
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেল বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে পাঁচ বছর পর ২০২৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার শেষ ধাপের এই স্বীকৃতি দেশের জন্য বিশাল অর্জন। এতে করে শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা অনেকগুণ বাড়বে। দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগে নতুন মেরুকরণ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। তবে এই অর্জন সমুন্নত রাখতে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন তারা।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) উন্নয়ন নীতিমালাবিষয়ক কমিটির (সিডিপি) ৫ দিনের ভার্চুয়াল বৈঠকের শেষ দিন গতকাল শুক্রবারই এই স্বীকৃতির সুপারিশ মেলে। ২২ ফেব্রুয়ারি বৈঠকটি শুরু হয়। সাধারণত সিডিপির সুপারিশের তিন বছরের মধ্যেই এটি হওয়ার কথা। কিন্তু গত ১৫ জানুয়ারি সিডিপির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ দুই বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করায় এটি পিছিয়ে যায়।
এই অর্জনে আজ শনিবার বিকেল ৪টায় ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করা উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন।
অর্থনীতিবিদরা আরও বলছেন, বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন মেরুকরণ ঘটবে। বর্তমানে এলডিসিভুক্ত হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের মোট রপ্তানির ৬০-৬৪ শতাংশ ইউরোপের বাজারে। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটার পর এসব দেশ ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান সুবিধা তুলে নেবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উত্তরণ-পরবর্তী সর্বোচ্চ তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এরপরই বাংলাদেশের এসব দেশে পণ্য পাঠাতে হলে হয় বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, অন্যথায় অতিরিক্ত শুল্ক দিয়ে পণ্য প্রবেশ করাতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এনজিও থেকে অনুদান আসার পরিমাণ কমে যাবে বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, যদি বাংলাদেশ নতুন ও বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নিতে পারে, তাহলে খুব বেশি একটা অনুদান কমবে না। এমনকি বাড়তেও পারে। কিন্তু এ জন্য সরকারকে একটি শক্তিশালী পলিসি নিতে হবে। এই খাতে কর্মরতদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। সরকারের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে। আর ঠিক তার কিছুদিন পূর্বেই আমরা আর্থ-সামাজিক ধারাবাহিকতার বিভিন্ন সূচকের স্বীকৃতি পেলাম। এটা আমাদের সক্ষমতার পরিচয় দেয়। বিশে^ আমাদের ইমেজ বাড়িয়ে দেবে। বাংলাদেশের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও পর্যটকরা আকর্ষিত হবেন। অন্য দেশগুলো আমাদের কম ঝুঁকির তালিকায় রাখবে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন। আমাদের এটিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের আগামী ৫ বছর প্রতিযোগিতা নির্ভরতার জন্য নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পর্যটকদের সুরক্ষা বাড়াতে হবে। আমাদের একটা ব্র্যান্ডিং হলো।’
অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের জিএসপি প্লাস বা অন্য কোনো মডেলে যেতে হবে। আমাদের হাতে অনেক দিন সময় আছে। কিন্তু এটি নিয়ে এখনই বিস্তর গবেষণা শুরু করা উচিত। আমি বলছি না যে আজ থেকেই শুরু করতে হবে। তবে আমাদের এলডিসি-পরবর্তী সংকট নিয়ে আগে থাকতেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আর সেটা নিতে হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই। এতে আমাদের সুবিধার দিকগুলো খুঁজে বের করতে পারব।’
এলডিসি থেকের উত্তরণের পর রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এখন শুল্কের ওপর ভিত্তি করে যেভাবে চলছি, সেটা অনেক কমে যাবে। তাই রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে আয়কর দেওয়ার হার খুবই কম। প্রয়োজনে সরকারকে আয়কর হার কমিয়ে অধিকসংখ্যক মানুষকে ট্যাক্স নেটের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়বে। তখন এফটিএ বা পিটিএ করলে তেমন একটা চাপ পড়বে না।’
এ বিষয়ে সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলডিসিভুক্ত হওয়ায় আমাদের এখন বাজার ও মেধাস্বত্ব আইন কার্যকর নয়। ওষুধ বানাতে আমাদের প্যাটার্ন লাইসেন্স লাগে না। