
গ্রামের মানুষ বলে এখন আর অন্ধকারে নেই। গ্রাম হয়েছে শহর শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবা আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদে এলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যে। পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, টেলিমেডিসিন সেবা, অনলাইনে টিকিট কাটা, ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে ভিসা ঠিক করাসবই এখন ইউনিয়নে এলে পাই। আগে তো এসবের জন্যে উপজেলা সদর, আবার কোনো কোনো কাজে ঢাকায়ও যেতে হতো। ছেলেপুলের কম্পিউটার ট্রেনিং লাগবেতাও ইউনিয়ন পরিষদে এলেই সমাধান পাই।
রাজশাহীর ৮ নম্বর হরিয়ানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আলেয়া খাতুন এভাবেই বলছিলেন ইউনিয়নের সেবা প্রদানের গল্প। শুধু হরিয়ানপুর নয় রাজশাহী, নাটোর, যশোরসহ কয়েকটি জেলার ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। জন্ম-মৃত্যু সনদ, জমির পরচা, পাসপোর্টের ফরম পূরণ থেকে শুরু করে করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনসহ তিন শতাধিক সেবা মিলছে ইউনিয়ন ডিজিটাল স্টোর থেকে।
হরিয়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১০ বছর আগেও মানুষ বুঝত না ডিজিটাল সেবা কী? অনলাইন শুনলেই অবাক হতো। এটা আবার কী? কিন্তু এখন গ্রামের লোকজন বোঝে ডিজিটাল অর্থ কী। কারণ তারা এই সেবাটি গ্রহণ করে।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশ আট হাজার ডিজিটাল সেন্টার সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এসব সেন্টার থেকে তিন শতাধিক সেবা পাচ্ছে মানুষ। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই বিভাগের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এসব ডিজিটাল সেন্টার। এই সেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতি কিলোমিটারে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার করার পরিকল্পনা করছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে তাদের দেওয়া সেবার তালিকা টানানো থাকে। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে, ১. অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমা দান, ২. জমির পরচা উত্তোলন, ৩. অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ৪. ই-নামজারি, ৫. অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও এর অনলাইন কপি প্রদান, ৬. কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন, ৮. বাস-ট্রেন-বিমানের টিকিট ক্রয় সেবা, ৯. এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলা, ১০. টাকা জমাদান ও উত্তোলন, ১১. বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স উত্তোলন, ১২. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ও ফি জমা, ১৩. পল্লী বিদ্যুৎ বিল জমাদান, ১৪. অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন, ১৫. বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রদান, ১৬. ভারতে মেডিকেল ভিসার আবেদন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান, ১৭. জন্মনিবন্ধন সনদ, ১৮. অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স লার্নার আবেদন, ১৯. টেলিমেডিসিন সেবাসহ ৩০০ সেবা।
হরিয়ানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, “বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি ভাতাসহ সব এখান থেকে দিয়ে থাকি। অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়। আগে যে কাজের জন্য শহরে যেতে হতো। যেতে হতো রাজধানী ঢাকায়, তার এখন আর দরকার নেই। গ্রামেই একখন্ড সেবা। তা ছাড়া আগে অনেক অনিয়ম দুর্নীতির কথা শোনা যেত। এখন তা হয় না। একজনের ভাতা আরেকজন তোলা বা একই নামে ভাতা অন্যজন তোলা বন্ধ হয়েছে। সবকিছুই আমাদের চোখের সামনে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হরগঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে দেখা হয় বাসিন্দা স্বপ্না খাতুনের সঙ্গে। তিনি এসেছেন নিজের এবং স্বামীর জন্মনিবন্ধনের জন্য। আগে এ কাজের জন্য কোথায় যাবেন, কী করবেনসেটাই হয়তো বুঝতে পারতেন না। এখন ডিজিটাল সেন্টারে বসে সরকারি ফি দিয়েই জন্মনিবন্ধনের কাজটি সম্পন্ন করতে পারছেন।
হাফিজুর রহমান এসেছেন জমির খতিয়ান, মাঠ পরচা তুলতে। তিনি বলেন, আগে জেলা সদরে যেতে হতো। এখন ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে বসে মাত্র ১৫০ টাকায় ই-মাঠ পরচা, খতিয়ান পেয়ে যাচ্ছেন। এটা হরগঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ শুধু নয়, দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে এখন প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন শত শত মানুষ। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, এই ডিজিটাল সেন্টার ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলে এত সহজে ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে যাওয়া বর্তমান সরকারের অসাধারণ জনবান্ধব চিন্তারই প্রতিফলন।
