শর্তের হাফ পাস ঢাকায় চালু
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধসহ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনের পর দফায় দফায় মালিক সমিতির বৈঠক শেষে শর্তসাপেক্ষে গতকাল বুধবার থেকেই রাজধানী ঢাকার সব বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম চালু হয়েছে। কিছু শর্তসাপেক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহনের বিআরটিসিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ ভোগ করতে পারবেন।
তবে ব্যক্তিমালিকাধীন বাসে শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীরা ‘হাফ পাসে’ চলাচলের সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের অন্যান্য বড় বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সপ্তাহের সাত দিনই সারা দেশে কোনো শর্ত ছাড়া গণপরিবহনে হাফ ভাড়া চান রামপুরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাজধানীর রামপুরায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবির কথা জানান তারা।
রাজধানীতে ‘হাফ পাস’ দেওয়া সুবিধাভোগী একাধিক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘ঢাকার শিক্ষার্থীরাই কি শিক্ষার্থী? দেশে অন্য শহরগুলোতে কি শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে যাতায়াত করে না?’ বাসমালিকদের বৈষম্যমূলক এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অবিলম্বে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘হাফ পাসের দাবি শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীদের জন্য নয়। সারা দেশে হাফ পাসের এ দাবি অনেক পুরনো। নিরাপদ আন্দোলনের সময়ও এ দাবি ছিল। পরিবহন মালিকরা সেসব বিষয়কে তোয়াক্কা না করে সড়কের আন্দোলন দমাতেই কৌশল করে এ সিদ্ধান্ত নেন।’
মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, বেসরকারি বাসে ‘হাফ ভাড়া’ দেওয়া যাবে শুধু সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ছুটির দিনে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে বিভিন্ন রুটের পরিবহনসংশ্লিষ্ট চালক-হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাস মালিক সমিতির দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ছবিযুক্ত আইডি কার্ডধারী সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের কাছে ‘হাফ পাস’ নিলেও রাজধানীর অনেক পরিবহনেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। অনেক বাসেই ভাড়ার চার্ট বা তালিকা পাওয়া যায়নি। যার ফলে যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিত-া চলছেই।
রাজধানীর ঘাটারচর থেকে চিটাগাং রোডে চলাচলকারী রজনীগন্ধা পরিবহনে রাজধানীর জিগাতলায় বাসস্ট্যান্ডে এসে ‘ওয়েবিল চেকার’ বাসে ওঠেন। এরপর তিনি ওয়েবিল সই করার সময়ে বলেন, ‘কে কে ছাত্র আছেন? শুধু আইডি কার্ড থাকলেই হাফ ভাড়া নেওয়া হবে।’ এরপর তিনি কয়েকজন ছাত্রের আইডি দেখেন। তাদের মধ্যে একজন আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে না পারায় তাকে হাফ পাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বিকল্প পরিবহনের সহকারী রমজান আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্র যারা আছে তাগো থেইক্কা হাফ ভাড়া লইতাছি। মালিক যা কইছে তাই। আইডি কার্ড যার নাই তার কাছ থেইক্কা হাফ পাস কাটি নাই। কার্ড দেখাইতে পারলেই হাফ পাস।’
এ বাসেই অর্ধেক ভাড়া দিয়েছেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম রানা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এতদিন পর বাসগুলোতে কোনো কথাকাটাকাটি ছাড়াই “হাফ পাস” নিয়েছে। শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীদের হাফ পাস না দিয়ে সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর জন্যই তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মানিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, শর্তযুক্ত হাফ ভাড়া প্রত্যাহার করা উচিত। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের অন্যান্য বড় শহর ও জেলা শহরেও ছাত্রদের জন্য যদি হাফ ভাড়ার বিষয়ে দাবি তোলেন এই শিক্ষার্থী। এছাড়া প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশেরও দাবি জানান।
গত ১৮ নভেম্বর বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর তা রূপ নেয় নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবির আন্দোলনে। এর মধ্যে সোমবার রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় নিহত হয় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাঈনুদ্দীন ইসলাম দুর্জয়। যা আন্দোলনে আরও গতি পায়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, অর্ধেক ভাড়ার যে ঘোষণা, সেটা শুধু রাজধানীর জন্য। সারা দেশে কার্যকর করার দাবিও রয়েছে। নিরাপদ সড়কের জন্য তাদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা। বাকি দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধসহ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনের পর দফায় দফায় মালিক সমিতির বৈঠক শেষে শর্তসাপেক্ষে গতকাল বুধবার থেকেই রাজধানী ঢাকার সব বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম চালু হয়েছে। কিছু শর্তসাপেক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহনের বিআরটিসিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ ভোগ করতে পারবেন।
