বাড়তি ভাড়া না দিলে ‘অপদস্থ’ হচ্ছেন যাত্রীরা!
খাইরুল বাশার | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
রাজধানীর শিশুমেলার সামনে থেকে মহাখালী যাওয়ার উদ্দেশে চন্দ্রা টু নতুন বাজারগামী ‘রইছ পরিবহনে’ (ঢাকা মেট্রো- ব ১৫৭১৭২) যাত্রী হিসেবে উঠেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আমিনুল ইসলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টার কাছাকাছি। বাসে সাঁটানো সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী, শ্যামলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত ভাড়া ১৩ টাকা হলেও বাসের সহকারী ২০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। আমিনুল ইসলাম চার্টের প্রসঙ্গ টানলে ওই বাসের চালকের সহকারী বলেন, ‘ওইগুলা পুরান; ভুল। আমার চেক (ওয়েবিল) আছে। ২০ টাকা ভাড়া না দিলে আপনি নাইম্মা যান। ভাড়া দিবেন না ক্যান, দিতে অইব।’ ওই যাত্রী তখন ভাড়ার তালিকা তুলে ফেলতে বললে সহকারীকে নীরব থাকতে দেখা যায়।
একই অবস্থা দেখা গেছে সাইনবোর্ড থেকে আজিমপুরগামী ‘বিকাশ পরিবহনে’। সরকারনির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বনানী থেকে কলাবাগানের ভাড়া ১৫ টাকা হলেও ‘বিকাশ পরিবহনে’ এই দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। রাজধানীর শাহীন কলেজের সামনে ওই বাসে চেকার ওঠার পর পেশায় ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ভাড়া তো ১৫ টাকা।’ প্রতিবাদে সেই চেকার বলেন, ‘এত কৈফত দিতে পারমু না। বিকাশ বাসে আপনার চড়ার দরকার নাই। নাইম্মা যান।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই চেকার বলেন, ‘পত্রিকার সাথে কথা বলার সময় নাই।’
আমিনুল কিংবা জাহিদুর শুধু নন, রাজধানীতে গণপরিবহনে চলাচলকারী বেশিরভাগ যাত্রীই নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে অপমান-অপদস্থের শিকার হচ্ছেন। সরেজমিনে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্ট্যান্ডে বাসে উঠে এমন অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া কামারপাড়া থেকে চিটাগাংরোডগামী ‘মনজিল এক্সপ্রেস’, মিরপুর থেকে মহাখালী হয়ে মতিঝিলগামী ‘আল-মক্কা ট্রান্সপোর্ট’, ঘাটারচর বসিলা থেকে কামারপাড়াগামী ‘প্রজাপতি পরিবহন’, বাড্ডা-নতুন বাজার-ধামরাই-বাথুলী রুটে চলাচলকারী ‘বৈশাখী পরিবহন’, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ীগামী ‘শিকড় পরিবহন’, বনশ্রী থেকে মোহাম্মদপুরগামী ‘তরঙ্গ প্লাস’, খিলগাঁও থেকে মোহাম্মাদপুরগামী ‘মিডলাইন পরিবহন’, বাড্ডা থেকে আজিমপুরগামী ‘দেওয়ান পরিবহন’, বনশ্রী থেকে শিয়া মসজিদগামী ‘আলিফ পরিবহন’সহ নগরীতে চলাচলকরী বিভিন্ন রুটের বেশিরভাগ বাসেই ‘ওয়েবিলের’ দোহাই দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু বেসরকারি বাসেই নয়, বাড়তি ভাড়া আদায়ে পিছিয়ে নেই রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন বিআরটিসিও। ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা, ১৩ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নেওয়ার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে গাজীপুর থেকে গুলিস্তানগামী বিআরটিসি বাসের বিরুদ্ধেও।
তা ছাড়া বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুবিধার্থে অনেক পরিবহনেই ভাড়ার তালিকা তুলে ফেলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ‘হাফ-পাস’ নিয়েও দ্বন্দ্ব থামেনি। বেশিরভাগ বাসেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকার ‘হাফ ভাড়া’ নেওয়া হচ্ছে না। আবার তিন-চারজন শিক্ষার্থী দেখলেই বিভিন্ন পরিবহনের বাসের দরজা বন্ধ করে দিতে দেখা গেছে।
বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা মো. সাগর বলেন, ‘বনশ্রী থেকে মৌচাক আসতে তরঙ্গ প্লাস বাসে দুটি চেকের কারণে অন্য গাড়িতে যে ভাড়া ১০ টাকা, সেই ভাড়াই ২৫ টাকা গুনতে হয়।’ বাসে তালিকা ছিল কি না, এ প্রশ্নের জবাবে এই যাত্রী বলেন,‘ ওগুলা তো তুইলা ফেলাইছে। এহন তাদের লগে কি মারামারি করমু?’
ডিজেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ নভেম্বর কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করে সরকার। এরপর তিন সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নির্ধারিত ভাড়ায় চলছে না অধিকাংশ গাড়ি। ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে গত ১০ নভেম্বর তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্রতিদিন শতাধিক বাসকে জরিমানা করলেও থামেনি এই ভাড়ার নৈরাজ্য।
এদিকে, বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নিয়েও আপত্তি রয়েছে যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, দেড় কিংবা দুই কিলোমিটারের ভাড়া কেন ১০ টাকা হবে? গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি তুলেছে যাত্রী অধিকার কল্যাণ সমিতি। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ থেকে কমিয়ে ৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিআরটিএর ‘সড়ক নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক’ এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে মালিক সমিতিকে অনুরোধ করেন তিনি।
ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পূর্বের তুলনায় বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ অনেক কমছে। আমরা কাজ করতেছি। আমাদের অভিযান চলমান আছে। ছাত্রদের হাফ পাসের বিষয়ে আমরা দেখতেছি। কাজ করতেছি।’ ‘হাফ পাস’ ৫ টাকা দেওয়া যাবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। ছাত্রদের জন্য হাফ হলে ৫ টাকা হবে। এ বিষয়ে তো আলোচনা হয় নাই। পরে আমরা ক্লিয়ার করে দেব।’
এ প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এই নৈরাজ্য থামছে না। মালিকরা বাড়তি জমা চায় বলেই শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করে। আমরা জানতে পেরেছি, সরকারের তালিকা অনুযায়ী যে ভাড়া দিতে চায় তাকে অপমান-অপদস্থ করা হয়। কটু কথা শুনতে হয়। বাস থেকে নামার সময় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থী দেখলে বাসগুলো টান দেয়।’
টঙ্গীতে ‘হাফ ভাড়ার’ দাবিতে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ : বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ ভাড়ার’ দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সফিউদ্দিন সরকার একাডেমিসহ স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই অবরোধে অংশগ্রহণ করে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বেলা ১১টার দিকে মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, শুধু রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়ার’ সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে কার্যকর হয়েছে। তাহলে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ কার্যকর করা হবে না কেন? যত দিন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা না হবে, তত দিন সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সারা দেশের গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শেয়ার করুন
খাইরুল বাশার | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

রাজধানীর শিশুমেলার সামনে থেকে মহাখালী যাওয়ার উদ্দেশে চন্দ্রা টু নতুন বাজারগামী ‘রইছ পরিবহনে’ (ঢাকা মেট্রো- ব ১৫৭১৭২) যাত্রী হিসেবে উঠেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আমিনুল ইসলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টার কাছাকাছি। বাসে সাঁটানো সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী, শ্যামলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত ভাড়া ১৩ টাকা হলেও বাসের সহকারী ২০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। আমিনুল ইসলাম চার্টের প্রসঙ্গ টানলে ওই বাসের চালকের সহকারী বলেন, ‘ওইগুলা পুরান; ভুল। আমার চেক (ওয়েবিল) আছে। ২০ টাকা ভাড়া না দিলে আপনি নাইম্মা যান। ভাড়া দিবেন না ক্যান, দিতে অইব।’ ওই যাত্রী তখন ভাড়ার তালিকা তুলে ফেলতে বললে সহকারীকে নীরব থাকতে দেখা যায়।
একই অবস্থা দেখা গেছে সাইনবোর্ড থেকে আজিমপুরগামী ‘বিকাশ পরিবহনে’। সরকারনির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বনানী থেকে কলাবাগানের ভাড়া ১৫ টাকা হলেও ‘বিকাশ পরিবহনে’ এই দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। রাজধানীর শাহীন কলেজের সামনে ওই বাসে চেকার ওঠার পর পেশায় ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ভাড়া তো ১৫ টাকা।’ প্রতিবাদে সেই চেকার বলেন, ‘এত কৈফত দিতে পারমু না। বিকাশ বাসে আপনার চড়ার দরকার নাই। নাইম্মা যান।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই চেকার বলেন, ‘পত্রিকার সাথে কথা বলার সময় নাই।’