শুধু ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের মধ্যেই রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়ন নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গ্রামে শহরের সেবা পৌঁছে দেওয়ার বড় ভিত হলো দ্রুতগতির ইন্টারনেট। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে। বাংলাদেশ এখন একটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের মালিক। ১ কোটি ৭০ হাজার পরিবার ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করছে। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল পৌঁছেছে প্রায় ৯৭ শতাংশ ইউনিয়ননে। ব্রডব্যান্ড ইন্টানেটের দাম এখন নিম্নবিত্তের হাতের নাগালে। ইন্টারেনেট অবকাঠামো গড়তে কাজ করছে সরকারি বেসরকারি ৬টি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সামিট কমিউনিকেশন সারা দেশে অপটিক্যাল ফাইবার নিয়েছে অন্তত ৪৭ হাজার কিলোমিটার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০৬ মে মাসে আমরা সাবরেমিন কেবলে যুক্ত হই। কিন্তু ২০০৬-০৮ এই সময়কালের মধ্যে ব্যান্ডইউথ ৮জিপিপিএসের উপরে উন্নীত করতে পারিনি। আজ যদি আমরা ২০২১ সালের সঙ্গে তুলনা করি এখন ব্যান্ডইউথ ইউজ হচ্ছে প্রায় তিন হাজার জিপিপিএসের উপরে। লক্ষ্য পূরণ হয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও। তিনি বলেন, ১২ ডিসেম্বর পঞ্চম ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে আমরা ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ ঐতিহাসিক যাত্রার উদ্বোধন করেন।
ফাইবার অপটিক্যাল নিয়ে সামিট কমিউনিকেশনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শারমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল পৌঁছে গেছে। সব উপজেলায় এবং ৩০ শতাংশ ইউনিয়নে ফাইবার কানেক্টিভিটি পৌঁছানো হয়েছে। যদি ১০ বছর আগের প্রতি ইউনিটের একটা একটা ট্রান্সমিশন প্রাইস বেসিসে চিন্তা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে আমরাই একটা ড্রাসটিক প্রাইস নির্ধারণ করেছি। ৯৮ শতাংশ কমিয়েছি।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, গ্রামের মানুষের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে।
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আপনার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে যাতে আপনি একটি ডিজিটাল সেন্টার পান সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। আওয়ামী লীগের অনন্য উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশের ইউনিয়নে ডিজিটাল সংযোজন। এসব বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল দেশের ১৭ কোটি মানুষ পাচ্ছে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প ঘোষণা করেন, তখন তা ছিল একজন রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব লাভের পর ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প হয়েছে দেশের সব জনগণের।
বিগত ১২ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আইসিটি খাতে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ২০ লাখ। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি এক দশমিক তিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশের প্রায় সাড়ে ছয় লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। ডিজিটালের সুযোগ নিয়ে এখন ১০ কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং করছে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রূপকল্প দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে ইন্টারনেটের সংযোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি। আর ২০ লাখে দাঁড়িয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে ৫২ হাজার ওয়েবসাইট, ৮২ হাজারের বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টার, সিটি করপোরেশন ডিজিটাল সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ডিজিটাল সার্ভিস, ডেলিভারি সেন্টার থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি মানুষ সেবা নিচ্ছে। আয় করছে সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তিনি বলেন, এক যুগ আগে, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর তথ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে শহর-গ্রামের মধ্যে কমেছে পার্থক্য। হয়েছে হাজার হাজার কর্মসংস্থান। বৈদেশিক আয়ও বাড়ছে। দেশে তৈরি হচ্ছে ৩৯টি আইটি পার্ক। ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এখন প্রতিমাসে বিভিন্নভাবে ডিজিটাল সেবা নিচ্ছে প্রায় এক কোটি মানুষ।
আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, যখন সরকার ডিজিটাল সেন্টার উদ্বোধন করেন, সে সময় দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলারের কম। আর বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমা ছিল ৪২ শতাংশের ওপর। বিদ্যুতের সংযোগ ছিল মাত্র ৪০ শতাংশের ঘরে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইট ছিল অল্প সংখ্যক। ১২-২০টি ওয়েবসাইট ছিল। মেইল ব্যবহারের কোনো চর্চা ছিল না। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য কোথাও ছিল না ব্রডব্যান্ড। গ্রাম-ইউনিয়ন তো পরের কথা, বিভাগ-জেলা সদর পর্যন্ত ২০০৯ সালের আগে কোনো ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছিল না। ছিল না আইসিটি শিল্পের কোনো অস্তিত্ব। তরুণদের আইসিটিতে কর্মসংস্থান তো দূরের কথা, প্রযুক্তিশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। প্রাইমারি, হাইস্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না কম্পিউটার। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনা করছেন একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তা।