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এগুলো আর থাকবে না। ইইউতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাব। কিন্তু অন্যান্য দেশে পাব না। তাই আমাদের যেসব সুযোগ সামনে আছে, সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। বিশ^ বাণিজ্য সংস্থায় যেসব সুযোগ আছে, সেগুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য সক্ষমতা বাড়াতে হবে; বিশেষ করে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৫ সালের ১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের নতুন তালিকায় বাংলাদেশ, কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তান নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়। সিডিপির ২০১৮ সালের ১৬ মার্চের সভায় প্রাথমিক বাছাই তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জানিয়েছেন, বিশ^ব্যাংকের অ্যাটলাস পদ্ধতিতে যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৫ ডলারের কম, সেগুলোকে নিম্ন আয়ের দেশ বলা হয়। মাথাপিছু আয় ১,০৪৫ থেকে ৪,১২৫ ডলার হলে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ ও ৪,১২৬ থেকে ১২,৭৪৫ ডলারের মধ্যে থাকলে তাকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ বলা হয়। এর ওপরে যাদের মাথাপিছু আয় তাদের উন্নত দেশ বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকের ভিত্তিতে বিশে^র দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত এই তিন ভাগে ভাগ করেছে। ইকোসোকের উন্নয়ন নীতিমালাবিষয়ক কমিটি (সিডিপি) তিনটি সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পর পর এলডিসির তালিকা তৈরি করে থাকে।
এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার সূচকগুলো হচ্ছে : (ক) মাথাপিছু আয় : তিন বছরের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই); (খ) মানবসম্পদ সূচক, যেটি পুষ্টি, স্বাস্থ্য, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি হয়; (গ) অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক, যেটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ ও বিশ^বাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এর যেকোনো দুটিতে উত্তীর্ণ হলেই চলবে। তবে ইচ্ছে করলে কোনো দেশ শুধু আয়ের ভিত্তিতেও এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার আবেদন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার মাথাপিছু আয় মূল্যায়নের বছরে নির্ধারিত প্রয়োজনীয় আয়ের দ্বিগুণ হতে হবে।
বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে একেবারে নবীন দেশ। স্বাধীনতার ৪৯ বছরের মধ্যে কেবল ভুটানের সঙ্গে গত ৬ ডিসেম্বর একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করেছে। এ ছাড়া নেপালের সঙ্গেও পিটিএ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ জন্য হঠাৎ করে বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পিটিএ ও এফটিএ করা খুবই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। যদিও সরকার এই বছরের মধ্যে অন্তত ৭-৮টি দেশের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করতে চায়। মূলত ইউরোপসহ বড় দেশের সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়ার আগে নিজেদের অভিজ্ঞতা বাড়াতেই এই পদক্ষেপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ট্যারিফ কমিশনের একটি সেল কাজ করছে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ বিভাগের কর্মকর্তারাও আলাদা আলাদা দেশকে ভাগ করে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমস্যা হলো আমাদের অভিজ্ঞতা ও জনবল দুটোই কম। তাই আমরা চাচ্ছি আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে জাপান, কানাডা, ব্রাজিল ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে। এতে করে আমাদের জন্য প্রধান রপ্তানির দেশগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষিতে বাড়তি সুবিধা পাব।’
ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলডিসি থেকে উত্তরণ ও পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে তারা ইতিমধ্যে কয়েকটি গবেষণা করেছেন। সেখানে তারা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যা ও সমাধানের কথাও উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের এ দেশে নিয়ে আসা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানিযোগ্য পণ্য বৃদ্ধি করা, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আয়করের হার কমিয়ে অধিকসংখ্যক মানুষকে ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসা, ই-কমার্স খাতকে একটি নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা, মানসম্পন্ন ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করা এবং সর্বক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান তেমন একটা উদ্যোগ নেয়নি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমস্যা হলো, আমাদের গার্মেন্টস ছাড়া রপ্তানি করার মতো আর তেমন কিছু নেই। এটা রাতারাতি পরিবর্তনও হবে না। আমরা যদি এফটিএভুক্ত দেশের সংখ্যা বাড়াতে পারি, তখন আমাদের নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হবে। এ জন্য এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে। এ ছাড়া দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজন ব্যবসায় পরিবেশ সূচকে উন্নতি আনা। কিন্তু সেটা এখনো আমরা করতে পারছি না। এগুলো করতে হবে। পরিকল্পিত একটি ব্যবস্থার মধ্যে আগামী ৩-৪টা বছর পার করতে পারলে আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণের সুফল ঘরে তুলতে পারব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেক সুবিধা আমরা পাব না। এনজিও খাতেও অনুদান কমে যাবে। কারণ তখন আমরা আর গরিব থাকব না। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা আছে এবং সামনেও প্রয়োজন পড়বে। এখন সরকার হয়তো বলবে, এই মুহূর্তে তো ভালো অনুদান আসছে। আমার ধারণা, আগামী আরও বছর দুয়েক অনুদান আসবে। কারণ একটি প্রকল্প তো অনেক দিন ধরে চলমান থাকে। নতুন প্রকল্পে কী পরিমাণ অনুদান আসছে, সেটা দেখার বিষয়। তা ছাড়া আপনি যখন গরিব থেকে মধ্যবিত্ত হবেন, তখন কিন্তু আপনাকে আগের মতো সহায়তা করতে চাইব না। আমি মনে করি, এই খাতকে ঘিরে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা না করে এলডিসি থেকে বের হওয়া যাবে না। আর এ জন্য এখনই কাজ শুরু করতে হবে। কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না।’
অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাসের হার যেভাবে আছে তাতে ২০২৪ সালে তেমন একটা প্রভাব না-ও পড়তে পারে। আর এনজিও খাতে বরাদ্দ অনেকটা নির্ভর করে দেশে কী পরিমাণ গরিব আছে তার ওপর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার বেড়েছে। যারা এনজিও খাতে কাজ করেন, তারা যদি সঠিক পরিসংখ্যান দিয়ে ঠিকমতো প্রকল্প প্রস্তাব করতে পারেন তাহলে মনে হয় না তেমন কোনো প্রভাব পড়বে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কভিড-১৯ মহামারীর স্বাস্থ্যগত এবং আর্থসামাজিক প্রভাব লাঘব করতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠককালে গুতেরেস বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন বলে গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। গুতেরেস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেন যে, কভিড-১৯ টিকাদানকে ‘বৈশ্বিক জনগণের কল্যাণ’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
মহাসচিব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার ভূয়সী প্রশংসা এবং পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে মহাসচিবকে অবহিত করেন এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
ড. মোমেন জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের জন্য মহাসচিবের আহ্বানকে স্বাগত জানান এবং তাকে বলেন, বর্তমান সিভিএফ সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে এবং চলতি বছর গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনের প্রস্তুতিতে অব্যাহতভাবে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য এমনকি উত্তরণের পরেও নতুন সহায়তা ব্যবস্থাসহ সুবিধা প্রদানের জন্য উন্নয়ন অংশীদার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তার প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ জানান।
মতবিনিময়কালে গুতেরেস উল্লেখ করেন, উত্তরণের বিষয়টিকে শুধু জিডিপির ভিত্তিতে কৌশলগত পরিমাপ দিয়ে বিবেচনা করা উচিত হবে না, বরং এ ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক ঝুঁকিসূচক বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘উত্তরণ লাভের জন্য শাস্তি নয় বরং পুরস্কার দেওয়া উচিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানান। বৈঠককালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে আইনটি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা এটি পর্যালোচনা করব।’
এ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত বছরের ৬ মে থেকে কারাগারে ছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। গত বৃহস্পতিবার রাতে কারাগারে অসুস্থ হওয়ার পর তার মৃত্যুর খবর জানায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ। তার মৃত্যুতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ফের সমালোচনা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনটি বাতিলের পক্ষপাতী নন জানিয়ে বলেন, সাইবার অপরাধ দমন করতে এ আইনটি করা হয়েছিল। এখন যে হারে এ ধরনের অপরাধ বেড়েছে তাতে অনেকেই এর শিকার হচ্ছে। অপরাধের ধরন বিবেচনা করলে আইনের মাধ্যমেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (মুশতাক আহমেদ) কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এটি খুবই দুঃখজনক এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে তিনি কিন্তু এই আইনের কারণে মারা যাননি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে চেষ্টাই করা হবে।
আনিসুল হক বলেন, ‘সব আইনেরই কিছু না কিছু অপব্যবহার হয়। প্রতিনিয়তই মানুষ সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। সুরক্ষা দিতে হয় আইনের মাধ্যমে। আবার কেউ যেন হয়রানি ও হেনস্তার শিকার না হনম সেটি বিবেচনায় নিয়েই আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পর্যালোচনার চিন্তাভাবনা করছি। শিগগির এ বিষয়ে অগ্রগতি জানানো হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের (৫৩) মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মশাল মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এ সময় সাতজনকে আটক করে পুলিশ এবং ১০ নেতাকর্মী আহত হন বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে গেলে এতে বাধা দেয় পুলিশ। ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে চলে যায়। পরে সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা লাঠিপেটা ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সাত নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। সকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। বিকেলে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’ শাহবাগে তার গায়েবানা জানাজা পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ‘মুশতাক আহমেদের মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিকএ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কারাগারে ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন’ চালিয়ে লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি।
মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় টুইট করে ‘প্রতিবাদ’ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ থেকে বলা হয়, মুশতাক আহমেদ তার মতপ্রকাশের জন্য ‘কুখ্যাত’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন ও সেখানে তার মৃত্যু হয়। মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেছে সংস্থাটি।
কারাগারে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতরা কী পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু ঘটেছেএর দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন লেখক মুশতাক। তাকে হাসপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। গত বছরের ৪ মে রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসা থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ তৎপরতার অভিযোগে তাকে আটক করে র্যাব। এরপর মুশতাকের জামিন ছয়বার নাকচ করেছে আদালত। মুশতাক কাশিমপুর কারাগারে ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে বন্দি ছিলেন।
এদিকে কারাবন্দি মুশতাকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার চিকিৎসায় কোনো অবহেলা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। দুই সদস্যের এই কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মো. ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী ও উম্মে হাবিবা ফারজানা। এর আগে গতকাল কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে এ ঘটনায় গাজীপুর সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
গতকাল রাতে মুশতাকের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে আজিমপুর গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়।
উত্তাল শাহবাগ, সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি : প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্রজোটের মশাল মিছিলের একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার মধ্যে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিব নাঈম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলাম। জাদুঘরের সামনে গেলে পুলিশ হঠাৎ করে আমাদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে। আমাদের প্রায় ১০ জন সহযোদ্ধা আহত হয়েছে। পুলিশ আমাদের সাতজন কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা পুলিশের ১০ থেকে ১২টি ইক্যুইপমেন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে। শটগানের সিøপার পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় পুলিশের ১০-১২ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেলে আমি নিজেও আহত হয়েছি।’
আন্দোলনকারীদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে এ পর্যন্ত আটক করিনি। হামলার সময়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হামলায় যদি তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে না তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এর আগে গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় তারা লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি ও আইনটি বাতিলের দাবিতে সেøাগান দেন। আগামী সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় ছেড়ে যান তারা।
এরপর বিকেল ৫টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে এ আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলা হয়। মুশতাকের মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ অভিহিত করে সমাবেশ থেকে আগামী ৩ মার্চ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে ‘সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় সরব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো : লেখক মুশতাকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ ঘটনায় স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যারা স্বাধীনভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মতপ্রকাশের চেষ্টা করছেন, তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ংকর দুর্বিষহ পরিণতি। মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
গতকাল বিকেলে জাদুঘরের সামনের সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা প্রত্যেকে এর জন্য দায়ী।’
