ইসির বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারসহ (ইসি) কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী দুদক চেয়ারম্যান বরাবর তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ ভাতার নামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা ব্যতীত সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধনের বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত পরিচালনা এবং মামলা দায়েরের অনুরোধ জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
গতকাল দুদক সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে দুদক।
এদিকে বিদেশ থেকে আমদানি করা কম দামের পণ্য ওভারইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি দাম দেখিয়ে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে দুদক। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব। তিনি জানান, এর মধ্যে আল-মুসলিম গ্রুপের ১৭৫ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া প্রায় অর্ধশত পোশাক কারখানার মালিক দুদকের নজরদারিতে রয়েছেন।
সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) গত বছরের ৪ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। বর্তমান বাজারদরে (৮৫ টাকায় প্রতি ডলার) এর পরিমাণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে ১৩৫টি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের গত ১০ বছরের (২০০৮-২০১৭) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূল্য ঘোষণার গরমিল দেখিয়ে কীভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫টি উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও দেওয়া হয়েছে। একটি দেশ অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করার সময় প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে কমবেশি দেখানো হয়। মূল্য ঘোষণার বাড়তি অংশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়। জিএফআইর প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেদনটিতে অর্থ পাচারের পরিমাণ ও পাচারের পদ্ধতির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পাচারকারীদের নাম নেই। তবে তাদের শনাক্ত করতে দুদক চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে। এরপর পাচারকারীদের শনাক্ত করতে মাঠে নামার পরই বেশ কিছু তথ্য পায় দুদক। এরই মধ্যে তারা জানতে পারে পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করেছে সাভারের পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান আল-মুসলিম গ্রুপ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১৭৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তুসেই টাকা দেশে আসেনি। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে।
ওভার ইনভয়েসে অর্থ পাচার অনুসন্ধান সম্পর্কে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা কম দামের পণ্য ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনা অনুসন্ধান করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের কতিপয় পোশাক কারখানার মালিক ইনভয়েস জালিয়াতির মাধ্যমে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ওই অভিযোগে আল মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ছিল। সেটিও আমাদের কমিটি অনুসন্ধান করছে। এসব বিষয়ে এনবিআর আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকেও তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছি।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারসহ (ইসি) কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী দুদক চেয়ারম্যান বরাবর তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ ভাতার নামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা ব্যতীত সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধনের বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত পরিচালনা এবং মামলা দায়েরের অনুরোধ জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
গতকাল দুদক সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে দুদক।
এদিকে বিদেশ থেকে আমদানি করা কম দামের পণ্য ওভারইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি দাম দেখিয়ে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে দুদক। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব। তিনি জানান, এর মধ্যে আল-মুসলিম গ্রুপের ১৭৫ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া প্রায় অর্ধশত পোশাক কারখানার মালিক দুদকের নজরদারিতে রয়েছেন।
সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) গত বছরের ৪ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। বর্তমান বাজারদরে (৮৫ টাকায় প্রতি ডলার) এর পরিমাণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে ১৩৫টি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের গত ১০ বছরের (২০০৮-২০১৭) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূল্য ঘোষণার গরমিল দেখিয়ে কীভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫টি উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও দেওয়া হয়েছে। একটি দেশ অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করার সময় প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে কমবেশি দেখানো হয়। মূল্য ঘোষণার বাড়তি অংশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়। জিএফআইর প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেদনটিতে অর্থ পাচারের পরিমাণ ও পাচারের পদ্ধতির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পাচারকারীদের নাম নেই। তবে তাদের শনাক্ত করতে দুদক চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে। এরপর পাচারকারীদের শনাক্ত করতে মাঠে নামার পরই বেশ কিছু তথ্য পায় দুদক। এরই মধ্যে তারা জানতে পারে পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করেছে সাভারের পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান আল-মুসলিম গ্রুপ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১৭৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তুসেই টাকা দেশে আসেনি। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে।
ওভার ইনভয়েসে অর্থ পাচার অনুসন্ধান সম্পর্কে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা কম দামের পণ্য ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনা অনুসন্ধান করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের কতিপয় পোশাক কারখানার মালিক ইনভয়েস জালিয়াতির মাধ্যমে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ওই অভিযোগে আল মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ছিল। সেটিও আমাদের কমিটি অনুসন্ধান করছে। এসব বিষয়ে এনবিআর আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকেও তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছি।