ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় নিলেন মুমিনুল
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিন পাকিস্তানের দরকার ছিল ৯৩ রান। শেষ দিনের পিচ হলেও পুরো দিনে ১০০ (৯৩) রানের মতো লক্ষ্য ছোঁয়া কঠিন কিছু নয়। তার ওপর পাকিস্তানের সব উইকেটই হাতে। দুই ওপেনার আবিদ আলি ও আবদুল্লাহ শফিক ১০৯ রানের অপরাজিত জুটিতে জয়ের কাজ সেরে রেখেছিলেন চতুর্থ দিনেই। শেষদিন বাংলাদেশের সাফল্য বলতে পূর্ণ ১০ উইকেটে না হারা। সেঞ্চুরির দিকে এগোনো দুই ব্যাটসম্যানকে হতাশ করেছেন তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আজহার আলি ২৪ ও বাবর আজম ১৩ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন। টেস্টে তৃতীয় দিন পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হারে শুরু হলো বাংলাদেশের।
টেস্টে দুই দলের শক্তির পার্থক্য বিশাল। অভিজ্ঞতায় পাকিস্তানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। তা স্পষ্ট টপঅর্ডারের ব্যর্থতায়। ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুর চার ব্যাটার থেকে রান না পাওয়া বড় আক্ষেপ হয়ে থাকল। পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলি (১৩৩ ও ৯১) দুই ইনিংস মিলে করেছেন ২২৪। অভিষেক হওয়া ওপেনার শফিক (৫২ ও ৭৩) করেছেন ১২৫। বিপরীতে বাংলাদেশের শুরুর চার ব্যাটসম্যান মিলে দুই ইনিংসে করেছেন মাত্র ৬৭। সাদমান ১৪, ০; সাইফ ১৪, ১৮; শান্ত ১৪, ০; মুমিনুল ৬, ০। অধিনায়ক মুমিনুল এই ব্যর্থতা নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন। কারণ চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র তার ৪০ টেস্টের (৪৬) ওপর খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তাছাড়া দুই ইনিংসেই দ্রুত এই টপঅর্ডার পড়ে যাওয়ার আক্ষেপ করলেন, ‘অবশ্যই পার্থক্য এখানেই গড়ে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে ৪ উইকেট নেই (৪৯/৪)। দ্বিতীয় ইনিংসেও ওরকম (২৫/৪)। ওপরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে খেলায় ফেরা কঠিন। ওপরে কেউ অবদান রাখলে খেলাটা অন্যরকম হতো। এক থেকে চার আমিসহ। আমি বলব আমার আরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করা উচিত ছিল। চার নম্বরে যদি বড় ইনিংস খেলতে পারে তাহলে ভালো দিকে যেতে পারতাম। টেস্ট তো বটেই যেকোনো ফরম্যাটে ১০ ওভারের মধ্যে যদি ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেন তাহলে যতই চেষ্টা করেন মোমেন্টাম দুই-তিনশো জুটি করলেও বিশাল রান হবে না। ফ্লাট উইকেটে ৩৩০ করে বোলিং করা কঠিন। তাও তাইজুল খুব ভালো করেছিল বলে আমরা ফিরতে পেরেছিলাম।’
ম্যাচে তাইজুলের ৮ উইকেট, ১০ পূর্ণ হলে ব্যক্তিগত অর্জন হতো। বাবর আজমের উইকেটটি গতকাল নিতে পারতেন তাইজুল। কিন্তু নিজেই ক্যাচ ফেলে দেন পাকিস্তান অধিনায়কের। আবিদকে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির সুযোগ না দেওয়া (৯১ রানে আউট) ও শফিককে ৭৩ রানে আউট করাটাই পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের সাফল্য। মুমিনুলের কাছে একক পারফরমারের দল নয় বাংলাদেশ। তাই দলগত পারফরমে তাকিয়ে অধিনায়ক, ‘এটা শেষ কয়েক বছর ধরে দেখছি। আমি যখন থেকে অধিনায়কত্ব করছি তখন থেকে দেখছি। আপনারাও জানেন, যদি সব ফরম্যাটেই দেখেন টিম ওয়াইজ মানে, আমাদের এমন কোনো পারফরমার নেই যে একা খেলবে আর দল জিতবে। আমাদেরকে দলীয়ভাবে পারফর্ম করতে হবে। যখন আমরা দলীয়ভাবে ম্যাচ জিতি তখন আমাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। পরিসংখ্যান তাই বলে। আমরা যদি দলীয়ভাবে সবাই পারফর্ম করি, যেমন তাইজুল ৭ উইকেট পেয়েছে। অন্য প্রান্ত থেকে যদি কোনো বোলার ২-৩ উইকেট পেত বা অন্যপাশ থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে যদি তাইজুলের সঙ্গে আরেকটু ভালো বল করত, সঙ্গে ব্যাটসম্যানরা যদি দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাট করত, আমি বা টপ অর্ডার দুই-একজন ভালো ব্যাট করত তাহলে ভালো হতো। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আমাদের ওইভাবে কখনো দলীয় অ্যাচিভমেন্ট হয় না।’
অধিনায়কের দলীয় পারফরম্যান্সের চাওয়া বরাবরই অপূর্ণ থাকে। তরুণরা অভিজ্ঞদের সঙ্গে মিলে এগিয়ে আসতে পারছে না। তাই মুমিনুল মেনে নিলেন তরুণদের দিয়ে কাজ না হলে অভিজ্ঞদের প্রয়োজন, ‘আপনার অফিসে যদি কোনো কাজ করছেন কিন্তু কোনো জুনিয়র কোনো কাজ করতে না পারে তাহলে ডেফিনেটলি আপনার তো মানুষ পরিবর্তন করতে হবে। যদি ওদের দিয়ে কাজ করাতে না পারেন তাহলে অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করাতে হবে। আপনি যা বলছেন তার সঙ্গে একমত। কাজ না করলে অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করাতে হবে। আমার কাছে মনে হয় ওভাবে চিন্তা করা উচিত।’
কিন্তু দলেও তো অভিজ্ঞ নেই তেমন। মুমিনুলদের তাই প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে। সেখানেও সমস্যা। শনিবার থেকে শুরু মিরপুর টেস্টের আগে হাতে মাত্র দুদিন। মুমিনুল জানালেন এই দুদিনে আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবুও চেষ্টা করবেন সমস্যার জায়গা খুঁজে ঠিক করার। এ ছাড়া অবশ্য আর কিছু করারও নেই বাংলাদেশের।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিন পাকিস্তানের দরকার ছিল ৯৩ রান। শেষ দিনের পিচ হলেও পুরো দিনে ১০০ (৯৩) রানের মতো লক্ষ্য ছোঁয়া কঠিন কিছু নয়। তার ওপর পাকিস্তানের সব উইকেটই হাতে। দুই ওপেনার আবিদ আলি ও আবদুল্লাহ শফিক ১০৯ রানের অপরাজিত জুটিতে জয়ের কাজ সেরে রেখেছিলেন চতুর্থ দিনেই। শেষদিন বাংলাদেশের সাফল্য বলতে পূর্ণ ১০ উইকেটে না হারা। সেঞ্চুরির দিকে এগোনো দুই ব্যাটসম্যানকে হতাশ করেছেন তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আজহার আলি ২৪ ও বাবর আজম ১৩ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন। টেস্টে তৃতীয় দিন পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হারে শুরু হলো বাংলাদেশের।
টেস্টে দুই দলের শক্তির পার্থক্য বিশাল। অভিজ্ঞতায় পাকিস্তানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। তা স্পষ্ট টপঅর্ডারের ব্যর্থতায়। ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুর চার ব্যাটার থেকে রান না পাওয়া বড় আক্ষেপ হয়ে থাকল। পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলি (১৩৩ ও ৯১) দুই ইনিংস মিলে করেছেন ২২৪। অভিষেক হওয়া ওপেনার শফিক (৫২ ও ৭৩) করেছেন ১২৫। বিপরীতে বাংলাদেশের শুরুর চার ব্যাটসম্যান মিলে দুই ইনিংসে করেছেন মাত্র ৬৭। সাদমান ১৪, ০; সাইফ ১৪, ১৮; শান্ত ১৪, ০; মুমিনুল ৬, ০। অধিনায়ক মুমিনুল এই ব্যর্থতা নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন। কারণ চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র তার ৪০ টেস্টের (৪৬) ওপর খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তাছাড়া দুই ইনিংসেই দ্রুত এই টপঅর্ডার পড়ে যাওয়ার আক্ষেপ করলেন, ‘অবশ্যই পার্থক্য এখানেই গড়ে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে ৪ উইকেট নেই (৪৯/৪)। দ্বিতীয় ইনিংসেও ওরকম (২৫/৪)। ওপরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে খেলায় ফেরা কঠিন। ওপরে কেউ অবদান রাখলে খেলাটা অন্যরকম হতো। এক থেকে চার আমিসহ। আমি বলব আমার আরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করা উচিত ছিল। চার নম্বরে যদি বড় ইনিংস খেলতে পারে তাহলে ভালো দিকে যেতে পারতাম। টেস্ট তো বটেই যেকোনো ফরম্যাটে ১০ ওভারের মধ্যে যদি ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেন তাহলে যতই চেষ্টা করেন মোমেন্টাম দুই-তিনশো জুটি করলেও বিশাল রান হবে না। ফ্লাট উইকেটে ৩৩০ করে বোলিং করা কঠিন। তাও তাইজুল খুব ভালো করেছিল বলে আমরা ফিরতে পেরেছিলাম।’
ম্যাচে তাইজুলের ৮ উইকেট, ১০ পূর্ণ হলে ব্যক্তিগত অর্জন হতো। বাবর আজমের উইকেটটি গতকাল নিতে পারতেন তাইজুল। কিন্তু নিজেই ক্যাচ ফেলে দেন পাকিস্তান অধিনায়কের। আবিদকে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির সুযোগ না দেওয়া (৯১ রানে আউট) ও শফিককে ৭৩ রানে আউট করাটাই পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের সাফল্য। মুমিনুলের কাছে একক পারফরমারের দল নয় বাংলাদেশ। তাই দলগত পারফরমে তাকিয়ে অধিনায়ক, ‘এটা শেষ কয়েক বছর ধরে দেখছি। আমি যখন থেকে অধিনায়কত্ব করছি তখন থেকে দেখছি। আপনারাও জানেন, যদি সব ফরম্যাটেই দেখেন টিম ওয়াইজ মানে, আমাদের এমন কোনো পারফরমার নেই যে একা খেলবে আর দল জিতবে। আমাদেরকে দলীয়ভাবে পারফর্ম করতে হবে। যখন আমরা দলীয়ভাবে ম্যাচ জিতি তখন আমাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। পরিসংখ্যান তাই বলে। আমরা যদি দলীয়ভাবে সবাই পারফর্ম করি, যেমন তাইজুল ৭ উইকেট পেয়েছে। অন্য প্রান্ত থেকে যদি কোনো বোলার ২-৩ উইকেট পেত বা অন্যপাশ থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে যদি তাইজুলের সঙ্গে আরেকটু ভালো বল করত, সঙ্গে ব্যাটসম্যানরা যদি দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাট করত, আমি বা টপ অর্ডার দুই-একজন ভালো ব্যাট করত তাহলে ভালো হতো। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আমাদের ওইভাবে কখনো দলীয় অ্যাচিভমেন্ট হয় না।’
অধিনায়কের দলীয় পারফরম্যান্সের চাওয়া বরাবরই অপূর্ণ থাকে। তরুণরা অভিজ্ঞদের সঙ্গে মিলে এগিয়ে আসতে পারছে না। তাই মুমিনুল মেনে নিলেন তরুণদের দিয়ে কাজ না হলে অভিজ্ঞদের প্রয়োজন, ‘আপনার অফিসে যদি কোনো কাজ করছেন কিন্তু কোনো জুনিয়র কোনো কাজ করতে না পারে তাহলে ডেফিনেটলি আপনার তো মানুষ পরিবর্তন করতে হবে। যদি ওদের দিয়ে কাজ করাতে না পারেন তাহলে অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করাতে হবে। আপনি যা বলছেন তার সঙ্গে একমত। কাজ না করলে অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করাতে হবে। আমার কাছে মনে হয় ওভাবে চিন্তা করা উচিত।’
কিন্তু দলেও তো অভিজ্ঞ নেই তেমন। মুমিনুলদের তাই প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে। সেখানেও সমস্যা। শনিবার থেকে শুরু মিরপুর টেস্টের আগে হাতে মাত্র দুদিন। মুমিনুল জানালেন এই দুদিনে আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবুও চেষ্টা করবেন সমস্যার জায়গা খুঁজে ঠিক করার। এ ছাড়া অবশ্য আর কিছু করারও নেই বাংলাদেশের।