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে দায়ী করছি। মুশতাক হত্যার জন্য, কার্টুনিস্ট কিশোরের জেলে থাকার জন্য যারা এই আইন তৈরি করেছে, যারা প্রয়োগ করছে তারা সবাই দায়ী।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের মত-পথের ভিন্নতা আছে। কিন্তু আজ যদি আমরা সংগঠিত হতে না পারি, একত্রিত হতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মতো হবে।’
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে লেখক মুশতাকের গায়েবানা জানাজা হয়। এরপর লেখক মুশতাকের একটি লেখার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় গায়েবানা জানাজা ও প্রতিবাদ সমাবেশে ‘রাষ্ট্রচিন্তার’ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, লেখক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আবদুর রহমান বক্তব্য দেন।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এ দুটি বাম দল পৃথক বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানায়।
১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ : কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতরা কী পরিস্থিতিতে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ঘটেছে তার দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপী ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা এবং যুক্তরাজ্য ও কানাডার হাইকমিশনাররা।
‘অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন মুশতাক’ : মুশতাক আহমেদ আগেও দুই-একবার তার লেখনীতে আইনশৃঙ্খলা কিংবা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একই সঙ্গে কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাকের মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুশতাক আহমেদ আগেও দুই-একবার তার লেখনীতে আইনশৃঙ্খলা কিংবা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন। সেজন্য অনেকেই মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি ২০২০ সালে যে মামলাটি হয়েছিল সেই মামলার জন্য তিনি কাশিমপুর জেলখানায় অন্তরীণ ছিলেন। হঠাৎ করেই আমাদের আইজি প্রিজনস থেকে আমি যে সংবাদটা পেয়েছি, তিনি হঠাৎ করে অসুস্থতাবোধ করলে আমাদের কারাগারে যে হাসপাতাল আছে সেখানে চিকিৎসাসেবা পান। তারপর অবস্থা আরেকটু খারাপের দিকে গেলে গাজীপুর তাজউদ্দীন মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সে মৃত্যুবরণ করেন।’
তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব মৃত্যুর এগেনইস্টে এনকোয়ারি হয়। একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বা স্বাভাবিক মৃত্যু বলুন। নানা প্রশ্ন আসে। আমরা সেজন্য যেকোনো মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে হোক বা অ্যাক্সিডেন্ট হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়। পোস্টমর্টেমের পরই আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে। এনকোয়ারি কমিটি প্রয়োজন বোধে করব। কালকে তো হলো, নিশ্চয় এটার ব্যবস্থা আমরা করতে পারব।’
গত বছর ৪ মে রাতে রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসা থেকে লেখক মুশতাককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর ৬ মে তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। একই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, ‘রাষ্ট্রচিন্তার’ সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়।
ওই মামলায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আসামি ছিলেন ‘নেত্র নিউজের’ সম্পাদক সুইডেনপ্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরিপ্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার। তদন্ত শেষে মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এ মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মুশতাক আহমেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকায়। তিনি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে থেকে পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন চা-বাগানে। বৃত্তি নিয়ে যান যুক্তরাজ্যে। এ সময় উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের বিভিন্ন খামার ও কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে মুশতাকের। দেশে ফিরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি নেন তিনি। একটি বহুজাতিক টেলিফোন কোম্পানিতেও কিছুদিন চাকরিও করেন। পরে ২০০১ সালে একটি ট্যুর অপারেটিং কোম্পানিতে চাকরি নেন। এরপরই শুরু করেন কুমিরের চাষ। ২০১০ সাল থেকে শুরু করেন কুমির রপ্তানি। ময়মনসিংহের ভালুকায় তার খামারে কুমিরের প্রজননও শুরু হয়।
মুশতাক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পড়াশোনা করা মাসিহা আখতার লিপাকে বিয়ে করেন ২০০৫ সালে। নিজের গড়া খামার শেষ পর্যন্ত রাখতে পারেননি মুশতাক। ২০১৩ সালে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করে দেন। ৭৫টি কুমির দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করলেও হস্তান্তরের সময় কুমিরের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০০। কুমির নিয়ে তিনি দুটি বই লিখেছেন।
