পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভয় নেই
প্রতীক ইজাজ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে একটি গাইডলাইন করেছে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সেখানে টিকা নেওয়ার পর শরীরে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সতর্কতা নিতে হবে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সেই গাইডলাইন অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে জাতীয় পর্যায়ে দুদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে দেশে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শুরু হওয়া জাতীয় প্রশিক্ষণে কভিড নিয়ন্ত্রণ ও টিকা বিতরণে গঠিত কমিটিসহ টিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের টিকার নানা দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি) ও করোনা টিকা বিতরণ ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটা প্রতিরোধে কী ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কীভাবে টিকা দিতে হবে, সবাইকে জানাতে এ প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দিতে শুরু করবে সরকার। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। বেক্সিমকো ফার্মা সরকারকে জানিয়েছে, ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এ টিকা বাংলাদেশে আসবে। টিকা আসার পর দুদিন বেক্সিমকোর কোল্ড চেইনে থাকবে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা পাঠানো হবে।
অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে গত নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা দেবে সেরাম ইনস্টিটিউট। দেশের ২৩ শ্রেণির দেড় কোটি মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ টিকা দেওয়া হবে।
কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে : অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্য টিকার মতোই, বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ টিকার জন্য নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। সেজন্য টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মানুষের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলে বলেও পরামর্শ দেন তারা।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্য যেকোনো টিকার মতো করোনা টিকার ক্ষেত্রেও একই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এ টিকার জন্য নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। যেখানে টিকা দেবে সেখানে ফুলে যেতে পারে, ব্যথা হতে পারে, সেখানে একটা ফোঁড়ার মতো বা ঘা হতে পারে। মাথা ঘোরাতে পারে। অনেকে রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে এরকম একটা নতুন টিকা নিতে গেলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। ১০ লাখে এক-দুজনের মধ্যে অ্যালার্জির রিঅ্যাকশন হতে পারে। তাদের স্টোরাইড ইনজেকশন দিলে তারা ভালো হয়ে যাবেন। এটার চিকিৎসা আছে। এ টিকার জন্য নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে ডা. শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা টিকা নিলে মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম ভাব, কারও কারও বমিও হতে পারে। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম, দুই থেকে তিন শতাংশের মতো।
কোন শ্রেণির মানুষের জন্য কী ধরনের সতর্কতা : করোনা টিকা নিতে বিশেষ কোনো সতর্কতা নেই উল্লেখ করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যাকে টিকা দেওয়া হচ্ছে, এমন ১৮ বছর থেকে ৮০ ঊর্ধ্ব বয়স পর্যন্ত যে কারও যদি কোনো ফুড ও ড্রাগ অ্যালার্জি থাকে, তাদের টিকা না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, বয়স্ক জনগোষ্ঠীসহ যারা এই মুহূর্তে হাসপাতালে আছেন, কেমোথেরাপি বা ওষুধ নিচ্ছেন, তাদের টিকা দেওয়া হবে না। কিন্তু যারা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের টিকা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। যারা এই মুহূর্তে অসুস্থ আছেন, তারা কভিড হোন বা নন-কভিড হোন, তাদের টিকা দেওয়া হবে না। কারণ এখনো জানা যায়নি, তাদের টিকা নিলে ক্ষতি হবে কি না।
টিকাদান কেন্দ্রে কী ধরনের ব্যবস্থা রাখা উচিত : এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যারা টিকা নেবেন, নেওয়ার পর কমপক্ষে আধঘণ্টা টিকাদান কেন্দ্রে থাকতে হবে। সেখানে চিকিৎসক থাকবেন, তারা দেখবেন। এজন্য প্রথমেই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হবে, এর বাইরে টিকা দেওয়া হবে না। যখন সবাই অভিজ্ঞ হবেন ও মানুষ আতঙ্কমুক্ত হবেন, তখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদসহ অন্যান্য কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।
টিকা নেওয়ার পর কারও কোনো সমস্যা হলে, তিনি কোথায় যোগাযোগ করবেন, সেটা বলে দেওয়া হবে বলেন জানান এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, প্রত্যেক টিকাগ্রহীতাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে স্টাডি করার জন্য যে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে রিপোর্টও করতে হবে। কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় এবং সেটা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেটা জানতে সেজন্য প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকাদান কেন্দ্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার জানতে চাইলে ডা. শামসুল হক বলেন, টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এটাকে আমরা বলি আফটার ইফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন। বাংলাদেশে শিশু এবং বড়দেরও যে টিকা দেওয়া হয়, সেখানেও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। তাই যারা টিকা দেবেন, টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
