পিয়াসা-মৌয়ের জালে ফেঁসেছেন বহু ধনাঢ্য
সরোয়ার আলম | ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০
আলোচিত-সমালোচিত কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। এ দুই নারী ধনাঢ্য ব্যক্তি বা তাদের সন্তানদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। তাদের বাসায় নিয়মিত বসত মদ ও সিসার আসর। ওইসব আসরে অংশ নিতেন ধনাঢ্য ব্যক্তি অথবা তাদের সন্তানরা। নানা কৌশলে ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে রেখে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। পিয়াসা ও মৌয়ের জালে ফেঁসেছেন অনেকেই। তারা এখন নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে পুলিশের শরণাপন্ন হচ্ছেন। গত রবিবার রাতে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে পিয়াসাকে আর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসা থেকে মৌকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানতে পেরেছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গতকাল সোমবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বারিধারার ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় রয়েছে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট। যেখানে রাত হলেই বসত মদ ও সিসার আসর। আসরের মধ্যমণি হয়ে যোগ দিতেন দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি থাকত নারীরা। এসব নারী জোগাড় ও সরবরাহের কাজটি সুচারুভাবে সম্পাদন করতেন ২০০৯ সালে সুপার হিরোইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শোবিজ জগতে পা রাখা ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। তার আস্থাভাজন হিসেবে মনোরঞ্জনের এ কারবার দেখভাল করতেন আরেক কথিত মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ। নিজেদের আস্তানায় কাক্সিক্ষত পুরুষ এলে অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের শিকার বানিয়ে ফেলতে পারদর্শী ছিলেন দুজনই। ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে পরে তা ব্যবহার করে করতেন ব্ল্যাকমেইল। শুরু হতো অর্থ আদায়ের মিশন।’
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেছেন, প্রতি রাতেই পিয়াসার বারিধারার ফ্ল্যাটে নিয়মিত মদ ও সিসার আসর বসত। সেখানে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন বারিধারা ও গুলশানের বিত্তশালীরা। সম্প্রতি দুই ব্যবসায়ী এবং একাধিক বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা পিয়াসার গোপন মিশনে ধরা পড়েন। তাদের মাদক গ্রহণের দৃশ্য কৌশলে ক্যামেরায় ধারণ করে রাখা হয়। এছাড়া ওই দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্যও তারা ধারণ করেন তারা। একপর্যায়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অপারগতা জানালে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ওই ভিডিও পাঠানো হবে বলে হুমকি দেন পিয়াসা।
যাদের অভিযোগে শুরু হয় অনুসন্ধান : ডিবি কর্মকর্তারা জানান, পিয়াসার শিকার হওয়া ওই দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন ক্ষমতাশালী। তারা বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে এমন কর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন। এরপর পিয়াসা ও মৌয়ের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তারা অভিযোগের সত্যতাও পায়। এরপর গত রবিবার রাত ১২টার দিকে প্রথমে পিয়াসার বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে মদ ও সিসাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের ২২ নম্বর ভবনের নিচতলায় মৌয়ের ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবা জব্দ করা হয়। ওই দুই অভিযানের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অনেকে এসে এ দুই নারীর কাছে সর্বস্ব খুইয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু নিজেদের সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে তারা কেউই মামলার বাদী হতে রাজি হননি। পরে পুলিশ বাদী হয়ে তাদের নামে মোহাম্মদপুর ও গুলশান থানায় মাদক আইনে মামলা করে।
লকডাউনে অর্থকষ্টে পড়েন পিয়াসা ও মৌ : পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল ফিতরের আগে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশ জুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) জারি হলে অর্থকষ্টে পড়েন পিয়াসা। কারণ লকডাউনে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকার ফলে তার ফ্ল্যাটে আসর আর তেমন জমছিল না। এমন পরিস্থিতিতে মৌ ও পিয়াসা কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে অর্থ সহায়তা চান। যারা প্রতিনিয়ত তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু ওইসব ব্যবসায়ী তাদের টাকা দিতে অপারগতা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে ফোন করেন পিয়াসা এবং তার কাছে ওই ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও আছে বলে জানান। এ নিয়ে ওই পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়।
প্রতি রাতে পিয়াসার মাদক সেবন ব্যয় ২০ হাজার টাকার : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পিয়াসার ওই ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন মাসিক ভাড়া দেড় লাখ টাকা। এছাড়া মৌয়ের বাসাভাড়া ৪০ হাজার টাকার ওপর। তাদের প্রতি রাতেই অন্তত ২০ হাজার টাকার নেশাজাতীয় দ্রব্য লাগে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে কেউ না থাকায় তারা ক্ষিপ্ত হন। এরপর ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সব ভিডিও পাঠানো শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে উপায় না পেয়ে তারাও পুলিশের শরণাপন্ন হন।
পুলিশ কর্মকর্তা যা বললেন : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশিদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিয়াসা ও মৌ দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বাসায় মদ, নারী ও সিসার আসর বসাতেন। এরপর তারা কৌশলে এসব দৃশ্য ধারণ করে রাখতেন। এরপর ওই ভিডিও দেখিয়ে তারা অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ ধরনের একাধিক অভিযোগের পর তদন্ত শেষে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমান এবং রাতে এসব কর্মকান্ড চালান। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় এলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরবর্তী সময়ে তারা সেসব ভিডিও ও ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন।’
দুই মামলায় রিমান্ডে পিয়াসা ও মৌ : বারিধারা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় আলাদা অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ মডেল পিয়াসা ও মৌকে গ্রেপ্তারের পর এ সংক্রান্ত মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দুজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এসব মামলা সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
