উত্তরের ঈদযাত্রায় স্বস্তির আভাস
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০
কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের তিনটি নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার। গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে গাজীপুর মহানগরের নাওজোর এবং কালিয়াকৈর উপজেলার শফিপুর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভার যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। গতকাল খুলে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের সিরাজগঞ্জের নলকা সেতুর উত্তরবঙ্গ লেনও। ঈদের আগে এমন পদক্ষেপে উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে উত্তরের ২৩টি জেলার যোগাযোগের এই রুটে ঈদযাত্রায় যানজটে নাকাল হতে হয় ঘরমুখো মানুষদের। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকার ‘উন্নয়ন’ কাজের সঙ্গে বাড়তি গাড়ির কারণে পাঁচ ঘণ্টার পথ কখনও ২০ ঘণ্টা লেগে যায়। করোনার প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় দুই বছর বাদে এবার বিপুলসংখ্যক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন করতে সম্ভাব্য উদ্যোগ হিসেবেই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ও সেতু খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল নাওজোর ও শফিপুর ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ার সময় প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, ঈদে ঘরেফেরা মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় এজন্য যানবাহন চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে।
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারটি প্যাকেজে কাজ হচ্ছে। জয়দেবপুরের ভোগড়া মোড় থেকে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক পর্যন্ত ১নং প্যাকেজের অধীন নাওজোর ও শফিপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্যাকেজের প্রজেক্ট ম্যানেজার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, এবার গত দুই বছরের তুলনায় বেশি মানুষ ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাবে। তাই প্রত্যেকটা মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। সেই মোতাবেক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান প্রকৌশলী ও সাসেকের প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট কমিয়ে আনতে ফ্লাইওভার খোলার পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, নাওজোর ও শফিপুর ফ্লাইওভার দুটি ৯৮ ভাগ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। রেলিংয়ের কিছু কাজ বাকি আছে। স্বল্প সময়ের জন্য এক লেন বন্ধ করেই কাজ শেষ করা যাবে।
এই সড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকায় নির্মাণাধীন ৭৫০ মিটার ফ্লাইওভারটিও খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতুর পূর্বাংশে আনুষ্ঠানিকভাবে উড়াল সেতুটি খুলে দেন সাসেক-১-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কে এম নূর-ই আলম। সেতুটি খুলে দেওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক নূর-ই আলম বলেন, গোড়াই উড়াল সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন কারণে এই সেতুর কাজটি ধীর গতিতে চলছিল। আমাদের অল্প কিছু কাজ বাকি আছে, তবে যান চলাচলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, সেতুর মাঝ অংশে সড়ক বিভাজক ও দু’পাশে রেলিং না থাকলেও দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই।
এদিকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নবনির্মিত নলকা সেতুর উত্তরবঙ্গ লেন উন্মোচন করা হয়েছে। সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ড. ওয়ালিউল ইসলাম লেন উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, এই লেন দিয়ে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। এতে ঈদযাত্রায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার ঘরমুখো যাত্রীরা কোনোরূপ ভোগান্তি ছাড়াই নির্বিঘেœ গন্তব্যে যেতে পারবেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৮৮ সালে নলকা এলাকার ফুলজোড় নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এ সেতুর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। কমতে থাকে এর স্থায়িত্ব। জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে ধীর গতিতে যানবহন চলাচল করার কারণে মাঝেমধ্যেই তীব্র যানজট হয় সেতু এলাকায়। ঈদের সময় এখানে আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ঈদের আগে ২৮৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুর উত্তরবঙ্গ লেন খুলে দেওয়ায় বাড়তি গাড়ির চাপ সামাল দেওয়া সহজ হবে। কমবে যানজট। ভোগান্তিহীন হবে উত্তরের ঈদযাত্রা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন গাজীপুর, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০

কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের তিনটি নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার। গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে গাজীপুর মহানগরের নাওজোর এবং কালিয়াকৈর উপজেলার শফিপুর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভার যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। গতকাল খুলে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের সিরাজগঞ্জের নলকা সেতুর উত্তরবঙ্গ লেনও। ঈদের আগে এমন পদক্ষেপে উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে উত্তরের ২৩টি জেলার যোগাযোগের এই রুটে ঈদযাত্রায় যানজটে নাকাল হতে হয় ঘরমুখো মানুষদের। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকার ‘উন্নয়ন’ কাজের সঙ্গে বাড়তি গাড়ির কারণে পাঁচ ঘণ্টার পথ কখনও ২০ ঘণ্টা লেগে যায়। করোনার প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় দুই বছর বাদে এবার বিপুলসংখ্যক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন করতে সম্ভাব্য উদ্যোগ হিসেবেই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ও সেতু খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল নাওজোর ও শফিপুর ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ার সময় প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, ঈদে ঘরেফেরা মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় এজন্য যানবাহন চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে।
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারটি প্যাকেজে কাজ হচ্ছে। জয়দেবপুরের ভোগড়া মোড় থেকে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক পর্যন্ত ১নং প্যাকেজের অধীন নাওজোর ও শফিপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্যাকেজের প্রজেক্ট ম্যানেজার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, এবার গত দুই বছরের তুলনায় বেশি মানুষ ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাবে। তাই প্রত্যেকটা মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। সেই মোতাবেক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান প্রকৌশলী ও সাসেকের প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট কমিয়ে আনতে ফ্লাইওভার খোলার পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, নাওজোর ও শফিপুর ফ্লাইওভার দুটি ৯৮ ভাগ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। রেলিংয়ের কিছু কাজ বাকি আছে। স্বল্প সময়ের জন্য এক লেন বন্ধ করেই কাজ শেষ করা যাবে।
এই সড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকায় নির্মাণাধীন ৭৫০ মিটার ফ্লাইওভারটিও খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতুর পূর্বাংশে আনুষ্ঠানিকভাবে উড়াল সেতুটি খুলে দেন সাসেক-১-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কে এম নূর-ই আলম। সেতুটি খুলে দেওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক নূর-ই আলম বলেন, গোড়াই উড়াল সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন কারণে এই সেতুর কাজটি ধীর গতিতে চলছিল। আমাদের অল্প কিছু কাজ বাকি আছে, তবে যান চলাচলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, সেতুর মাঝ অংশে সড়ক বিভাজক ও দু’পাশে রেলিং না থাকলেও দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই।
এদিকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নবনির্মিত নলকা সেতুর উত্তরবঙ্গ লেন উন্মোচন করা হয়েছে। সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ড. ওয়ালিউল ইসলাম লেন উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, এই লেন দিয়ে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। এতে ঈদযাত্রায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার ঘরমুখো যাত্রীরা কোনোরূপ ভোগান্তি ছাড়াই নির্বিঘেœ গন্তব্যে যেতে পারবেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৮৮ সালে নলকা এলাকার ফুলজোড় নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এ সেতুর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। কমতে থাকে এর স্থায়িত্ব। জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে ধীর গতিতে যানবহন চলাচল করার কারণে মাঝেমধ্যেই তীব্র যানজট হয় সেতু এলাকায়। ঈদের সময় এখানে আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ঈদের আগে ২৮৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুর উত্তরবঙ্গ লেন খুলে দেওয়ায় বাড়তি গাড়ির চাপ সামাল দেওয়া সহজ হবে। কমবে যানজট। ভোগান্তিহীন হবে উত্তরের ঈদযাত্রা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন গাজীপুর, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি