তিন মামলার আসামি বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের পিডি!
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরপর তিনটি মামলা করে একজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। গুরুতর অভিযোগে হওয়া দুদকের এ মামলাগুলো মাথায় নিয়েও বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। আর কর্র্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পদোন্নতি পেয়েই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের’ প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বও পেয়ে যান। ৯০৫টি নলকূপ আধুনিকায়ন ও স্বয়ংক্রিয় করার সেই প্রকল্পেও ৪০ কোটি টাকার কেনাকাটার শুরুতেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন এ প্রকৌশলী। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রকল্পটির বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প পরিচালকও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। একের পর এক অনিয়ম করেও বহাল তবিয়তে থাকা এ প্রকৌশলী হলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মো. মশিউর রহমান। তবে এ প্রকৌশলীর দাবি, দুদকের মামলা ও বিশ্বব্যাংকের আপত্তি সবই হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি থেকে। সময় হলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।
পাউবো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২৯ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত সংস্থাটির পরিচালকের (প্রশাসন ও সংস্থাপন) কাছে একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি বলেন, দুদকের যশোর জেলার সমন্বিত কার্যালয় ই, আর নং ৭/২০১৬ অভিযোগটি তদন্তের জন্য সাবেক সহকারী পরিচালক মো. ওয়াজেদ আলী গাজীকে দায়িত্ব দেয়। এ কর্মকর্তার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় অভিযোগটি অধিকতর তদন্তের জন্য তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে উপপরিচালক আবুল হোসেনকে টিম লিডার করা হয়। এরপর এ কমিটি অভিযোগটি পুনঃতদন্ত করে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমানসহ তিনজনের নামে তিনটি মামলা মামলা করে। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট সাতক্ষীরার তালা থানায় ওই মামলা তিনটি করে দুদক।
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া প্রকৌশলী মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাগুলো চলমান থাকা অবস্থায় গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়। এরপর গত বছর শেষের দিকে আলোচিত এ প্রকৌশলীকে বিশ্বব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানেও তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক মো. ওবায়দুইল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত কারও বিরুদ্ধে দুদকে মামলা থাকলে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। বিষয়টি এমন হতে পারে, যে প্রকৌশলী পদোন্নতি পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে থাকা দুদকের মামলার তথ্য বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ অবগত নয়।’
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানিসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য পেতে ৯০৫টি গভীর নলকূপ আধুনিকায়ন ও স্বয়ংক্রিয় করার কাজ হাতে নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠে। দরপত্র ও চুক্তি অনুযায়ী ৮০ ভাগ উপকরণ জার্মানি ও বাকি ২০ ভাগ আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলতে হবে সরবরাহকারী দেশের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে। কিন্তু তা না করে স্থানীয়ভাবে মধুমতি ব্যাংক থেকে এলসি খোলা হয়েছে। এতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা মালামালের গুণাগুণ পরীক্ষা ও সঠিক সময়ে তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রকল্পের ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট পিডি আরতি বেলী আপত্তি জানিয়ে পাউবোর পিডি মো. মশিউর রহমানকে চিঠি দেওয়ার পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে এ প্রকল্পে দাতা সংস্থার অর্থায়ন হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনটি মামলা তদন্তাধীন আছে তা সত্য। সেখানে (দুদক) আমরা কথা বলেছি। বিষয়টি আরও গভীরে গিয়ে দেখবে তারা। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ ছাপানোর কী প্রয়োজন আছে?’ এরপর এ প্রকৌশলী ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরপর তিনটি মামলা করে একজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। গুরুতর অভিযোগে হওয়া দুদকের এ মামলাগুলো মাথায় নিয়েও বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। আর কর্র্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পদোন্নতি পেয়েই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের’ প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বও পেয়ে যান। ৯০৫টি নলকূপ আধুনিকায়ন ও স্বয়ংক্রিয় করার সেই প্রকল্পেও ৪০ কোটি টাকার কেনাকাটার শুরুতেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন এ প্রকৌশলী। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রকল্পটির বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প পরিচালকও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। একের পর এক অনিয়ম করেও বহাল তবিয়তে থাকা এ প্রকৌশলী হলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মো. মশিউর রহমান। তবে এ প্রকৌশলীর দাবি, দুদকের মামলা ও বিশ্বব্যাংকের আপত্তি সবই হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি থেকে। সময় হলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।
পাউবো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২৯ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত সংস্থাটির পরিচালকের (প্রশাসন ও সংস্থাপন) কাছে একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি বলেন, দুদকের যশোর জেলার সমন্বিত কার্যালয় ই, আর নং ৭/২০১৬ অভিযোগটি তদন্তের জন্য সাবেক সহকারী পরিচালক মো. ওয়াজেদ আলী গাজীকে দায়িত্ব দেয়। এ কর্মকর্তার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় অভিযোগটি অধিকতর তদন্তের জন্য তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে উপপরিচালক আবুল হোসেনকে টিম লিডার করা হয়। এরপর এ কমিটি অভিযোগটি পুনঃতদন্ত করে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমানসহ তিনজনের নামে তিনটি মামলা মামলা করে। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট সাতক্ষীরার তালা থানায় ওই মামলা তিনটি করে দুদক।
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া প্রকৌশলী মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাগুলো চলমান থাকা অবস্থায় গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়। এরপর গত বছর শেষের দিকে আলোচিত এ প্রকৌশলীকে বিশ্বব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানেও তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক মো. ওবায়দুইল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত কারও বিরুদ্ধে দুদকে মামলা থাকলে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। বিষয়টি এমন হতে পারে, যে প্রকৌশলী পদোন্নতি পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে থাকা দুদকের মামলার তথ্য বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ অবগত নয়।’
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানিসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য পেতে ৯০৫টি গভীর নলকূপ আধুনিকায়ন ও স্বয়ংক্রিয় করার কাজ হাতে নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠে। দরপত্র ও চুক্তি অনুযায়ী ৮০ ভাগ উপকরণ জার্মানি ও বাকি ২০ ভাগ আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলতে হবে সরবরাহকারী দেশের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে। কিন্তু তা না করে স্থানীয়ভাবে মধুমতি ব্যাংক থেকে এলসি খোলা হয়েছে। এতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা মালামালের গুণাগুণ পরীক্ষা ও সঠিক সময়ে তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রকল্পের ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট পিডি আরতি বেলী আপত্তি জানিয়ে পাউবোর পিডি মো. মশিউর রহমানকে চিঠি দেওয়ার পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে এ প্রকল্পে দাতা সংস্থার অর্থায়ন হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনটি মামলা তদন্তাধীন আছে তা সত্য। সেখানে (দুদক) আমরা কথা বলেছি। বিষয়টি আরও গভীরে গিয়ে দেখবে তারা। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ ছাপানোর কী প্রয়োজন আছে?’ এরপর এ প্রকৌশলী ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।