লিটন-মুশফিকে দারুণ দিন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দিন শুরু হয় ভূমিকম্পের আতঙ্কে। কম্পমান ক্রিকেট দলের মতো গতকাল খুব ভোরে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। টেস্টের প্রথম সেশনে আবার স্টেডিয়ামের কাছাকাছি আগুন লাগার খবর। সেখান থেকে আসা কালো ধোঁয়া ছেয়ে ফেলছিল সাগরিকা স্টেডিয়ামের আকাশ। ১৭ ওভারের মধ্যে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে টসজয়ী বাংলাদেশও অন্ধকারে। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক গল্প লিখলেন লিটন দাস আর মুশফিকুর রহিম তাদের উইলো দিয়ে। অবিচ্ছিন্ন ২০৪ রানের জুটিতে স্কোরবোর্ডে ২৫৩ রান তুলে দিনটা মাথা উঁচু করে শেষ করেছেন তারা। লিটন দাশের মাথাটা বেশি উঁচু, কারণ টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি করে ১১৩ রান নিয়ে অপরাজিত তিনি। অন্যদিকে মুশফিক অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে ১৮ রান দূরে।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে একমাত্র জয়হীন দল ছিলেন মুমিনুলরা। একটি ড্র টেস্টের জন্য ২০ পয়েন্ট মিলেছিল। দ্বিতীয় চক্রটিতে ভালো কিছু দেখানোর চ্যালেঞ্জটা ছিল বিশাল। সবশেষ টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হারানোর সুখস্মৃতি আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ব্যর্থতা দলের আত্মবিশ্বাসে প্রবল আঘাত হানে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ ছিল না। তার ওপর প্রথম সেশনে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে ছিল বাংলাদেশ। এই অবস্থায় জুটি বাঁধেন লিটন ও মুশফিক। দুজনেরই সবশেষ ইনিংসগুলো (টি-টোয়েন্টিতে) ছিল হতাশাজাগানিয়া। সেখান থেকে মাথা টেস্টের লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের দিকে ঘোরানো সহজ ছিল না। কিন্তু কাজটাই সাবলীলভাবে করেছেন পাকিস্তানের সঙ্গে টি-২০ সিরিজে বাদ (লিটন) ও বিশ্রামে (মুশফিক) থাকা দুই ব্যাটসম্যান।
৪১৩ বলের এই জুটিতে দুই ব্যাটসম্যান নিখুঁত ছিলেন খুব। দিনের শুরুতে পাকিস্তান বোলারদের যে রূদ্রমূর্তি তা গলে যায় সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে। লিটনকে শাহিন আফ্রিদি ৬৭ রানে একবারই কেবল বিপদে ফেলেছিলেন। লিটনের দারুণ পুল শটটি মিডউইকেটে দাঁড়ানো সাজিদ খানকে খুঁজে নেয়। কিন্তু সজোরে আসা বলটি ফেলে দেন ওই পাকিস্তানি। এরপর হাতের পেশিতে টান, দীর্ঘদিন পর লম্বা ইনিংস খেলার ক্লান্তি কিছুই টলাতে পারেনি লিটনকে। তিন বছর আগে চট্টগ্রামেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ রানে গিয়ে আউট হন তিনি। জুলাইয়ে হারারেতে সর্বশেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯৫ রান করেও আউট হয়ে যান। তৃতীয় দফায় ৯০-এর ঘরে গিয়ে আরাধ্য সেঞ্চুরির পণ করেছিলেন লিটন। তবে তিন অঙ্কে ছোঁয়া সিঙ্গেলসটি ছিল বেশ কঠিন। মিডঅফ থেকে থ্রো আসার আগে নন-স্ট্রাইক এন্ডের বেশ বাইরে ছিলেন লিটন। বল স্টাম্পে লাগলেই ৯৯ রানে আরেকটি সেঞ্চুরি হারানোর হতাশা নিয়ে ফিরতে হতো তাকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। ১০ বাউন্ডারি আর সাজিদ খানের বলে মারা একমাত্র ছক্কায় লিটন ১৯৯ বলে পৌঁছান তিন অঙ্কে।
