‘মাস্টারমাইন্ড’ শাহ আলম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহা (৫৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম (২৮) ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার চাঁনপুরস্থ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এসময় গুলিতে দু’জন‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। শাহ আলমের কাছে থাকা একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এই নিয়ে হত্যা মামলার তিন আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এর আগে গত সোমবার রাতে মামলার ৩ নম্বর আসামি নগরীর সুজানগর এলাকার সাব্বির রহমান (২৮) ও ৫ নম্বর আসামি নগরীর সংরাইশ এলাকার কাঁকন মিয়ার ছেলে সাজন (৩২) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এরমধ্যে শাহ আলম হত্যাকা-ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে কাউন্সিলর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ঘাতক শাহ আলমের মৃত্যুর খবরে এলাকায় স্বস্তি বিরাজ করছে। সকালে নিহতের লাশ এলাকায় না আনার জন্য দাবি জানায় এলাকাবাসী। শাহ আলম নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের সুজানগর বৌবাজার এলাকার মৃত জানু মিয়ার ছেলে।
কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পরিমল দাস বলেন, ‘বুধবার গভীর রাতে চাঁনপুরস্থ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ধরতে জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের একাধিক দল বিশেষ অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই পিস্তল হাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে শাহ আলম বলে শনাক্ত করে। আহত শাহ আলমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গোলাগুলিতে পুলিশের দুজন সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শাহ আলম কাউন্সিলরসহ ডাবল মার্ডার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। হত্যাকা-ের পর থেকেই তার নাম উঠে আসে। ঘটনার পর সিসি টিভির ফুটেজেও তাকে শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে আটককৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরাও এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা হিসেবে শাহ আলমের নাম বলেছেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল আজিম বলেন, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলরসহ জোড়া খুন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম নিহত হয়েছে। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা ও আক্রমণ, হত্যা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসংক্রান্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
কাউন্সিলর সোহেল হত্যার ঘটনায় ইমরান খন্দকার নামে তদন্তে প্রাপ্ত আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইমরান (২০), সুজানগর এলাকার আবুল বাশারের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে শহরতলীর আলেখারচর এলাকা গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন তার মামাতো ভাই জিসান (এজাহার নামীয় ৮নং আসামি) তাকে ফোন করে তাদের বাসার দিকে যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পর শাহ আলম, সাব্বির, জেল সোহেল, সাজেন, মাসুমসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন লোকের হাতে তিনটি কালো ব্যাগে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি এবং হাত বোমাভর্তি একটি ব্যাগ দেখতে পায়।
গত ২২ নভেম্বর বিকেলে কাউন্সিলর সোহেল নিজ কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করছিলেন। এ সময় কার্যালয়ে ঢুকে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিতে হরিপদ সাহা নামে কাউন্সিলরের এক সহযোগীও নিহত হন। এ ছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও ৫ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২২ নভেম্বর বিকেলে নবগ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন সোহেলের ভাই সৈয়দ রুমন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহা (৫৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম (২৮) ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার চাঁনপুরস্থ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এসময় গুলিতে দু’জন‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। শাহ আলমের কাছে থাকা একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এই নিয়ে হত্যা মামলার তিন আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এর আগে গত সোমবার রাতে মামলার ৩ নম্বর আসামি নগরীর সুজানগর এলাকার সাব্বির রহমান (২৮) ও ৫ নম্বর আসামি নগরীর সংরাইশ এলাকার কাঁকন মিয়ার ছেলে সাজন (৩২) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এরমধ্যে শাহ আলম হত্যাকা-ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে কাউন্সিলর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ঘাতক শাহ আলমের মৃত্যুর খবরে এলাকায় স্বস্তি বিরাজ করছে। সকালে নিহতের লাশ এলাকায় না আনার জন্য দাবি জানায় এলাকাবাসী। শাহ আলম নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের সুজানগর বৌবাজার এলাকার মৃত জানু মিয়ার ছেলে।
কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পরিমল দাস বলেন, ‘বুধবার গভীর রাতে চাঁনপুরস্থ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ধরতে জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের একাধিক দল বিশেষ অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই পিস্তল হাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে শাহ আলম বলে শনাক্ত করে। আহত শাহ আলমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গোলাগুলিতে পুলিশের দুজন সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শাহ আলম কাউন্সিলরসহ ডাবল মার্ডার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। হত্যাকা-ের পর থেকেই তার নাম উঠে আসে। ঘটনার পর সিসি টিভির ফুটেজেও তাকে শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে আটককৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরাও এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা হিসেবে শাহ আলমের নাম বলেছেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল আজিম বলেন, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলরসহ জোড়া খুন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম নিহত হয়েছে। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা ও আক্রমণ, হত্যা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসংক্রান্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
কাউন্সিলর সোহেল হত্যার ঘটনায় ইমরান খন্দকার নামে তদন্তে প্রাপ্ত আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইমরান (২০), সুজানগর এলাকার আবুল বাশারের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে শহরতলীর আলেখারচর এলাকা গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন তার মামাতো ভাই জিসান (এজাহার নামীয় ৮নং আসামি) তাকে ফোন করে তাদের বাসার দিকে যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পর শাহ আলম, সাব্বির, জেল সোহেল, সাজেন, মাসুমসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন লোকের হাতে তিনটি কালো ব্যাগে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি এবং হাত বোমাভর্তি একটি ব্যাগ দেখতে পায়।
গত ২২ নভেম্বর বিকেলে কাউন্সিলর সোহেল নিজ কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করছিলেন। এ সময় কার্যালয়ে ঢুকে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিতে হরিপদ সাহা নামে কাউন্সিলরের এক সহযোগীও নিহত হন। এ ছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও ৫ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২২ নভেম্বর বিকেলে নবগ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন সোহেলের ভাই সৈয়দ রুমন।