উপযাচকরাই এখন উপাচার্য হচ্ছেন
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
সুবর্ণজয়ন্তী পেরুনো বাংলাদেশে শিক্ষার চালচিত্র অত্যন্ত বিবর্ণ। এখন দেখা যাচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ করতেন সেটিও অনুসরণ করা হয়নি। কাজেই বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও নেই বর্তমান সরকারের শিক্ষাসংক্রান্ত কর্মকান্ড। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতেন। আর এখন উপাচার্য পদ লাভের জন্য যারা উপযাচক হন তারাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কারণ এখন কেবল রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনায় গুণে-মানে-যোগ্যতায় প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোনোদিন তেমন পরিচিত নন, গ্রহণযোগ্য নন। স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন উপাচার্যকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী। যার কাছে মুক্তিযুদ্ধফেরত ছাত্ররা অটো প্রমোশনের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইউ ক্যান হ্যাভ অটো প্রমোশন অনলি ওভার মাই ডেড বডি।’ ছাত্ররা তাকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এসে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এই দৃশ্য আমার নিজের চোখে দেখা। বঙ্গবন্ধু উপাচার্যের টেবিলের সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ওই ছাত্রদের গালাগাল করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু উপাচার্যকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। উপাচার্য বলেছিলেন, ‘মি. প্রাইম মিনিস্টার দ্যাটস ইউর কার, আই ক্যান ওয়াক ডাউন।’ তিনি হেঁটে চলে গিয়েছিলেন। আমি এমন উপাচার্য চাই। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবুল ফজল। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে ফোন করেছিলেন। তার বাসায় টেলিফোন ছিল না। বাড়ির কাছে বাংলাদেশ বেতারের অফিসে তাকে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন সেখানকার উপপরিচালককে পাঠিয়ে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন স্যার তো নামাজ পড়েন। তুমি মাগরিবের নামাজের পর স্যারকে গাড়িতে করে নিয়ে আসবে। অধ্যাপক আবুল ফজল ভেবেছিলেন কোনো আলাপ বা বুদ্ধি-পরামর্শের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে ডাকছেন। বঙ্গবন্ধু তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে বললেন। অধ্যাপক ফজল তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন তাকে বলেছিলেন, ‘স্যার আপনারা যদি দায়িত্ব না নেন তাহলে আমি দেশ গড়ব কীভাবে?’ বঙ্গবন্ধু তাকে রাজি করিয়েছেন এবং এশার নামাজের আগেই গেজেট হয়ে গিয়েছিল। এরপর ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ। তিনি নরমসরম মানুষ, পন্ডিত মানুষ, লেখাপড়া নিয়ে থাকেন। তিনিও দায়িত্ব নিতে না চাইলে বঙ্গবন্ধু তাকেও একই কথা বলেছিলেন যে, ‘আপনারা দায়িত্ব না নিলে আমি দেশ গড়ব কীভাবে?’
এখন কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা যদি সমাধান করতে হয় তাহলে প্রকৃত অর্থে যোগ্য এবং পরিপূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথকে আমি স্মরণ করি সব সময়। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার আস্থা নেই। কিন্তু আস্থা আছে সেই মানুষদের প্রতি যাদের সঠিক চিন্তা, মহান অনুভব এবং মহৎ কর্ম আছে। এমন মানুষই উপাচার্য হতে পারেন।
সমস্যা রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়েও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কমিশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চেয়ারম্যান করেছিলেন ডাকসাইটে পন্ডিত অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে। এরপর আর তেমন কোনো যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে ওই পদে দেখা যায়নি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে প্রকৃত উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত না করে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে বলব বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও একমাত্র আবুল ফজল ছাড়া আর কোনো শিক্ষাবিদকে মন্ত্রী হিসেবে পায়নি। আমলাদের হাতে শিক্ষাব্যবস্থা চলতে পারে না। তারা আমাদেরই ছাত্রছাত্রী। তারা অনেক কাজের কিন্তু তাদের শিক্ষার হাল ধরার কথা না।
এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিলেও আজ পর্যন্ত সরকার কোনো ক্ষমতাসীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টা এমন যে, তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে একটা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়, প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখানে গলদটা গোড়াতেই, উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিতেই। উপাচার্য নিয়োগ হয় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই। এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো সার্চ কমিটি। সেটা প্রতিবেশী ভারতে আছে। যোগ্যতা, দক্ষতা মূল্যায়ন করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, বাংলাদেশে হয় না। এক্ষেত্রে বিএনপি আমলে যে অবস্থা ছিল এখনো তা-ই আছে। তবে, বিএনপির সময় এমন অনেককেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যারা আসলে গুণে-মানে অনেক ভালো ছিলেন।
এখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে উপাচার্য নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন এবং যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন তিনিই কিন্তু এমন মন্তব্য করা একমাত্র ব্যক্তি নন। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানও প্রচন্ড নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন। মানুষের বিক্ষোভে জনমতের চাপে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। খেয়াল করা দরকার মুরাদ হাসানও একসময় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, যেমন ছিলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য। এখন সরকার যদি রাজনৈতিক পরাজয় ভেবে এই উপাচার্যকে অপসারণ না করেন তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট বিপন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষ করুন যে, চট করে কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের কথা বলে একটা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। ২২ তারিখ থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি মিলিয়ে পাঠ করা যেতে পারে।
লেখক: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক
দ্রষ্টব্য: লেখাটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত আকারে মুদ্রিত। বিস্তারিত সাক্ষাৎকার: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করা হয়েছে।
