ইসি নিয়োগ সার্চ কমিটির মাধ্যমেই
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগের জন্য আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটির মাধ্যমে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। খসড়া আইনে পূর্বের সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে ভবিষ্যতে এ ধরনের আইন করার কথা বারবার বলা হলেও আগামী মাসে ইসি পুনর্গঠনের আগেই আচমকা এ আইনের খসড়া করে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত আইনের সম্ভাব্য কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিইসি ও কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। ছয় সদস্যের এ অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
এসব পদে নিয়োগে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধাসরকারি বা বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে কেউ অপ্রকৃতস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হলে, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্খলন এবং সে ক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ে দন্ডিত হলে। রাষ্ট্রীয় পদে থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে পারবেন না। ইসি থেকে সিইসি হওয়া যাবে। কিন্তু একবার সিইসি হলে দ্বিতীয়বার আর একই পদে বিবেচিত হবে না।
আইন ভাঙলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ কীভাবে হবে তাও আইনে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যেভাবে অপসারণ হন, একই পদ্ধতিতে সিইসি ও ইসি অপসারিত হবেন। বাকিগুলো নিয়মকানুন বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার চাচ্ছে আগামী মাসে নতুন ইসি গঠন করা হবে প্রস্তাবিত আইনের আওতায়। এর আগেই সংসদে আইনটি পাস করানো হবে। একই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবও।
চলমান ইসি পুনর্গঠন এ আইনের অধীনে হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আশা করা যায়, এই আইনই চূড়ান্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। যদি এর মধ্যে হয়ে যায়, তাহলে হবে। আজ (গতকাল) অনুমোদন দেওয়া হলো, হয়তো কাল-পরশু দুদিন লাগবে আইন মন্ত্রণালয়ের। তারপর সংসদেও কয়েক দিন লাগবে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে, ওনারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।’
খসড়া আইনে বর্তমান এবং পূর্ববর্তী সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটা খসড়া আইন জমা দিয়েছিলাম। সেটা আমলে নেওয়া হয়নি। যাই হোক আমরা যতটুকু জেনেছি তাতে খসড়া আইনে পূর্ববর্তী সব কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক নয়। আগের কমিশন আমাদের ভোটাধিকার হরণ করেছে। সেসব কমিশনের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব তদন্ত করে বিচারের দাবি উঠেছে। অতীতের ইসিগুলোর বৈধতা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
দুর্নীতি দমন কমিশন আইনেও কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের নিয়োগের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান আছে। এর আলোকেই সিইসি এবং ইসি খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।
কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন গত ৫০ বছরেও হয়নি। গত এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে প্রথমবার গঠিত সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, পিএসসির চেয়ারম্যান ও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পদধারী ওই কমিটিতে ছিলেন। দ্বিতীয়বার গঠিত সার্চ কমিটিতে উপরোক্ত চারজনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। দুবারই গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
কেএম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেজন্য গত দুবারের মতো এবারও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছেন। প্রায় সব দলই সেখানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে। কয়েকটি দল নতুন সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করলেও কোনো কোনো দল বলেছে এ প্রক্রিয়ার ‘কোনো দরকার নেই’।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ আইন করা না করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রস্তাবিত এ আইন করা হলেও সাধারণ মানুষের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হবে না।’
ইসি পুনর্গঠন নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতকাল সংলাপে অংশ নিয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ২৩টি দল অংশ নেয়। এগুলো হচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বিকল্পধারা, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফ্রন্ট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও এনপিপি।
তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলীম লীগ।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগের জন্য আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটির মাধ্যমে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। খসড়া আইনে পূর্বের সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে ভবিষ্যতে এ ধরনের আইন করার কথা বারবার বলা হলেও আগামী মাসে ইসি পুনর্গঠনের আগেই আচমকা এ আইনের খসড়া করে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত আইনের সম্ভাব্য কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিইসি ও কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। ছয় সদস্যের এ অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
এসব পদে নিয়োগে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধাসরকারি বা বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে কেউ অপ্রকৃতস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হলে, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্খলন এবং সে ক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ে দন্ডিত হলে। রাষ্ট্রীয় পদে থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে পারবেন না। ইসি থেকে সিইসি হওয়া যাবে। কিন্তু একবার সিইসি হলে দ্বিতীয়বার আর একই পদে বিবেচিত হবে না।
আইন ভাঙলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ কীভাবে হবে তাও আইনে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যেভাবে অপসারণ হন, একই পদ্ধতিতে সিইসি ও ইসি অপসারিত হবেন। বাকিগুলো নিয়মকানুন বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার চাচ্ছে আগামী মাসে নতুন ইসি গঠন করা হবে প্রস্তাবিত আইনের আওতায়। এর আগেই সংসদে আইনটি পাস করানো হবে। একই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবও।
চলমান ইসি পুনর্গঠন এ আইনের অধীনে হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আশা করা যায়, এই আইনই চূড়ান্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। যদি এর মধ্যে হয়ে যায়, তাহলে হবে। আজ (গতকাল) অনুমোদন দেওয়া হলো, হয়তো কাল-পরশু দুদিন লাগবে আইন মন্ত্রণালয়ের। তারপর সংসদেও কয়েক দিন লাগবে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে, ওনারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।’
খসড়া আইনে বর্তমান এবং পূর্ববর্তী সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটা খসড়া আইন জমা দিয়েছিলাম। সেটা আমলে নেওয়া হয়নি। যাই হোক আমরা যতটুকু জেনেছি তাতে খসড়া আইনে পূর্ববর্তী সব কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক নয়। আগের কমিশন আমাদের ভোটাধিকার হরণ করেছে। সেসব কমিশনের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব তদন্ত করে বিচারের দাবি উঠেছে। অতীতের ইসিগুলোর বৈধতা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
দুর্নীতি দমন কমিশন আইনেও কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের নিয়োগের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান আছে। এর আলোকেই সিইসি এবং ইসি খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।
কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন গত ৫০ বছরেও হয়নি। গত এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে প্রথমবার গঠিত সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, পিএসসির চেয়ারম্যান ও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পদধারী ওই কমিটিতে ছিলেন। দ্বিতীয়বার গঠিত সার্চ কমিটিতে উপরোক্ত চারজনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। দুবারই গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
কেএম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেজন্য গত দুবারের মতো এবারও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছেন। প্রায় সব দলই সেখানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে। কয়েকটি দল নতুন সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করলেও কোনো কোনো দল বলেছে এ প্রক্রিয়ার ‘কোনো দরকার নেই’।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ আইন করা না করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রস্তাবিত এ আইন করা হলেও সাধারণ মানুষের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হবে না।’
ইসি পুনর্গঠন নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতকাল সংলাপে অংশ নিয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ২৩টি দল অংশ নেয়। এগুলো হচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বিকল্পধারা, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফ্রন্ট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও এনপিপি।
তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলীম লীগ।