মিয়ানমার জুড়ে ধর্মঘট
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
মিয়ানমারে অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনা কর্র্তৃপক্ষের প্রতি এই আহ্বান জানান। এদিকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে গতকাল বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ডাকা ধর্মঘটে গতকাল দেশটিতে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, মিয়ানমারের সরকারি এমআরটিভিতে বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। টিভির বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা কিশোর ও যুবকদের উসকানি দিচ্ছে। এই পথে চললে তাদের প্রাণহানি হতে পারে। এরপরই বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দেন। এতে সবাইকে অংশ নিতে আহ্বান জানান।
গত ১ ফেব্রুয়ারি হয়ে যাওয়া সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ও মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিন বিক্ষোভকারী। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে জান্তা সরকার। জান্তা সরকারের হুঁশিয়ারি ও দমন-পীড়নে বিক্ষোভ বন্ধ হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, আরও সেনা মোতায়েন এবং নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মিয়ানমারের জেনারেলরা দেশটিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং অং সান সু চিসহ আটকদের মুক্তির দাবিতে চলা বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচি বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে।
অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ মং সৌংখা সোমবারের বিক্ষোভে যোগ দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
‘যাদের বাইরে আসার সাহস নেই, তারা ঘরে থাকুন। যেভাবেই হোক আমি বাইরে বের হব। আমি জেনারেশন জেডকে (চলতি শতকের দ্বিতীয় দশকে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে) প্রত্যাশা করছি। পার্টনাররা, চল একত্রিত হই’ রবিবার রাতে ফেইসবুক পোস্টে এমনটাই লিখেছেন এ তরুণ রাজনৈতিক কর্মী।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা। কূটনৈতিক এ মিশনগুলোও বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়া বিক্ষোভকারীদের একত্রিত হওয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে তারিখের মধ্যে সংখ্যাগত মিলকে ‘শুভ’ বিবেচনা করা হয়; বিক্ষোভকারীরা এ কারণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন, তারা এ দিনকে ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেদিনের বিক্ষোভকে সামরিক জান্তা কঠোর হস্তে দমন করেছিল, ঝরেছিল রক্ত।
মিয়ানমার ২০১১ সালের আগেও প্রায় অর্ধশতক সেনা শাসনে ছিল। সে সময়ের তুলনায় এবার নিরাপত্তা বাহিনীকে তুলনামূলক নমনীয়ই মনে হচ্ছে।
কর্র্তৃপক্ষ বিক্ষোভ নিয়ে ‘সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; কিছু দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে জানিয়ে বিবৃতিতে তাদের তিরস্কারও করা হয়েছে।
পশ্চিমা অনেক দেশ এরই মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি মিয়ানমারে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে; জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মারাত্মক শক্তি প্রয়োগকে অগ্রহণযোগ্য অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ধারণ করা ভিডিও বার্তায় আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনাশাসকদের পাশবিক শক্তিপ্রয়োগের বিরুদ্ধে বলেন, ‘অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য আজ আমি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।’ সেনাশাসকদের উদ্দেশে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘বন্দিদের মুক্তি দিন। সহিংসতা বন্ধ করুন। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান।’
মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে জনগণ যে রায় দিয়েছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে দেশটির সেনা কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে যুক্তরাজ্যও সরব হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য দেবেন। তিনি মিয়ানমারে দমন-পীড়ন বন্ধসহ দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তির দাবি জানাবেন।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

মিয়ানমারে অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনা কর্র্তৃপক্ষের প্রতি এই আহ্বান জানান। এদিকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে গতকাল বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ডাকা ধর্মঘটে গতকাল দেশটিতে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, মিয়ানমারের সরকারি এমআরটিভিতে বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। টিভির বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা কিশোর ও যুবকদের উসকানি দিচ্ছে। এই পথে চললে তাদের প্রাণহানি হতে পারে। এরপরই বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দেন। এতে সবাইকে অংশ নিতে আহ্বান জানান।
গত ১ ফেব্রুয়ারি হয়ে যাওয়া সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ও মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিন বিক্ষোভকারী। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে জান্তা সরকার। জান্তা সরকারের হুঁশিয়ারি ও দমন-পীড়নে বিক্ষোভ বন্ধ হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, আরও সেনা মোতায়েন এবং নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মিয়ানমারের জেনারেলরা দেশটিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং অং সান সু চিসহ আটকদের মুক্তির দাবিতে চলা বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচি বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে।
অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ মং সৌংখা সোমবারের বিক্ষোভে যোগ দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
‘যাদের বাইরে আসার সাহস নেই, তারা ঘরে থাকুন। যেভাবেই হোক আমি বাইরে বের হব। আমি জেনারেশন জেডকে (চলতি শতকের দ্বিতীয় দশকে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে) প্রত্যাশা করছি। পার্টনাররা, চল একত্রিত হই’ রবিবার রাতে ফেইসবুক পোস্টে এমনটাই লিখেছেন এ তরুণ রাজনৈতিক কর্মী।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা। কূটনৈতিক এ মিশনগুলোও বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়া বিক্ষোভকারীদের একত্রিত হওয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে তারিখের মধ্যে সংখ্যাগত মিলকে ‘শুভ’ বিবেচনা করা হয়; বিক্ষোভকারীরা এ কারণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন, তারা এ দিনকে ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেদিনের বিক্ষোভকে সামরিক জান্তা কঠোর হস্তে দমন করেছিল, ঝরেছিল রক্ত।
মিয়ানমার ২০১১ সালের আগেও প্রায় অর্ধশতক সেনা শাসনে ছিল। সে সময়ের তুলনায় এবার নিরাপত্তা বাহিনীকে তুলনামূলক নমনীয়ই মনে হচ্ছে।
কর্র্তৃপক্ষ বিক্ষোভ নিয়ে ‘সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; কিছু দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে জানিয়ে বিবৃতিতে তাদের তিরস্কারও করা হয়েছে।
পশ্চিমা অনেক দেশ এরই মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি মিয়ানমারে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে; জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মারাত্মক শক্তি প্রয়োগকে অগ্রহণযোগ্য অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ধারণ করা ভিডিও বার্তায় আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনাশাসকদের পাশবিক শক্তিপ্রয়োগের বিরুদ্ধে বলেন, ‘অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য আজ আমি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।’ সেনাশাসকদের উদ্দেশে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘বন্দিদের মুক্তি দিন। সহিংসতা বন্ধ করুন। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান।’
মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে জনগণ যে রায় দিয়েছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে দেশটির সেনা কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে যুক্তরাজ্যও সরব হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য দেবেন। তিনি মিয়ানমারে দমন-পীড়ন বন্ধসহ দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তির দাবি জানাবেন।