বাসে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ নিয়ে বৈঠক
উল্টো ভর্তুকি চান মালিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি। মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলছেন, ঢাকার বাসমালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’। টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। ফলে গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এসব বিষয় সুরাহা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
সম্প্রতি ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শিক্ষার্থীরদের কাছ থেকে ‘হাফ ভাড়া’ নেওয়া বন্ধ করে দেন গণপরিবহন মালিকরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বচসা শুরু হয়। একপর্যায়ে বাসে ‘অর্ধেক ভাড়া’ নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ করে আসছেন তারা।
গতকাল বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ (গতকাল) এ বৈঠক হলো। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।’
এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল-কলেজে যায়। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাসমালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।’
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘হাজার হাজার টাকা’ টিউশন ফি, সেই বেতনের টাকা থেকে তহবিল গঠন করা যায় কি না সে প্রস্তাবও দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহেরও আহ্বান জানান তারা।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘যে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন তারা আমাদেরও সন্তান। কিন্তু সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমরা বলেছি সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। এরপর আন্দোলন আরও গতি পায়। গত বৃহস্পতিবার পথে পথে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার (গতকাল) পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
সম্প্রতি বাসের ভাড়া বাড়ানোর আগে নগর পরিবহনের বাসগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘অর্ধেক ভাড়া’ নিত, এখন কেন তা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছেÑ এ প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কখনোই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল না। পরিবহন শ্রমিকরা কখনো নিত, আবার কখনো এটা নিয়ে ঝগড়াও হতো। যখন সরকারিভাবে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া ঘোষণা করা হবে, তখন অনেকগুলো বিষয় সামনে আসবে। যে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল হয়, ফেইক ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়, সেই দেশে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এলে দেখা যাবে যারা ছাত্র নন, তারাও হাফ ভাড়ার জন্য কার্ড বানিয়ে বসেছেন। এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখার রয়েছে।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি। মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলছেন, ঢাকার বাসমালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’। টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। ফলে গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এসব বিষয় সুরাহা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
সম্প্রতি ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শিক্ষার্থীরদের কাছ থেকে ‘হাফ ভাড়া’ নেওয়া বন্ধ করে দেন গণপরিবহন মালিকরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বচসা শুরু হয়। একপর্যায়ে বাসে ‘অর্ধেক ভাড়া’ নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ করে আসছেন তারা।
গতকাল বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ (গতকাল) এ বৈঠক হলো। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।’
এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল-কলেজে যায়। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাসমালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।’
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘হাজার হাজার টাকা’ টিউশন ফি, সেই বেতনের টাকা থেকে তহবিল গঠন করা যায় কি না সে প্রস্তাবও দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহেরও আহ্বান জানান তারা।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘যে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন তারা আমাদেরও সন্তান। কিন্তু সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমরা বলেছি সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। এরপর আন্দোলন আরও গতি পায়। গত বৃহস্পতিবার পথে পথে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার (গতকাল) পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
সম্প্রতি বাসের ভাড়া বাড়ানোর আগে নগর পরিবহনের বাসগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘অর্ধেক ভাড়া’ নিত, এখন কেন তা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছেÑ এ প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কখনোই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল না। পরিবহন শ্রমিকরা কখনো নিত, আবার কখনো এটা নিয়ে ঝগড়াও হতো। যখন সরকারিভাবে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া ঘোষণা করা হবে, তখন অনেকগুলো বিষয় সামনে আসবে। যে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল হয়, ফেইক ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়, সেই দেশে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এলে দেখা যাবে যারা ছাত্র নন, তারাও হাফ ভাড়ার জন্য কার্ড বানিয়ে বসেছেন। এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখার রয়েছে।’