ধানমন্ডিতে ডিএসসিসির উচ্ছেদে গণপূর্ত ‘নাখোশ’
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ৪-৫ বছর ধরে ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন সরকারি বাসায় বসবাস করেন। গত ৪ জানুযারি কর্মস্থল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় দাপ্তরিক কাজ করছিলেন তিনি। ওই সময় বাসা থেকে ফোন আসে তাদের বাড়িটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক এই কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু উচ্ছেদ বন্ধ করতে পারেননি।
গণপূর্ত ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়ম মেনে ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন গণপূর্ত অধিদপ্তরের আবাসিক বাসা বরাদ্দ পেয়েছি। বিধিমতে আমার মাসিক বেতন থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ভাড়াও কেটে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কোনো ধরনের নোটিস না দিয়ে আমার বাসা ভেঙে দেওয়া হলো।’ তিনি বলেন, ‘গণপূর্তের জমিতে আমাদের নিজস্ব স্থাপনা। এগুলো করা হয়েছে সরকারি দপ্তরের সব বিধিবিধান মেনে। এখানে অন্য একটি সংস্থা এভাবে ভেঙে দিতে পারে তা ভাবতে পারিনি। এটা নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে একটা আলোচনা হতে পারত।’
এ বিষয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেখানে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ চালিয়েছে তা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিজস্ব সম্পত্তি। যেখানে আমার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা-বাড়ি ছিল। আমরা যখন অন্য মাধ্যমে জানতে পেরেছি এখানে করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে; তখন তাদেরকে (সিটি করপোরেশন) চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এসব আমলে না নিয়ে একটি অসম্মানজনক উচ্ছেদ অভিযান করলেন। আমার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বাসাবাড়িতে থাকা অবস্থায় এমন উচ্ছেদ মোটেও কাম্য নয়।’
তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহাম্মদ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধানমন্ডি লেকপাড়ে উচ্ছেদ অভিযান নিয়মতান্ত্রিকভাবেই পরিচালিত হয়েছে। এখানে জমির মালিক কে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। সিটি করপোরেশন মূলত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যন বাস্তবায়ন করছে। যেখানে মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে থাকা যত স্থাপনা আছে সব উচ্ছেদ করা হচ্ছে।’
গণপূর্তের চিঠি প্রসঙ্গে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। এরপর গণপূর্তের সচিবের সঙ্গে আমাদের মেয়র মহোদয়ের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এখানে কাউকে পাশ কাটিয়ে বা না জানিয়ে উচ্ছেদ করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। সিটি করপোরেশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য আর কোনো অবৈধ স্থাপনা যদি থাকে ভবিষ্যতে তাও উচ্ছেদ করা হবে।’
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা সবকিছু মেনেই করা হয়েছে।’
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, ধানমন্ডি লেকের হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) দখল করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীদের অনুমোদনহীন ও অবৈধভাবে নির্মিত একটি আধাপাকা ভবন উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন। এ উচ্ছেদ অভিযানে আধাপাকা এই ভবনের ৩৫টি কক্ষ উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা নাজনীন, সম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিফা খান ও আবদুস সামাদ উপস্থিত ছিলেন। তাদের নেতৃত্বে অবৈধ ও অনুমোদনহীন এই অবকাঠামোগুলোই উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভবনের প্রায় ৩৫টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
অভিযান বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ধানমন্ডি লেক ঘিরে জনগণের হাঁটার পথ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আমরা অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে লেকের জায়গা দখল করে নির্মিত সব স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করি। সে সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীদের অনুমোদনহীন ও অবৈধ ভবনে বসবাসরত বাসিন্দারা ১৫ দিন সময় চান। সেখানকার বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ইতিমধ্যে সেখান থেকে সরে গেলেও তাদের বিদ্যমান অবৈধ অবকাঠামো থেকে যায়। ফলে ওয়াকওয়ে সৃষ্টির কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এমতাবস্থায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
গণপূর্তের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ঢাকা সার্কেল-১) মো. জামিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনকে লেকের যে জায়গাটুকু লিজ দিয়েছি; তারা সেটুকু রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বরাদ্দের শর্তানুযায়ী সেখানে যেকোনো ধরনের উন্নয়ন কাজ করতে হলেও গণপূর্তের পূর্বানুমতি নেওয়ার কথা। কিন্তু তাও তারা করেননি; উল্টো আমাদের জায়গা থেকে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বললেও তারা তা মানেননি।’
