
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের একজন জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। জামুকা ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা বা না করা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, জিয়াউর রহমানসহ যে পাঁচজনের রাষ্ট্রীয় খেতাব জামুকায় বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে নয়। এ ব্যাপারে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার জামুকার ৭২তম বৈঠকে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকা এবং রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনসহ নানা অভিযোগ থাকায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সুপারিশ হিসেবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকা এবং হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশ করেছে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। এখন দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক চিন্তা থেকে বা কোনো পরিস্থিতির কারণে খেতাব বাতিলের বিষয়টি আনা হয়নি। ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য নয়, ইতিহাসের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার জন্যই এবং ঐতিহাসিকভাবে যা সত্য, তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘তিনি (জিয়াউর রহমান) যদি প্রমাণিত হন যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত নন, তাহলে হয়তো ব্যবস্থা হবে না। তবে তিনি জড়িত মর্মে আলোচনায় যা উঠে এসেছে, তাতে তার জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণ হয়। যাই হোক তারপরও আমরা দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতেই রিপোর্ট তৈরি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
এ বিষয়ে জামুকার এক সদস্য এবং সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রফেসর ইব্রাহিমকে “নিশানে পাকিস্তান” খেতাব দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ছয় দফা আন্দোলনকে সমর্থন করায় সেটি আবার কেড়েও নিয়েছিল পাকিস্তান। কেউ একবার খেতাব পেলেও পরবর্তীকালে তার কার্যক্রম দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গেলে সরকার তো সেটি প্রত্যাহার করতেই পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ করেছেন। এখন মন্ত্রণালয় দেখবে তারা কতটুকু কী করতে পারে।’
জামুকার সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, ‘জামুকার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডে মদদ দেওয়ার কারণে জিয়াউর রহমানের খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে, তবে এটি গ্রহণ করা বা না করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে।’
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য পাওয়া খেতাব পরবর্তী সময়ে বাতিলের সুযোগ আছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘একটা কমিটি এ নিয়ে কাজ করবে এবং তারাই এ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।’ কাউন্সিলের ওই বৈঠকে খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নাম মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘স্মরণীয়-বরণীয়’ ব্যক্তি হিসেবে যে রাষ্ট্রীয় তালিকা, সেখান থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, হত্যাকারীরা বেঁচে থাকলে বিচারের বাইরে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যরা একই অপরাধে উৎসাহী হবে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে বলা হয় হয়, দেশব্যাপী ব্লগার, প্রকাশক, লেখক হত্যার অংশ হিসেবেই ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। আদালত আরও বলে, আসামিরা সবাই সরকার কর্র্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলাম অর্থাৎ আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল হক এবং সেলিম ওরফে হাদীর নির্দেশ, পরিকল্পনা এবং অর্থায়নে এবং ব্লগার ও লেখক অভিজিত রায়ের (২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির বইমেলায় জঙ্গিদের হাতে নিহত) বই প্রকাশের কারণে এ হত্যাকা- হয় বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে।
গতকাল দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. মজিবুর রহমান। ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং এতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে বলে উল্লেখ করেন বিচারক।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, ‘জিহাদের নামে আনসার আল ইসলামের এবং এই মামলার আসামিদের লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া এবং মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। আর এসবের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে ধ্বংস করা।’
আদালত আরও বলে, ‘আনসার আল ইসলাম অর্থাৎ আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা বাংলাদেশের জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নমূলক কার্য করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে এক ও অভিন্ন অভিপ্রায়ে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করে। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা সাভারে ব্লগার রিয়াদ মোর্শেদ বাবুকে হত্যা করে। একই দিন শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লালমাটিয়ায় ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনীর প্রকাশক টুটুলকে (আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল) হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
দীপন হত্যাকা-ে আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল সেটি উল্লেখ করে আদালত বলে, ‘দীপনকে হত্যার জন্য আসামি মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক নির্দেশ, প্রশিক্ষণ এবং মূল হত্যাকারীদের অর্থায়ন করে। আর অপর আসামি আকরাম হোসেনের পরিকল্পনায় আসামি মইনুল হাসান শামীম অস্ত্র সংগ্রহ, খুনের পরামর্শ এবং মূল হত্যাকারীদের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেয়। আরেক আসামি মোজাম্মেল হুসাইন সায়মন হত্যা পরিকল্পনায় অংশগ্রহণসহ ঘটনাস্থল রেকি করা এবং আসামি আ. সবুর হত্যাকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়। আর আবু সিদ্দিক সোহেল এবং খাইরুল ইসলাম ঘটনাস্থল রেকি করে এবং আরেক আসামি শেখ আব্দুল্লাহ টাকা হস্তান্তর করে।’