অপর প্রান্তে টেস্টে বাংলাদেশের অসংখ্য বিপদের ত্রাতা মুশফিক এগোচ্ছেন আরেকটি সেঞ্চুরির দিকে। ১৯০ বলে ১০ চারে ৮২ রানে আজ দিন শুরু করবেন। অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে দাঁড়িয়ে মুশি দারুণ একটা সম্ভাবনাও জাগিয়ে রেখেছেন। সবশেষ যে দুবার সেঞ্চুরি করেছিলেন, দুবারই থেমেছেন ডাবল সেঞ্চুরি করে। আরেকটি সেঞ্চুরি বা ডাবল হোক বা না হোক টেস্টে ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশের দুইশো ছাড়ানো জুটিতে নিজের নাম লিখেছেন মুশি। এ দুজনের কৃতিত্বে প্রথম সেশনে ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারালেও পরের দুই সেশন বিনা উইকেটে ১০২ ও ৮২ রান করে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তান বোলারদের দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর দিনের শুরুটা ছিল দারুণ। চার বোলার চারটি করে উইকেট তুলে নেন দ্রুত। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ রান টিকেছে সাদমান-সাইফ ওপেনিং জুটি। শাহিন আফ্রিদির বাউন্সার ঠিকঠাক সামলাতে না পারা সাইফের ব্যাটের হাতলে লেগে বল উঠে যায় ফরোয়ার্ড শট লেগে। তিন চারে ভালো শুরুর করা সাইফ ফেরেন ১৪ রানে। সাদমানও ১৪ রান করে হাসান আলির বলে এলবিডব্লিউ হন। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন সাজিদ খানের বলে। আর চট্টগ্রামে বরাবরই ভালো করা অধিনায়ক মুমিনুল হক মাত্র ৯ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাজিদ খানের অফস্পিনে।
৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর ধাক্কাটা প্রয়োগ ক্ষমতার সর্বোচ্চটা দিয়ে সামলেছেন মুশফিক-লিটন। ১৪ বলে ৫ রান করা মুশফিক পরের ৩৪ বল ডট খেলেন। ৫২তম বলে গিয়ে মেরেছেন প্রথম বাউন্ডারি। তার আগে ৯৫ বলে ফিফটিতে পৌঁছান লিটন। মুশফিকের ফিফটি আসে ১০৮ বলে, ৮ বাউন্ডারিতে। দিন শেষে ১৯০ বলে ৮২ রান নিয়ে অপরাজিত তিনি। লিটন ২২৫ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১১৩ রানে টিকে আছেন। দুজনই বিশ্রাম শেষে আজ ঝরঝরে হয়ে নামবেন। এখনো অভিষিক্ত ইয়াসির রাব্বি, মেহেদী মিরাজ আছেন। তাই প্রথম ইনিংসে বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখতেই পারেন সবাই।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দিন শুরু হয় ভূমিকম্পের আতঙ্কে। কম্পমান ক্রিকেট দলের মতো গতকাল খুব ভোরে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। টেস্টের প্রথম সেশনে আবার স্টেডিয়ামের কাছাকাছি আগুন লাগার খবর। সেখান থেকে আসা কালো ধোঁয়া ছেয়ে ফেলছিল সাগরিকা স্টেডিয়ামের আকাশ। ১৭ ওভারের মধ্যে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে টসজয়ী বাংলাদেশও অন্ধকারে। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক গল্প লিখলেন লিটন দাস আর মুশফিকুর রহিম তাদের উইলো দিয়ে। অবিচ্ছিন্ন ২০৪ রানের জুটিতে স্কোরবোর্ডে ২৫৩ রান তুলে দিনটা মাথা উঁচু করে শেষ করেছেন তারা। লিটন দাশের মাথাটা বেশি উঁচু, কারণ টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি করে ১১৩ রান নিয়ে অপরাজিত তিনি। অন্যদিকে মুশফিক অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে ১৮ রান দূরে।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে একমাত্র জয়হীন দল ছিলেন মুমিনুলরা। একটি ড্র টেস্টের জন্য ২০ পয়েন্ট মিলেছিল। দ্বিতীয় চক্রটিতে ভালো কিছু দেখানোর চ্যালেঞ্জটা ছিল বিশাল। সবশেষ টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হারানোর সুখস্মৃতি আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ব্যর্থতা দলের আত্মবিশ্বাসে প্রবল আঘাত হানে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ ছিল না। তার ওপর প্রথম সেশনে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে ছিল বাংলাদেশ। এই অবস্থায় জুটি বাঁধেন লিটন ও মুশফিক। দুজনেরই সবশেষ ইনিংসগুলো (টি-টোয়েন্টিতে) ছিল হতাশাজাগানিয়া। সেখান থেকে মাথা টেস্টের লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের দিকে ঘোরানো সহজ ছিল না। কিন্তু কাজটাই সাবলীলভাবে করেছেন পাকিস্তানের সঙ্গে টি-২০ সিরিজে বাদ (লিটন) ও বিশ্রামে (মুশফিক) থাকা দুই ব্যাটসম্যান।
