২০ জনের ফাঁসির রায়
নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক | ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দুই বছরের কিছু বেশি সময় আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যে ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল সারা দেশকে, সেই আবরার ফাহাদ রাব্বিকে হত্যা মামলার রায়ে ২৫ আসামির সবাইকে দোষীসাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আলোচিত এই মামলার রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
গতকাল দুপুর ১২টায় রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। ১৫ মিনিট ধরে পড়া রায়ে বিচারক বলেন, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ হত্যা জাতিকে ব্যথিত করেছে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে সেজন্য ট্রাইব্যুনালে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’
রায়ে যে ২০ জনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে তারা হলো মেহেদী হাসান রাসেল, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, অনিক সরকার অপু, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মুনতাসির আল জেমি, মোজাহিদুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুর রহমান মাজেদ, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, মুহাম্মদ মোর্শেদন্ডউজ-জামান ম-ল জিসান, এসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামছুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ এবং এসএম মাহামুদ সেতু। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলো মুহতাসিম ফুয়াদ, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হোরায়রা। তারা সবাই ঘটনার সময় বুয়েটের বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগে অধ্যয়নরত ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা ছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তফা রাফিদ এখনো পলাতক।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে। পরে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি নিয়ে ফেইসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের জের ধরে রাতে আবরারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী (পরে বহিষ্কৃত)। এ নিয়ে সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিক্ষোভ ও আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে বুয়েট। হত্যার ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। একই বছরের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মামলার রায় হলো।
রায়ে বিচারক বলেন, ‘আসামিরা ইচ্ছা করলে এ রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ এর ১৪ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক প্রদত্ত দণ্ড অনুমোদনের জন্য অবিলম্বে রায়সহ নথি হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানো হোক।’ বিচারক আরও বলেন, ‘পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যে তারিখে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করবেন কিংবা পুলিশ কর্র্তৃক ধৃত হওয়ার তারিখ থেকে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।’ পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করার নির্দেশ দেয় আদালত। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ মামলার রায় শুনতে গতকাল সকাল থেকেই আদালত অঙ্গনে ভিড় জমে। পুরো আদালত এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকালে কারাগার থেকে ২২ আসামিকে মহানগর দায়রা আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয়। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে তাদের হাজির করা হয় সংশ্লিষ্ট এজলাসের কাঠগড়ায়। দুপুর ১২টায় রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। ১৫ মিনিটে পঠিত রায়ে আসামিদের সাজার বিষয়টি ঘোষণা করেন বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। সাজার বিষয়টি শোনার পর আসামিরা ছিল ভাবলেশহীন। তবে রায় শোনার পর আসামির স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পর আসামিদের আবারও কড়া নিরাপত্তায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং রাষ্ট্র নিযুক্ত কৌঁসুলিরা জানান, তারা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই সব আসামির সাজা নিশ্চিত হয়েছে। আদালতের এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ এবং উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, বিচারিক আদালতের এই রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকলে এবং রায় কার্যকর হলেই তিনি সন্তুষ্ট হবেন। অপরদিকে রায়ে হতাশা প্রকাশ করে দণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা বলছেন, তারা ন্যায়বিচার পাননি।
নৃশংস অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে এই সাজা : আবরার হত্যা মামলার রায়ে বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সকলের সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে।’ আদালত আরও বলে, ‘বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের নৃশংস হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
