের। উদ্ধারও করা হয়েছে একই কায়দায়। কর্মরত শ্রমিকরা মাটি খননের সময় হঠাৎ দেখতে পান বোমাটি। পরে সতর্কতার সঙ্গে সেখান থেকে নিরাপদে সরে যান তারা। জানতে চাইলে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে বিমানবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে আরও বোমা আছে। তবে বেশ কয়েকবার এলাকাটি স্ক্যান করেও সেগুলোর অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। এগুলো মাটির বেশ গভীরে রয়েছে। এজন্যই স্ক্যানারে ধরা পড়ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোমাগুলো প্রত্যেকটিই একই ধরনের এবং একই প্রস্তুতকারীর। প্রত্যেকটিই মাটির নিচে থেকে জং ধরে গেছে যা একসময় নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে মাটির নিচে থেকে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। তারপরও স্ক্রিনিংয়ের কাজ করছে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষিত বম্ব ডিসপোজাল দল। আরও বোমা পাওয়া গেলে তারা উদ্ধার করবে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওয়ালখালীতে দিনেদুপুরে ১৫ দিনের নবজাতক সন্তান সোহানকে চুরির অভিযোগ তোলেন বাবা সোহাগ মিয়া ও মা ফাতেমা খাতুন। ৩৬ ঘণ্টা পর গত বছর ২৭ নভেম্বর রাতে সোহানের মরদেহ বাড়ির বাথরুমের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুর বাবা ও মা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন, জন্মের পর থেকেই শিশুটি হার্টের সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছিল। আর্থিক দুরবস্থা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় তারা শিশুকে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে একটি ভাড়া বাসায় ১১ বছরের ছেলে ও সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়েকে রেখে কাজে যান শ্রমজীবী বাবা ও মা। গত ১৪ অক্টোবর দুপুরে ওই বাসায় সাবলেট থাকা তরুণ জিয়াউর রহমান (৩০) সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুকে ধর্ষণ করে। পরে মারধরের পর ওই তরুণকে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।
শিশুর প্রতি নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা কিছুতেই কমছে না। শিশু হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, বলাৎকার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যেন নৈমিত্তিক বিষয়। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয় শিশু। পাল্টেছে নিষ্ঠুরতা ও পাশবিকতার ধরন। মানবাধিকার সংগঠন, শিশু অধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীরা বলছেন, শিশুর মানবাধিকার পরিস্থিতি দিনকে দিনকে নাজুক হচ্ছে। করোনাকালীন সংকটে পরিবারে আর্থিক দুরবস্থা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, পারিবারিক বন্ধন আলগা, শিশুর সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার নিশ্চিত না হওয়া, শিশু আইন যথাযথভাবে প্রতিপালন না করা, পরকীয়া, অপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে তাদের প্রতি নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পক্ষভুক্ত। এছাড়া শিশুর সুরক্ষায় ২০১৩ সালের শিশু আইনে দিকনির্দেশনা দেওয়া থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না।
শিশু অধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুরা তাদের সঙ্গে সংঘটিত অপরাধ বেশিরভাগ সময় অভিভাবককে জানাতে পারে না। অনেকে জানানোর মতো অবস্থায় থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে শিশু অবুঝ হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়। শিশু অবলা এবং তাদের ভয় দেখানো সহজ এ মানসিকতায় অপরাধীরা তাদের ওপর নির্যাতন চালায়।’
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে। বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, শিশু আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের অনেক কিছু যেমন প্রতিপালিত হয় না সংগত কারণে শিশুর প্রতি সহিংসতা কমছে না বরং বাড়ছে। এজন্য সামাজিক কারণ ছাড়াও তদন্তে অবেহলা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, অপরাধী পার পেয়ে যাওয়া এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। ইদানীং বলাৎকারের ঘটনা বাড়লেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে ছেলে শিশু বলাৎকার বা নির্যাতনের শিকার হলে সেটি প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণ নয়, তাই এর প্রতিকারও দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। অপরাধও বাড়ে।’
মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২০ সালের ১২ মাসে ৪৯০ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ সময়ে আত্মহত্যা করেছে ৯১ শিশু। এক বছরে বিভিন্ন বয়সী ১ হাজার ৭১৮ শিশু ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ছয় বছরের কম ১১৬ শিশু ধর্ষণের মতো নির্মমতার শিকার হয়েছে। একই সময়ে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ২৭৯ শিশু। এক বছরে বলাৎকারের শিকার হয় ৫২ ছেলে শিশু। এ ধরনের পাশবিকতায় তিন শিশুর মৃত্যু হয়। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয় ১০ শিশু। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিভিন্ন বয়সের ১ হাজার ৬৩৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৫০ নারীর বয়স ১৬ বছরের নিচে।
