হল খোলার দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
সরব ঢাবি শিক্ষার্থীরাও
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবাসিক হল খুলে দেওয়াসহ শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার হল ছাড়তে প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ মিছিলসহকারে ছাত্রী হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর হল খোলার দাবির মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলমান সব পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।
এদিকে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে এবার সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। গতকাল দুপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে আগামী ১ মার্চ থেকে সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে:
ফের তালা ভেঙে হলে জাবি ছাত্রীরা : হল ছাড়তে প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনার পর বিক্ষোভ মিছিল করে আরেকটি ছাত্রী হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গতকাল সকালে হল প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের জন্য অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে একত্র হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে দুপুর ১টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন সংশ্লিষ্ট হলের ছাত্রীরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আবাসিক হলের ৯টিতে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনের সভা হয়। সভা শেষে হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীদের হল ছাড়ার অনুরোধ করেন। তবে ছাত্রীরা হল ছাড়তে রাজি হননি।
প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা হল খুলতে পারছি না।’
এদিকে গতকাল দুপুর ২টার দিকে পরিবহন চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ের সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো হল ছাড়ার নির্দেশনাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা, তদন্ত কমিটি গঠন করে হামলায় ক্যাম্পাসসংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত কি না, তা নিশ্চিত করা এবং থানায় দায়ের করা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের অনুরোধ করছি। তারা হল ছাড়তে রাজি হয়নি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এর আগে গত শুক্রবার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেরে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে এলাকাবাসী। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শনিবার দুপুরে হলের তালা ভেঙে ভেতরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
হল খোলার দাবিতে সরব ঢাবি শিক্ষার্থীরাও : ১ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে এই দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। আধা ঘণ্টা হলে অবস্থানের পর তারা বেরিয়ে যান। একই সময় অমর একুশে হলেও ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী জোর করে ঢুকে পড়েন। সেখানে তারা আধা ঘণ্টার মতো অবস্থান করেন। পরে বেরিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার দাবিসংবলিত একটি লিফলেট অমর একুশে হলের ফটকে ঝুলিয়ে যান।
শহীদুল্লাহ হলের ওই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মচারী কামাল হোসেন বলেন, ‘৩০ থেকে ৪০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে ঢুকেছিলেন। জোর করে আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে তারা তালা খুলে হলের ভেতর ঢুকে পড়েন। প্রতি রবি ও বুধবার এই হলের শিক্ষার্থীরা অনুমতি নিয়ে হলে ঢুকে কক্ষ থেকে মালামাল নিতে পারেন। প্রথমে দু-একজন এসে মালামাল নেওয়ার পর দল বেঁধে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে হলে ঢুকে পড়েন। তারা বলছিলেন, হল খুলে দিতে হবে। হল প্রশাসনকে বিষয়টি আমরা জানিয়েছি।’
তবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মালামাল নিতে এসেছিলেন, হলে উঠতে নয়। হল খোলার সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
গতাকাল শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে হল খুলতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে ভিসি কার্যালয়ের দিকে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভিসির কার্যালয়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করে সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের ৫ সদস্যের একটি দল ভিসির কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে দ্রুত হল খোলার দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যায়।
এদিকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা, আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। এ জন্য আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সকাল সাড়ে ১০টায় একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। সেই মিটিংয়ে সরকারি, জাতীয় ও বিশ^বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তগুলো সমন্বিত করে একটি সিদ্ধান্তে আমরা আসব। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো তালা ভেঙে হলে ওঠার প্রবণতা রয়েছে কি না?’
ইবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত : আবাসিক হল খোলার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরপরই ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন তারা। সমম্মেলনে তারা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তে নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের চলমান ও অনুষ্ঠিতব্য সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান বিশ^বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আতাউর রহমান। এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়ের চলমান ও অনুষ্টিতব্য বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমরা পরীক্ষা নিতে রাজি না।’
শাবিপ্রবিতে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।’
অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের চলমান পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ আমরা অমান্য করতে পারব না। তাই তাদের পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে।’
তবে যাদের একটি পরীক্ষা অথবা ভাইভা বাকি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবার জন্য একই সিদ্ধান্ত। কারণ আমরা যদি তাদের এখন পরীক্ষা নিতে যাই তখন একটা বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এর ফলে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ আসবে আমাদের ওপর। তাই আমরা এই ঝুঁকি নিতে চাই না।’
গত ১৭ জানুয়ারি থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতিটি বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিভাগের সব পরীক্ষা শেষ হলেও অধিকাংশ বিভাগে নির্ধারিত পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
এ ছাড়া ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৩তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ১ম, ২য় ও ৩য় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে আবাসিক হল খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ^বিদ্যালয়ের গোলচত্বর ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
শেয়ার করুন
সরব ঢাবি শিক্ষার্থীরাও
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবাসিক হল খুলে দেওয়াসহ শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার হল ছাড়তে প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ মিছিলসহকারে ছাত্রী হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর হল খোলার দাবির মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলমান সব পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।
এদিকে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে এবার সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। গতকাল দুপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে আগামী ১ মার্চ থেকে সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে:
ফের তালা ভেঙে হলে জাবি ছাত্রীরা : হল ছাড়তে প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনার পর বিক্ষোভ মিছিল করে আরেকটি ছাত্রী হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গতকাল সকালে হল প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের জন্য অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে একত্র হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে দুপুর ১টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন সংশ্লিষ্ট হলের ছাত্রীরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আবাসিক হলের ৯টিতে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনের সভা হয়। সভা শেষে হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীদের হল ছাড়ার অনুরোধ করেন। তবে ছাত্রীরা হল ছাড়তে রাজি হননি।
প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা হল খুলতে পারছি না।’
এদিকে গতকাল দুপুর ২টার দিকে পরিবহন চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ের সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো হল ছাড়ার নির্দেশনাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা, তদন্ত কমিটি গঠন করে হামলায় ক্যাম্পাসসংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত কি না, তা নিশ্চিত করা এবং থানায় দায়ের করা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের অনুরোধ করছি। তারা হল ছাড়তে রাজি হয়নি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এর আগে গত শুক্রবার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেরে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে এলাকাবাসী। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শনিবার দুপুরে হলের তালা ভেঙে ভেতরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
হল খোলার দাবিতে সরব ঢাবি শিক্ষার্থীরাও : ১ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে এই দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। আধা ঘণ্টা হলে অবস্থানের পর তারা বেরিয়ে যান। একই সময় অমর একুশে হলেও ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী জোর করে ঢুকে পড়েন। সেখানে তারা আধা ঘণ্টার মতো অবস্থান করেন। পরে বেরিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার দাবিসংবলিত একটি লিফলেট অমর একুশে হলের ফটকে ঝুলিয়ে যান।
শহীদুল্লাহ হলের ওই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মচারী কামাল হোসেন বলেন, ‘৩০ থেকে ৪০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে ঢুকেছিলেন। জোর করে আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে তারা তালা খুলে হলের ভেতর ঢুকে পড়েন। প্রতি রবি ও বুধবার এই হলের শিক্ষার্থীরা অনুমতি নিয়ে হলে ঢুকে কক্ষ থেকে মালামাল নিতে পারেন। প্রথমে দু-একজন এসে মালামাল নেওয়ার পর দল বেঁধে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে হলে ঢুকে পড়েন। তারা বলছিলেন, হল খুলে দিতে হবে। হল প্রশাসনকে বিষয়টি আমরা জানিয়েছি।’
তবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মালামাল নিতে এসেছিলেন, হলে উঠতে নয়। হল খোলার সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
গতাকাল শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে হল খুলতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে ভিসি কার্যালয়ের দিকে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভিসির কার্যালয়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করে সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের ৫ সদস্যের একটি দল ভিসির কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে দ্রুত হল খোলার দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যায়।
এদিকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা, আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। এ জন্য আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সকাল সাড়ে ১০টায় একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। সেই মিটিংয়ে সরকারি, জাতীয় ও বিশ^বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তগুলো সমন্বিত করে একটি সিদ্ধান্তে আমরা আসব। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো তালা ভেঙে হলে ওঠার প্রবণতা রয়েছে কি না?’
ইবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত : আবাসিক হল খোলার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরপরই ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন তারা। সমম্মেলনে তারা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তে নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের চলমান ও অনুষ্ঠিতব্য সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান বিশ^বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আতাউর রহমান। এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়ের চলমান ও অনুষ্টিতব্য বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমরা পরীক্ষা নিতে রাজি না।’
শাবিপ্রবিতে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।’
অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের চলমান পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ আমরা অমান্য করতে পারব না। তাই তাদের পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে।’
তবে যাদের একটি পরীক্ষা অথবা ভাইভা বাকি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবার জন্য একই সিদ্ধান্ত। কারণ আমরা যদি তাদের এখন পরীক্ষা নিতে যাই তখন একটা বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এর ফলে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ আসবে আমাদের ওপর। তাই আমরা এই ঝুঁকি নিতে চাই না।’
গত ১৭ জানুয়ারি থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতিটি বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিভাগের সব পরীক্ষা শেষ হলেও অধিকাংশ বিভাগে নির্ধারিত পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
এ ছাড়া ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৩তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ১ম, ২য় ও ৩য় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে আবাসিক হল খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ^বিদ্যালয়ের গোলচত্বর ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।