নাঈমকে চাপা দেওয়া গাড়ির ‘মূল’ চালক গ্রেপ্তার
ধরা পড়ল আহসানকে চাপা দেওয়া চালকও
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী গাড়িটির ‘মূল’ চালক মো. হারুনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার
করা হয়। এর আগে দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা চালক রাসেল খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
র্যাব-৩ এর অপারেশন ও মিডিয়া শাখার সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাটির ছায়া তদন্তে নেমেছিল র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গাড়িটির মূল চালক হারুনের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তারা। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালায় র্যাব-৩ এর একটি দল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন জানান, ২০২০ সাল থেকে তিনি ময়লাবাহী গাড়িটি নিয়মিত চালিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তার সহকারী রাসেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তাদের দু’জনের কারোই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম। তিনি পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাউলাহাটি চৌরাস্তা এলাকায় থাকতেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক শাহ আলম দেওয়ান নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা করেছেন। ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার রাসেলকে ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনার সময় রাসেলই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তিনি সিটি করপোরেশনের কেউ নন। তবে তার আত্মীয়স্বজন সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। সেই সূত্রে তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার দিন হারুনের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তিনি সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি নিয়ে বের হন। দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও পথচারীরা তাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে আটক করে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, দুর্ঘটনায় দায়ী গাড়িটি সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক (ভারী) ইরান মিয়ার নামে বরাদ্দ ছিল। তিনি অবৈধভাবে তা হারুন মিয়াকে চালানোর দায়িত্ব দেন। তবে দুর্ঘটনার সময় হারুন গাড়িতে ছিলেন না। তার সহকারী রাসেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। অবৈধভাবে গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া এবং এ কাজে সহযোগিতা করায় আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রাজ্জাককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরাদ্দ গাড়ি নিজে না চালিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অন্যকে চালাতে দেওয়ায় করপোরেশনের গাড়িচালক (ভারী) ইরান মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচার চেয়ে ঘটনার দিন ও তার পরদিন রাজধানীতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার তাদের অবরোধের কারণে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। তারা নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন থামিয়ে চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। পরে তারা ১০ দফা দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। নইলে আবারও পথে নামার ঘোষণা দেন তারা।
ধরা পড়ল আহসানকে চাপা দেওয়া চালকও : দৈনিক সংবাদের কর্মী আহসান কবীরকে চাপা দেওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়িচালক মো. হানিফকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে ডিএনসিসির ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান আহসান কবীর খান। তিনি দৈনিক সংবাদের কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যসব যানবাহনের সঙ্গে উত্তর সিটির ময়লার গাড়িটি আটকে ছিল। সিগন্যাল ছাড়া মাত্রই সিগন্যালে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় গাড়িটি। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলে থাকা আহসান কবীর ছিটকে পড়েন। তিনি বাইকের পেছনে ছিলেন। তার মাথার ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে যায়। এরপর পেছন থেকে লোকজন ধাওয়া দেয় গাড়িটিকে। গ্রিনরোড সিগন্যাল পর্যন্ত গিয়ে চালক এবং তার সহযোগী গাড়ি সেখানে রেখে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মোটরসাইকেলে দুজন ছিলেন। আরেকজন কোথায়, পুলিশ তা বলতে পারছে না।
পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে মোটরসাইকেল আরোহীর খোঁজ করা হচ্ছে।
শেয়ার করুন
ধরা পড়ল আহসানকে চাপা দেওয়া চালকও
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী গাড়িটির ‘মূল’ চালক মো. হারুনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার
করা হয়। এর আগে দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা চালক রাসেল খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
র্যাব-৩ এর অপারেশন ও মিডিয়া শাখার সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাটির ছায়া তদন্তে নেমেছিল র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গাড়িটির মূল চালক হারুনের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তারা। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালায় র্যাব-৩ এর একটি দল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন জানান, ২০২০ সাল থেকে তিনি ময়লাবাহী গাড়িটি নিয়মিত চালিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তার সহকারী রাসেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তাদের দু’জনের কারোই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম। তিনি পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাউলাহাটি চৌরাস্তা এলাকায় থাকতেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক শাহ আলম দেওয়ান নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা করেছেন। ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার রাসেলকে ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনার সময় রাসেলই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তিনি সিটি করপোরেশনের কেউ নন। তবে তার আত্মীয়স্বজন সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। সেই সূত্রে তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার দিন হারুনের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তিনি সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি নিয়ে বের হন। দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও পথচারীরা তাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে আটক করে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, দুর্ঘটনায় দায়ী গাড়িটি সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক (ভারী) ইরান মিয়ার নামে বরাদ্দ ছিল। তিনি অবৈধভাবে তা হারুন মিয়াকে চালানোর দায়িত্ব দেন। তবে দুর্ঘটনার সময় হারুন গাড়িতে ছিলেন না। তার সহকারী রাসেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। অবৈধভাবে গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া এবং এ কাজে সহযোগিতা করায় আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রাজ্জাককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরাদ্দ গাড়ি নিজে না চালিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অন্যকে চালাতে দেওয়ায় করপোরেশনের গাড়িচালক (ভারী) ইরান মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচার চেয়ে ঘটনার দিন ও তার পরদিন রাজধানীতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার তাদের অবরোধের কারণে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। তারা নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন থামিয়ে চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। পরে তারা ১০ দফা দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। নইলে আবারও পথে নামার ঘোষণা দেন তারা।
ধরা পড়ল আহসানকে চাপা দেওয়া চালকও : দৈনিক সংবাদের কর্মী আহসান কবীরকে চাপা দেওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়িচালক মো. হানিফকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে ডিএনসিসির ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান আহসান কবীর খান। তিনি দৈনিক সংবাদের কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যসব যানবাহনের সঙ্গে উত্তর সিটির ময়লার গাড়িটি আটকে ছিল। সিগন্যাল ছাড়া মাত্রই সিগন্যালে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় গাড়িটি। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলে থাকা আহসান কবীর ছিটকে পড়েন। তিনি বাইকের পেছনে ছিলেন। তার মাথার ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে যায়। এরপর পেছন থেকে লোকজন ধাওয়া দেয় গাড়িটিকে। গ্রিনরোড সিগন্যাল পর্যন্ত গিয়ে চালক এবং তার সহযোগী গাড়ি সেখানে রেখে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মোটরসাইকেলে দুজন ছিলেন। আরেকজন কোথায়, পুলিশ তা বলতে পারছে না।
পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে মোটরসাইকেল আরোহীর খোঁজ করা হচ্ছে।