সমালোচনায় বাতিল সৈকতে নারী-শিশুর ‘বিশেষ এলাকা’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও কক্সবাজার প্রতিনিধি | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ চালুর পর সমালোচনার মুখে তা বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার ওই বিশেষ এলাকার উদ্বোধন করেছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এ পদক্ষেপ নিয়ে গতকাল দিনভর দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর রাত ১০টায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জেলা প্রশাসনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিশেষ এলাকা’ চালুর সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানানো হয়। এর আগে সৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ চালুর পদক্ষেপকে হাস্যকর বলে মত দেন মানবাধিকারকর্মী ও নারীনেত্রীরাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলেন, নারীদের জন্য আলাদা করে এলাকা করার প্রয়োজন নেই। বরং সরকারের উচিত সব পর্যটকের নিরাপত্তায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। এটি হলে এমনিতেই নারী, শিশুসহ সব পর্যটক নিরাপত্তায় থাকবে।
স্বামী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজারে এসে এক নারী পর্যটক ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য গতকাল এই ‘বিশেষ এলাকা’ চালু করে কক্সবাজারের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। যার সভাপতি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। এই বিশেষ এলাকায় রাখা হয় নারী পর্যটকদের জন্য আলাদা ড্রেসিংরুম ও লকাররুম। সৈকতে বেড়াতে আসা নারীরা স্বেচ্ছায় ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল। এজন্য ১০০ থেকে ১৫০ গজ এলাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
তবে এ ধরনের পদক্ষেপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে গতকাল সন্ধ্যায় মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, ‘পর্যটন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় অংশীদার। কক্সবাজার দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা হিসেবে এখানে সরকারের উচিত নিিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফলে সেখানে মেয়েদের জন্য আলাদা করে এলাকা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বরং সরকারের উচিত সব পর্যটকের নিরাপত্তায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। এটি হলে এমনিতে নারী, শিশুসহ সব পর্যটক নিরাপত্তায় থাকবে।’ শুধু কক্সবাজারেরই নয়, দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকায়ও সবার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই ধরনের মত দিয়েছিলেন মানবাধিকারকর্মী বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এলিনা খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কক্সবাজারে যারা যায় তারা পরিবার নিয়ে যায়। এমনকি বিদেশিরাও সেখানে যায়। তারা কি সেখানে গিয়ে আলাদা আলাদা হয়ে যাবে? ফলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত খুবই হাস্যকর। কারণ পর্যটন এলাকায় সবার সমান নিরাপত্তা দরকার। দেখা যাচ্ছে শুধু বিচের মধ্যে নারী ও শিশুর জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছে। তাহলে তারা যখন এর বাইরে থাকবে তখন তাদের কি নিরাপত্তা দরকার হবে না?’
তিনি আরও বলেন, ‘যে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাকে সুরক্ষিত হোটেলে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনকি তার স্বামীর সামনে ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা সবসময়ই লক্ষ করি কোনো অপরাধী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেখা যায় তার বিরুদ্ধে অনেক মামলার তথ্য বেরিয়ে আসছে। আমি মনে করি, দেশের সব থানা সার্চ করা দরকার। যাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ আছে, তাদের আগেই গ্রেপ্তার করা দরকার। কক্সবাজারসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এটা আগে করা জরুরি। সরকারকে মনে রাখতে হবে দেশের পর্যটন খাত দিন দিন বাড়ছে। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।’
‘বিশেষ এলাকা’ চালুর সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গতকাল রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিশেষ জোন নিয়ে সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে এটা বাতিল করা হলো।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গতকাল বিশেষ এলাকার উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেছিলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটন এলাকা নারীবান্ধব করার জন্য সৈকতে নারীদের জন্য বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হলো। এতে নারী পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সৈকত ভ্রমণ করতে পারবেন। সৈকতে নারীদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের বড় একটি অংশে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের মধ্যেও নারী পুলিশ রয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, হোটেল বা গেস্ট হাউজে যেন পর্যটকরা নিরাপদে থাকতে পারেন, সেজন্যও তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। হোটেলকর্মীদের এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও সচেতন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় নারী পর্যটকদের জন্য আলাদা বিশেষ এলাকা করার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সৈকতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারী ও শিশুরা। এবার সেই ঝুঁকি কমবে। পর্যটকদের জন্য আগে থেকেই কাজ করছি। জনবল কম হলেও আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করে যাব।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৈকতে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল। তিনি বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আলাদা জোনেরও দরকার আছে। কারণ অনেকেই একটু আলাদা করে সমুদ্র গোসল করতে চায়, তাদের জন্য এ জোন। নারী ও শিশুর সুরক্ষা-নিরাপত্তা, দুটিই এখানে বাস্তবায়ন করা হতে পারে।’
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেঁধে দেওয়া নির্দেশনাগুলো হলো সব আবাসিক হোটেলে রুম বুকিংয়ের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও জমা, আবাসিক হোটেলগুলোয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতিটি হোটেলে কক্ষসংখ্যা, মূল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা এবং রেস্তোরাঁয় খাবারের মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে প্রদর্শন, প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু অথবা জোরদার করা, শহর এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের কক্ষ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন, হোটেল-মোটেল বা গেস্ট হাউজে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং সব হোটেল-রেস্তোরাঁর নিবন্ধন।