আদালত বলে, ‘আসামিদের কারও ভূমিকা ছোট-বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় অংশগ্রহণকারীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরাসহ অন্য সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে। কাজেই আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না। প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং এটা হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এতে একদিকে নিহতের আত্মীয়রা মানসিক শান্তি পাবেন অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে অন্যরা ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে।’
রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ডাদেশ হাইকোর্ট বিভাগ কর্র্তৃক অনুমোদনের জন্য এই মামলার যাবতীয় নথি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর ৩১ (২) ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
তীব্র অন্তর্দলীয় কোন্দল সামলাতে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করার কথা ভাবছে সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা এ ইঙ্গিত দিয়ে বলছেন, আসন্ন সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, মার্চ-এপ্রিলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এ নির্বাচন নিয়ে বিকল্প চিন্তা করায় নির্ধারিত সময়ে ওই নির্বাচন হচ্ছে না। পিছিয়ে চলতি বছরের মে-জুন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় করতে আইনি বাধ্যবাধকতা বা জটিলতা থাকলে এর আগে তা দূর করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে সরকারের। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ দমন করতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান জানানো হলেও কার্যত সুফল আসছে না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে থাকলে পৌরসভা-উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এখানে চারগুণ বেশি বিদ্রোহী থাকবে। কেন্দ্রীয় কড়া নজরদারি থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইনি জটিলতা দূর করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালে এমনও হতে পারে উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন যেভাবে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সে নিয়ম অনুসরণ করা হতে পারে।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ ধরনের কথাবার্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের অন্য নেতারা বলেন, ব্যাপারটি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নেই। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হলে ভালো হবে, বেঁচে যাই। গতকাল বুধবার গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার সংসদ ভবনের অফিসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এলাকার নেতারা কথা বলতে এলে তিনি ওইসব নেতাকে বলেন, এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নাও হতে পারে। এ সম্পর্কে তার কাছে আরও জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে আমরা যারা সংসদ সদস্য তারা বেশ বেকায়দায় পড়ে যাই। আগামী সংসদ অধিবেশনে এ ব্যাপারে আইনি বাধা দূর করা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, কমিশন সচিবালয় থেকে এখনো নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে কিছু উপস্থাপন করা হয়নি। যখন উপস্থাপন করা হবে তখন আমরা দেখব। দেখেশুনে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। এখন পর্যন্ত যে আইন আছে তাতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কথা । যদি আইন পরিবর্তন করা হয় তাহলে দলীয় প্রতীকে হবে না।
সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন পরিবর্তন করে ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় সব নির্বাচনই দলীয় প্রতীকে শুরু করে ক্ষমতাসীনরা। পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফলো করে রাজনৈতিক সুফল পাওয়ার আশায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে সরকার। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে যে বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়েছে সেখান থেকে দলকে বের করে আনতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। রাজনৈতিক সুফল আশা করে আইনগত পরিবর্তন আনা হলেও এ পর্যায়ে দলটির সর্বস্তরের নেতা এবং কর্মী সবারই এক কথা দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চালু করার মধ্য দিয়ে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। প্রতীকে নির্বাচন হিতেবিপরীত বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দাবি, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন পদ্ধতি চালুর ভেতর দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দলের ভেতরে দলাদলি বেড়েছে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ও অনিয়ম সব বেড়েছে নির্বাচনী এ নিয়মে। সারা দেশে কেউ কাউকে মানছে না এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার নিয়মে। এর মধ্য দিয়ে দলীয় রাজনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই স্থানীয় সরকারের অধীনে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করতে আর চায় না সরকারি দল। আগের নিয়মেই হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মার্চের শেষের দিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও পিছিয়ে যাচ্ছে এ নির্বাচন। নির্দলীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইনি যেসব বাধ্যবাধকতা রয়েছে সামনের সংসদ অধিবেশনে তা সংশোধন করার প্রস্তাব আনা হবে। এজন্য পিছিয়ে দেওয়া হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফলে দলীয় রাজনীতিতে তুমুল দলাদলি সৃষ্টি হয়েছে। এ নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থী শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। নির্দলীয় নির্বাচন হলে তৃণমূলে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক কমবে, এটা ঠিক। তিনি বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়ন-উপজেলা ও পৌরসভায় একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বেছে নিতে হয় একজনকে। যারা মনোনয়নবঞ্চিত হন তারা ক্ষুব্ধ হন। ফলে দলাদলি তৈরি হয়।
সভাপতিমন্ডলীর অন্য সদস্য ফারুক খান বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে অনেকেই অভ্যস্ত হতে পারেনি এখনো।
জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়েছে, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের জেরে জাগৃতির দীপনকে হত্যা করা হয়। আদালত আরও বলেছে, যারা বই প্রকাশের কারণে মানুষ হত্যা করে তারা সমাজ ও মানুষের শত্রু। দীপনের হত্যাকারীরা বেঁচে থাকলে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম তথা আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধে উৎসাহী হবে।
আদালতের এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও উচ্চ আদালতে এ মামলার বিচার দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে রায় কার্যকরের দাবি জানান দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দীপনের স্ত্রী ও মামলার বাদী রাজিয়া রহমান জলি। আসামিদের দন্ড শোনার পর অঝোরধারায় কাঁদেন তিনি। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনিও।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে দীপনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নাম আসে। পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, আনসার আল ইসলামের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই দীপনকে হত্যা করা হয়। একই বছরে ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ একাধিক ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে হত্যা কিংবা হত্যার চেষ্টা করা হয়।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে ২৬ সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। ঘটনার পাঁচ বছরের বেশি সময় পর এবং আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর এক বছরেরও কিছু বেশি সময়ের মধ্যে আলোচিত এ হত্যাকা-ের রায় হলো।
আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া (চাকরিচ্যুত মেজর), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। রায়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পলাতক জিয়া ও আকরামের সাজা পরোয়ানা ইস্যু করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয় আদালত। ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামিপক্ষের দুই আইনজীবী খাইরুল ইসলাম লিটন ও এম নজরুল ইসলাম জানান, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পুরো এলাকায় নজরদারি করেন। রায়ের সময় আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সকালে ছয় আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এ সময় তাদের মাথায় হেলমেট ও গায়ে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। রায় ঘোষণার পর তাদের আবারও কারাগারে নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা না করে অর্থ-সম্পদের লোভ নিয়ে বেশিদিন রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না। গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
যুবলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়েছে, চলতে হবে এটা স্বাভাবিক। তবু আমি যুবলীগের নেতাকর্মীদের বলব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ যদি কেউ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করে তাহলে সে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায়। কিন্তু যে রাজনীতি করতে গিয়ে লোভের বশবর্তী হয়, অর্থ সম্পদটা যার কাছে বড় হয়ে যায় তারা কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারে না এটা বাস্তবতা। এটা শুধু আমাদের দল বলে না। আমি সমগ্র বাংলাদেশের অন্য সব রকম রাজনৈতিক দলের কথাই যদি চিন্তা করি তাহলে আমরা সেটাই দেখব।’
তিনি বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করে আদর্শভিত্তিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে আমাদের রাজনীতি যেন আমাদের দেশের মানুষের জন্য হয়, কল্যাণের জন্য হয়। সেই রাজনীতিটাই হচ্ছে সঠিক রাজনীতি। আর রাজনীতি করতে আসে যারা ভাগ্য তৈরি করতে, হয়তো তারা কিছু টাকা-পয়সা বানাতে পারে। কিন্তু তারপরে আর তার অস্তিত্ব থাকে না এটা আজ প্রমাণিত সত্য।’ তরুণদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নিয়েছিল বলে আজ জনগণের কাছে তাদের কোনো স্থান নেই। আমি জিয়াউর রহমানের কথা বলি, এরশাদের কথা বলি, খালেদা জিয়ার কথা বলিৃ যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই নিজেদের ভাগ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিল; নিজেরা অর্থ-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত। মানুষের জন্য করেনি। মানুষের জন্য করলে যে করা যায় সেটা আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েই সরকার করোনাভাইরাসের টিকা আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা এর সমালোচনা করছে, তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। করোনাভাইরাসের সময়ে আমরা ইতিমধ্যে টিকা দেওয়া শুরু করেছিৃ অনেক কথা শুনতে হয়। এসব কথায় কান দিলে চলে না। অনেকেই তো বলেছে, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু আনতে পারেনি। আমি কিন্তু কোনো দিকে তাকাইনি। আমার কাছে মানুষ সব থেকে বড়, মানুষের জীবন বড়।’
বাংলাদেশ যাতে দ্রুত করোনাভাইরাসের টিকা পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ভ্যাকসিনের জন্য টাকা দিই, এক হাজার কোটি টাকা আলাদা রেখেৃ আমি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভান্স করে দিয়েছিলাম যে যখনই ভ্যকসিন তৈরি হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখনই অনুমোদন দেবে, সবার আগে যেন বাংলাদেশ পায় এবং সেটাই আজ প্রমাণিত সত্য।’