স্বামী-স্ত্রী দুজনই চিকিৎসক। তাদের রয়েছে দুটো ফুটফুটে শিশুকন্যা। সাজানো সুখের সংসার। স্ত্রী বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, তাই দুই সন্তানকে বাসায় রেখে গতকাল শুক্রবার ভোরে সিলেট থেকে বাসে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। কিন্তু যাত্রা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যেই সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রশিদপুরে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চিকিৎসক স্বামীসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ২৫-৩০ জন। সকাল পৌনে ৭টার দিকে সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেসের বাস ও সিলেট থেকে ঢাকাগামী এনা পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রশিদপুর এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতরা হলেনএনা পরিবহনের বাসের চালক সিলেটের ওসমানীনগরের মঞ্জুর আলী (৩৮), বাসের সুপারভাইজর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের সালমান খান (২৮), বাসের কর্মী ওসমানীনগরের জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নুরুল আমিন (৫০), সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আল মাহমুদ ইমরান খান (৪৫), ঢাকার ওয়ারী এলাকার নাদিম আহমেদ সাগর (২০), সিলেটের আখালিয়ার শাহ কামাল (৪৫) ও সুনামগঞ্জের ছাতকের রহিমা বেগম (৩০)। নিহতদের মধ্যে ৬ জন ঘটনাস্থলে এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টায় একজন এবং দুপুর সাড়ে ১২টায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত ২৫ জন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও আহত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরবেলা অনেকটা ফাঁকা সড়কে দুটি বাসই চলছিল দ্রুতগতিতে। রশিদপুরের অদূরে ব্রিজের কাছে দুই বাস প্রচ- গতিতে মুখোমুখি ধাক্কা খায়। এতে বাস দুটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেছে। দুর্ঘটনার বিকট শব্দ আর আহতদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তবে বাস দুটি এমন ভয়ংকরভাবে একটি আরেকটির মধ্যে অনেকটা ঢুকে পড়েছিল যে, সাধারণের পক্ষে তেমন কিছুই করার ছিল না। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তারা একে একে নিহতদের উদ্ধার এবং আহতদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিলেটের উপ-পরিচালক কোবাদ আলী সরকার জানান, সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসটি ব্রিজ পার হয়েই বিপরীতমুখী এনা পরিবহনের বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তিনি জানান, দুর্ঘটনাস্থলের দৃশ্য দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসের চালকের ভুলেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসটি সড়কের ভুল পাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে চলছিল। এনা পরিবহনের বাসটি সড়কের সঠিক পাশ দিয়েই যাচ্ছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে বিস্তারিত তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান কোবাদ আলী।
লন্ডন এক্সপ্রেসের বেঁচে যাওয়া একজন যাত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ছাড়ার পরই বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল এবং বিপদজনকভাবে একের পর এক গাড়িকে ওভারটেক করছিল। এ কারণে যাত্রীরা একাধিকবার চালককে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। সিলেটের কাছাকাছি এসেই শেষ পর্যন্ত ভয়ানক দুর্ঘটনায় পড়ে বাসটি। অন্যদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া এনা পরিবহনের বাসের যাত্রীরা যাত্রা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়েন।
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, গাড়ির অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসের চালকের ভুলেই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। ওসি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলের উভয়পাশে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে। রশিদপুরের দুদিকে অন্তত তিন কিলোমিটার সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা উদ্ধার কাজ শেষ করলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) এবিএম আশরাফ উল্যাহ জানান, এনা পরিবহনের বাসটিতে ৮ যাত্রী, বাসের চালক ও সহকারী মিলে মোট ১১ জন ছিলেন। অন্যদিকে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসে ২৮ যাত্রী, চালক ও সহকারী মিলে মোট ৩১ জন ছিলেন। তিনি জানান, তদন্তের পরই দুর্ঘটনার কারণ সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন ডা. আল মাহমুদ : গতকাল শুক্রবার সকালে রশিদপুরে ঢাকাগামী এনা পরিবহনের একটি বাস এবং ঢাকা থেকে সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ওই চিকিৎসক দম্পতির সংসার তছনছ করে দিয়েছে।
জানা যায়, ডা. আল মাহমুদ ইমরান খান সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করেন। তার স্ত্রী ডা. শারমিনের বিসিএস পরীক্ষা ছিল গতকাল শুক্রবার। এজন্য ভোরে বাসে করে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
