কাদেরের ভাইয়ের প্রশ্ন অন্য নেতাদের মুখেও
পাভেল হায়দার চৌধুরী | ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের আলোচিত বক্তব্যের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও দলের জনপ্রতিনিধিদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের আচরণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাই কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দলের জনপ্রতিনিধিদের আচরণগত সমস্যায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন হ্রাস পাচ্ছে। মির্জা আবদুল কাদের জনপ্রতিনিধিদের আচরণ নিয়ে যথার্থই বলেছেন। পাশের জেলা লক্ষ্মীপুরের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুও দাবি করেন ক্ষমতাবান কিছু নেতার আচার-আচরণে দলের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকও বলেন, দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধিদের আচার-আচরণ জনগণের কাছে আওয়ামী লীগকে সমালোচিত করে তুলছে। দায়িত্ব-কর্তব্য যথার্থভাবে না হলে উন্নয়ন-অগ্রগতি যতই হোক আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়াবে না।
সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদের নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়ে কথা বলেন। তৃণমূল নেতারাও মনে করেন আচার-আচরণে দায়িত্বশীল হলে আওয়ামী লীগের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকত।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আচরণগত সমস্যা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন নিম্নমুখী। ক্ষমতা যত দীর্ঘ হচ্ছে একশ্রেণির নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে উন্নয়ন-অগ্রগতি সমানতালে চললেও সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের অশালীন আচার-আচরণে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতাকর্মীর আচরণ অশালীন পর্যায়ে চলে গেছে। তবে তিনি বলেন, এই সমস্যা বড় নেতাদের নয়, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, থানা-জেলার ছিঁচকে নেতাদের। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক যে বলয় তৈরি হয়েছে তারাই মূলত খারাপ আচরণ করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি-উন্নয়ন এসব কিছু জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এই জায়গা থেকে দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দলের সভাপতিমন্ডলীর অপর এক সদস্য বলেন, সারা দেশে রাজনীতি একটি বলয় ও বিত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর ফলে ক্ষমতার চর্চাকারী একটি শ্রেণি সর্বদায় অসৌজন্যমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। ফলে দলীয় রাজনীতি-ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
সভাপতিমন্ডলীর ওই সদস্য আরও বলেন, খেয়াল করলে দেখবেন গত তিন মেয়াদে সংসদ নির্বাচনে বেশিরভাগ এলাকায় সংসদ সদস্য বদল হয়নি। নতুন মুখ না আসায় বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা নিজেদের দলের জন্য অপরিহার্য ভেবেই কাজ করেন। ফলে তাদের মধ্যে গরিমা কাজ করে। দলীয় রাজনীতির লাভ-লোকসান তারা হিসাব করে না। ওই শ্রেণিও অশালীন আচরণ করে। একই অবস্থা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর দলীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-উপজেলা ও পৌরসভায়ও এক ব্যক্তিই বারবার দলীয় মনোনয়ন পান। ফলে ওরাও নিজেদের দলের জন্য অপরিহার্য ভেবে বসে থাকায় অসৌজন্যমূলক আচরণ বেড়েই চলছে। সভাপতিমন্ডলীর প্রবীণ এই নেতা বলেন, মির্জা কাদেরের বক্তব্য সত্য। এই চিত্র সর্বত্র। তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দলের কিছু সংসদ সদস্য দলের চেয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আচরণগত সমস্যাকে দুরারোগ্য ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জৌলুস হারাবে। ঐতিহ্য হারাবে। তিনি বলেন, আমি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দেখেছি জনপ্রতিনিধিরাই বেশি অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। কারণ বারবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তারা নিজেকে দলের জন্য অপরিহার্য মনে করে। দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংসদ সদস্য থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যেসব জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুনত্ব এলে তাদের ভয়ভীতি থাকে। আচার-আচরণে সৌজন্যতা বজায়ে থাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর অপর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি আচার-আচরণে সৌজন্যতা নেই তা সত্যি, তবে সবাই এক নয়। আচরণ-সৌজন্যতায় জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ে আবার কমেও। তাই রাজনীতি যারা করেন তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
