কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পায়নি বাস স্বাস্থ্যবিধি বলতে শুধু মাস্ক
খাইরুল বাশার ও সানমুন আহমেদ | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০
গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী বহনের ঘোষণার পর থেকেই অনেকটা বিপাকে পড়েছিলেন রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবহারকারী অফিসগামী যাত্রীরা। এ মাসের শুরু থেকেই বাসে সিট থাকলেও খুলছে না দরজা । ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। কখনো আবার ঝুলতে হচ্ছে বাদুরঝোলা। বর্ধিত ৬০ শতাংশের পরও রেহাই মিলছে অতিরিক্ত ভাড়ার যন্ত্রণা থেকে। গত সোমবার থেকে সরকার ঘোষিত ‘লকডাউন’ কিংবা কাগজে-কলমে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও খোলা ছিল অফিস। বন্ধ ছিল গণপরিবহন। নগরবাসীর কষ্টের যেন সীমা ছিল না। হেঁটে বা পিকআপে, রিকশায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, তিন-চার গুণ ভাড়া দিয়ে বাসায় ফিরেছেন বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা। জনগণ ভোগান্তি লাঘব করতেই দুদিন যেতে না যেতেই গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।
তবে গতকাল বুধবারের চিত্র পুরো উল্টো। নগরীর বাসগুলোকে অনেকটা বাধ্য হয়েই ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রেখে পরিচালনা করতে হচ্ছে। কারণ যাত্রী নেই। সকাল থেকেই বাসগুলোর চিত্র ছিল এমন। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছাপ। স্বাভাবিক সময়ে ট্রিপ প্রতি যে টাকা পেতেন, এখন দুই ট্রিপেও সেই অর্থ মিলছে না তাদের। যাত্রাপথেই যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে মিনিটের পর মিনিট। তাই সরকারের দেওয়া নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না তারা। তাদের কাছে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মানেই হলো ‘মাস্ক’। অর্থাৎ দুদিন পর সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যেসব শর্তের ভিত্তিতে দেশের ১১ সিটি করপোরেশনে জনস্বার্থে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে, সেসব নির্দেশনা একদম মানা হয়নি।
এদিকে দুদিন পর গণপরিবহন পেয়ে নগরবাসীর মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, গণপরিবহনে কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কিছুই নেই। নগরীর কোনো বাসে জীবাণুনাশক ছিটানোর দৃশ্য চোখে পড়েনি। চোখে পড়ার মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও ছিল না। একাধিক বাসে যাত্রী এবং হেলপারের সঙ্গে এসব নিয়ে ঝগড়া বাগ্ বিতন্ডার চিত্রও দেখা যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জনস্বার্থে গণপরিবহন চালুর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কেউ কেউ যে অভিযোগ করছে, তা সঠিক নয়।’ জনগণের দাবির মুখে জনস্বার্থে দুর্ভোগ কমাতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, বসিলা, মোহাম্মাদপুর, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, সদরঘাট, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে গণপরিবহনের তুলনায় যাত্রী অনেক কম। নেই অন্যান্য দিনের মতো ব্যস্ততা। স্টপেজগুলোতে তুলনামূলক বাসের সংখ্যা কম। তবে কোথাও কোথাও জ্যাম ছিল।
মাকে দেখতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন শরীফ। পথে বনানী সিগন্যালে ৩৫ মিনিট অস্বস্তিকর জ্যামের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি। এদিকে নগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, মিনি পিকআপ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে একাধিক বাসচালক দেশ রূপান্তরকে আক্ষেপ করে জানান, বাস চালু করলেও যাত্রী না থাকায় আমাদের কোনো লাভ হলো না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস স্ট্যান্ডগুলোতে থাকলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে কম যাত্রী দিয়েই চালাতে হচ্ছে বাস।
সদরঘাট বাসস্ট্যান্ডে তানজিল পরিবহনের এক চালক মো. সিয়াম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোডের যে অবস্থা তাই সকালে টিপ মারি নাই। এখন দুপুরে এই স্ট্যান্ডে আসলাম গাড়ি চালাতে। কিন্তু এখনো যাত্রী দেখা যাচ্ছে না। কী করব, কিছুই জানি না।’
বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মো. আনাস বলেন, ‘অন্য দিনগুলোর তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। যাত্রীদের চাপ যদি কম থাকে তাহলে মালিকরা সড়কে বাস কম নামাবেন। এই অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি।’
দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মাদপুর বসিলায় অপেক্ষারত রজনীগন্ধা পরিবহন। বাসে যাত্রীর সংখ্যা ৬। সবার মুখেই মাস্ক আছে। তবে ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
এ সময় যাত্রী মিফতাজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এই বাসগুলোতে কোনো জীবাণুনাশক দেওয়া হয় কি না, তা আমরা নিশ্চিত না।’ বর্ধিত ভাড়া দেওয়া হলেও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনো ব্যবস্থা নেই। গণপরিবহন চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি শঙ্কা রয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
বাসের হেলপার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল থেকেই যাত্রী নাই। খালি বাস চালাইতাছি।’ এই বাসে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না ছিটাই নাই।’ সিটির বাইরের বাস প্রবেশ করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হুম ১১টা-১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বাস প্রবেশ করতে দেখছি।’
সদরঘাট স্ট্যান্ডে গতকাল দুপুরে মহাখালী যাওয়ার জন্য এসেছে মো. সাগর নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, একটার পর একটা বাস বদলাচ্ছি। কিন্তু যাত্রী না থাকায় বাসগুলো টাইমমতো ছাড়ছে না। এভাবে যে আর কতক্ষণ বাসের জন্য বসে থাকতে হবে। তা ছাড়া সরকার যে বিআরটিসির কতগুলো বাস সড়কে দেওয়ার কথা ছিল সেগুলো কোথায়?