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ইতিমধ্যে দেশে এসেছে। এছাড়া আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে ভারত সরকার। ভ্যাকসিন উপহার দেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আরও অনেকেই দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যেটা প্রয়োজন, আমরা কিন্তু নিয়ে এসেছি।’ টিকা নিয়ে অনেকের মধ্যে শুরুতে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও এখন তা কেটে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টিকা পাওয়ার পরও সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পরেও কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, হাত পরিষ্কার করতে হবে এবং সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবেৃ এটা সবাইকেই নজরে রাখতে হবে এবং এটা যুবলীগ করবে, সেটা আমি চাই।’
রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন প্রান্তে এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির থাকা উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনার চেষ্টা করছে সরকার। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ বড় প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাটছাঁটের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে সংশোধিত এডিপিতে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের বরাদ্দ ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। অন্য দিকে মেট্রোরেলের বরাদ্দ সমান রাখা হলেও সড়ক ও মহাসড়কের বেশিরভাগ বড় প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
আগামী মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) সংশোধনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে কমিশন সূত্র জানায়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে যে স্থবিরতা এসেছিল, তা মোটামুটি কাটিয়ে ওঠা গেছে। এখন চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের গতি আরও বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসব। আশা করি চলমান কার্যক্রমের গতি বাড়াতে প্রকল্পগুলোর একটি নতুন প্রাধিকার নিশ্চিত করা যাবে। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে করা হচ্ছে ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা, কর্ণফুলী টানেলে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, আরএডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। তবে মেট্রোরেল লাইন -৬ বা এমআরটি প্রকল্পে বরাদ্দ ৫ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা অপরিবর্তিত থাকছে।
তবে বেশ কিছু বড় প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে। এর মধ্যে সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন সাসেক-১ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৪৪০ কোটি টাকা, তা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৬১০ কোটি টাকা, সাসেক-২ তে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, ফরিদপুর-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা, তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ফোরলেন প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, তা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য উন্নয়ন কাজের মতো করোনা মহামারীতে পদ্মা সেতু নির্মাণেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিশাল কর্মযজ্ঞ দ্রুত বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সাত মাস চলে গেলেও সেভাবে ব্যয় করতে পারেনি অর্থ। বর্তমানে বাস্তব কাজ ৮৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাধ্য হয়ে কর্র্তৃপক্ষ সংশোধিত এডিপিতে প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৫৮ শতাংশ অর্থ ফেরতের কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ আরও দু বছর বৃদ্ধিরও আবেদন করা হয়েছে।
স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতি অর্থবছরে বরাদ্দও রাখা হয়। চলতি অর্থবছরেও রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় উন্নয়ন কাজে বিঘ্ন ঘটে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশিরা জড়িত। এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় এর কাজ।
সর্বশেষ সংশোধনীতে সরকার সেতু চালু করার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল ২০২১ সালের জুন মাস। স্বাধীনতার ৫০তম বছরের মধ্যেই সরকার পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায় বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানিয়েছে।
পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগাতে হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। এ জন্য রাজধানী থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু না হলেও যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর কাজ এগিয়ে নিতে সরকার অন্যান্য বছরের মতো চলতি অর্থবছরেও ৪৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের মে মাসে। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধন করে শেষ পর্যন্ত এই সড়ক নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।
সাসেক-২ অর্থাৎ এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক ফোর লেন প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কাজের গতি বাড়ায় সংশোধন করে বেশি করে অর্থ চাওয়া হয়েছে। এ জন্য সংশোধিত এডিপিতে দ্বিগুণেরও বেশি দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কর্র্তৃপক্ষ।
আর রাজধানীর যানজট দূর করতে ফাস্টট্র্যাক নামে মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে এবার পাঁচ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখানে কর্র্তৃপক্ষ সব টাকাই ব্যয় করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া নতুন করে মেট্রোরেল-১ প্রকল্পেও ৫৯১ কোটি টাকা ঠিক রাখা হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেলে মূল এডিপিতে এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশোধিত এডিপিতে এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয় করার প্রস্তাব করেছে কর্র্তৃপক্ষ।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।