ডা. শারমিনের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক আহাজারি করে বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষা আমার মেয়ের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। আজ স্বামীকে নিয়ে সে বিসিএস পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাচ্ছিল। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সে স্বামীকে হারাল। সে নিজেও জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাদের দুটো বাচ্চার এখন কী হবে।’
এদিকে ছেলে হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শারমিন আক্তারের শাশুড়ি ফরিদা খান। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। ফরিদা খানকে সান্ত¦না দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের স্বজনরা।
ডা. আল মাহমুদ ও ডা. শারমিন আক্তার দম্পতির বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে। তারা সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ডা. শারমিন আক্তার ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গতকাল স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু যাত্রা শুরুর অল্পক্ষণের মধ্যেই শারমিনের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন চিরতরে। শারমিন নিজেও অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কালীগঞ্জে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে যুবক নিহত : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় শিমুল বিশ^াস (৪০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও চারজন। গতকাল বিকেলে কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের পাতবিলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিমুল বিশ^াস কোটচাঁদপুর পৌরসভাধীন দুধসর গ্রামের হরেন্দ্রনাথ বিশ^াসের ছেলে।
কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মামুনুর রশিদ জানান, নিহত শিমুল বিশ^াস মোটরসাইকেলযোগে কালীগঞ্জ থেকে কোটচাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিল। পথে পাতবিলা তেল পাম্পের সামনে পৌঁছালে যাত্রীবাহী বাসের পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল ওভারটেক করতে যায়। ফলে দুই মোটসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পেছন থেকে আসা আরও একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই দুই মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে শিমুল মারা যায়। এসময় আহত হয় আরও চার মোটরসাইকেল আরোহী।
খবর পেয়ে কালীগঞ্জ দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
বগুড়ায় বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা চালকসহ নিহত ৪ : বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে উপজেলার মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বগুড়ার শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা রতন হোসেন জানান, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জগামী শাওন পরিবহনের বাসটি মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালকসহ তিনজন মারা যান। গুরুতর আহত এক যাত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তারও মৃত্যু হয়। দু’জনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। তারা হলেন শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানি গ্রামের বাসিন্দা কালিদাস চন্দ্র (৭০) ও ধুনট উপজেলা সদরের শাহ জামাল (৩৬)। তিনি আরও জানান, লাশ চারটি শেরপুর হাইওয়ে থানায় হস্তান্তর করা হয়। বাসের চালককে স্থানীয় লোকজন আটক করে হাইওয়ে থানায় সোপর্দ করেছে বলেও জানান তিনি।
বগুড়া-নওগাঁ সড়কে ট্রাকচাপায় দুজন নিহত : বগুড়া-নওগাঁ সড়কের দুপচাঁচিয়া তিষিগাড়ী মোড়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ট্রাকচাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আব্দুর রউফ ওরফে রাসেল (৩৩) ও যাত্রী মুক্তার হোসেন (৩৭) নিহত হয়েছেন। আব্দুর রউফ দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোড়গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে এবং মুক্তার একই উপজেলার বেলহালী গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অটোরিকশাচালক একজন যাত্রী নিয়ে তিষিগাড়ী মোড়ে একটি দাঁড়ানো ট্রাককে পাশ কাটিয়ে দুপচাঁচিয়ায় আসার পথে একই দিক থেকে আরেকটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন দিকে অটোরিকশাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। অটোরিকশাটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে চাপা লেগে অটোরিকশার চালক আব্দুর রউফ ও যাত্রী মুক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ট্রাকের চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আলী বলেন, ট্রাকটি আটক করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং লাশ দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।
বরিশালে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত : বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়বাত সেতুতে বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়বাত সেতু এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী এলাকার সিরাজ মাতুব্বরের ছেলে মো. শরীফ মাতুব্বর (২০) এবং একই বাড়ির ইউসুফ আলীর ছেলে আল-আমীন (২০)। সম্পর্কে তারা দুজন চাচাতো ভাই।
কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. নাজমুল হুদা জানান, ভাঙ্গা থেকে মোটর সাইকেলযোগে ওই দুই যুবক চরমোনাই মাহফিলের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। বরিশালের দপদপিয়া সেতু অতিক্রমকালে বিপরীতমুখী বালুবাহী একটি ট্রাকের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আরোহী দুই যুবক গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহত শরীফ মাতুব্বরকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আল-আমীনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হলে পথে তার মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় ও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো গুণবতী ইউনিয়নের কৈতরা গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ (২০), বগুড়া সদর উপজেলার চরজপুর গ্রামের আবু তৈয়বের ছেলে মনির হোসেন (২৫) ও অপরজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. খোকন।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আমজাদের বাজার এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পিকআপের হেলপার মনির হোসেন নিহত হন। মহাসড়কের পদুয়া-লাটিমি রাস্তার মাথা এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির (২৯) লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের গুণবতী রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় ইউসুফ নিহত হয়েছে। এই নিয়ে গত দু’দিনে গুণবতী রেল স্টেশনে তিনজন নিহত হয়েছে।
চকরিয়ায় পিকআপ ট্রাকের ধাক্কায় দুজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত : কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার বানিয়ারছড়া এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক নিহত ও একজন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে মহাসড়কের বানিয়ারছড়ার মহেশখালী রাস্তার মাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নেজামউদ্দিনের ছেলে মো. ছোটন (২২), কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জানিয়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শামসুল আলম (২০)। আহত মো. ফারুক যুবক রামুর গর্জানিয়ার মো. হোসেনের ছেলে। তারা সবাই বানিয়ারছড়ার একটি গ্রিল ওয়ার্কশপের দোকানে শ্রমিক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার বিকেলে তিন বন্ধু মিলে মোটরসাইকেল নিয়ে হারবাংয়ের দিকে বেড়াতে যাচ্ছিল। তাদের মোটরসাইকেলটি বানিয়ারছড়ার আমতলী এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ (মিনি ট্রাক) জোরে ধাক্কা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে ছোটন মারা যায়। পরে আহত শামসুল আলম ও ফারুককে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে শামসুল আলম মারা যায় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন। আহত ফারুককে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলার মহাসড়কের চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সিরাজুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করেন।
জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে পালিয়ে যাওয়া তরুণী শামীমা বেগমকে সিরিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেন। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যুক্তরাজ্যে ফিরতে চেয়েছিলেন শামীমা।
কিন্তু এক সর্বসম্মত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরতে না দিয়ে সরকার শামীমা বেগমের অধিকার লংঘন করেনি। বর্তমানে ২১ বছর বয়সী শামীমা বেগম উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীর প্রহরাধীন একটি শিবিরে বাস করছেন।
ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব লন্ডনের আরও দুজন স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীসহ যুক্তরাজ্য ত্যাগ করে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া চলে যান। সেখানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীতে যোগ দেন তিনি। তখন শামীমা বেগমের বয়স ছিল ১৫। সেখানে নেদারল্যান্ডসের এক জিহাদিকে তিনি বিয়ে করেন। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে শামীমার সাক্ষাৎ পান ব্রিটিশ সাংবাদিক। তখন শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
আজ রবিবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ছিল ১২৫। এই স্কোরের অর্থ- ঢাকার দূষণমাত্রা 'সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই। শহরটির দূষণের স্কোর ২৫৪ অর্থাৎ 'খুবই অস্বাস্থ্যকর'। দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, স্কোর ১৬৬ অর্থাৎ 'অস্বাস্থ্যকর'। আর ১৬৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ভারতের দিল্লি, এটিও 'অস্বাস্থ্যকর'।
উল্লেখ্য, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি, সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর আর ৩০১-এর বেশি হলে বিপজ্জনক।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’