ডিজিটাল ডিভাইসে প্রশ্নফাঁস
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ১০
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের অভিযোগে জনপ্রতিনিধিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এই চক্রটি প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষার হলের বাইরে ‘ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র’ বসিয়ে স্মার্টওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) জানিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। অন্যদের মধ্যে আছেন হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদ, নোমান সিদ্দিকী, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান।
তাদের থেকে ছয়টি ইয়ার ডিভাইস, ছয়টি মাস্টার কার্ড, ছয়টি মোবাইল সিম হোল্ডার, পাঁচটি ব্যাংকের চেক, সাতটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ৬টি ফিচার মোবাইল, ১৮টি প্রবেশপত্র ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।
গতকাল শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই চক্রটির বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার ৭০ নম্বরের পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল আগেই বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া কিছু ব্যক্তি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং প্রার্থী পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর বা সমাধান সরবরাহসহ অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি সদস্যরা কাকরাইলের নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দুই প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে কাফরুলের সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রের খসড়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পুলিশের অন্য একটি দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে চাকরিপ্রার্থী একজন ও প্রশ্নফাঁসের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে নগদ টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া তথ্যমতে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসসংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা অন্যদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেন। হলের বাইরে থেকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে থাকেন। এর আগেও গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটির একটি গ্রুপ নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রার্থী সংগ্রহ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। টার্গেটকৃত চাকরিপ্রার্থীপ্রতি ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার লিখিত চুক্তি হয় তাদের। এমসিকিউ পরীক্ষার আগে কিছু টাকা আদায় করা হয় এবং বাকি টাকা নিয়োগের পরে দেওয়ার চুক্তি হয়। আরেকটি গ্রুপ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ইয়ার ডিভাইস, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও বাটন মোবাইলে ওইসব চাকরিপ্রার্থীকে সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নফাঁস করে বাইরে পাঠানো হয় ডিভাইসের মাধ্যমে। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে ফের পাঠানো হয় প্রার্থীদের কাছে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কি না তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরই সিদ্ধান্ত নেবে। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ১৮ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে প্রশ্নফাঁস চক্রটির চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে ৯ জনকে প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত আছে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের অভিযোগে জনপ্রতিনিধিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এই চক্রটি প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষার হলের বাইরে ‘ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র’ বসিয়ে স্মার্টওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) জানিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। অন্যদের মধ্যে আছেন হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদ, নোমান সিদ্দিকী, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান।
তাদের থেকে ছয়টি ইয়ার ডিভাইস, ছয়টি মাস্টার কার্ড, ছয়টি মোবাইল সিম হোল্ডার, পাঁচটি ব্যাংকের চেক, সাতটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ৬টি ফিচার মোবাইল, ১৮টি প্রবেশপত্র ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।
গতকাল শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই চক্রটির বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার ৭০ নম্বরের পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল আগেই বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া কিছু ব্যক্তি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং প্রার্থী পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর বা সমাধান সরবরাহসহ অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি সদস্যরা কাকরাইলের নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দুই প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে কাফরুলের সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রের খসড়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পুলিশের অন্য একটি দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে চাকরিপ্রার্থী একজন ও প্রশ্নফাঁসের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে নগদ টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া তথ্যমতে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসসংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা অন্যদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেন। হলের বাইরে থেকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে থাকেন। এর আগেও গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটির একটি গ্রুপ নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রার্থী সংগ্রহ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। টার্গেটকৃত চাকরিপ্রার্থীপ্রতি ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার লিখিত চুক্তি হয় তাদের। এমসিকিউ পরীক্ষার আগে কিছু টাকা আদায় করা হয় এবং বাকি টাকা নিয়োগের পরে দেওয়ার চুক্তি হয়। আরেকটি গ্রুপ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ইয়ার ডিভাইস, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও বাটন মোবাইলে ওইসব চাকরিপ্রার্থীকে সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নফাঁস করে বাইরে পাঠানো হয় ডিভাইসের মাধ্যমে। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে ফের পাঠানো হয় প্রার্থীদের কাছে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কি না তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরই সিদ্ধান্ত নেবে। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ১৮ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে প্রশ্নফাঁস চক্রটির চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে ৯ জনকে প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত আছে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।