আইসিটি থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ৮ লাখ বর্তমানে ১২ কোটি ৮৭ লাখ। ২০০৮ সালে সারা দেশে ফোরজি ইন্টারনেট ছিল শূন্য এখন ৯৮ শতাংশ। নিজস্ব কমিউনিটি স্যাটেলাইট ২০০৮ সালে শূন্য, ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্ত হয়।
ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি : ২০০৮ : বর্তমান মানদন্ড প্রযোজ্য নয়, ২০২১ : এক কোটি ৭০ হাজার। সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ২০০৮ সালে ছিল বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলে। ২০২১ : ৪ হাজার ৪১১টি। ব্রডব্যান্ড ইনটারনেটের দাম, ২০০৮ সালে ২৭০০ টাকা প্রতি এমবিপিএস। ২০২১ : ১শ টাকা প্রতি এমবিপিএস ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক ১ কোটি ৭০ হাজার সংযোগ।
পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৯৯৭টি বিশেষ মামলার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখতে চায় সরকার। এতে সরকারের মেগা প্রকল্প, বিশেষ আর্থিক খাত, আইন বিধিবিধান বা বিশেষ পরিপত্র, জাতীয় ঐতিহাসিক অবস্থানগত গুরুত্ব, সরকারের বিশেষ স্বার্থ বিদ্যমান ও বিপুুল পরিমাণ সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থাকা মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। দেশের সব জেলা প্রশাসক, আট বিভাগীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন, সংসদ সচিবালয় ও ৫৪টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের পর এ মামলাগুলোর তথ্য পৃথক করেছে সরকারের উচ্চমহল। সব মামলা বর্তমানে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন, রিভিউ, রিভিশন, লিভ টু আপিল অবস্থায় রয়েছে। এ মামলাগুলোর বিষয়ে সার্বক্ষণিক তথ্য হালনাগাদ, পক্ষভুক্ত মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে তাৎক্ষণিক অবহিত করাসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিতে একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। এসব মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দিয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সরকারের সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, শুধু দেশের উচ্চ আদালতেই মোট মামলা ঝুলছে ৯৪ হাজার ৯৯৭টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। এ সংস্থার কাঁধে মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৩টি। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগে ১১ হাজার ৪০৫টি, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার ৩৮৬টি ও জননিরাপত্তা বিভাগে ৫ হাজার ৩৮টি মামলা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা নিয়েই কাজ করছি। এজন্য আমাদের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি ১৩ জন প্যানেল আইনজীবী নিয়ে নিয়মিত কাজ করে থাকেন। তবে সরকারের বিশেষ স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেসব মামলা রয়েছে এগুলো নিয়ে আমরা ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলা হয়।’
শুধু উচ্চ আদালতেই ৯৪ হাজার ৯৯৭ মামলা ঝুলছে : দেশের উচ্চ আদালতেই সরকারের কাঁধে ৯৪ হাজার ৯৯৭টি মামলা ঝুলছে। মামলায় বিবাদী হিসেবে বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন, সংসদ সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনে থাকা সংস্থাগুলো রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। এ সংস্থার কাঁধে মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৩টি। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগে ১১ হাজার ৪০৫টি, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার ৩৮৬টি ও জননিরাপত্তা বিভাগে ৫ হাজার ৩৮টি, অর্থ বিভাগে ৫ হাজার ১০টি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ হাজার ৭১৭টি, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের আওতাধীন ৪ হাজার ৬০৩টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৩ হাজার ৫৩২টি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের আওতাধীন ২ হাজার ৪৯৫টি, দুর্নীতি দমন কমিশনের ২ হাজার ৩৭৯টি, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ৩৫৬টি, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ৩৬৫টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২ হাজার ৫৬টি, স্বাস্ব্যসেবা বিভাগের ১ হাজার ৬৩৮টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৫৬টি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ১৩টি মামলা চলমান। সব মামলা