সব রেকর্ড ছাড়ানোর শঙ্কা
প্রতীক ইজাজ | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
চার সপ্তাহ আগেও (২০-২৬ ডিসেম্বর ২০২১) দেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ কোনো জেলা ছিল না। মাত্র একটি জেলা লালমনিরহাট ছিল সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সেখানে শনাক্ত হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ মানচিত্রে গোটা দেশ দেখাচ্ছিল সবুজ রঙের; অর্থাৎ ঝুঁকিমুক্ত বা ক্ষীণ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে।
চার সপ্তাহ পর সংক্রমণ পরিস্থিতি বদলে গেছে পুরোপুরি। এখন দেশের ১২ জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব জেলায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ হার দাঁড়িয়েছে ঢাকায় ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ ও সর্বনিম্ন পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এমনকি সাত দিন আগেও ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো মাত্র দুটি জেলা ঢাকা ও রাঙ্গামাটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এই দুই জেলায় সংক্রমণের হার ছিল ১০-১৯ শতাংশের মধ্যে। সাত দিন পর গতকাল বুধবার নতুন করে আরও ১০ জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সাত দিনে ১২ জেলা করোনা সংক্রমণের ‘রেড জোন’ বা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল।
অন্যদিকে, চার সপ্তাহ ধরেই করোনার সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে চলতি সপ্তাহে তা আরও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। শেষ সপ্তাহে (১০-১৬ জানুয়ারি) রোগী বেড়েছে তার আগের সপ্তাহের (৩-৯ জানুয়ারি) ২৩১ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে তিন গুণ। আগের সপ্তাহে যেখানে দৈনিক রোগী ছিল ১ হাজার ৩৩, চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ জনে। এ সময় বেড়েছে মৃত্যুর হার। আগের সপ্তাহে যেখানে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের, সেখানে চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ জনে; অর্থাৎ এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।
এমন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫০০, মারা গেছে ১২ জন এবং শনাক্ত হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ; অর্থাৎ এর আগের দিনের চেয়ে গতকাল রোগী বেড়েছে ১ হাজার ৯৩ জন, মৃত্যু বেড়েছে ২ ও শনাক্ত হার বেড়েছে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
করোনার এমন ঊর্ধ্বগতিকে ভয়াবহ বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে এবার সংক্রমণ সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে এ মাসের শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে দৈনিক ৪০-৫০ হাজার করে রোগী শনাক্ত হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। এ সময় (১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি) করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এটা নিশ্চিত যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণেই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এটা বহুগুণ বাড়বে। এমনকি দেশের সবশেষ সর্বোচ্চ যে পরিমাণ করোনা সংক্রমণ হয়েছিল, এবার সেটাও বহুগুণ ছাড়িয়ে যাবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গতকাল পাঁচ দফা পরামর্শ দিয়েছে; বিশেষ করে কমিটি করোনা পজিটিভ রোগীদের লক্ষণ প্রকাশের ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে ও করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তি যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তাদের কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা এত দিন করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উদ্যোগগুলো নতুন করে বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যানবাহনের মাধ্যমে ও মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে যানবাহনসহ সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কঠোর হতে হবে; বিশেষ করে জনসমাগম বন্ধ করতে হবে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নতুন আরও ১০ জেলা : সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো দেশের দুটি জেলা ঢাকা ও রাঙ্গামাটিকে করোনা সংক্রমণের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মাত্র সাত দিনের মাথায় গতকাল বুধবার নতুন আরও ১০ জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তর। এর ফলে বর্তমানে দেশের ১২ জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রূপ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ১০-১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জেলাগুলোকে তারা অত্যন্ত, মধ্যম ও ক্ষীণ বা স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করে যথাক্রমে রেড বা লাল, ইয়েলো বা হলুদ ও গ্রিন বা সবুজ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এ-সংক্রান্ত ড্যাশবোর্ডে দেখা গেছে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি হলে তা লাল এবং শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে অধিকতর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করছে অধিদপ্তর।
গতকাল যে ১০ জেলাকে নতুন করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম, গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়।
৩২ জেলাকে মধ্যম ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও।