সন্তোষ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের : আলোচিত এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টদের। কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত একজন ছাত্রকে পেটানো হচ্ছে তাদের কেউ খবর রাখেনি। এই রায় একটি বার্তা এ কারণে, শিক্ষাঙ্গনে দায়িত্বশীল যারা তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। এখান থেকে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা গ্রহণ করে তাহলে সবাই উপকৃত হবে।’ আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে সেখানেও এই সাজা বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এবং বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট। যদি আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করে তাহলে মামলার যে নথি ও প্রমাণ তাতে সেখানেও আসামিদের সাজা বহাল থাকবে বলে আশা করি। আমরা মনে করি দ্রুত হাইকোর্টে এবং আপিল বিভাগে শুনানি শেষে রায় যেন কার্যকর করা হয়।’
সংক্ষুব্ধ আসামিপক্ষ যাবে আপিলে : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি মিজান, শামীম ও সেতুর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফারুখ আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘আসামিদের অনেকে বলেছে, বড় ভাইরা তাদের ডেকে নিয়ে এসেছে। অপরাধের সঙ্গে অনেকের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কেউ ডাকলে আর গেলে তো সেটি অপরাধ নয়। এজন্য কি তাদের ফাঁসি হয়ে যাবে? তাদের হত্যার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। অনেকের সাজার মতো মামলায় কোনো উপাদান ছিল না। কিন্তু সাজা হয়েছে। আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ। আশা করি উচ্চ আদালতে খালাস হবে। আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অপর দুই আসামি জিয়ন ও অমর্ত্যরে পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিরোজ আলী ম-ল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘৪৬ সাক্ষীর কেউ বলে নাই যে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মারতে দেখেছেন। সাক্ষীরা বলেছেন, তারা শুনেছেন। ফৌজদারি আইনে কারও সাজা নিশ্চিত করতে হলে সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণ করতে হয়। শুধু শ্রুত সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়া ফৌজদারি ও সাক্ষ্য আইন সমর্থন করে না। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’
ক্ষুব্ধ ও হতাশ প্রতিক্রিয়া দণ্ডিতদের স্বজনদের : রায় শুনতে সকালেই আদালত অঙ্গনে আসেন আসামির স্বজনরা। কারও এসেছিলেন বাবা-মা। তারা ছিলেন উদ্বিগ্ন। রায়ের পর তাদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। কেউ কেউ রায়ে হতাশা ব্যক্ত করে দাবি করেন, তাদের সন্তান নির্দোষ। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামির স্বজন বলেন, ‘এমন রায় কল্পনাও করিনি।’ আরেক আসামির স্বজন বলেন, ‘আসামিদের বাবা-মায়ের ফাঁসি চায়নি; চাইলে সেটাও হয়তো হতো।’ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ফুয়াদের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের ঘটনার সময় শারীরিকভাবে যেমন উপস্থিত ছিল না, তেমনি মানসিকভাবেও এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনোরকম সম্পৃক্ত নেই। তাকে কেন মামলায় সম্পৃক্ত করবে? তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষীও দেয়নি। ঘটনার দিন ভোরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন যায় তখন সেও ওইখানে যায়। এটুকুই তার সম্পৃক্ততা। আমাদের সবার একটাই দাবি ছিল, মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারে নেওয়া হোক।’
যেভাবে বিচারের আওতায় আসামিরা : আবরার হত্যার ঘটনার পরদিন তার বাবা বরকতউল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। গ্রেপ্তারের পর ইফতি, অনিক, জিয়ন, মোজাহিদুর, মেহেদী, মনিরুজ্জামান, তানভীর, সাদাত আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/১০৯/১১৪ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। মামলায় ৬০ সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। আসামিদের পক্ষে ছয়জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর এ মামলার রায়ের জন্য গত ২৮ নভেম্বর ধার্য করেছিলেন বিচারক। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন করে ৮ ডিসেম্বর (গতকাল) রায়ের তারিখ ধার্য হয়। ৭৮ কার্যদিবসের মধ্যে এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুবার এ মামলার বিচারকাজ বন্ধ থাকে।
আবরার হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বুয়েটের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচারকরা সঠিকভাবে বিচার করেছেন। তারা প্রজ্ঞা ও আইন অনুযায়ী বিচার করেছেন। তাদের ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই মনে রাখতে হবে যে, যদি কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন আমরা আশা করব এটা যেন দ্রুত সময়ে কার্যকর হয়।’