শেয়ার করুন
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

সুবর্ণজয়ন্তী পেরুনো বাংলাদেশে শিক্ষার চালচিত্র অত্যন্ত বিবর্ণ। এখন দেখা যাচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ করতেন সেটিও অনুসরণ করা হয়নি। কাজেই বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও নেই বর্তমান সরকারের শিক্ষাসংক্রান্ত কর্মকান্ড। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতেন। আর এখন উপাচার্য পদ লাভের জন্য যারা উপযাচক হন তারাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কারণ এখন কেবল রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনায় গুণে-মানে-যোগ্যতায় প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোনোদিন তেমন পরিচিত নন, গ্রহণযোগ্য নন। স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন উপাচার্যকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী। যার কাছে মুক্তিযুদ্ধফেরত ছাত্ররা অটো প্রমোশনের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইউ ক্যান হ্যাভ অটো প্রমোশন অনলি ওভার মাই ডেড বডি।’ ছাত্ররা তাকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এসে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এই দৃশ্য আমার নিজের চোখে দেখা। বঙ্গবন্ধু উপাচার্যের টেবিলের সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ওই ছাত্রদের গালাগাল করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু উপাচার্যকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। উপাচার্য বলেছিলেন, ‘মি. প্রাইম মিনিস্টার দ্যাটস ইউর কার, আই ক্যান ওয়াক ডাউন।’ তিনি হেঁটে চলে গিয়েছিলেন। আমি এমন উপাচার্য চাই। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবুল ফজল। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে ফোন করেছিলেন। তার বাসায় টেলিফোন ছিল না। বাড়ির কাছে বাংলাদেশ বেতারের অফিসে তাকে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন সেখানকার উপপরিচালককে পাঠিয়ে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন স্যার তো নামাজ পড়েন। তুমি মাগরিবের নামাজের পর স্যারকে গাড়িতে করে নিয়ে আসবে। অধ্যাপক আবুল ফজল ভেবেছিলেন কোনো আলাপ বা বুদ্ধি-পরামর্শের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে ডাকছেন। বঙ্গবন্ধু তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে বললেন। অধ্যাপক ফজল তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন তাকে বলেছিলেন, ‘স্যার আপনারা যদি দায়িত্ব না নেন তাহলে আমি দেশ গড়ব কীভাবে?’ বঙ্গবন্ধু তাকে রাজি করিয়েছেন এবং এশার নামাজের আগেই গেজেট হয়ে গিয়েছিল। এরপর ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ। তিনি নরমসরম মানুষ, পন্ডিত মানুষ, লেখাপড়া নিয়ে থাকেন। তিনিও দায়িত্ব নিতে না চাইলে বঙ্গবন্ধু তাকেও একই কথা বলেছিলেন যে, ‘আপনারা দায়িত্ব না নিলে আমি দেশ গড়ব কীভাবে?’
এখন কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা যদি সমাধান করতে হয় তাহলে প্রকৃত অর্থে যোগ্য এবং পরিপূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথকে আমি স্মরণ করি সব সময়। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার আস্থা নেই। কিন্তু আস্থা আছে সেই মানুষদের প্রতি যাদের সঠিক চিন্তা, মহান অনুভব এবং মহৎ কর্ম আছে। এমন মানুষই উপাচার্য হতে পারেন।
সমস্যা রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়েও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কমিশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চেয়ারম্যান করেছিলেন ডাকসাইটে পন্ডিত অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে। এরপর আর তেমন কোনো যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে ওই পদে দেখা যায়নি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে প্রকৃত উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত না করে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে বলব বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও একমাত্র আবুল ফজল ছাড়া আর কোনো শিক্ষাবিদকে মন্ত্রী হিসেবে পায়নি। আমলাদের হাতে শিক্ষাব্যবস্থা চলতে পারে না। তারা আমাদেরই ছাত্রছাত্রী। তারা অনেক কাজের কিন্তু তাদের শিক্ষার হাল ধরার কথা না।
এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিলেও আজ পর্যন্ত সরকার কোনো ক্ষমতাসীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টা এমন যে, তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে একটা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়, প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখানে গলদটা গোড়াতেই, উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিতেই। উপাচার্য নিয়োগ হয় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই। এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো সার্চ কমিটি। সেটা প্রতিবেশী ভারতে আছে। যোগ্যতা, দক্ষতা মূল্যায়ন করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, বাংলাদেশে হয় না। এক্ষেত্রে বিএনপি আমলে যে অবস্থা ছিল এখনো তা-ই আছে। তবে, বিএনপির সময় এমন অনেককেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যারা আসলে গুণে-মানে অনেক ভালো ছিলেন।
এখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে উপাচার্য নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন এবং যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন তিনিই কিন্তু এমন মন্তব্য করা একমাত্র ব্যক্তি নন। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানও প্রচন্ড নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন। মানুষের বিক্ষোভে জনমতের চাপে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। খেয়াল করা দরকার মুরাদ হাসানও একসময় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, যেমন ছিলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য। এখন সরকার যদি রাজনৈতিক পরাজয় ভেবে এই উপাচার্যকে অপসারণ না করেন তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট বিপন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষ করুন যে, চট করে কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের কথা বলে একটা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। ২২ তারিখ থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি মিলিয়ে পাঠ করা যেতে পারে।
লেখক: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক
দ্রষ্টব্য: লেখাটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত আকারে মুদ্রিত। বিস্তারিত সাক্ষাৎকার: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করা হয়েছে।