এ কর্মকর্তা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক মেডিকেল টিম থাকবে, কেন্দ্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখা হবে। প্রয়োজন হলে এসব কেন্দ্রে চিকিৎসক দল তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হতে পারে অথবা উপজেলা হাসপাতালে চলে আসেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে। উপজেলা হাসপাতালেও চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ : এ ব্যাপারে ডা. শামসুল হক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে জাতীয় প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। যারা টিকা দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এজন্য আমরা প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যে ৭ হাজার ৩৪৪টি টিম দেশব্যাপী টিকা দেবে, সেই টিমের প্রত্যেক সদস্য বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ পাবে। প্রত্যেকে টিমে ছয়জন করে সদস্য থাকবে। সে হিসাবে সদস্য ৪৪ হাজার ৬৪ জন।
জাতীয় প্রশিক্ষণ হবে প্রথম দুদিন। এ প্রশিক্ষণ হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এখান থেকে যারা প্রশিক্ষণ পাবেন, তারা অনলাইনে বিভাগীয় ও জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেবেন। জেলার যারা প্রশিক্ষণ পাবেন, এরপর তারা উপজেলার লোকজনকে ডেকে সরাসরি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন।
এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা যাদের ট্রেনিং দেব, সেখানে এগুলো সবাইকে বলা হবে। যারা টিকা দেবেন এবং যে প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে সে প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদেরও জানতে হবে। সেজন্য টিকাদান পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমিটি (এইএফআই কমিটি) থাকবে। দেশে যেহেতু টিকা কার্যক্রম চলে, সেহেতু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ কমিটি তৈরি করা আছে। এটা নতুন কোনো কমিটি নয়। শুধু যে টিকা আসে, সে টিকার তথ্যগুলো তাদের দেওয়া হয়। কমিটির প্রত্যেক চিকিৎসক, সদস্য, কমিটিকে জানতে হবে। আবার বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও সেটাও কমিটি অবহিত করবে।
শেয়ার করুন
প্রতীক ইজাজ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে একটি গাইডলাইন করেছে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সেখানে টিকা নেওয়ার পর শরীরে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সতর্কতা নিতে হবে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সেই গাইডলাইন অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে জাতীয় পর্যায়ে দুদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে দেশে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শুরু হওয়া জাতীয় প্রশিক্ষণে কভিড নিয়ন্ত্রণ ও টিকা বিতরণে গঠিত কমিটিসহ টিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের টিকার নানা দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি) ও করোনা টিকা বিতরণ ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটা প্রতিরোধে কী ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কীভাবে টিকা দিতে হবে, সবাইকে জানাতে এ প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দিতে শুরু করবে সরকার। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। বেক্সিমকো ফার্মা সরকারকে জানিয়েছে, ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এ টিকা বাংলাদেশে আসবে। টিকা আসার পর দুদিন বেক্সিমকোর কোল্ড চেইনে থাকবে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা পাঠানো হবে।
অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে গত নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা দেবে সেরাম ইনস্টিটিউট। দেশের ২৩ শ্রেণির দেড় কোটি মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ টিকা দেওয়া হবে।
কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে : অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্য টিকার মতোই, বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ টিকার জন্য নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। সেজন্য টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মানুষের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলে বলেও পরামর্শ দেন তারা।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্য যেকোনো টিকার মতো করোনা টিকার ক্ষেত্রেও একই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এ টিকার জন্য নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। যেখানে টিকা দেবে সেখানে ফুলে যেতে পারে, ব্যথা হতে পারে, সেখানে একটা ফোঁড়ার মতো বা ঘা হতে পারে। মাথা ঘোরাতে পারে। অনেকে রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে এরকম একটা নতুন টিকা নিতে গেলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। ১০ লাখে এক-দুজনের মধ্যে অ্যালার্জির রিঅ্যাকশন হতে পারে। তাদের স্টোরাইড ইনজেকশন দিলে তারা ভালো হয়ে যাবেন। এটার চিকিৎসা আছে। এ টিকার জন্য নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে ডা. শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা টিকা নিলে মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম ভাব, কারও কারও বমিও হতে পারে। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম, দুই থেকে তিন শতাংশের মতো।