উচ্চঝুঁকির জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। মাঝারি ঝুঁকির তালিকায় থাকা জেলাগুলোতে এই হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ। আর যেসব জেলায় শনাক্ত ৫ শতাংশের কম, সেগুলো কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।
বাকি ১৬ জেলা ক্ষীণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকাকে সবুজ জোনে ফেলা হয়েছে, যা ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঢাকায় : এখন পর্যন্ত যে ১২ জেলাকে করোনা সংক্রমণের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঢাকায়, ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। দুই সপ্তাহে এখানে শনাক্ত হার বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
এরপর সর্বোচ্চ সংক্রমণ চট্টগ্রামে, ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এখানে এক সপ্তাহে শনাক্ত হার বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
অন্য ১০ জেলায় সংক্রমণ হার রাজশাহীতে ১৫, বান্দরবানে ১৪, রাঙ্গামাটিতে ১৩, বগুড়ায় ১২, কুষ্টিয়ায় ১১ দশমিক ৩৮, দিনাজপুরে ১১ দশমিক ২৬, যশোরে ১১ দশমিক ২১, লালমনিরহাটে ১১, গাজীপুরে ১০ দশমিক ৪৯ ও পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এই ১০ জেলায় এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৮ ও সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইয়েলো জোন, অর্থাৎ মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোয় শনাক্তের হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ।
গ্রিন জোনে থাকা জেলার মধ্যে আছে কুমিল্লা, চাঁদপুর, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর। এসব জেলার শনাক্তের হার শূন্য থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।
বান্দরবান জেলায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ হলেও একে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়নি, কারণ এ জেলায় খুব কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের এই হার পাওয়া গেছে।
এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ২৩১ শতাংশ : চার সপ্তাহ ধরেই দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বাড়ার হার ধীরগতির হলেও এ বছরের শুরু থেকেই তা ঊর্ধ্বগতিতে রূপ নেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ৫১তম সপ্তাহে (২০-২৬ ডিসেম্বর) তার আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৭০ জন। দৈনিক গড় রোগী ছিল ৩১০ জন। পরের সপ্তাহে (২৭ ডিসেম্বর-২ জানুয়ারি) আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বেড়েছে ১৫ শতাংশ ও দৈনিক গড় রোগী হয়েছে ৪৫৯ জন। সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ।
এর পরের সপ্তাহে, অর্থাৎ এ বছরের প্রথম সপ্তাহে (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে) তার আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। মোট শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২৩৪ জন ও দৈনিক গড় রোগী ছিল ১ হাজার ৩৩ জন, অর্থাৎ দেড় গুণ থেকে সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই গুণ।
সর্বশেষ সপ্তাহে (১০-১৬ জানুয়ারি) রোগী বেড়েছে আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৩২ শতাংশ বেশি। সাপ্তাহিক শনাক্ত ৭ হাজার রোগী বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজারের বেশি, অর্থাৎ দৈনিক গড় রোগী ছিল ৩ হাজার ৪৩০ জন। এ সময় সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। এমনকি মৃত্যু বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি। এ সপ্তাহে মোট মারা গেছে ৪২ জন, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২৫ জন।
অবশ্য ১২-১৮ জানুয়ারি সাত দিনে তার আগের সাত দিনের তুলনায় ২২৮ শতাংশ রোগী ও মৃত্যু ১৮৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহে দেশে ২৭ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। সাত দিনে ২ লাখ ৩ হাজার ১২২টি পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় সাত দিনে সাড়ে ১০ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ২২৮ শতাংশ রোগী বেড়েছে। শনাক্ত, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা শনাক্ত বাড়লেও হাসপাতালে রোগী বাড়েনি। তবে এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে করোনার ওমিক্রন ধরনের। পাশের দেশেও ওমিক্রন বেশি ছড়াচ্ছে। সাধারণত কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) এলে সেটি পুরনো ধরনকে প্রতিস্থাপন করে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করোনার ডেলটার ধরনই বেশি ছড়াচ্ছে। গত বছর করোনার ডেলটা ধরনের তাণ্ডব দেখা গেছে। তাই অসতর্ক হওয়ার সুযোগ নেই।
দৈনিক ৪০-৫০ হাজার রোগী হতে পারে : এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই সংক্রমণের গতি আরও বাড়বে। তখন প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হতে পারে। সারা দেশে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। প্রতি সপ্তাহে যদি দ্বিগুণ রোগী শনাক্ত হয় তাহলে এটা বেশিদিন সময় লাগবে না।
তবে মৃত্যু বাড়বে কি না, সেটা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু সবাই টিকা পায়নি, তাই মৃত্যুর সংখ্যাটা ডেলটার মতো না হলেও তুলনামূলক অনেক বাড়বে।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, দেশে এ দফায় সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়ায় কবে উঠবে, তা ঠিক বলা যায় না। তবে যে গতিতে বাড়ছে, চূড়ায় উঠে পড়লে তা নামতেও বেশি সময় লাগবে না। যেমন বেগে উঠবে তার চেয়েও বেশি বেগে নামবে, এটা ওমিক্রনের বৈশিষ্ট্য।