শাস্তি মেনে নিতে পারছে না ইশতিয়াকের পরিবার : যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ইশতিয়াক মুন্নার শাস্তি মেনে নিতে পারছেন না তার মা কুলসুমা খাতুন শেলী। তার দাবি, মুন্না হত্যাকান্ডের সময় বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল। আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলে তিনি নিজেই তার ফাঁসি দাবি করতেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক | ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দুই বছরের কিছু বেশি সময় আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যে ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল সারা দেশকে, সেই আবরার ফাহাদ রাব্বিকে হত্যা মামলার রায়ে ২৫ আসামির সবাইকে দোষীসাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আলোচিত এই মামলার রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
গতকাল দুপুর ১২টায় রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। ১৫ মিনিট ধরে পড়া রায়ে বিচারক বলেন, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ হত্যা জাতিকে ব্যথিত করেছে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে সেজন্য ট্রাইব্যুনালে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’
রায়ে যে ২০ জনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে তারা হলো মেহেদী হাসান রাসেল, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, অনিক সরকার অপু, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মুনতাসির আল জেমি, মোজাহিদুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুর রহমান মাজেদ, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, মুহাম্মদ মোর্শেদন্ডউজ-জামান ম-ল জিসান, এসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামছুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ এবং এসএম মাহামুদ সেতু। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলো মুহতাসিম ফুয়াদ, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হোরায়রা। তারা সবাই ঘটনার সময় বুয়েটের বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগে অধ্যয়নরত ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা ছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তফা রাফিদ এখনো পলাতক।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে। পরে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি নিয়ে ফেইসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের জের ধরে রাতে আবরারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী (পরে বহিষ্কৃত)। এ নিয়ে সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিক্ষোভ ও আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে বুয়েট। হত্যার ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। একই বছরের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মামলার রায় হলো।
রায়ে বিচারক বলেন, ‘আসামিরা ইচ্ছা করলে এ রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ এর ১৪ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক প্রদত্ত দণ্ড অনুমোদনের জন্য অবিলম্বে রায়সহ নথি হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানো হোক।’ বিচারক আরও বলেন, ‘পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যে তারিখে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করবেন কিংবা পুলিশ কর্র্তৃক ধৃত হওয়ার তারিখ থেকে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।’ পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করার নির্দেশ দেয় আদালত। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ মামলার রায় শুনতে গতকাল সকাল থেকেই আদালত অঙ্গনে ভিড় জমে। পুরো আদালত এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকালে কারাগার থেকে ২২ আসামিকে মহানগর দায়রা আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয়। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে তাদের হাজির করা হয় সংশ্লিষ্ট এজলাসের কাঠগড়ায়। দুপুর ১২টায় রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। ১৫ মিনিটে পঠিত রায়ে আসামিদের সাজার বিষয়টি ঘোষণা করেন বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। সাজার বিষয়টি শোনার পর আসামিরা ছিল ভাবলেশহীন। তবে রায় শোনার পর আসামির স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পর আসামিদের আবারও কড়া নিরাপত্তায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং রাষ্ট্র নিযুক্ত কৌঁসুলিরা জানান, তারা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই সব আসামির সাজা নিশ্চিত হয়েছে। আদালতের এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ এবং উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, বিচারিক আদালতের এই রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকলে এবং রায় কার্যকর হলেই তিনি সন্তুষ্ট হবেন। অপরদিকে রায়ে হতাশা প্রকাশ করে দণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা বলছেন, তারা ন্যায়বিচার পাননি।
নৃশংস অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে এই সাজা : আবরার হত্যা মামলার রায়ে বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সকলের সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে।’ আদালত আরও বলে, ‘বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের নৃশংস হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