তবে ব্যক্তিমালিকাধীন বাসে শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীরা ‘হাফ পাসে’ চলাচলের সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের অন্যান্য বড় বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সপ্তাহের সাত দিনই সারা দেশে কোনো শর্ত ছাড়া গণপরিবহনে হাফ ভাড়া চান রামপুরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাজধানীর রামপুরায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবির কথা জানান তারা।
রাজধানীতে ‘হাফ পাস’ দেওয়া সুবিধাভোগী একাধিক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘ঢাকার শিক্ষার্থীরাই কি শিক্ষার্থী? দেশে অন্য শহরগুলোতে কি শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে যাতায়াত করে না?’ বাসমালিকদের বৈষম্যমূলক এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অবিলম্বে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘হাফ পাসের দাবি শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীদের জন্য নয়। সারা দেশে হাফ পাসের এ দাবি অনেক পুরনো। নিরাপদ আন্দোলনের সময়ও এ দাবি ছিল। পরিবহন মালিকরা সেসব বিষয়কে তোয়াক্কা না করে সড়কের আন্দোলন দমাতেই কৌশল করে এ সিদ্ধান্ত নেন।’
মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, বেসরকারি বাসে ‘হাফ ভাড়া’ দেওয়া যাবে শুধু সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ছুটির দিনে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে বিভিন্ন রুটের পরিবহনসংশ্লিষ্ট চালক-হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাস মালিক সমিতির দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ছবিযুক্ত আইডি কার্ডধারী সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের কাছে ‘হাফ পাস’ নিলেও রাজধানীর অনেক পরিবহনেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। অনেক বাসেই ভাড়ার চার্ট বা তালিকা পাওয়া যায়নি। যার ফলে যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিত-া চলছেই।
রাজধানীর ঘাটারচর থেকে চিটাগাং রোডে চলাচলকারী রজনীগন্ধা পরিবহনে রাজধানীর জিগাতলায় বাসস্ট্যান্ডে এসে ‘ওয়েবিল চেকার’ বাসে ওঠেন। এরপর তিনি ওয়েবিল সই করার সময়ে বলেন, ‘কে কে ছাত্র আছেন? শুধু আইডি কার্ড থাকলেই হাফ ভাড়া নেওয়া হবে।’ এরপর তিনি কয়েকজন ছাত্রের আইডি দেখেন। তাদের মধ্যে একজন আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে না পারায় তাকে হাফ পাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বিকল্প পরিবহনের সহকারী রমজান আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্র যারা আছে তাগো থেইক্কা হাফ ভাড়া লইতাছি। মালিক যা কইছে তাই। আইডি কার্ড যার নাই তার কাছ থেইক্কা হাফ পাস কাটি নাই। কার্ড দেখাইতে পারলেই হাফ পাস।’
এ বাসেই অর্ধেক ভাড়া দিয়েছেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম রানা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এতদিন পর বাসগুলোতে কোনো কথাকাটাকাটি ছাড়াই “হাফ পাস” নিয়েছে। শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীদের হাফ পাস না দিয়ে সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর জন্যই তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মানিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, শর্তযুক্ত হাফ ভাড়া প্রত্যাহার করা উচিত। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের অন্যান্য বড় শহর ও জেলা শহরেও ছাত্রদের জন্য যদি হাফ ভাড়ার বিষয়ে দাবি তোলেন এই শিক্ষার্থী। এছাড়া প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশেরও দাবি জানান।
গত ১৮ নভেম্বর বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর তা রূপ নেয় নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবির আন্দোলনে। এর মধ্যে সোমবার রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় নিহত হয় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাঈনুদ্দীন ইসলাম দুর্জয়। যা আন্দোলনে আরও গতি পায়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, অর্ধেক ভাড়ার যে ঘোষণা, সেটা শুধু রাজধানীর জন্য। সারা দেশে কার্যকর করার দাবিও রয়েছে। নিরাপদ সড়কের জন্য তাদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা। বাকি দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।