সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পর হল খুলবে ১৭ মে
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
হঠাৎ করেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর আবাসিক হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টাও করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, টিকা না নেওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবেন না। হল না খোলা পর্যন্ত সব পরীক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীর টিকাকরণ হয়ে যাবে। এরপর ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে হল। আর ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে ২৪ মে থেকে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখও পেছানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আভাস দিয়েছেন আসন্ন বিসিএস পরীক্ষা পেছানোরও। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনও জানালেন বৃহৎ স্বার্থে প্রয়োজন হলে পরীক্ষা সমন্বয় করা হবে।
আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে অনেকটা আকস্মিকভাবেই সরব হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১২ মাস ধরে বাইরে রয়েছেন তারা। বেশিরভাগকেই মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ থাকছেন আত্মীয়স্বজনের বাসায়। সম্প্রতি স্থানীয়দের সঙ্গে বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর এই দাবি ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও।
এমন মুহূর্তে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে’র আগে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে না। বিসিএস পরীক্ষার তারিখও সমন্বয় করতে হবে। যেসব পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তা বন্ধ রাখতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে। সে-সব পরীক্ষাও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১৭ মে থেকে হল খুলে দেওয়া হবে। আর ২৪ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান শুরু হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। যেহেতু এবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করতে আমরা ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আসন্ন বিসিএস লিখিত ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কারও বয়স শেষ হলে তাকে আবেদন করা থেকে বঞ্চিত করা হবে না। যোগ্যরা যেন আবেদন করা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিসিএস পরীক্ষা ও আবেদনের সময় নির্ধারণ করা হবে। এজন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে আলোচনা করে সব বিসিএসের আবেদন ও পরীক্ষার সময় বাড়ানো হতে পারে।
মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য শুনেছি। যদি দেশের স্বার্থে, দেশের বৃহৎ স্বার্থে পরীক্ষার তারিখ সমন্বয় করার প্রয়োজন হয় তাহলে পিএসসি অবশ্যই সেটা করবে। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি বিবিসিএস-এর ভাইভা চলছে। সুতরাং সেটা পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। বিশেষ পরীক্ষা যেটা ডাক্তারদের জন্য নেওয়া হবে, সেটাও এখন তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কারণ সেটাও অলরেডি ক্লোজ। বাকি যেগুলো এখনো পেন্ডিং আছে সেটা নিয়ে চিন্তা করব। বৃহৎ স্বার্থে সেটা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই সেটা করা হবে।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

হঠাৎ করেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর আবাসিক হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টাও করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, টিকা না নেওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবেন না। হল না খোলা পর্যন্ত সব পরীক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীর টিকাকরণ হয়ে যাবে। এরপর ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে হল। আর ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে ২৪ মে থেকে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখও পেছানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আভাস দিয়েছেন আসন্ন বিসিএস পরীক্ষা পেছানোরও। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনও জানালেন বৃহৎ স্বার্থে প্রয়োজন হলে পরীক্ষা সমন্বয় করা হবে।
আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে অনেকটা আকস্মিকভাবেই সরব হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১২ মাস ধরে বাইরে রয়েছেন তারা। বেশিরভাগকেই মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ থাকছেন আত্মীয়স্বজনের বাসায়। সম্প্রতি স্থানীয়দের সঙ্গে বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর এই দাবি ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও।
এমন মুহূর্তে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে’র আগে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে না। বিসিএস পরীক্ষার তারিখও সমন্বয় করতে হবে। যেসব পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তা বন্ধ রাখতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে। সে-সব পরীক্ষাও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১৭ মে থেকে হল খুলে দেওয়া হবে। আর ২৪ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান শুরু হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। যেহেতু এবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করতে আমরা ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আসন্ন বিসিএস লিখিত ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কারও বয়স শেষ হলে তাকে আবেদন করা থেকে বঞ্চিত করা হবে না। যোগ্যরা যেন আবেদন করা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিসিএস পরীক্ষা ও আবেদনের সময় নির্ধারণ করা হবে। এজন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে আলোচনা করে সব বিসিএসের আবেদন ও পরীক্ষার সময় বাড়ানো হতে পারে।
মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য শুনেছি। যদি দেশের স্বার্থে, দেশের বৃহৎ স্বার্থে পরীক্ষার তারিখ সমন্বয় করার প্রয়োজন হয় তাহলে পিএসসি অবশ্যই সেটা করবে। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি বিবিসিএস-এর ভাইভা চলছে। সুতরাং সেটা পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। বিশেষ পরীক্ষা যেটা ডাক্তারদের জন্য নেওয়া হবে, সেটাও এখন তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কারণ সেটাও অলরেডি ক্লোজ। বাকি যেগুলো এখনো পেন্ডিং আছে সেটা নিয়ে চিন্তা করব। বৃহৎ স্বার্থে সেটা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই সেটা করা হবে।’