হঠাৎ বাড়ল পেঁয়াজের দাম
রিয়াজ হোসেন | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
আমদানি ঘাটতি নেই, পাইকারিতেও বাড়েনি দাম, কিন্তু হঠাৎ করেই ঢাকার খুচরা বাজারে উল্লম্ফন হয়েছে পেঁয়াজের দামে। এক দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করেই রাজধানীতে বিভিন্ন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা সরবরাহ ঘাটতি ও পাইকারিতে দাম বাড়ার অজুহাত দিলেও আড়তদাররা বলছেন, খুচরা বাজারে তদারকি না থাকায় এলাকাভেদে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা, এক দিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া বিদেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা। তবে অনেক জায়গায় আগের দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর ফার্মগেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজা বাজারের খুচরা বিক্রেতা লিটন বলেন, পাইকারি বাজারে গতকাল যে পেঁয়াজ কিনেছি ৫৫ টাকা কেজি, আজ সে পেঁয়াজ ৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে তো আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে।
একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে। আওলাদ নামে খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘বৃহস্পতিবারও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক ছিল। আজ (গতকাল) সকাল থেকে দাম বেড়েছে।’
কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। গতকাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা। যা এক দিন আগেও ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আলামিন নামে এক বিক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
তবে কোনো ধরনের যুক্তি ছাড়াই খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে বলে মনে করেন শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি আবদুল মাজেদ। তিনি বলেন, বাজারে যথেষ্ট পেঁয়াজের জোগান রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩৮-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। তিনি বলেন, খুচরা বাজারে মনিটরিং না থাকায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে।
এদিকে আমদানি কমায় আবারও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩-৪ টাকা করে। এক দিন আগেও বন্দরে আমদানিকৃত ইন্দোর জাতের প্রতিকেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২৩-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২৭-২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সি বলেন, হিলিসহ দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এর পাশপাশি মিয়ানমার থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
সরবরাহ বাড়লেও শীতের সবজির দামে প্রভাব নেই : বাজারে শীতের নতুন সবজির সরবরাহ বাড়লেও আগের মতোই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০, কাঁচামরিচ ৯০-১০০, গাজর ৮০, করলা ৬০ টাকায়।
পটোল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। বরবটি প্রতি কেজি ৫০-৭০, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০-৫০, এবং বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় থাকা অন্যান্য সবজির মধ্যে ঝিঙে প্রতি কেজি ৪০-৫০, করলা ৬০-৮০, চিচিঙ্গা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০-৩৫, লাল শাকের আঁটি ১০-১৫, মুলা শাকের আঁটি ১০-১৫, পালং শাকের আঁটি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০-১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫-১৬০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩২০ টাকায়। লাল লেয়ার মুরগির কেজি ২২০-২৩০, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা। ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ১১৫-১২০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই ২৮০-৩৫০, একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ ১৫০-১৭০ টাকা। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
শেয়ার করুন
রিয়াজ হোসেন | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

আমদানি ঘাটতি নেই, পাইকারিতেও বাড়েনি দাম, কিন্তু হঠাৎ করেই ঢাকার খুচরা বাজারে উল্লম্ফন হয়েছে পেঁয়াজের দামে। এক দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করেই রাজধানীতে বিভিন্ন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা সরবরাহ ঘাটতি ও পাইকারিতে দাম বাড়ার অজুহাত দিলেও আড়তদাররা বলছেন, খুচরা বাজারে তদারকি না থাকায় এলাকাভেদে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা, এক দিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া বিদেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা। তবে অনেক জায়গায় আগের দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর ফার্মগেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজা বাজারের খুচরা বিক্রেতা লিটন বলেন, পাইকারি বাজারে গতকাল যে পেঁয়াজ কিনেছি ৫৫ টাকা কেজি, আজ সে পেঁয়াজ ৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে তো আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে।
একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে। আওলাদ নামে খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘বৃহস্পতিবারও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক ছিল। আজ (গতকাল) সকাল থেকে দাম বেড়েছে।’
কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। গতকাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা। যা এক দিন আগেও ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আলামিন নামে এক বিক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
তবে কোনো ধরনের যুক্তি ছাড়াই খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে বলে মনে করেন শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি আবদুল মাজেদ। তিনি বলেন, বাজারে যথেষ্ট পেঁয়াজের জোগান রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩৮-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। তিনি বলেন, খুচরা বাজারে মনিটরিং না থাকায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে।
এদিকে আমদানি কমায় আবারও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩-৪ টাকা করে। এক দিন আগেও বন্দরে আমদানিকৃত ইন্দোর জাতের প্রতিকেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২৩-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২৭-২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সি বলেন, হিলিসহ দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এর পাশপাশি মিয়ানমার থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
সরবরাহ বাড়লেও শীতের সবজির দামে প্রভাব নেই : বাজারে শীতের নতুন সবজির সরবরাহ বাড়লেও আগের মতোই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০, কাঁচামরিচ ৯০-১০০, গাজর ৮০, করলা ৬০ টাকায়।
পটোল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। বরবটি প্রতি কেজি ৫০-৭০, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০-৫০, এবং বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় থাকা অন্যান্য সবজির মধ্যে ঝিঙে প্রতি কেজি ৪০-৫০, করলা ৬০-৮০, চিচিঙ্গা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০-৩৫, লাল শাকের আঁটি ১০-১৫, মুলা শাকের আঁটি ১০-১৫, পালং শাকের আঁটি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০-১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫-১৬০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩২০ টাকায়। লাল লেয়ার মুরগির কেজি ২২০-২৩০, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা। ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ১১৫-১২০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই ২৮০-৩৫০, একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ ১৫০-১৭০ টাকা। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।