বিশেষজ্ঞদের মতামত
সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
কুয়েতে দন্ডিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণা করে গতকাল সোমবার গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। বিদেশের মাটিতে দন্ডিত হওয়ার পর দেশে কোনো এমপির আসন শূন্য হওয়ার নজির আগে ছিল না। এ সিদ্ধান্তটি সঠিক ও সময়োপযোগী বলে মনে করছেন প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। গতকাল দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘তিনি (পাপুল) যে কাজ করেছেন তাতে নৈতিক স্খলনজনিত কারণেই সংসদ সদস্য হারিয়েছেন। সিদ্ধান্তটি সঠিক এবং সময়োপযোগী বলে মনে করি। এর কারণ হলো একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিদেশে গিয়ে অর্থ ও মানব পাচারের মতো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে দন্ডিত হয়েছেন। এতে দেশকে বিদেশের কাছে হেয় করেছেন তিনি। সেজন্যই সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপের কারণে যিনি কারাগারে আছেন তিনিও বলতে পারবেন না যে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন গণতান্ত্রিক পন্থা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সংবিধান মোতাবেক ওই আসনে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করবে।’
পাপুলের এমপি পদ বাতিল অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা তো নিশ্চয়ই। যে কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে সেটি সংবিধানবিরোধী কাজ হবে। যাদের কারণে সুনাম নষ্ট হবে তাদের করুণার দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের লোকেরা নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পাবেন না। কিন্তু সমস্যা হলো, যখন মনোনয়ন দেওয়া হয় তখন তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ ধরা পড়ে না।’
প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যখন তার দন্ডিত হওয়ার ঘটনা ঘটল তখন থেকেই তিনি এ পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। সংবিধানেই লেখা আছে, সংসদের কোনো সদস্য যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন তখন তার আর ওই পদে থাকার কোনো অধিকার থাকে না। সাংবিধানিকভাবেই তার পদ বাতিল হয়েছে।’
বিদেশে অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে পাপুলের গ্রেপ্তার ও দণ্ড দেশের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের টাকা সেটা আবিষ্কার হয় বিদেশে। সংসদ সদস্যের দুর্নীতি ধরা পড়ে কুয়েতে। তাহলে আমাদের দেশের সরকারের কাজটা কী? অনেক সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সে ব্যাপারে দেশের অভ্যন্তরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পাপুল কী প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্য হলো, কী করে তার স্ত্রীকে সংসদ সদস্য করে আনল এটার জবাবও সরকারকে দিতে হবে।’
খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘দেশের ভেতরে পাপুলদের মতো এমন অসংখ্য দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী শুধু সংসদ নয়, স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও রয়েছেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশের দুর্নীতির খবর বিদেশি মিডিয়ায় শুনতে হবে এটা আমাদের দেশের জন্য লজ্জাজনক। এ ধরনের খবর এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের শাসকশ্রেণি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চাইতে দুর্নীতি ঢেকে রাখতে তৎপর।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির ফলে আমাদের দেশের যারা আইনপ্রণেতা তারাও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির মধ্যে চলে গেছেন। পাপুলের ঘটনা এরই একটি অংশমাত্র। তার আসন শূন্য ঘোষণা হয়েছে, এটা ভালো খবর। কিন্তু পাপুলের মতো আরও যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা সরকার নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্যদের কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে অনেকেই এটাকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেক সংসদ সদস্য সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এলাকায় গিয়ে দায়িত্ব পালনের নামে এক ধরনের স্থানীয় জমিদারতন্ত্র কায়েম করেছেন। এর মাধ্যমে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছেন।’
তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা মূলত আইন প্রণয়নের কাজ করবেন। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবেন। সংবিধান অনুযায়ী, স্থানীয় উন্নয়নে তারা সরাসরি কোনো ভূমিকায় যাবেন না। এ ধরনের ধারা যদি ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে রাজনীতিকে কিছুটা হলেও দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত রাখা সম্ভব।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