শেয়ার করুন
প্রতীক ইজাজ | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

চার সপ্তাহ আগেও (২০-২৬ ডিসেম্বর ২০২১) দেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ কোনো জেলা ছিল না। মাত্র একটি জেলা লালমনিরহাট ছিল সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সেখানে শনাক্ত হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ মানচিত্রে গোটা দেশ দেখাচ্ছিল সবুজ রঙের; অর্থাৎ ঝুঁকিমুক্ত বা ক্ষীণ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে।
চার সপ্তাহ পর সংক্রমণ পরিস্থিতি বদলে গেছে পুরোপুরি। এখন দেশের ১২ জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব জেলায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ হার দাঁড়িয়েছে ঢাকায় ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ ও সর্বনিম্ন পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এমনকি সাত দিন আগেও ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো মাত্র দুটি জেলা ঢাকা ও রাঙ্গামাটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এই দুই জেলায় সংক্রমণের হার ছিল ১০-১৯ শতাংশের মধ্যে। সাত দিন পর গতকাল বুধবার নতুন করে আরও ১০ জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সাত দিনে ১২ জেলা করোনা সংক্রমণের ‘রেড জোন’ বা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল।
অন্যদিকে, চার সপ্তাহ ধরেই করোনার সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে চলতি সপ্তাহে তা আরও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। শেষ সপ্তাহে (১০-১৬ জানুয়ারি) রোগী বেড়েছে তার আগের সপ্তাহের (৩-৯ জানুয়ারি) ২৩১ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে তিন গুণ। আগের সপ্তাহে যেখানে দৈনিক রোগী ছিল ১ হাজার ৩৩, চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ জনে। এ সময় বেড়েছে মৃত্যুর হার। আগের সপ্তাহে যেখানে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের, সেখানে চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ জনে; অর্থাৎ এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।
এমন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫০০, মারা গেছে ১২ জন এবং শনাক্ত হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ; অর্থাৎ এর আগের দিনের চেয়ে গতকাল রোগী বেড়েছে ১ হাজার ৯৩ জন, মৃত্যু বেড়েছে ২ ও শনাক্ত হার বেড়েছে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
করোনার এমন ঊর্ধ্বগতিকে ভয়াবহ বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে এবার সংক্রমণ সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে এ মাসের শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে দৈনিক ৪০-৫০ হাজার করে রোগী শনাক্ত হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। এ সময় (১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি) করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এটা নিশ্চিত যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণেই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এটা বহুগুণ বাড়বে। এমনকি দেশের সবশেষ সর্বোচ্চ যে পরিমাণ করোনা সংক্রমণ হয়েছিল, এবার সেটাও বহুগুণ ছাড়িয়ে যাবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গতকাল পাঁচ দফা পরামর্শ দিয়েছে; বিশেষ করে কমিটি করোনা পজিটিভ রোগীদের লক্ষণ প্রকাশের ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে ও করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তি যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তাদের কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা এত দিন করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উদ্যোগগুলো নতুন করে বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যানবাহনের মাধ্যমে ও মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে যানবাহনসহ সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কঠোর হতে হবে; বিশেষ করে জনসমাগম বন্ধ করতে হবে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নতুন আরও ১০ জেলা : সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো দেশের দুটি জেলা ঢাকা ও রাঙ্গামাটিকে করোনা সংক্রমণের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মাত্র সাত দিনের মাথায় গতকাল বুধবার নতুন আরও ১০ জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তর। এর ফলে বর্তমানে দেশের ১২ জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রূপ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ১০-১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জেলাগুলোকে তারা অত্যন্ত, মধ্যম ও ক্ষীণ বা স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করে যথাক্রমে রেড বা লাল, ইয়েলো বা হলুদ ও গ্রিন বা সবুজ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এ-সংক্রান্ত ড্যাশবোর্ডে দেখা গেছে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি হলে তা লাল এবং শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে অধিকতর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করছে অধিদপ্তর।
গতকাল যে ১০ জেলাকে নতুন করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম, গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়।
৩২ জেলাকে মধ্যম ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও।