গত ২২ ডিসেম্বর রাতে স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসা এক নারী ধর্ষণের শিকার হন। এরপর থেকে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও কক্সবাজার প্রতিনিধি | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ চালুর পর সমালোচনার মুখে তা বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার ওই বিশেষ এলাকার উদ্বোধন করেছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এ পদক্ষেপ নিয়ে গতকাল দিনভর দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর রাত ১০টায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জেলা প্রশাসনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিশেষ এলাকা’ চালুর সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানানো হয়। এর আগে সৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ চালুর পদক্ষেপকে হাস্যকর বলে মত দেন মানবাধিকারকর্মী ও নারীনেত্রীরাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলেন, নারীদের জন্য আলাদা করে এলাকা করার প্রয়োজন নেই। বরং সরকারের উচিত সব পর্যটকের নিরাপত্তায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। এটি হলে এমনিতেই নারী, শিশুসহ সব পর্যটক নিরাপত্তায় থাকবে।
স্বামী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজারে এসে এক নারী পর্যটক ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য গতকাল এই ‘বিশেষ এলাকা’ চালু করে কক্সবাজারের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। যার সভাপতি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। এই বিশেষ এলাকায় রাখা হয় নারী পর্যটকদের জন্য আলাদা ড্রেসিংরুম ও লকাররুম। সৈকতে বেড়াতে আসা নারীরা স্বেচ্ছায় ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল। এজন্য ১০০ থেকে ১৫০ গজ এলাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
তবে এ ধরনের পদক্ষেপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে গতকাল সন্ধ্যায় মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, ‘পর্যটন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় অংশীদার। কক্সবাজার দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা হিসেবে এখানে সরকারের উচিত নিিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফলে সেখানে মেয়েদের জন্য আলাদা করে এলাকা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বরং সরকারের উচিত সব পর্যটকের নিরাপত্তায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। এটি হলে এমনিতে নারী, শিশুসহ সব পর্যটক নিরাপত্তায় থাকবে।’ শুধু কক্সবাজারেরই নয়, দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকায়ও সবার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই ধরনের মত দিয়েছিলেন মানবাধিকারকর্মী বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এলিনা খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কক্সবাজারে যারা যায় তারা পরিবার নিয়ে যায়। এমনকি বিদেশিরাও সেখানে যায়। তারা কি সেখানে গিয়ে আলাদা আলাদা হয়ে যাবে? ফলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত খুবই হাস্যকর। কারণ পর্যটন এলাকায় সবার সমান নিরাপত্তা দরকার। দেখা যাচ্ছে শুধু বিচের মধ্যে নারী ও শিশুর জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছে। তাহলে তারা যখন এর বাইরে থাকবে তখন তাদের কি নিরাপত্তা দরকার হবে না?’
তিনি আরও বলেন, ‘যে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাকে সুরক্ষিত হোটেলে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনকি তার স্বামীর সামনে ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা সবসময়ই লক্ষ করি কোনো অপরাধী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেখা যায় তার বিরুদ্ধে অনেক মামলার তথ্য বেরিয়ে আসছে। আমি মনে করি, দেশের সব থানা সার্চ করা দরকার। যাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ আছে, তাদের আগেই গ্রেপ্তার করা দরকার। কক্সবাজারসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এটা আগে করা জরুরি। সরকারকে মনে রাখতে হবে দেশের পর্যটন খাত দিন দিন বাড়ছে। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।’
‘বিশেষ এলাকা’ চালুর সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গতকাল রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিশেষ জোন নিয়ে সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে এটা বাতিল করা হলো।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গতকাল বিশেষ এলাকার উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেছিলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটন এলাকা নারীবান্ধব করার জন্য সৈকতে নারীদের জন্য বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হলো। এতে নারী পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সৈকত ভ্রমণ করতে পারবেন। সৈকতে নারীদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের বড় একটি অংশে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের মধ্যেও নারী পুলিশ রয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, হোটেল বা গেস্ট হাউজে যেন পর্যটকরা নিরাপদে থাকতে পারেন, সেজন্যও তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। হোটেলকর্মীদের এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও সচেতন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় নারী পর্যটকদের জন্য আলাদা বিশেষ এলাকা করার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সৈকতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারী ও শিশুরা। এবার সেই ঝুঁকি কমবে। পর্যটকদের জন্য আগে থেকেই কাজ করছি। জনবল কম হলেও আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করে যাব।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৈকতে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল। তিনি বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আলাদা জোনেরও দরকার আছে। কারণ অনেকেই একটু আলাদা করে সমুদ্র গোসল করতে চায়, তাদের জন্য এ জোন। নারী ও শিশুর সুরক্ষা-নিরাপত্তা, দুটিই এখানে বাস্তবায়ন করা হতে পারে।’
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেঁধে দেওয়া নির্দেশনাগুলো হলো সব আবাসিক হোটেলে রুম বুকিংয়ের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও জমা, আবাসিক হোটেলগুলোয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতিটি হোটেলে কক্ষসংখ্যা, মূল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা এবং রেস্তোরাঁয় খাবারের মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে প্রদর্শন, প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু অথবা জোরদার করা, শহর এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের কক্ষ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন, হোটেল-মোটেল বা গেস্ট হাউজে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং সব হোটেল-রেস্তোরাঁর নিবন্ধন।
গত ২২ ডিসেম্বর রাতে স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসা এক নারী ধর্ষণের শিকার হন। এরপর থেকে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা।