কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস ঢাকায় গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে মন্তব্যের জেরে মামলা হওয়ার পর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার ভোরে রাজধানীর ঢাকার কাকরাইলের হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে মেয়র পদ হারানোর পর আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে রাজশাহীতে মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তিনি ধরা পড়ছিলেন না।
র্যাবের গোয়েন্দা দল আব্বাসকে ধরতে কাজ করে যাচ্ছিল উল্লেখ করে খন্দকার মঈন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আব্বাস আলী রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলে ওঠেন। খবর পেয়ে র্যাব-৩-এর গোয়েন্দা দল তাকে নজরদারিতে রাখে। আজ (গতকাল বুধবার) সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আব্বাস আলী প্রাথমিকভাবে ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি তার বলে স্বীকার করেছেন। তবে ঠিক কী উদ্দেশ্যে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এবং কারও মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে এমনটি করেছেন কি না সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আব্বাসের বিরুদ্ধে আরও কী ধরনের অভিযোগ বা তার অতীত জীবন সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা দুবার রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আব্বাস আলী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে করা মন্তব্যের অডিও টেপ সম্প্রতি ফাঁস হওয়ার পর তাকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়, রাজশাহী সিটি গেটে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল করার নকশা দেওয়া হয়েছে, সেটা ‘ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়’। এটা করতে দিলে ‘পাপ হবে’।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর কাটাখালীর পৌর মেয়রের ওই অডিও ভাইরাল হলে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ওই মন্তব্য করে আব্বাস আলী প্রচলিত আইনে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ করেছেন। রাজশাহীর নগরের রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলাও হয় আব্বাসের বিরুদ্ধে।
আব্বাস আলী প্রথামে দাবি করেছিলেন, ওই অডিও ‘এডিট করা’। তবে পরে ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি স্বীকার করেন, ওই অডিও তিন-চার মাস আগের, ওই বক্তব্যও তার। মেয়র সেখানে বলেন, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বড় হুজুরের কথায় প্রভাবিত হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল না রাখার বিষয়টি বলেছিলেন কথাচ্ছলে।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, যদি এটা এত বড় ভুল হয়ে থাকে, সেজন্য তিনি ক্ষমা চান। ‘চক্রান্ত হচ্ছে’ দাবি করে সবাইকে পাশে দাঁড়ানোরও অনুরোধ করেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে মন্তব্যের জেরে মামলা হওয়ার পর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার ভোরে রাজধানীর ঢাকার কাকরাইলের হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে মেয়র পদ হারানোর পর আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে রাজশাহীতে মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তিনি ধরা পড়ছিলেন না।
র্যাবের গোয়েন্দা দল আব্বাসকে ধরতে কাজ করে যাচ্ছিল উল্লেখ করে খন্দকার মঈন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আব্বাস আলী রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলে ওঠেন। খবর পেয়ে র্যাব-৩-এর গোয়েন্দা দল তাকে নজরদারিতে রাখে। আজ (গতকাল বুধবার) সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আব্বাস আলী প্রাথমিকভাবে ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি তার বলে স্বীকার করেছেন। তবে ঠিক কী উদ্দেশ্যে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এবং কারও মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে এমনটি করেছেন কি না সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আব্বাসের বিরুদ্ধে আরও কী ধরনের অভিযোগ বা তার অতীত জীবন সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা দুবার রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আব্বাস আলী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে করা মন্তব্যের অডিও টেপ সম্প্রতি ফাঁস হওয়ার পর তাকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়, রাজশাহী সিটি গেটে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল করার নকশা দেওয়া হয়েছে, সেটা ‘ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়’। এটা করতে দিলে ‘পাপ হবে’।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর কাটাখালীর পৌর মেয়রের ওই অডিও ভাইরাল হলে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ওই মন্তব্য করে আব্বাস আলী প্রচলিত আইনে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ করেছেন। রাজশাহীর নগরের রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলাও হয় আব্বাসের বিরুদ্ধে।
আব্বাস আলী প্রথামে দাবি করেছিলেন, ওই অডিও ‘এডিট করা’। তবে পরে ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি স্বীকার করেন, ওই অডিও তিন-চার মাস আগের, ওই বক্তব্যও তার। মেয়র সেখানে বলেন, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বড় হুজুরের কথায় প্রভাবিত হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল না রাখার বিষয়টি বলেছিলেন কথাচ্ছলে।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, যদি এটা এত বড় ভুল হয়ে থাকে, সেজন্য তিনি ক্ষমা চান। ‘চক্রান্ত হচ্ছে’ দাবি করে সবাইকে পাশে দাঁড়ানোরও অনুরোধ করেন।