সহিংস ভোটের ফলে আ.লীগ প্রার্থী জয়ী
শামসুল ইসলাম, সুবল বড়ুয়া ও নয়ন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম | ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
দফায় দফায় গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, কেন্দ্র দখল করে ইভিএমে একচেটিয়া ভোট প্রদান, ইভিএম ভাঙচুর, এজেন্টদের মারধর এবং প্রার্থীর ওপর হামলাসহ চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচন। গতকাল বুধবারের এ নির্বাচন চলাকালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আটক করা হয়েছে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে। স্থগিত করা হয়েছে দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ।
ভোট গণনা শেষে গতকাল রাত পৌনে ২টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলাফলে রেজাউল পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। এ প্রতিবেদকরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখতে পান, প্রথম এক ঘণ্টায় খুব নগণ্যসংখ্যক ভোট পড়েছে। অন্যান্য ভোটের মতো ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়নি কোথাও। অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত থাকলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা মেলেনি। তবে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় প্রার্থীর কর্মীদের উপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান। তারা শুধু পরিচিত সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দিয়েছেন। অন্যদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
নির্বাচন চলাকালে সকাল ১০টার দিকে নগরীর খুলশী থানার ১৩নং ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় ইউসেফ স্কুল কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে মো. আলাউদ্দিন (২৪) নামে একজন নিহত হন। কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমান নিহত আলাউদ্দিনকে তার সমর্থক বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সরাইপাড়া বার কোয়ার্টার এলাকায় নিজাম উদ্দিন মুন্না (৩২) নামে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সালেহ আহমদের এক সমর্থক ছুরিকাঘাতে নিহত হন। আপন ভাই সালাহউদ্দিন কামরুল তাকে খুন করে বলে জানা যায়। তবে পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হক জানিয়েছেন, এটা নির্বাচনী বিরোধ নয়, পারিবারিক কোন্দলের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন।
চসিক নির্বাচনে উত্তর পাহাড়তলী ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী জহুরুল আলম জসিম এবং ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার পর ইসমাইল বালিকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ভাঙচুরের অভিযোগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালিকে আটক করা হয়েছে।’
জানা গেছে, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড এলাকার পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ভাঙচুর করা হয়। সেখানে বেলা ১১টা থেকে ওই কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীর ওয়ার্ডের বিশ্ব কলোনির কোয়াড পি-ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দখল নিতে গিয়ে দুপক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর ওই ওয়ার্ডের বিশ্বকলোনি এলাকায় রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবছার মিয়ার সমর্থক এবং বিদ্রোহী প্রার্থী জহুরুল আলম জসিমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জহুরুল আলম জসিমের আটক করে নিয়ে যায়।
দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুটি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান জানান, দুপুর ১টার দিকে পাথরঘাটা জেএম সেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
দফায় দফায় সংঘর্ষ লালখান বাজারে : ভোট চলাকালে দিনভর উত্তপ্ত ছিল লালখান বাজার এলাকা। লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী এফআই কবির মানিকের কর্মীদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সকাল থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে প্রথমে কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল ও মানিকের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় বেলালের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। এরপর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর আবার শুরু হয় উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ।
গতকাল সকাল থেকে নগরীর লালখান বাজারের শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয় এবং দামপাড়া পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দফায় দফায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। এছাড়া পাথরঘাটা, ফিরোজশাহ, আমবাগান ও ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রেজাউল ও শাহাদাতের ভোট প্রদান ও প্রতিক্রিয়া : সকাল ৯টায় এখলাসুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। ভোট প্রদান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছে।’ জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানান তিনি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সকাল ১০টায় বাকলিয়া বি এড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জেতাতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।’ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে এবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। নির্বাচনী সহিংসতার কারণে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
শেয়ার করুন
শামসুল ইসলাম, সুবল বড়ুয়া ও নয়ন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম | ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

দফায় দফায় গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, কেন্দ্র দখল করে ইভিএমে একচেটিয়া ভোট প্রদান, ইভিএম ভাঙচুর, এজেন্টদের মারধর এবং প্রার্থীর ওপর হামলাসহ চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচন। গতকাল বুধবারের এ নির্বাচন চলাকালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আটক করা হয়েছে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে। স্থগিত করা হয়েছে দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ।
ভোট গণনা শেষে গতকাল রাত পৌনে ২টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলাফলে রেজাউল পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। এ প্রতিবেদকরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখতে পান, প্রথম এক ঘণ্টায় খুব নগণ্যসংখ্যক ভোট পড়েছে। অন্যান্য ভোটের মতো ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়নি কোথাও। অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত থাকলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা মেলেনি। তবে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় প্রার্থীর কর্মীদের উপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান। তারা শুধু পরিচিত সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দিয়েছেন। অন্যদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
নির্বাচন চলাকালে সকাল ১০টার দিকে নগরীর খুলশী থানার ১৩নং ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় ইউসেফ স্কুল কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে মো. আলাউদ্দিন (২৪) নামে একজন নিহত হন। কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমান নিহত আলাউদ্দিনকে তার সমর্থক বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সরাইপাড়া বার কোয়ার্টার এলাকায় নিজাম উদ্দিন মুন্না (৩২) নামে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সালেহ আহমদের এক সমর্থক ছুরিকাঘাতে নিহত হন। আপন ভাই সালাহউদ্দিন কামরুল তাকে খুন করে বলে জানা যায়। তবে পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হক জানিয়েছেন, এটা নির্বাচনী বিরোধ নয়, পারিবারিক কোন্দলের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন।
চসিক নির্বাচনে উত্তর পাহাড়তলী ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী জহুরুল আলম জসিম এবং ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার পর ইসমাইল বালিকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ভাঙচুরের অভিযোগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালিকে আটক করা হয়েছে।’
জানা গেছে, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড এলাকার পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ভাঙচুর করা হয়। সেখানে বেলা ১১টা থেকে ওই কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীর ওয়ার্ডের বিশ্ব কলোনির কোয়াড পি-ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দখল নিতে গিয়ে দুপক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর ওই ওয়ার্ডের বিশ্বকলোনি এলাকায় রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবছার মিয়ার সমর্থক এবং বিদ্রোহী প্রার্থী জহুরুল আলম জসিমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জহুরুল আলম জসিমের আটক করে নিয়ে যায়।
দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুটি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান জানান, দুপুর ১টার দিকে পাথরঘাটা জেএম সেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
দফায় দফায় সংঘর্ষ লালখান বাজারে : ভোট চলাকালে দিনভর উত্তপ্ত ছিল লালখান বাজার এলাকা। লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী এফআই কবির মানিকের কর্মীদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সকাল থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে প্রথমে কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল ও মানিকের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় বেলালের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। এরপর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর আবার শুরু হয় উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ।
গতকাল সকাল থেকে নগরীর লালখান বাজারের শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয় এবং দামপাড়া পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দফায় দফায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। এছাড়া পাথরঘাটা, ফিরোজশাহ, আমবাগান ও ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রেজাউল ও শাহাদাতের ভোট প্রদান ও প্রতিক্রিয়া : সকাল ৯টায় এখলাসুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। ভোট প্রদান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছে।’ জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানান তিনি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সকাল ১০টায় বাকলিয়া বি এড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জেতাতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।’ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে এবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। নির্বাচনী সহিংসতার কারণে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।