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ৪-৫ বছর ধরে ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন সরকারি বাসায় বসবাস করেন। গত ৪ জানুযারি কর্মস্থল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় দাপ্তরিক কাজ করছিলেন তিনি। ওই সময় বাসা থেকে ফোন আসে তাদের বাড়িটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক এই কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু উচ্ছেদ বন্ধ করতে পারেননি।
গণপূর্ত ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়ম মেনে ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন গণপূর্ত অধিদপ্তরের আবাসিক বাসা বরাদ্দ পেয়েছি। বিধিমতে আমার মাসিক বেতন থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ভাড়াও কেটে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কোনো ধরনের নোটিস না দিয়ে আমার বাসা ভেঙে দেওয়া হলো।’ তিনি বলেন, ‘গণপূর্তের জমিতে আমাদের নিজস্ব স্থাপনা। এগুলো করা হয়েছে সরকারি দপ্তরের সব বিধিবিধান মেনে। এখানে অন্য একটি সংস্থা এভাবে ভেঙে দিতে পারে তা ভাবতে পারিনি। এটা নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে একটা আলোচনা হতে পারত।’
এ বিষয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেখানে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ চালিয়েছে তা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিজস্ব সম্পত্তি। যেখানে আমার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা-বাড়ি ছিল। আমরা যখন অন্য মাধ্যমে জানতে পেরেছি এখানে করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে; তখন তাদেরকে (সিটি করপোরেশন) চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এসব আমলে না নিয়ে একটি অসম্মানজনক উচ্ছেদ অভিযান করলেন। আমার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বাসাবাড়িতে থাকা অবস্থায় এমন উচ্ছেদ মোটেও কাম্য নয়।’
তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহাম্মদ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধানমন্ডি লেকপাড়ে উচ্ছেদ অভিযান নিয়মতান্ত্রিকভাবেই পরিচালিত হয়েছে। এখানে জমির মালিক কে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। সিটি করপোরেশন মূলত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যন বাস্তবায়ন করছে। যেখানে মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে থাকা যত স্থাপনা আছে সব উচ্ছেদ করা হচ্ছে।’
গণপূর্তের চিঠি প্রসঙ্গে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। এরপর গণপূর্তের সচিবের সঙ্গে আমাদের মেয়র মহোদয়ের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এখানে কাউকে পাশ কাটিয়ে বা না জানিয়ে উচ্ছেদ করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। সিটি করপোরেশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য আর কোনো অবৈধ স্থাপনা যদি থাকে ভবিষ্যতে তাও উচ্ছেদ করা হবে।’
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা সবকিছু মেনেই করা হয়েছে।’
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, ধানমন্ডি লেকের হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) দখল করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীদের অনুমোদনহীন ও অবৈধভাবে নির্মিত একটি আধাপাকা ভবন উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন। এ উচ্ছেদ অভিযানে আধাপাকা এই ভবনের ৩৫টি কক্ষ উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা নাজনীন, সম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিফা খান ও আবদুস সামাদ উপস্থিত ছিলেন। তাদের নেতৃত্বে অবৈধ ও অনুমোদনহীন এই অবকাঠামোগুলোই উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভবনের প্রায় ৩৫টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
অভিযান বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ধানমন্ডি লেক ঘিরে জনগণের হাঁটার পথ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আমরা অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে লেকের জায়গা দখল করে নির্মিত সব স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করি। সে সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীদের অনুমোদনহীন ও অবৈধ ভবনে বসবাসরত বাসিন্দারা ১৫ দিন সময় চান। সেখানকার বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ইতিমধ্যে সেখান থেকে সরে গেলেও তাদের বিদ্যমান অবৈধ অবকাঠামো থেকে যায়। ফলে ওয়াকওয়ে সৃষ্টির কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এমতাবস্থায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
গণপূর্তের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ঢাকা সার্কেল-১) মো. জামিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনকে লেকের যে জায়গাটুকু লিজ দিয়েছি; তারা সেটুকু রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বরাদ্দের শর্তানুযায়ী সেখানে যেকোনো ধরনের উন্নয়ন কাজ করতে হলেও গণপূর্তের পূর্বানুমতি নেওয়ার কথা। কিন্তু তাও তারা করেননি; উল্টো আমাদের জায়গা থেকে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বললেও তারা তা মানেননি।’