কোন শ্রেণির মানুষের জন্য কী ধরনের সতর্কতা : করোনা টিকা নিতে বিশেষ কোনো সতর্কতা নেই উল্লেখ করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যাকে টিকা দেওয়া হচ্ছে, এমন ১৮ বছর থেকে ৮০ ঊর্ধ্ব বয়স পর্যন্ত যে কারও যদি কোনো ফুড ও ড্রাগ অ্যালার্জি থাকে, তাদের টিকা না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, বয়স্ক জনগোষ্ঠীসহ যারা এই মুহূর্তে হাসপাতালে আছেন, কেমোথেরাপি বা ওষুধ নিচ্ছেন, তাদের টিকা দেওয়া হবে না। কিন্তু যারা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের টিকা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। যারা এই মুহূর্তে অসুস্থ আছেন, তারা কভিড হোন বা নন-কভিড হোন, তাদের টিকা দেওয়া হবে না। কারণ এখনো জানা যায়নি, তাদের টিকা নিলে ক্ষতি হবে কি না।
টিকাদান কেন্দ্রে কী ধরনের ব্যবস্থা রাখা উচিত : এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যারা টিকা নেবেন, নেওয়ার পর কমপক্ষে আধঘণ্টা টিকাদান কেন্দ্রে থাকতে হবে। সেখানে চিকিৎসক থাকবেন, তারা দেখবেন। এজন্য প্রথমেই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হবে, এর বাইরে টিকা দেওয়া হবে না। যখন সবাই অভিজ্ঞ হবেন ও মানুষ আতঙ্কমুক্ত হবেন, তখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদসহ অন্যান্য কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।
টিকা নেওয়ার পর কারও কোনো সমস্যা হলে, তিনি কোথায় যোগাযোগ করবেন, সেটা বলে দেওয়া হবে বলেন জানান এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, প্রত্যেক টিকাগ্রহীতাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে স্টাডি করার জন্য যে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে রিপোর্টও করতে হবে। কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় এবং সেটা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেটা জানতে সেজন্য প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকাদান কেন্দ্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার জানতে চাইলে ডা. শামসুল হক বলেন, টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এটাকে আমরা বলি আফটার ইফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন। বাংলাদেশে শিশু এবং বড়দেরও যে টিকা দেওয়া হয়, সেখানেও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। তাই যারা টিকা দেবেন, টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
এ কর্মকর্তা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক মেডিকেল টিম থাকবে, কেন্দ্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখা হবে। প্রয়োজন হলে এসব কেন্দ্রে চিকিৎসক দল তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হতে পারে অথবা উপজেলা হাসপাতালে চলে আসেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে। উপজেলা হাসপাতালেও চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ : এ ব্যাপারে ডা. শামসুল হক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে জাতীয় প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। যারা টিকা দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এজন্য আমরা প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যে ৭ হাজার ৩৪৪টি টিম দেশব্যাপী টিকা দেবে, সেই টিমের প্রত্যেক সদস্য বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ পাবে। প্রত্যেকে টিমে ছয়জন করে সদস্য থাকবে। সে হিসাবে সদস্য ৪৪ হাজার ৬৪ জন।
জাতীয় প্রশিক্ষণ হবে প্রথম দুদিন। এ প্রশিক্ষণ হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এখান থেকে যারা প্রশিক্ষণ পাবেন, তারা অনলাইনে বিভাগীয় ও জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেবেন। জেলার যারা প্রশিক্ষণ পাবেন, এরপর তারা উপজেলার লোকজনকে ডেকে সরাসরি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন।
এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা যাদের ট্রেনিং দেব, সেখানে এগুলো সবাইকে বলা হবে। যারা টিকা দেবেন এবং যে প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে সে প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদেরও জানতে হবে। সেজন্য টিকাদান পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমিটি (এইএফআই কমিটি) থাকবে। দেশে যেহেতু টিকা কার্যক্রম চলে, সেহেতু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ কমিটি তৈরি করা আছে। এটা নতুন কোনো কমিটি নয়। শুধু যে টিকা আসে, সে টিকার তথ্যগুলো তাদের দেওয়া হয়। কমিটির প্রত্যেক চিকিৎসক, সদস্য, কমিটিকে জানতে হবে। আবার বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও সেটাও কমিটি অবহিত করবে।