বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষাগার পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কোয়ারেন্টাইন থেকে পালালে ব্যবস্থা
বিশেষ প্রতিনিধি | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ যেসব দেশে এরই মধ্যে ধরনটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা নাগরিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এই কোয়ারেন্টাইন থেকে কেউ পালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষাগার পরিদর্শনে গিয়ে বিদেশ প্রত্যাগতদের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে, তাদের পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হবে। কোনো হোটেল থেকে পালিয়ে গেলে ওই হোটেলকেও জরিমানা করা হবে। অনেক দায়িত্বহীন লোক যারা নিজের কথা, দেশের কথা ভাবে না, তারা হোটেল থেকে বেরিয়ে গেছে। ঘোরাফেরা করেছে, বাড়িতে চলে গেছে। এ বিষয়টা আমরা জেনেছি। আমরা এ বছর একটা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যত দিন কোয়ারেন্টাইন, তত দিন আমরা তাদের পাসপোর্ট ধরে রাখব। সামরিক বিভাগ, পুলিশ এবং আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগও বিষয়টি তদারকি করবে। আরেকটি জিনিস আমরা করব, যে হোটেল থেকে কোনো রোগী বেরিয়ে যাবে, সেই হোটেলকেও আমরা পেনাল্টিতে নিয়ে আসব।’
এর আগে গত বছরও বিদেশ থেকে ফেরা নাগরিকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। তখনো কোয়ারেন্টাইন থেকে পালানোর বেশ কটি ঘটনা ঘটেছিল। এবার করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে আবার আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ফিরলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে এমন দেশগুলো থেকে এলেও ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২-এ দুই হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর পরিবর্তে বিমানবন্দরের গাড়ি পার্কিংয়ের ভবনের দোতলায় ৩৬ হাজার বর্গফুট জায়গায় হচ্ছে নমুনা পরীক্ষাগার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই গবেষণাগার তৈরি হয়ে গেলে বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি কমবে। এ ছাড়া বিশ্রামাগার, টয়লেট, খাওয়া-দাওয়ার সুবিধা রাখা হচ্ছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন পরীক্ষাগারটি চালু হয়ে যাবে।’
এমনকি বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষার ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। করোনায় নিয়ন্ত্রণে আমরা সবকিছু ভালো করার চেষ্টা করছি। চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো হয়েছে। মৃত্যুর হার এক-দুইয়ে আছে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম খুবই গতি লাভ করেছে। লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ লোক ভ্যাকসিনেটেড হয়ে গেছে। মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভালো আছে। বাংলাদেশ ভালো ইমেজ বিদেশে তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর কোনো জায়গায় নিষেধাজ্ঞা নেই। সব দিক থেকে ভালো আছি।’
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে সবাই একটু চিন্তিত। আমরাও সতর্ক, কিন্তু প্যানিক করব না। আমরা জানতে পেরেছি, এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সংক্রমণ হলেও এর লক্ষণ মৃদু। লক্ষণগুলো ডেল্টার মতো ভয়ানক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যখন আমরা সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পেয়ে যাব, আপনাদের জানিয়ে দেব। সে পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। অনেকে ভ্যাকসিন নিতে আসে না। আমরা আহ্বান জানাব, ভ্যাকসিন আপনারা নেবেন। আমাদের কাছে এখনো চার কোটি ভ্যাকসিন আছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব নেই।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে বের করতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা এক মাস আগের কথা, তার পরও আমরা ছাড়ছি না। সবাইকে খুঁজে বের করব।’
করোনার বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা টিকার বুস্টার ডোজের ঘোষণা আমরা দিয়েছি। এজন্য পরিকল্পনা লাগবে। সেটা হতে যেটুকু সময় লাগে, তারপর আমরা কাজ শুরু করে দেব।’
শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিনিধি | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ যেসব দেশে এরই মধ্যে ধরনটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা নাগরিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এই কোয়ারেন্টাইন থেকে কেউ পালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষাগার পরিদর্শনে গিয়ে বিদেশ প্রত্যাগতদের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে, তাদের পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হবে। কোনো হোটেল থেকে পালিয়ে গেলে ওই হোটেলকেও জরিমানা করা হবে। অনেক দায়িত্বহীন লোক যারা নিজের কথা, দেশের কথা ভাবে না, তারা হোটেল থেকে বেরিয়ে গেছে। ঘোরাফেরা করেছে, বাড়িতে চলে গেছে। এ বিষয়টা আমরা জেনেছি। আমরা এ বছর একটা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যত দিন কোয়ারেন্টাইন, তত দিন আমরা তাদের পাসপোর্ট ধরে রাখব। সামরিক বিভাগ, পুলিশ এবং আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগও বিষয়টি তদারকি করবে। আরেকটি জিনিস আমরা করব, যে হোটেল থেকে কোনো রোগী বেরিয়ে যাবে, সেই হোটেলকেও আমরা পেনাল্টিতে নিয়ে আসব।’
এর আগে গত বছরও বিদেশ থেকে ফেরা নাগরিকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। তখনো কোয়ারেন্টাইন থেকে পালানোর বেশ কটি ঘটনা ঘটেছিল। এবার করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে আবার আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ফিরলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে এমন দেশগুলো থেকে এলেও ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২-এ দুই হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর পরিবর্তে বিমানবন্দরের গাড়ি পার্কিংয়ের ভবনের দোতলায় ৩৬ হাজার বর্গফুট জায়গায় হচ্ছে নমুনা পরীক্ষাগার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই গবেষণাগার তৈরি হয়ে গেলে বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি কমবে। এ ছাড়া বিশ্রামাগার, টয়লেট, খাওয়া-দাওয়ার সুবিধা রাখা হচ্ছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন পরীক্ষাগারটি চালু হয়ে যাবে।’
এমনকি বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষার ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। করোনায় নিয়ন্ত্রণে আমরা সবকিছু ভালো করার চেষ্টা করছি। চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো হয়েছে। মৃত্যুর হার এক-দুইয়ে আছে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম খুবই গতি লাভ করেছে। লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ লোক ভ্যাকসিনেটেড হয়ে গেছে। মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভালো আছে। বাংলাদেশ ভালো ইমেজ বিদেশে তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর কোনো জায়গায় নিষেধাজ্ঞা নেই। সব দিক থেকে ভালো আছি।’
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে সবাই একটু চিন্তিত। আমরাও সতর্ক, কিন্তু প্যানিক করব না। আমরা জানতে পেরেছি, এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সংক্রমণ হলেও এর লক্ষণ মৃদু। লক্ষণগুলো ডেল্টার মতো ভয়ানক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যখন আমরা সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পেয়ে যাব, আপনাদের জানিয়ে দেব। সে পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। অনেকে ভ্যাকসিন নিতে আসে না। আমরা আহ্বান জানাব, ভ্যাকসিন আপনারা নেবেন। আমাদের কাছে এখনো চার কোটি ভ্যাকসিন আছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব নেই।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে বের করতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা এক মাস আগের কথা, তার পরও আমরা ছাড়ছি না। সবাইকে খুঁজে বের করব।’
করোনার বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা টিকার বুস্টার ডোজের ঘোষণা আমরা দিয়েছি। এজন্য পরিকল্পনা লাগবে। সেটা হতে যেটুকু সময় লাগে, তারপর আমরা কাজ শুরু করে দেব।’