বর্তমানে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন, রিভিউ, রিভিশন, লিভ টু আপিল অবস্থায় রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট ১ হাজার ৯৯৭টি বিশেষ মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫ ক্যাটাগরিতে ১৯৯৭টি ‘বিশেষ’ মামলা : উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা ৯৪ হাজার ৯৯৭টি মামলার মধ্যে সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৯৭টি মামলা। গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে এক নম্বরে সংসদের আইন, অধ্যাদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ, বিধি, প্রবিধি এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিপত্র, নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলা। দ্বিতীয়; সরকারি সম্পত্তিসংক্রান্ত মামলাগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, অবস্থানগত গুরুত্ব এবং উচ্চমূল্যমান বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত মামলা। তৃতীয়; সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প, ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত মামলাগুলোর মধ্যে মেগা প্রকল্প, জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত প্রকল্প, সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম ও কেপিআইসংশ্লিষ্ট মামলা। চতুর্থ; বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থের সংশ্লেষ রয়েছে এমন মামলা। পঞ্চম; বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অন্য কোনো সরকারি স্বার্থ বিদ্যমান রয়েছে এসব মামলা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির পর পূর্ত মন্ত্রণালয় গত ১৯ ডিসেম্বর একটি সভা করেছে। পূর্ত সচিব মো. শহীদউল্লা খন্দকারের সভাপতিত্বে এ সভায় গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সেখানে বিবেচ্য সময়কালে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা, বিবেচ্য সময়কালের পূর্ণ পর্যন্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা, সরকারের বিপক্ষে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যাসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা (উপসচিব) শেখ নূর মোহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মামলার কিছু দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ডিটেইল এরিয়াপ্ল্যান-ড্যাপ) খসড়া নিয়ে আবাসন খাতকে কোনো ধরনের শঙ্কার মধ্যে থাকতে হবে না এমন অভয় দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ‘রিহ্যাব আবাসন মেলা ২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তারা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘নতুন ড্যাপ যেটা আসছে তাতে আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন। আর আবাসন খাতের সমস্যা মানেই হলো সাধারণ মানুষের স্বপ্নপূরণ বাধাপ্রাপ্ত হবে। এই খাতের সঙ্গে জড়িত ২৬৯টি সংযোগ শিল্প। ৪০ লাখ লোকের এই খাতে কাজের সুযোগ হয়েছে। আবাসন খাত যদি ধাক্কা খায়, তাহলে এই সংযোগ শিল্প ধাক্কা খাবে।’ আবাসন খাত যাতে ধাক্কা না খায় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন ড্যাপ প্রণয়নের তাগিদ দেন তিনি।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু করে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১৪টি মেলা সফলভাবে শেষ করেছে তারা। এ ছাড়া ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
গত বছর করোনা মহামারীর কারণে মেলা করতে পারেনি রিহ্যাব। এক বছর বিরতির পর মেলা শুরু হলেও রড-সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি ও নতুন ড্যাপের খসড়ায় কিছু ভীতিকর নির্দেশনা নিয়ে শঙ্কিত আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন (কাজল) বলেন, ‘আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা নতুন ড্যাপ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এখানে যে ধরনের নির্দেশনার কথা খসড়া আকারে তুলে ধরা হয়েছে তাতে আমরা অশনিসংকেত শুনতে পাচ্ছি। এই ড্যাপ প্রণয়ন করা হলে আবাসন খাতের অবস্থা এতটাই সংকটময় হয়ে উঠবে যে আমরা হয়তো আর কখনো এ ধরনের মেলা আয়োজন করতে পারব না।’ ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই যাতে লাভবান হয় সেভাবেই করার দাবি জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রিহ্যাবকে মানুষের স্বপ্নপূরণের সংগঠন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ধনী-গরিব সব মানুষেরই স্বপ্ন থাকে তার একটি বাড়ি হবে। অনেক সময় একার পক্ষে এই বাড়ি বানানো হয় না। এ ক্ষেত্রে আবাসন খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে থাকে।’
ঢাকা মহানগর এলাকার আবাসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে ড্যাপ ২০১৬-৩৫-এর খসড়া নিয়ে কাজ করছে রাজউক। তবে এরই মধ্যেই এ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ কিছু আপত্তি উঠেছে। এ নিয়ে রিহ্যাবও তাদের মতামত জানিয়েছে। মেলার উদ্বোধনকালে সেই মতামতগুলোই নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে আনতে চেষ্টা করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
