চট্টগ্রামে গেটম্যানের অবহেলা
রেললাইনে অটোরিকশা ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় চুরমার হয়ে গেছে একটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি টেম্পো। এতে প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গেটম্যানের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এদিকে রাজধানী ঢাকায় পৃথক আরও দুই সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের দুর্ঘটনার বিষয়ে খুলশী থানা সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রামমুখী একটি ডেমু ট্রেন ঝাউতলা রেলক্রসিং অতিক্রম করার কিছু সময় আগে ব্যারিয়ার না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি টেম্পো রেললাইনের কাছে চলে আসে। এ সময় পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে গাড়ি দুটি রেললাইনে উঠে যায়। দেখানে দায়িত্বরত দুই ট্রাফিক কনস্টেবল গাড়িগুলো সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় ছুটে আসা ডেমু ট্রেনটির ধাক্কায় চুরমার হয়ে যায় সিএনজি ও টেম্পোটি। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই এক জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত পুলিশ কনস্টেবলসহ ১০ জনকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেন ও অপর একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় নিহতরা হলেন সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো. মনির হোসেন, সিএনজি অটোযাত্রী প্রকৌশলী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ ও শাহীন। আহতরা হলেন আবুল হোসেন, জমির হোসেন, শহীদুল ইসলাম, জয়নাল, জোবাইদা, শামীমা, মোহাম্মদ ও আদনান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিধ্বস্ত অবস্থায় সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পোটি রাস্তার পাশে পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে হতাহতদের স্যান্ডেল-জুতা। কৌতূহলী লোকজনকে সরিয়ে রাস্তা সচল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজির আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ট্রেন আসার নির্দিষ্ট সময় আগে ক্রসিংয়ের দুই পাশে ব্যারিয়ার ফেলার কথা থাকলেও একপাশে ব্যারিয়ার ছিল না। গেটম্যানকেও এ সময় সেখানে দেখা যায়নি। রাস্তা খোলা থাকায় গাড়িগুলো রেললাইনে চলে আসে। মূলত গেটম্যানের অবহেলার কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি : চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো. হাছান চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবারের দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট দেবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল গফুরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকায় সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীর মৃত্যু : রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দৈনিক সংবাদের প্রুফ রিডার এমদাদ হোসেন ও মাহদী হাসান লিমন নামে বেসরকারি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পরে গতকাল শনিবার তাদের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর এলাকার কাওলা পদ্মা অয়েলের সামনের রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মাহদী হাসান লিমন। এ সময় পেছন দিক থেকে আসা একটি লরির ধাক্কায় তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান। পরে তার মাথার ওপর দিয়ে লরির চাকা উঠে যায়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
এদিকে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর কলেজগেটে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন দৈনিক সংবাদের প্রুফ রিডার এমদাদ হোসেন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি শনিবার দুপুরের পর জানাজানি হয়। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। তিনি ঢাকার ডেমরায় থাকতেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় চুরমার হয়ে গেছে একটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি টেম্পো। এতে প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গেটম্যানের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এদিকে রাজধানী ঢাকায় পৃথক আরও দুই সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের দুর্ঘটনার বিষয়ে খুলশী থানা সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রামমুখী একটি ডেমু ট্রেন ঝাউতলা রেলক্রসিং অতিক্রম করার কিছু সময় আগে ব্যারিয়ার না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি টেম্পো রেললাইনের কাছে চলে আসে। এ সময় পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে গাড়ি দুটি রেললাইনে উঠে যায়। দেখানে দায়িত্বরত দুই ট্রাফিক কনস্টেবল গাড়িগুলো সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় ছুটে আসা ডেমু ট্রেনটির ধাক্কায় চুরমার হয়ে যায় সিএনজি ও টেম্পোটি। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই এক জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত পুলিশ কনস্টেবলসহ ১০ জনকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেন ও অপর একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় নিহতরা হলেন সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো. মনির হোসেন, সিএনজি অটোযাত্রী প্রকৌশলী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ ও শাহীন। আহতরা হলেন আবুল হোসেন, জমির হোসেন, শহীদুল ইসলাম, জয়নাল, জোবাইদা, শামীমা, মোহাম্মদ ও আদনান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিধ্বস্ত অবস্থায় সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পোটি রাস্তার পাশে পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে হতাহতদের স্যান্ডেল-জুতা। কৌতূহলী লোকজনকে সরিয়ে রাস্তা সচল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজির আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ট্রেন আসার নির্দিষ্ট সময় আগে ক্রসিংয়ের দুই পাশে ব্যারিয়ার ফেলার কথা থাকলেও একপাশে ব্যারিয়ার ছিল না। গেটম্যানকেও এ সময় সেখানে দেখা যায়নি। রাস্তা খোলা থাকায় গাড়িগুলো রেললাইনে চলে আসে। মূলত গেটম্যানের অবহেলার কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি : চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো. হাছান চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবারের দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট দেবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল গফুরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকায় সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীর মৃত্যু : রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দৈনিক সংবাদের প্রুফ রিডার এমদাদ হোসেন ও মাহদী হাসান লিমন নামে বেসরকারি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পরে গতকাল শনিবার তাদের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর এলাকার কাওলা পদ্মা অয়েলের সামনের রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মাহদী হাসান লিমন। এ সময় পেছন দিক থেকে আসা একটি লরির ধাক্কায় তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান। পরে তার মাথার ওপর দিয়ে লরির চাকা উঠে যায়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
এদিকে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর কলেজগেটে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন দৈনিক সংবাদের প্রুফ রিডার এমদাদ হোসেন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি শনিবার দুপুরের পর জানাজানি হয়। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। তিনি ঢাকার ডেমরায় থাকতেন।