কুয়েতে দন্ডিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণা করে গতকাল সোমবার গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। বিদেশের মাটিতে দন্ডিত হওয়ার পর দেশে কোনো এমপির আসন শূন্য হওয়ার নজির আগে ছিল না। এ সিদ্ধান্তটি সঠিক ও সময়োপযোগী বলে মনে করছেন প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। গতকাল দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘তিনি (পাপুল) যে কাজ করেছেন তাতে নৈতিক স্খলনজনিত কারণেই সংসদ সদস্য হারিয়েছেন। সিদ্ধান্তটি সঠিক এবং সময়োপযোগী বলে মনে করি। এর কারণ হলো একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিদেশে গিয়ে অর্থ ও মানব পাচারের মতো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে দন্ডিত হয়েছেন। এতে দেশকে বিদেশের কাছে হেয় করেছেন তিনি। সেজন্যই সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপের কারণে যিনি কারাগারে আছেন তিনিও বলতে পারবেন না যে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন গণতান্ত্রিক পন্থা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সংবিধান মোতাবেক ওই আসনে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করবে।’
পাপুলের এমপি পদ বাতিল অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা তো নিশ্চয়ই। যে কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে সেটি সংবিধানবিরোধী কাজ হবে। যাদের কারণে সুনাম নষ্ট হবে তাদের করুণার দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের লোকেরা নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পাবেন না। কিন্তু সমস্যা হলো, যখন মনোনয়ন দেওয়া হয় তখন তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ ধরা পড়ে না।’
প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যখন তার দন্ডিত হওয়ার ঘটনা ঘটল তখন থেকেই তিনি এ পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। সংবিধানেই লেখা আছে, সংসদের কোনো সদস্য যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন তখন তার আর ওই পদে থাকার কোনো অধিকার থাকে না। সাংবিধানিকভাবেই তার পদ বাতিল হয়েছে।’
বিদেশে অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে পাপুলের গ্রেপ্তার ও দণ্ড দেশের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের টাকা সেটা আবিষ্কার হয় বিদেশে। সংসদ সদস্যের দুর্নীতি ধরা পড়ে কুয়েতে। তাহলে আমাদের দেশের সরকারের কাজটা কী? অনেক সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সে ব্যাপারে দেশের অভ্যন্তরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পাপুল কী প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্য হলো, কী করে তার স্ত্রীকে সংসদ সদস্য করে আনল এটার জবাবও সরকারকে দিতে হবে।’
খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘দেশের ভেতরে পাপুলদের মতো এমন অসংখ্য দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী শুধু সংসদ নয়, স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও রয়েছেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশের দুর্নীতির খবর বিদেশি মিডিয়ায় শুনতে হবে এটা আমাদের দেশের জন্য লজ্জাজনক। এ ধরনের খবর এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের শাসকশ্রেণি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চাইতে দুর্নীতি ঢেকে রাখতে তৎপর।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির ফলে আমাদের দেশের যারা আইনপ্রণেতা তারাও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির মধ্যে চলে গেছেন। পাপুলের ঘটনা এরই একটি অংশমাত্র। তার আসন শূন্য ঘোষণা হয়েছে, এটা ভালো খবর। কিন্তু পাপুলের মতো আরও যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা সরকার নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্যদের কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে অনেকেই এটাকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেক সংসদ সদস্য সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এলাকায় গিয়ে দায়িত্ব পালনের নামে এক ধরনের স্থানীয় জমিদারতন্ত্র কায়েম করেছেন। এর মাধ্যমে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছেন।’
তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা মূলত আইন প্রণয়নের কাজ করবেন। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবেন। সংবিধান অনুযায়ী, স্থানীয় উন্নয়নে তারা সরাসরি কোনো ভূমিকায় যাবেন না। এ ধরনের ধারা যদি ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে রাজনীতিকে কিছুটা হলেও দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত রাখা সম্ভব।’