বিদায়ী বছরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেও নিরাপদ ছিল না শিশু। যশোরের পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গত ১৩ আগস্ট নির্যাতনে প্রাণ হারায় তিন শিশু। আহত হয় আরও ১৫ শিশু। গত ২২ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জে ‘শিশু পরিবারে’ ১২ বছরের শিশু জোবায়ের খানের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। স্বজনদের অভিযোগ, তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
দেশে শিশুর প্রতি অপরাধের বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। শিশু আইনের নবম অধ্যায়ে শিশুর প্রতি বিশেষ অপরাধগুলোর দণ্ড সম্পর্কে বলা আছে। কোনো ব্যক্তি যদি তার হেফাজতে কোনো শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলা, বর্জন, অরক্ষিত অবস্থায় পরিত্যাগ করে কিংবা অশালীন আচরণ করে শরীরের কোনো অঙ্গের ক্ষতি করে তাহলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া কোনো শিশুকে অবৈধ ও অপরাধজনক কাজে ব্যবহারের শাস্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। শিশু আইনের দশম অধ্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর বিকল্প পরিচর্যার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শিশুদের কল্যাণে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ‘শিশু কল্যাণ বোর্ড’ গঠন, প্রতিটি থানায় একটি করে শিশুবিষয়ক ডেস্ক স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ‘শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা’ হিসেবে গণ্য হবেন।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, আইনে উল্লেখ থাকলেও এসব বিধানের অনেক কিছুই কার্যকর করা হয়নি। এছাড়া শিশুকে হত্যা, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের বিচার নানা কারণে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। এ সুযোগে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাছাড়া শিশুকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা অহরহ ঘটলেও অনেক ক্ষেত্রে মামলা হয় না। এ ধরনের নির্যাতনের কারণে অপরাধীর বিচার হয়েছে এমন নজিরও খুব বেশি নেই।
শিশু অধিকার সংগঠন ‘চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের’ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম আবদুল (এমএ) হালিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা হৃদয়বিদারক। সমাজের সহানুভূতি ও মূল্যবোধের অভাবে এটি বেড়েই চলেছে। প্রান্তিক কিংবা বস্তিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের অবস্থা আরও করুণ।’
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে প্রত্যেকের জীবনের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এ অধিকারটা অর্থহীন হয়ে যায় যদি শিক্ষার অধিকার না থাকে। যে শিশুগুলো হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা যদি স্কুলে থাকত তাহলে এমনটা হতো না। শিশু আইন ও সংবিধানে শিক্ষার কথা বলা আছে। কিন্তু গত ৫০ বছরেও এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। সুযোগ না পেয়ে শিশুরা শ্রমিক, টোকাই, চোরাচালানীদের ডান বা বাম হাত হিসেবে কাজ করছে, বড় অপরাধে জড়াচ্ছে।’
এমএ হালিম আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলো যারা শিশুদের অধিকার রক্ষা করবে সেই প্রশাসন ও পুলিশ শিশু আইনের বিধান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত জেলায়, উপজেলায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি, আইন অনুযায়ী প্রতিটি থানায় শিশু সুরক্ষা ডেস্ক রাখার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি।’
মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এলিনা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী এবং শিশু এ দুই শব্দের মধ্যে কেন যেমন একটি অবহেলাসূচক ভাব থাকে। বিষয়টি অনেকটা এরকম, শিশুদের খুব পরিচর্যার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দিনকে দিন শিশুরা ধর্ষণ ও পাশবিক অত্যাচার এমনকি ঘরেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুর সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রের যে কিছু দায়িত্ব রয়েছে এবং নীতিমালা থাকা উচিত সেটি আদৌ হয়নি। নির্যাতনও বন্ধ হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশু নির্যাতন বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে, এখন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা ছাড়া নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখানো হয় না খুব একটা, যা শেখানো হয় তাও নামকাওয়াস্তে। আমার মনে হয় স্কুল-কলেজ থেকেই নৈতিকতা, সহানুভূতি, মূল্যবোধের শিক্ষা না হলে শুধু আইন দিয়ে শিশুর সুরক্ষা হবে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত একটা নীতিমালা হওয়া উচিত যেখানে শিশু সুরক্ষার বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফাইজার, সানোফি এবং গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লেইন তাদের ওষুধের দাম বাড়াতে যাচ্ছে নতুন বছরে। হেলথকেয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান থ্রি অ্যাক্সিস অ্যাডভাইজার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নতুন বর্ধিত মূল্য গতকাল শুক্রবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করবে।
ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বলছে, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে একটি চলমান মহামারী। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তাররা রোগী দেখার ফি কম নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধের দাম কমাতে বাধ্য হয়। ফলে ওই কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে যায়।
নতুন বছরে ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রায় তিন শতাধিক ওষুধের দাম ১০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়াচ্ছে। ফাইজার ও সানোফি অবশ্য তাদের ওষুধে ৫ শতাংশ দাম বাড়াচ্ছে। জিএসকে তাদের শিংগ্রিক্স ও ডিপথেরিয়ার টিকার দাম বাড়াচ্ছে যথাক্রমে ৭ ও ৮ দশমিক ৬ শতাংশ করে। তেভা ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের ১৫টি ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এ কোম্পানির অধিকাংশ ওষুধই স্নায়ুবিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ বিক্রি করেছে। কিন্তু মুনাফা কম হওয়ায় এখন তারা ৫ থেকে ৬ শতাংশ দাম বাড়াচ্ছে ওষুধপ্রতি।
কোম্পানিগুলো আশা করছে, এ মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে তারা তাদের কাক্সিক্ষত মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর এ মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো ট্রাম্প প্রশাসন কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়াকে সামনে রেখেই কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। কারণ গত মাসের গোড়ার দিকে ওষুধের দাম কমানো নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া উদ্যোগ আটকে দিয়েছিল এক ফেডারেল বিচারক। এমনকি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিদের সংগঠন পিএইচআরএমএ ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিল।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেও ওষুধের দাম কমানোর পক্ষেই বলেছিলেন একাধিকবার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্পের অধীনে ওষুধের দাম কমানোর কথা বলেছিলেন। তার এ সিদ্ধান্তের পেছনে কংগ্রেসের ডেমোক্রেট শিবিরের সমর্থন আছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চূড়ান্ত অর্থে ক্ষমতায় বসার পর জো বাইডেন তার কথা রাখেন কি না তাই দেখার বিষয়।
কক্সবাজারের টেকনাফে দুর্বৃত্তের গুলিতে মোহাম্মদ উসমান সিকদার (৪০) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। উসমান উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলতান মাহমুদ জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একটি ইজিবাইক (টমটম) চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ করেন উসমান। এ সময় সাবরাং নয়াপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ওরফে খুলু মেম্বারের ছেলে মোহাম্মদ শাকের ও কাটাবনিয়ার মোহাম্মদ কাসিমের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ অতর্কিতভাবে উসমানের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে। এ ঘটনায় উসমান বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ঘটনার জেরে শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় গতিরোধ করে উসমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন উসমানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আয়ুব হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগে ছাত্রলীগ নেতা উসমান সিকদার মারা গেছেন। তার শরীরে তিনটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, অভিযুক্তরা তালিকাভুক্ত ইয়াবা ও মানব পাচারকারী। তাদের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। উসমানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন জানান ওসি।
মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্বে সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ দিনে হলো শনাক্তের রেকর্ড। গত ৩১ ডিসেম্বর ৩৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে নতুন করে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর বিশ্বে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ১১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডমিটারসের হিসাবে নতুন এই রেকর্ড সংখ্যক এবং গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত আরও দেড় লাখ নতুন শনাক্ত নিয়ে বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তদের মধ্যে শনাক্তের সংখ্যা ৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। একই সময় ১৩ হাজার ৪১১ মৃত্যুতে মোট মৃতের সংখ্যা ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৭৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে করোনার টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে দুটিই এখনো লাগামহীন। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮৮০ জন।
গত এক দিনে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আরও ২ লাখ ২৮ হাজারের মতো সংক্রমিত হয়েছে। মোট সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি।
আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৮৩। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৫২। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়া যুক্তরাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ আরও বেড়েছে। দেশটিতে নতুন করে ৫৫ হাজার ৮৯২ জন আক্রান্ত হয়েছে। মোট সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ লাখ ৮৯ হাজারে। আরও ৯৬৪ মৃত্যুতে মোট মৃত্যু সাড়ে ৭৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।