পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগের উদ্বোধন ২৭ জানুয়ারি
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
ভারতের দেওয়া উপহারের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কভিশিল্ড’ করোনার টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি বুধবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বেলা ১১টায় অথবা বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই দেশে করোনার টিকার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এই তারিখের তথ্য জানান। এ সময় সচিব টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সচিব জানান, সেদিন এই হাসপাতালের আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এদের মধ্যে করোনার সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের টিকা দেওয়া হবে। পরদিন ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাঁচশোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রেখে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি দেখা হবে। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে টিকাদান শুরু হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৭ জানুয়ারি টিকা প্রয়োগের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের জন্য দুটি সময়ের কথা জানানো হয়েছে একটি বেলা ১১টায়, আরেকটি বিকেল ৩টায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সময় দেবেন, সে অনুযায়ী উদ্বোধন হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, সেদিন একজন নার্সকে দিয়ে উদ্বোধন করা হবে। পরে অন্যদের দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ২৪ জনকে দেওয়া হতে পারে। তবে বেশিসংখ্যক নিতে ইচ্ছুক হলে তাদেরও দেওয়া হবে। প্রথম দিনের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করেছে। জাতীয় টিকাদান পরিকল্পনার অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী সব শ্রেণির একজন করে মানুষকে তালিকায় রাখার চেষ্টা করছি। উদ্বোধনের পরদিন পাঁচ হাসপাতালে একসঙ্গে পাঁচশোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভারতের উপহার হিসেবে দেওয়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কভিশিল্ড’ টিকা বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। মোট ১৬৭টি কার্টনে ২০ লাখ ৪ হাজার ডোজ টিকা এসেছে ভারত থেকে। প্রতি কার্টনে আছে ১২০০ ভায়াল ভ্যাকসিন। এক ভায়ালে ১০ জনকে টিকা দেওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির তেজগাঁও কোল্ডচেইনে এই টিকা রাখা হয়েছে।
এই টিকার প্রয়োগ নিয়ে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য প্রথমে চার হাসপাতালের কথা বলা হলেও পরে এর সঙ্গে বিএসএমএমইউকে যুক্ত করা হয়। এমনকি পরে টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনায়ও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পাঁচ হাসপাতালে একসঙ্গে একই দিন পাঁচশোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীকে কভিশিল্ড টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ কথা হয়। টিকার পাইলটিং করার মধ্য দিয়ে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাবে। টিকাদানের একটি অভিজ্ঞতাও হবে। কীভাবে টিকা দিতে হয়, কত সময় লাগে, এসব জানা যাবে। ট্রায়াল করা গেলে টিকা দেওয়া ও টিকার কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। টিকা নিতে আগ্রহী লোকজনের মধ্যে যদি কোনো ভয়ভীতি থাকে, সেটাও দূর হবে। অচেনা একটা জিনিস মানুষ চোখের সামনে দেখতে পারবে।
আগামী বুধবার শুরু হতে যাওয়া টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে হাসপাতালগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে টিকা নিতে ইচ্ছুক এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তবে হাসপাতালগুলো তালিকায় চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম রাখছে। টিকাদানের জন্য বুথ স্থাপনের কাজ চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষিত জনবল হাসপাতালগুলোয় এই টিকা প্রয়োগ করবেন।
শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

ভারতের দেওয়া উপহারের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কভিশিল্ড’ করোনার টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি বুধবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বেলা ১১টায় অথবা বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই দেশে করোনার টিকার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এই তারিখের তথ্য জানান। এ সময় সচিব টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সচিব জানান, সেদিন এই হাসপাতালের আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এদের মধ্যে করোনার সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের টিকা দেওয়া হবে। পরদিন ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাঁচশোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রেখে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি দেখা হবে। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে টিকাদান শুরু হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৭ জানুয়ারি টিকা প্রয়োগের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের জন্য দুটি সময়ের কথা জানানো হয়েছে একটি বেলা ১১টায়, আরেকটি বিকেল ৩টায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সময় দেবেন, সে অনুযায়ী উদ্বোধন হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, সেদিন একজন নার্সকে দিয়ে উদ্বোধন করা হবে। পরে অন্যদের দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ২৪ জনকে দেওয়া হতে পারে। তবে বেশিসংখ্যক নিতে ইচ্ছুক হলে তাদেরও দেওয়া হবে। প্রথম দিনের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করেছে। জাতীয় টিকাদান পরিকল্পনার অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী সব শ্রেণির একজন করে মানুষকে তালিকায় রাখার চেষ্টা করছি। উদ্বোধনের পরদিন পাঁচ হাসপাতালে একসঙ্গে পাঁচশোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভারতের উপহার হিসেবে দেওয়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কভিশিল্ড’ টিকা বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। মোট ১৬৭টি কার্টনে ২০ লাখ ৪ হাজার ডোজ টিকা এসেছে ভারত থেকে। প্রতি কার্টনে আছে ১২০০ ভায়াল ভ্যাকসিন। এক ভায়ালে ১০ জনকে টিকা দেওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির তেজগাঁও কোল্ডচেইনে এই টিকা রাখা হয়েছে।
এই টিকার প্রয়োগ নিয়ে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য প্রথমে চার হাসপাতালের কথা বলা হলেও পরে এর সঙ্গে বিএসএমএমইউকে যুক্ত করা হয়। এমনকি পরে টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনায়ও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পাঁচ হাসপাতালে একসঙ্গে একই দিন পাঁচশোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীকে কভিশিল্ড টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ কথা হয়। টিকার পাইলটিং করার মধ্য দিয়ে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাবে। টিকাদানের একটি অভিজ্ঞতাও হবে। কীভাবে টিকা দিতে হয়, কত সময় লাগে, এসব জানা যাবে। ট্রায়াল করা গেলে টিকা দেওয়া ও টিকার কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। টিকা নিতে আগ্রহী লোকজনের মধ্যে যদি কোনো ভয়ভীতি থাকে, সেটাও দূর হবে। অচেনা একটা জিনিস মানুষ চোখের সামনে দেখতে পারবে।
আগামী বুধবার শুরু হতে যাওয়া টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে হাসপাতালগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে টিকা নিতে ইচ্ছুক এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তবে হাসপাতালগুলো তালিকায় চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম রাখছে। টিকাদানের জন্য বুথ স্থাপনের কাজ চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষিত জনবল হাসপাতালগুলোয় এই টিকা প্রয়োগ করবেন।