এবারের আবাসন মেলায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ২২০টি স্টল থাকছে। রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকেও মেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে রিহ্যাব।
অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্তেখাবুল হামিদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (২) মো. নজরুল ইসলাম (দুলাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট (৩) লায়ন শরীফ আলী খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) এবং ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীসহ রিহ্যাব পরিচালক এবং অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ড্যাপের বিষয়ে এফবিসিসিআইকে অবগত না করার কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করে সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এটি এমন একটি সংগঠন যার সঙ্গে দেশের সব ধরনের ব্যবসায়ীরা জড়িত। অথচ তাদের ড্যাপ নিয়ে মতামত দেওয়ার বিষয়টি অবগত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আবাসনের সব সুবিধা থাকা উচিত। যাতে ঢাকার বাইরে যাওয়ার বিষয়ে কর্মীরা আগ্রহী হন।’
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার এবং রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বক্তব্য দেন। তারা উভয়ই বলেন, ড্যাপ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গ্রহণযোগ্য ড্যাপ করা হবে। আবাসন ব্যবসায়ী বিশেষ করে রিহ্যাবের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্তেখাবুল হামিদ আবাসন খাতের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, পরিকল্পিত ও আধুনিক বাসস্থান তৈরিতে গৃহঋণের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন নাগরিকের পক্ষে হাউজিং লোন ছাড়া ফ্ল্যাট বা প্লট ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব। ক্রেতারা যাতে খুব সহজে এই ঋণ পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
কামাল মাহমুদ বলেন, ‘এ মুহূর্তে যা আমাদের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে একটি নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। অন্যটি প্রস্তাবিত ড্যাপ (২০১৬-৩৫)। জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা আবাসন শিল্প হুমকির মুখে পড়বে যদি এই ড্যাপ বাস্তবায়িত হয়, আর রডের দাম এভাবে বাড়তে থাকে।’ গত এক বছরে রড-সিমেন্টের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এবার মেলাটির আয়োজনে ডায়মন্ড স্পনসর হিসেবে রয়েছে রূপায়ণ সিটি উত্তরা এবং গোল্ড স্পনসর হিসেবে রয়েছে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিমিটেড, শেলটেক ও নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলায় দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি, অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। এ বছর প্রতিদিন র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে শিক্ষা কর্মকর্তাকে থাপ্পড় মারার ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. শাহনেওয়াজ শাহানশাহকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল ডি মেরিডিয়ানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা ও নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, শাহানশাহ নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। হেরোইনে আসক্ত তিনি। এক ধরনের মাদকে তিনি তৃপ্তি পেতেন না। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করতেন। তিনি হোটেলের যে কক্ষে ছিলেন সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ করা হয়। তিনি দাম্ভিক এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। গ্রেপ্তারের সময় তিনি মাদকের নেশার ঘোরে ছিলেন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘মারামারি ও পুলিশ অ্যাসল্টসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। ঘটনার দিন শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। শিক্ষা অফিসারকে লাঞ্ছিত করেন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। যতটুকু বুঝতে পেরেছি, মাদক কারবারে প্রভাব খাটাতেন তিনি। এতে দাম্ভিক হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু করেন ক্ষমতার অপব্যবহার। ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, শাহানশাহ একটি দলের সঙ্গে ছিলেন, সেই দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা করারও চেষ্টা করেন। কারও সহযোগিতা পাননি। তার আচরণ ছিল গর্হিত ও লজ্জাজনক। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বহিষ্কার করেছে। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। দেশত্যাগের চেষ্টাও করেননি তিনি। তাকে যারা মাদক সরবরাহ করেছে, তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