সন্তোষ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের : আলোচিত এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টদের। কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত একজন ছাত্রকে পেটানো হচ্ছে তাদের কেউ খবর রাখেনি। এই রায় একটি বার্তা এ কারণে, শিক্ষাঙ্গনে দায়িত্বশীল যারা তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। এখান থেকে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা গ্রহণ করে তাহলে সবাই উপকৃত হবে।’ আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে সেখানেও এই সাজা বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এবং বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট। যদি আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করে তাহলে মামলার যে নথি ও প্রমাণ তাতে সেখানেও আসামিদের সাজা বহাল থাকবে বলে আশা করি। আমরা মনে করি দ্রুত হাইকোর্টে এবং আপিল বিভাগে শুনানি শেষে রায় যেন কার্যকর করা হয়।’
সংক্ষুব্ধ আসামিপক্ষ যাবে আপিলে : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি মিজান, শামীম ও সেতুর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফারুখ আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘আসামিদের অনেকে বলেছে, বড় ভাইরা তাদের ডেকে নিয়ে এসেছে। অপরাধের সঙ্গে অনেকের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কেউ ডাকলে আর গেলে তো সেটি অপরাধ নয়। এজন্য কি তাদের ফাঁসি হয়ে যাবে? তাদের হত্যার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। অনেকের সাজার মতো মামলায় কোনো উপাদান ছিল না। কিন্তু সাজা হয়েছে। আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ। আশা করি উচ্চ আদালতে খালাস হবে। আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অপর দুই আসামি জিয়ন ও অমর্ত্যরে পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিরোজ আলী ম-ল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘৪৬ সাক্ষীর কেউ বলে নাই যে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মারতে দেখেছেন। সাক্ষীরা বলেছেন, তারা শুনেছেন। ফৌজদারি আইনে কারও সাজা নিশ্চিত করতে হলে সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণ করতে হয়। শুধু শ্রুত সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়া ফৌজদারি ও সাক্ষ্য আইন সমর্থন করে না। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’
ক্ষুব্ধ ও হতাশ প্রতিক্রিয়া দণ্ডিতদের স্বজনদের : রায় শুনতে সকালেই আদালত অঙ্গনে আসেন আসামির স্বজনরা। কারও এসেছিলেন বাবা-মা। তারা ছিলেন উদ্বিগ্ন। রায়ের পর তাদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। কেউ কেউ রায়ে হতাশা ব্যক্ত করে দাবি করেন, তাদের সন্তান নির্দোষ। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামির স্বজন বলেন, ‘এমন রায় কল্পনাও করিনি।’ আরেক আসামির স্বজন বলেন, ‘আসামিদের বাবা-মায়ের ফাঁসি চায়নি; চাইলে সেটাও হয়তো হতো।’ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ফুয়াদের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের ঘটনার সময় শারীরিকভাবে যেমন উপস্থিত ছিল না, তেমনি মানসিকভাবেও এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনোরকম সম্পৃক্ত নেই। তাকে কেন মামলায় সম্পৃক্ত করবে? তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষীও দেয়নি। ঘটনার দিন ভোরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন যায় তখন সেও ওইখানে যায়। এটুকুই তার সম্পৃক্ততা। আমাদের সবার একটাই দাবি ছিল, মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারে নেওয়া হোক।’
যেভাবে বিচারের আওতায় আসামিরা : আবরার হত্যার ঘটনার পরদিন তার বাবা বরকতউল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। গ্রেপ্তারের পর ইফতি, অনিক, জিয়ন, মোজাহিদুর, মেহেদী, মনিরুজ্জামান, তানভীর, সাদাত আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/১০৯/১১৪ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। মামলায় ৬০ সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। আসামিদের পক্ষে ছয়জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর এ মামলার রায়ের জন্য গত ২৮ নভেম্বর ধার্য করেছিলেন বিচারক। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন করে ৮ ডিসেম্বর (গতকাল) রায়ের তারিখ ধার্য হয়। ৭৮ কার্যদিবসের মধ্যে এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুবার এ মামলার বিচারকাজ বন্ধ থাকে।
আবরার হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বুয়েটের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচারকরা সঠিকভাবে বিচার করেছেন। তারা প্রজ্ঞা ও আইন অনুযায়ী বিচার করেছেন। তাদের ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই মনে রাখতে হবে যে, যদি কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন আমরা আশা করব এটা যেন দ্রুত সময়ে কার্যকর হয়।’
শাস্তি মেনে নিতে পারছে না ইশতিয়াকের পরিবার : যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ইশতিয়াক মুন্নার শাস্তি মেনে নিতে পারছেন না তার মা কুলসুমা খাতুন শেলী। তার দাবি, মুন্না হত্যাকান্ডের সময় বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল। আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলে তিনি নিজেই তার ফাঁসি দাবি করতেন।