নতুন এই সিদ্ধান্তে বাইরের গণপরিবহন সিটিতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাইরের গণপরিবহনগুলো প্রবেশ করছে রাজধানী ঢাকায়। গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজলা এলাকায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। একই সঙ্গে সিলেট, কুমিল্লা ও লাকসাম এলাকার দূরপাল্লার বাসও প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া দুপুর ১টায় মানিকগঞ্জের হিমাচল বাস রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে যাত্রী নিয়ে পরিবহন করতে দেখা যায়। এ ছাড়া ৬টার পরও কয়েক ঘণ্টা গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসলে সিটির পরিবহনে সবকিছু পেরে ওঠা সম্ভব হয় না।’ তবে জীবাণুনাশক স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকলেও সবার মাস্ক নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া নির্দেশনা অমান্য করে সিটিতে বাস প্রবেশ প্রসঙ্গে বলেন, মানিকগঞ্জের ওই বাসের তো সিটিতে চলার রুট পারমিট আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বরাবরের মতোই গণপরিবহনগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এ বিষয়টা কেউই নিশ্চিত করতে পারেনি।’ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, দু-এক দিনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস চালুর ব্যাপারে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন, যা মোটেও সত্য নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার বিকেলে নিজের সরকারি বাসভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন সেবা চালু থাকবে। এটি বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হবে। তবে শহরের বাইরের কোনো পরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বের হতেও পারবে না।’ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লায় গণপরিবহন চলাচল যথারীতি বন্ধ থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।
শেয়ার করুন
খাইরুল বাশার ও সানমুন আহমেদ | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০

গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী বহনের ঘোষণার পর থেকেই অনেকটা বিপাকে পড়েছিলেন রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবহারকারী অফিসগামী যাত্রীরা। এ মাসের শুরু থেকেই বাসে সিট থাকলেও খুলছে না দরজা । ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। কখনো আবার ঝুলতে হচ্ছে বাদুরঝোলা। বর্ধিত ৬০ শতাংশের পরও রেহাই মিলছে অতিরিক্ত ভাড়ার যন্ত্রণা থেকে। গত সোমবার থেকে সরকার ঘোষিত ‘লকডাউন’ কিংবা কাগজে-কলমে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও খোলা ছিল অফিস। বন্ধ ছিল গণপরিবহন। নগরবাসীর কষ্টের যেন সীমা ছিল না। হেঁটে বা পিকআপে, রিকশায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, তিন-চার গুণ ভাড়া দিয়ে বাসায় ফিরেছেন বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা। জনগণ ভোগান্তি লাঘব করতেই দুদিন যেতে না যেতেই গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।
তবে গতকাল বুধবারের চিত্র পুরো উল্টো। নগরীর বাসগুলোকে অনেকটা বাধ্য হয়েই ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রেখে পরিচালনা করতে হচ্ছে। কারণ যাত্রী নেই। সকাল থেকেই বাসগুলোর চিত্র ছিল এমন। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছাপ। স্বাভাবিক সময়ে ট্রিপ প্রতি যে টাকা পেতেন, এখন দুই ট্রিপেও সেই অর্থ মিলছে না তাদের। যাত্রাপথেই যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে মিনিটের পর মিনিট। তাই সরকারের দেওয়া নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না তারা। তাদের কাছে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মানেই হলো ‘মাস্ক’। অর্থাৎ দুদিন পর সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যেসব শর্তের ভিত্তিতে দেশের ১১ সিটি করপোরেশনে জনস্বার্থে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে, সেসব নির্দেশনা একদম মানা হয়নি।
এদিকে দুদিন পর গণপরিবহন পেয়ে নগরবাসীর মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, গণপরিবহনে কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কিছুই নেই। নগরীর কোনো বাসে জীবাণুনাশক ছিটানোর দৃশ্য চোখে পড়েনি। চোখে পড়ার মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও ছিল না। একাধিক বাসে যাত্রী এবং হেলপারের সঙ্গে এসব নিয়ে ঝগড়া বাগ্ বিতন্ডার চিত্রও দেখা যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জনস্বার্থে গণপরিবহন চালুর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কেউ কেউ যে অভিযোগ করছে, তা সঠিক নয়।’ জনগণের দাবির মুখে জনস্বার্থে দুর্ভোগ কমাতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, বসিলা, মোহাম্মাদপুর, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, সদরঘাট, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে গণপরিবহনের তুলনায় যাত্রী অনেক কম। নেই অন্যান্য দিনের মতো ব্যস্ততা। স্টপেজগুলোতে তুলনামূলক বাসের সংখ্যা কম। তবে কোথাও কোথাও জ্যাম ছিল।