শেয়ার করুন
সরোয়ার আলম | ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০

আলোচিত-সমালোচিত কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। এ দুই নারী ধনাঢ্য ব্যক্তি বা তাদের সন্তানদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। তাদের বাসায় নিয়মিত বসত মদ ও সিসার আসর। ওইসব আসরে অংশ নিতেন ধনাঢ্য ব্যক্তি অথবা তাদের সন্তানরা। নানা কৌশলে ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে রেখে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। পিয়াসা ও মৌয়ের জালে ফেঁসেছেন অনেকেই। তারা এখন নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে পুলিশের শরণাপন্ন হচ্ছেন। গত রবিবার রাতে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে পিয়াসাকে আর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসা থেকে মৌকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানতে পেরেছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গতকাল সোমবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বারিধারার ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় রয়েছে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট। যেখানে রাত হলেই বসত মদ ও সিসার আসর। আসরের মধ্যমণি হয়ে যোগ দিতেন দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি থাকত নারীরা। এসব নারী জোগাড় ও সরবরাহের কাজটি সুচারুভাবে সম্পাদন করতেন ২০০৯ সালে সুপার হিরোইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শোবিজ জগতে পা রাখা ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। তার আস্থাভাজন হিসেবে মনোরঞ্জনের এ কারবার দেখভাল করতেন আরেক কথিত মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ। নিজেদের আস্তানায় কাক্সিক্ষত পুরুষ এলে অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের শিকার বানিয়ে ফেলতে পারদর্শী ছিলেন দুজনই। ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে পরে তা ব্যবহার করে করতেন ব্ল্যাকমেইল। শুরু হতো অর্থ আদায়ের মিশন।’
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেছেন, প্রতি রাতেই পিয়াসার বারিধারার ফ্ল্যাটে নিয়মিত মদ ও সিসার আসর বসত। সেখানে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন বারিধারা ও গুলশানের বিত্তশালীরা। সম্প্রতি দুই ব্যবসায়ী এবং একাধিক বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা পিয়াসার গোপন মিশনে ধরা পড়েন। তাদের মাদক গ্রহণের দৃশ্য কৌশলে ক্যামেরায় ধারণ করে রাখা হয়। এছাড়া ওই দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্যও তারা ধারণ করেন তারা। একপর্যায়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অপারগতা জানালে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ওই ভিডিও পাঠানো হবে বলে হুমকি দেন পিয়াসা।
যাদের অভিযোগে শুরু হয় অনুসন্ধান : ডিবি কর্মকর্তারা জানান, পিয়াসার শিকার হওয়া ওই দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন ক্ষমতাশালী। তারা বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে এমন কর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন। এরপর পিয়াসা ও মৌয়ের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তারা অভিযোগের সত্যতাও পায়। এরপর গত রবিবার রাত ১২টার দিকে প্রথমে পিয়াসার বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে মদ ও সিসাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের ২২ নম্বর ভবনের নিচতলায় মৌয়ের ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবা জব্দ করা হয়। ওই দুই অভিযানের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অনেকে এসে এ দুই নারীর কাছে সর্বস্ব খুইয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু নিজেদের সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে তারা কেউই মামলার বাদী হতে রাজি হননি। পরে পুলিশ বাদী হয়ে তাদের নামে মোহাম্মদপুর ও গুলশান থানায় মাদক আইনে মামলা করে।
লকডাউনে অর্থকষ্টে পড়েন পিয়াসা ও মৌ : পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল ফিতরের আগে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশ জুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) জারি হলে অর্থকষ্টে পড়েন পিয়াসা। কারণ লকডাউনে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকার ফলে তার ফ্ল্যাটে আসর আর তেমন জমছিল না। এমন পরিস্থিতিতে মৌ ও পিয়াসা কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে অর্থ সহায়তা চান। যারা প্রতিনিয়ত তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু ওইসব ব্যবসায়ী তাদের টাকা দিতে অপারগতা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে ফোন করেন পিয়াসা এবং তার কাছে ওই ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও আছে বলে জানান। এ নিয়ে ওই পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়।
প্রতি রাতে পিয়াসার মাদক সেবন ব্যয় ২০ হাজার টাকার : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পিয়াসার ওই ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন মাসিক ভাড়া দেড় লাখ টাকা। এছাড়া মৌয়ের বাসাভাড়া ৪০ হাজার টাকার ওপর। তাদের প্রতি রাতেই অন্তত ২০ হাজার টাকার নেশাজাতীয় দ্রব্য লাগে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে কেউ না থাকায় তারা ক্ষিপ্ত হন। এরপর ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সব ভিডিও পাঠানো শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে উপায় না পেয়ে তারাও পুলিশের শরণাপন্ন হন।
পুলিশ কর্মকর্তা যা বললেন : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশিদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিয়াসা ও মৌ দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বাসায় মদ, নারী ও সিসার আসর বসাতেন। এরপর তারা কৌশলে এসব দৃশ্য ধারণ করে রাখতেন। এরপর ওই ভিডিও দেখিয়ে তারা অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ ধরনের একাধিক অভিযোগের পর তদন্ত শেষে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমান এবং রাতে এসব কর্মকান্ড চালান। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় এলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরবর্তী সময়ে তারা সেসব ভিডিও ও ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন।’
দুই মামলায় রিমান্ডে পিয়াসা ও মৌ : বারিধারা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় আলাদা অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ মডেল পিয়াসা ও মৌকে গ্রেপ্তারের পর এ সংক্রান্ত মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দুজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এসব মামলা সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।