শেয়ার করুন
পাভেল হায়দার চৌধুরী | ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের আলোচিত বক্তব্যের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও দলের জনপ্রতিনিধিদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের আচরণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাই কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দলের জনপ্রতিনিধিদের আচরণগত সমস্যায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন হ্রাস পাচ্ছে। মির্জা আবদুল কাদের জনপ্রতিনিধিদের আচরণ নিয়ে যথার্থই বলেছেন। পাশের জেলা লক্ষ্মীপুরের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুও দাবি করেন ক্ষমতাবান কিছু নেতার আচার-আচরণে দলের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকও বলেন, দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধিদের আচার-আচরণ জনগণের কাছে আওয়ামী লীগকে সমালোচিত করে তুলছে। দায়িত্ব-কর্তব্য যথার্থভাবে না হলে উন্নয়ন-অগ্রগতি যতই হোক আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়াবে না।
সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদের নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়ে কথা বলেন। তৃণমূল নেতারাও মনে করেন আচার-আচরণে দায়িত্বশীল হলে আওয়ামী লীগের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকত।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আচরণগত সমস্যা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন নিম্নমুখী। ক্ষমতা যত দীর্ঘ হচ্ছে একশ্রেণির নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে উন্নয়ন-অগ্রগতি সমানতালে চললেও সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের অশালীন আচার-আচরণে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতাকর্মীর আচরণ অশালীন পর্যায়ে চলে গেছে। তবে তিনি বলেন, এই সমস্যা বড় নেতাদের নয়, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, থানা-জেলার ছিঁচকে নেতাদের। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক যে বলয় তৈরি হয়েছে তারাই মূলত খারাপ আচরণ করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি-উন্নয়ন এসব কিছু জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এই জায়গা থেকে দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দলের সভাপতিমন্ডলীর অপর এক সদস্য বলেন, সারা দেশে রাজনীতি একটি বলয় ও বিত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর ফলে ক্ষমতার চর্চাকারী একটি শ্রেণি সর্বদায় অসৌজন্যমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। ফলে দলীয় রাজনীতি-ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
সভাপতিমন্ডলীর ওই সদস্য আরও বলেন, খেয়াল করলে দেখবেন গত তিন মেয়াদে সংসদ নির্বাচনে বেশিরভাগ এলাকায় সংসদ সদস্য বদল হয়নি। নতুন মুখ না আসায় বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা নিজেদের দলের জন্য অপরিহার্য ভেবেই কাজ করেন। ফলে তাদের মধ্যে গরিমা কাজ করে। দলীয় রাজনীতির লাভ-লোকসান তারা হিসাব করে না। ওই শ্রেণিও অশালীন আচরণ করে। একই অবস্থা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর দলীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-উপজেলা ও পৌরসভায়ও এক ব্যক্তিই বারবার দলীয় মনোনয়ন পান। ফলে ওরাও নিজেদের দলের জন্য অপরিহার্য ভেবে বসে থাকায় অসৌজন্যমূলক আচরণ বেড়েই চলছে। সভাপতিমন্ডলীর প্রবীণ এই নেতা বলেন, মির্জা কাদেরের বক্তব্য সত্য। এই চিত্র সর্বত্র। তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দলের কিছু সংসদ সদস্য দলের চেয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আচরণগত সমস্যাকে দুরারোগ্য ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জৌলুস হারাবে। ঐতিহ্য হারাবে। তিনি বলেন, আমি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দেখেছি জনপ্রতিনিধিরাই বেশি অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। কারণ বারবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তারা নিজেকে দলের জন্য অপরিহার্য মনে করে। দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংসদ সদস্য থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যেসব জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুনত্ব এলে তাদের ভয়ভীতি থাকে। আচার-আচরণে সৌজন্যতা বজায়ে থাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর অপর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি আচার-আচরণে সৌজন্যতা নেই তা সত্যি, তবে সবাই এক নয়। আচরণ-সৌজন্যতায় জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ে আবার কমেও। তাই রাজনীতি যারা করেন তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।