কমান্ডার মঈন বলেন, থাপ্পড় মারার ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মেহের উল্লাহ দেওয়ানগঞ্জ থানায় যে মামলা করেছিলেন, ওই মামলাতেই শাহানশাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর দেওয়ানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন মেয়র শাহানশাহ। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মাইকে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন সংগঠনের নাম ঘোষণা করছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ। ওই অনুষ্ঠানে পৌরসভার নাম ঘোষণায় ‘দেরি হওয়ায়’ মেয়র গালাগাল করেন এবং থাপ্পড় মারেন বলে সেদিন অভিযোগ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। পরে তিনি পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
ওই খবরে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মেয়রের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। মেয়রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে পাল্টা মানববন্ধন করে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৯ ডিসেম্বর ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে’ শাহনেওয়াজ শাহানশাহকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা জানায় জেলা আওয়ামী লীগ। তার দুদিন পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে শাহানশাহকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
যৌথ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে মালদ্বীপের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার মালদ্বীপের পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। বাংলাদেশ সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। আমি মালদ্বীপের সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের প্রতি আহ্বান জানাই, যৌথ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী ৫০ বছরের এই উন্নয়নযাত্রায় আমাদের অংশীদার হোন।’
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালদ্বীপের পার্লামেন্ট পিপলস মজলিশে পৌঁছালে স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী পরে দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন এবং স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশ বিচ্ছিন্নভাবে উন্নতি করতে পারে না। কভিড-১৯ মহামারী সবাইকে শিখিয়েছে যে তারা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল এবং একটি উন্নত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বার্থে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে হবে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি পুনর্ব্যক্ত করছি, যেমনটি আমাদের জাতির পিতা বলে গেছেন।’
মালদ্বীপের উন্নয়নের যাত্রা, এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে সফল উত্তরণ প্রত্যক্ষ করে বাংলাদেশ বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরস্পরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ দুদেশই উপকৃত হতে পারে।
২০২১ সালকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য একটি ‘যুগান্তকারী’ বছর হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর দুদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় হয়েছে। ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি এসেছে দুই পক্ষ থেকেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, পর্যটন এবং মানুষে মানুষে সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সংহত করতে পারব।’
শেখ হাসিনা বলেন, দুদেশের আগামী ৫০ বছরের যাত্রা আরও ফলপ্রসূ হবে এবং মানুষের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।
গত মার্চে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
মালদ্বীপের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করবে বিমান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সংযোগ জোরদারে সম্মত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমান ভারতের চেন্নাই হয়ে মালদ্বীপের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ চালু করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চেন্নাই হয়ে মালদ্বীপের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে। আমরা আশা করি যে ফ্লাইট চালুর ফলে দুদেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ এবং পর্যটন সহযোগিতা আদান-প্রদান বৃদ্ধি পাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে। গতকাল মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পিটিএর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগের উন্নয়নে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন।
গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ, মালদ্বীপ সরকারের কাছে ১৩টি সামরিক যান হস্তান্তর এবং বেশ কটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই প্রত্যক্ষ করার পর তিনি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ উন্নয়নের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সলিহের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংলাপের সময় তারা দুদেশের মধ্যে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য ও কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট সলিহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকালে শেখ হাসিনা দুদেশের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ সুবিধার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর আবার জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি।’
আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি এ কথা জানাতে পেরে আনন্দিত যে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলোতে এ পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং ফলাফল সন্তোষজনক পেয়েছি।’
তিনি বলেন, তারা বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা, একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
তিনটি চুক্তি সই : বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত কর পরিহার এবং যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে তিনটি চুক্তি সই এবং একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে উভয় নেতার উপস্থিতিতে গতকাল সকালে এই চুক্তি সই হয়।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমেদ নাসিম দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ওপর সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মালদ্বীপের যুব, ক্রীড়া ও কমিউনিটি ক্ষমতায়নমন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নে সহযোগিতার ওপর নিজ নিজ দেশের পক্ষে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ ছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও কমিশনার-জেনারেল অব ট্যাক্সসেশন অব মালদ্বীপ ইংল্যান্ড রেভেন্যু অথোরিটি (এমআইআরএ) ফাতুহুল্লাহ জামিল মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মধ্যে আয়করের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর বাতিল এবং কর এড়ানো রোধে নিজ নিজ দেশের পক্ষে একটি চুক্তিতে সই করেন।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর নিজ নিজ দেশের পক্ষে একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমেদ নাসিম নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারক বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ শামালের কাছে সামরিক নৌযানের চাবি প্রতীকী হস্তান্তর করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মালেতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে পৌঁছালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেন। এ সময় শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান ও গান স্যালুট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের ‘লাইন অব প্রেজেন্টেশন’ ও পরিদর্শন করেন।
শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন এবং সেখানে ফটো সেশনে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি বিশেষ ফ্লাইটে প্রথমবারের মতো ছয় দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে মালদ্বীপের রাজধানী মালে পৌঁছান।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকের হাতের কবজি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার রাতে ধানীসাফা ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি পাতাকাটা গ্রামে নৌকার পক্ষে প্রচারের সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। কবজি কেটে নেওয়া বিপ্লব ব্যাপারীকে (২৮) মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিপ্লবের কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পাতাকাটা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, ধানীসাফা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হারুন তালুকদার বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী সভা শেষে প্রচারণায় নামেন। এ সময় ফুলঝুড়ি পাতাকাটা এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী (চশমা প্রতীক) মো. রফিকুল ইসলামের সমর্থকরা নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। তখন নৌকার সমর্থক বিপ্লব ব্যাপারীর হাতের কবজি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কেটে ফেলে প্রতিপক্ষরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মো. গাজী তানভীর সাংবাদিকদের জানান, বিপ্লবের বাঁ-হাতের কবজির অর্ধেক অংশ কেটে ঝুলে যায়।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের দাবি, তার সমর্থকরা কারও ওপর হামলা করেনি, উল্টো তার সমর্থকদের তিন-চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে নৌকার সমর্থকরা। এতে তার দুই সমর্থক আহত হয়েছেন।
মঠবাড়িয়া থানার ওসি মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল পাতাকাটা গ্রাম থেকে ফরিদ হালাদার (৫০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। নতুন করে সহিংসতা রোধে ওই নির্বাচনী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন। তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।' তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।' পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।