৪১৩ বলের এই জুটিতে দুই ব্যাটসম্যান নিখুঁত ছিলেন খুব। দিনের শুরুতে পাকিস্তান বোলারদের যে রূদ্রমূর্তি তা গলে যায় সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে। লিটনকে শাহিন আফ্রিদি ৬৭ রানে একবারই কেবল বিপদে ফেলেছিলেন। লিটনের দারুণ পুল শটটি মিডউইকেটে দাঁড়ানো সাজিদ খানকে খুঁজে নেয়। কিন্তু সজোরে আসা বলটি ফেলে দেন ওই পাকিস্তানি। এরপর হাতের পেশিতে টান, দীর্ঘদিন পর লম্বা ইনিংস খেলার ক্লান্তি কিছুই টলাতে পারেনি লিটনকে। তিন বছর আগে চট্টগ্রামেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ রানে গিয়ে আউট হন তিনি। জুলাইয়ে হারারেতে সর্বশেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯৫ রান করেও আউট হয়ে যান। তৃতীয় দফায় ৯০-এর ঘরে গিয়ে আরাধ্য সেঞ্চুরির পণ করেছিলেন লিটন। তবে তিন অঙ্কে ছোঁয়া সিঙ্গেলসটি ছিল বেশ কঠিন। মিডঅফ থেকে থ্রো আসার আগে নন-স্ট্রাইক এন্ডের বেশ বাইরে ছিলেন লিটন। বল স্টাম্পে লাগলেই ৯৯ রানে আরেকটি সেঞ্চুরি হারানোর হতাশা নিয়ে ফিরতে হতো তাকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। ১০ বাউন্ডারি আর সাজিদ খানের বলে মারা একমাত্র ছক্কায় লিটন ১৯৯ বলে পৌঁছান তিন অঙ্কে।
অপর প্রান্তে টেস্টে বাংলাদেশের অসংখ্য বিপদের ত্রাতা মুশফিক এগোচ্ছেন আরেকটি সেঞ্চুরির দিকে। ১৯০ বলে ১০ চারে ৮২ রানে আজ দিন শুরু করবেন। অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে দাঁড়িয়ে মুশি দারুণ একটা সম্ভাবনাও জাগিয়ে রেখেছেন। সবশেষ যে দুবার সেঞ্চুরি করেছিলেন, দুবারই থেমেছেন ডাবল সেঞ্চুরি করে। আরেকটি সেঞ্চুরি বা ডাবল হোক বা না হোক টেস্টে ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশের দুইশো ছাড়ানো জুটিতে নিজের নাম লিখেছেন মুশি। এ দুজনের কৃতিত্বে প্রথম সেশনে ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারালেও পরের দুই সেশন বিনা উইকেটে ১০২ ও ৮২ রান করে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তান বোলারদের দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর দিনের শুরুটা ছিল দারুণ। চার বোলার চারটি করে উইকেট তুলে নেন দ্রুত। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ রান টিকেছে সাদমান-সাইফ ওপেনিং জুটি। শাহিন আফ্রিদির বাউন্সার ঠিকঠাক সামলাতে না পারা সাইফের ব্যাটের হাতলে লেগে বল উঠে যায় ফরোয়ার্ড শট লেগে। তিন চারে ভালো শুরুর করা সাইফ ফেরেন ১৪ রানে। সাদমানও ১৪ রান করে হাসান আলির বলে এলবিডব্লিউ হন। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন সাজিদ খানের বলে। আর চট্টগ্রামে বরাবরই ভালো করা অধিনায়ক মুমিনুল হক মাত্র ৯ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাজিদ খানের অফস্পিনে।
৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর ধাক্কাটা প্রয়োগ ক্ষমতার সর্বোচ্চটা দিয়ে সামলেছেন মুশফিক-লিটন। ১৪ বলে ৫ রান করা মুশফিক পরের ৩৪ বল ডট খেলেন। ৫২তম বলে গিয়ে মেরেছেন প্রথম বাউন্ডারি। তার আগে ৯৫ বলে ফিফটিতে পৌঁছান লিটন। মুশফিকের ফিফটি আসে ১০৮ বলে, ৮ বাউন্ডারিতে। দিন শেষে ১৯০ বলে ৮২ রান নিয়ে অপরাজিত তিনি। লিটন ২২৫ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১১৩ রানে টিকে আছেন। দুজনই বিশ্রাম শেষে আজ ঝরঝরে হয়ে নামবেন। এখনো অভিষিক্ত ইয়াসির রাব্বি, মেহেদী মিরাজ আছেন। তাই প্রথম ইনিংসে বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখতেই পারেন সবাই।