খালেদাকে বিদেশে পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা বিএনপির
রেজাউল করিম লাবলু | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবি আদায়ে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে দলটি। পাশাপাশি বিএনপি কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্যরা এ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান ও খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়মিত অবহিত করছেন। গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের এক প্রভাবশালী সদস্য।
ওই নেতা বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে দেশে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছেন তারা। পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক উদ্যোগ। কূটনৈতিক এ উদ্যোগ শুধু দেশেই নয়, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি নেতারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে তুলে ধরছেন। বিদেশে কূটনৈতিক কর্মকা-ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মিশনপ্রধানদের সঙ্গে বসতে পারছি না। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য জানতে চান। আমরা তাদের অবহিত করি। এভাবেই এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।’
এদিকে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের অন্য এক সদস্য ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাশেদ আহমেদ ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে না পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরেছেন অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের (ফরেন ডিফেন্স ও ট্রেড) জয়েন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রিন পার্টির হুইপ জেনেট রাইস। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানাতে অনুরোধ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে পার্লামেন্টে তিনি ওই বক্তব্য দেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুধু অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট নয়, সারা বিশ^ আজ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি জানে। বিশে^র বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা দেশের রাজনৈতিক, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠিয়ে তাকে তিলে তিলে হত্যার চেষ্টা করছে সরকার। এসব বিষয়ে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখানে আমরা কী বললাম তার অপেক্ষায় তারা নেই।’
গত সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সমসাময়িক নানা বিষয়ে ব্রিফ করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের যেকোনো স্থানে খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে বিদেশে যেতে চাইলে তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। তিনি চাইলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনতে পারবেন।’
কূটনীতিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার চাপে পড়ে কূটনীতিকদের এসব বিষয়ে অবহিত করেছে। তবে নিজ দলের কূটনৈতিক উদ্যোগের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
এদিকে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কৃষক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। ইতিমধ্যে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। আবারও রক্তক্ষরণ হলে খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন এবং চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।’
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবি আদায়ে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে দলটি। পাশাপাশি বিএনপি কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্যরা এ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান ও খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়মিত অবহিত করছেন। গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের এক প্রভাবশালী সদস্য।
ওই নেতা বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে দেশে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছেন তারা। পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক উদ্যোগ। কূটনৈতিক এ উদ্যোগ শুধু দেশেই নয়, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি নেতারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে তুলে ধরছেন। বিদেশে কূটনৈতিক কর্মকা-ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মিশনপ্রধানদের সঙ্গে বসতে পারছি না। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য জানতে চান। আমরা তাদের অবহিত করি। এভাবেই এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।’
এদিকে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের অন্য এক সদস্য ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাশেদ আহমেদ ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে না পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরেছেন অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের (ফরেন ডিফেন্স ও ট্রেড) জয়েন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রিন পার্টির হুইপ জেনেট রাইস। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানাতে অনুরোধ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে পার্লামেন্টে তিনি ওই বক্তব্য দেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুধু অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট নয়, সারা বিশ^ আজ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি জানে। বিশে^র বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা দেশের রাজনৈতিক, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠিয়ে তাকে তিলে তিলে হত্যার চেষ্টা করছে সরকার। এসব বিষয়ে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখানে আমরা কী বললাম তার অপেক্ষায় তারা নেই।’
গত সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সমসাময়িক নানা বিষয়ে ব্রিফ করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের যেকোনো স্থানে খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে বিদেশে যেতে চাইলে তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। তিনি চাইলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনতে পারবেন।’
কূটনীতিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার চাপে পড়ে কূটনীতিকদের এসব বিষয়ে অবহিত করেছে। তবে নিজ দলের কূটনৈতিক উদ্যোগের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
এদিকে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কৃষক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। ইতিমধ্যে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। আবারও রক্তক্ষরণ হলে খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন এবং চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।’