আমিনুল কিংবা জাহিদুর শুধু নন, রাজধানীতে গণপরিবহনে চলাচলকারী বেশিরভাগ যাত্রীই নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে অপমান-অপদস্থের শিকার হচ্ছেন। সরেজমিনে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্ট্যান্ডে বাসে উঠে এমন অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া কামারপাড়া থেকে চিটাগাংরোডগামী ‘মনজিল এক্সপ্রেস’, মিরপুর থেকে মহাখালী হয়ে মতিঝিলগামী ‘আল-মক্কা ট্রান্সপোর্ট’, ঘাটারচর বসিলা থেকে কামারপাড়াগামী ‘প্রজাপতি পরিবহন’, বাড্ডা-নতুন বাজার-ধামরাই-বাথুলী রুটে চলাচলকারী ‘বৈশাখী পরিবহন’, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ীগামী ‘শিকড় পরিবহন’, বনশ্রী থেকে মোহাম্মদপুরগামী ‘তরঙ্গ প্লাস’, খিলগাঁও থেকে মোহাম্মাদপুরগামী ‘মিডলাইন পরিবহন’, বাড্ডা থেকে আজিমপুরগামী ‘দেওয়ান পরিবহন’, বনশ্রী থেকে শিয়া মসজিদগামী ‘আলিফ পরিবহন’সহ নগরীতে চলাচলকরী বিভিন্ন রুটের বেশিরভাগ বাসেই ‘ওয়েবিলের’ দোহাই দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু বেসরকারি বাসেই নয়, বাড়তি ভাড়া আদায়ে পিছিয়ে নেই রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন বিআরটিসিও। ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা, ১৩ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নেওয়ার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে গাজীপুর থেকে গুলিস্তানগামী বিআরটিসি বাসের বিরুদ্ধেও।
তা ছাড়া বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুবিধার্থে অনেক পরিবহনেই ভাড়ার তালিকা তুলে ফেলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ‘হাফ-পাস’ নিয়েও দ্বন্দ্ব থামেনি। বেশিরভাগ বাসেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকার ‘হাফ ভাড়া’ নেওয়া হচ্ছে না। আবার তিন-চারজন শিক্ষার্থী দেখলেই বিভিন্ন পরিবহনের বাসের দরজা বন্ধ করে দিতে দেখা গেছে।
বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা মো. সাগর বলেন, ‘বনশ্রী থেকে মৌচাক আসতে তরঙ্গ প্লাস বাসে দুটি চেকের কারণে অন্য গাড়িতে যে ভাড়া ১০ টাকা, সেই ভাড়াই ২৫ টাকা গুনতে হয়।’ বাসে তালিকা ছিল কি না, এ প্রশ্নের জবাবে এই যাত্রী বলেন,‘ ওগুলা তো তুইলা ফেলাইছে। এহন তাদের লগে কি মারামারি করমু?’
ডিজেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ নভেম্বর কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করে সরকার। এরপর তিন সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নির্ধারিত ভাড়ায় চলছে না অধিকাংশ গাড়ি। ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে গত ১০ নভেম্বর তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্রতিদিন শতাধিক বাসকে জরিমানা করলেও থামেনি এই ভাড়ার নৈরাজ্য।
এদিকে, বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নিয়েও আপত্তি রয়েছে যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, দেড় কিংবা দুই কিলোমিটারের ভাড়া কেন ১০ টাকা হবে? গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি তুলেছে যাত্রী অধিকার কল্যাণ সমিতি। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ থেকে কমিয়ে ৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিআরটিএর ‘সড়ক নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক’ এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে মালিক সমিতিকে অনুরোধ করেন তিনি।
ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পূর্বের তুলনায় বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ অনেক কমছে। আমরা কাজ করতেছি। আমাদের অভিযান চলমান আছে। ছাত্রদের হাফ পাসের বিষয়ে আমরা দেখতেছি। কাজ করতেছি।’ ‘হাফ পাস’ ৫ টাকা দেওয়া যাবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। ছাত্রদের জন্য হাফ হলে ৫ টাকা হবে। এ বিষয়ে তো আলোচনা হয় নাই। পরে আমরা ক্লিয়ার করে দেব।’
এ প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এই নৈরাজ্য থামছে না। মালিকরা বাড়তি জমা চায় বলেই শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করে। আমরা জানতে পেরেছি, সরকারের তালিকা অনুযায়ী যে ভাড়া দিতে চায় তাকে অপমান-অপদস্থ করা হয়। কটু কথা শুনতে হয়। বাস থেকে নামার সময় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থী দেখলে বাসগুলো টান দেয়।’
টঙ্গীতে ‘হাফ ভাড়ার’ দাবিতে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ : বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ ভাড়ার’ দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সফিউদ্দিন সরকার একাডেমিসহ স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই অবরোধে অংশগ্রহণ করে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বেলা ১১টার দিকে মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, শুধু রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়ার’ সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে কার্যকর হয়েছে। তাহলে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ কার্যকর করা হবে না কেন? যত দিন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা না হবে, তত দিন সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সারা দেশের গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।