মাকে দেখতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন শরীফ। পথে বনানী সিগন্যালে ৩৫ মিনিট অস্বস্তিকর জ্যামের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি। এদিকে নগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, মিনি পিকআপ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে একাধিক বাসচালক দেশ রূপান্তরকে আক্ষেপ করে জানান, বাস চালু করলেও যাত্রী না থাকায় আমাদের কোনো লাভ হলো না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস স্ট্যান্ডগুলোতে থাকলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে কম যাত্রী দিয়েই চালাতে হচ্ছে বাস।
সদরঘাট বাসস্ট্যান্ডে তানজিল পরিবহনের এক চালক মো. সিয়াম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোডের যে অবস্থা তাই সকালে টিপ মারি নাই। এখন দুপুরে এই স্ট্যান্ডে আসলাম গাড়ি চালাতে। কিন্তু এখনো যাত্রী দেখা যাচ্ছে না। কী করব, কিছুই জানি না।’
বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মো. আনাস বলেন, ‘অন্য দিনগুলোর তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। যাত্রীদের চাপ যদি কম থাকে তাহলে মালিকরা সড়কে বাস কম নামাবেন। এই অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি।’
দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মাদপুর বসিলায় অপেক্ষারত রজনীগন্ধা পরিবহন। বাসে যাত্রীর সংখ্যা ৬। সবার মুখেই মাস্ক আছে। তবে ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
এ সময় যাত্রী মিফতাজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এই বাসগুলোতে কোনো জীবাণুনাশক দেওয়া হয় কি না, তা আমরা নিশ্চিত না।’ বর্ধিত ভাড়া দেওয়া হলেও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনো ব্যবস্থা নেই। গণপরিবহন চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি শঙ্কা রয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
বাসের হেলপার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল থেকেই যাত্রী নাই। খালি বাস চালাইতাছি।’ এই বাসে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না ছিটাই নাই।’ সিটির বাইরের বাস প্রবেশ করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হুম ১১টা-১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বাস প্রবেশ করতে দেখছি।’
সদরঘাট স্ট্যান্ডে গতকাল দুপুরে মহাখালী যাওয়ার জন্য এসেছে মো. সাগর নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, একটার পর একটা বাস বদলাচ্ছি। কিন্তু যাত্রী না থাকায় বাসগুলো টাইমমতো ছাড়ছে না। এভাবে যে আর কতক্ষণ বাসের জন্য বসে থাকতে হবে। তা ছাড়া সরকার যে বিআরটিসির কতগুলো বাস সড়কে দেওয়ার কথা ছিল সেগুলো কোথায়?
নতুন এই সিদ্ধান্তে বাইরের গণপরিবহন সিটিতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাইরের গণপরিবহনগুলো প্রবেশ করছে রাজধানী ঢাকায়। গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজলা এলাকায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। একই সঙ্গে সিলেট, কুমিল্লা ও লাকসাম এলাকার দূরপাল্লার বাসও প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া দুপুর ১টায় মানিকগঞ্জের হিমাচল বাস রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে যাত্রী নিয়ে পরিবহন করতে দেখা যায়। এ ছাড়া ৬টার পরও কয়েক ঘণ্টা গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসলে সিটির পরিবহনে সবকিছু পেরে ওঠা সম্ভব হয় না।’ তবে জীবাণুনাশক স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকলেও সবার মাস্ক নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া নির্দেশনা অমান্য করে সিটিতে বাস প্রবেশ প্রসঙ্গে বলেন, মানিকগঞ্জের ওই বাসের তো সিটিতে চলার রুট পারমিট আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বরাবরের মতোই গণপরিবহনগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এ বিষয়টা কেউই নিশ্চিত করতে পারেনি।’ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, দু-এক দিনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস চালুর ব্যাপারে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন, যা মোটেও সত্য নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার বিকেলে নিজের সরকারি বাসভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন সেবা চালু থাকবে। এটি বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হবে। তবে শহরের বাইরের কোনো পরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বের হতেও পারবে না।’ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লায় গণপরিবহন চলাচল যথারীতি বন্ধ থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।