উচ্চঝুঁকির জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। মাঝারি ঝুঁকির তালিকায় থাকা জেলাগুলোতে এই হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ। আর যেসব জেলায় শনাক্ত ৫ শতাংশের কম, সেগুলো কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।
বাকি ১৬ জেলা ক্ষীণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকাকে সবুজ জোনে ফেলা হয়েছে, যা ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঢাকায় : এখন পর্যন্ত যে ১২ জেলাকে করোনা সংক্রমণের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঢাকায়, ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। দুই সপ্তাহে এখানে শনাক্ত হার বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
এরপর সর্বোচ্চ সংক্রমণ চট্টগ্রামে, ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এখানে এক সপ্তাহে শনাক্ত হার বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
অন্য ১০ জেলায় সংক্রমণ হার রাজশাহীতে ১৫, বান্দরবানে ১৪, রাঙ্গামাটিতে ১৩, বগুড়ায় ১২, কুষ্টিয়ায় ১১ দশমিক ৩৮, দিনাজপুরে ১১ দশমিক ২৬, যশোরে ১১ দশমিক ২১, লালমনিরহাটে ১১, গাজীপুরে ১০ দশমিক ৪৯ ও পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এই ১০ জেলায় এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৮ ও সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইয়েলো জোন, অর্থাৎ মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোয় শনাক্তের হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ।
গ্রিন জোনে থাকা জেলার মধ্যে আছে কুমিল্লা, চাঁদপুর, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর। এসব জেলার শনাক্তের হার শূন্য থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।
বান্দরবান জেলায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ হলেও একে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়নি, কারণ এ জেলায় খুব কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের এই হার পাওয়া গেছে।
এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ২৩১ শতাংশ : চার সপ্তাহ ধরেই দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বাড়ার হার ধীরগতির হলেও এ বছরের শুরু থেকেই তা ঊর্ধ্বগতিতে রূপ নেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ৫১তম সপ্তাহে (২০-২৬ ডিসেম্বর) তার আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৭০ জন। দৈনিক গড় রোগী ছিল ৩১০ জন। পরের সপ্তাহে (২৭ ডিসেম্বর-২ জানুয়ারি) আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বেড়েছে ১৫ শতাংশ ও দৈনিক গড় রোগী হয়েছে ৪৫৯ জন। সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ।
এর পরের সপ্তাহে, অর্থাৎ এ বছরের প্রথম সপ্তাহে (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে) তার আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। মোট শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২৩৪ জন ও দৈনিক গড় রোগী ছিল ১ হাজার ৩৩ জন, অর্থাৎ দেড় গুণ থেকে সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই গুণ।
সর্বশেষ সপ্তাহে (১০-১৬ জানুয়ারি) রোগী বেড়েছে আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৩২ শতাংশ বেশি। সাপ্তাহিক শনাক্ত ৭ হাজার রোগী বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজারের বেশি, অর্থাৎ দৈনিক গড় রোগী ছিল ৩ হাজার ৪৩০ জন। এ সময় সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। এমনকি মৃত্যু বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি। এ সপ্তাহে মোট মারা গেছে ৪২ জন, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২৫ জন।
অবশ্য ১২-১৮ জানুয়ারি সাত দিনে তার আগের সাত দিনের তুলনায় ২২৮ শতাংশ রোগী ও মৃত্যু ১৮৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহে দেশে ২৭ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। সাত দিনে ২ লাখ ৩ হাজার ১২২টি পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় সাত দিনে সাড়ে ১০ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ২২৮ শতাংশ রোগী বেড়েছে। শনাক্ত, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা শনাক্ত বাড়লেও হাসপাতালে রোগী বাড়েনি। তবে এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে করোনার ওমিক্রন ধরনের। পাশের দেশেও ওমিক্রন বেশি ছড়াচ্ছে। সাধারণত কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) এলে সেটি পুরনো ধরনকে প্রতিস্থাপন করে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করোনার ডেলটার ধরনই বেশি ছড়াচ্ছে। গত বছর করোনার ডেলটা ধরনের তাণ্ডব দেখা গেছে। তাই অসতর্ক হওয়ার সুযোগ নেই।
দৈনিক ৪০-৫০ হাজার রোগী হতে পারে : এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই সংক্রমণের গতি আরও বাড়বে। তখন প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হতে পারে। সারা দেশে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। প্রতি সপ্তাহে যদি দ্বিগুণ রোগী শনাক্ত হয় তাহলে এটা বেশিদিন সময় লাগবে না।
তবে মৃত্যু বাড়বে কি না, সেটা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু সবাই টিকা পায়নি, তাই মৃত্যুর সংখ্যাটা ডেলটার মতো না হলেও তুলনামূলক অনেক বাড়বে।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, দেশে এ দফায় সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়ায় কবে উঠবে, তা ঠিক বলা যায় না। তবে যে গতিতে বাড়ছে, চূড়ায় উঠে পড়লে তা নামতেও বেশি সময় লাগবে না। যেমন বেগে উঠবে তার চেয়েও বেশি বেগে নামবে, এটা ওমিক্রনের বৈশিষ্ট্য।