শেখ হাসিনার ভারত সফরের অপেক্ষায় আছি : জয়শঙ্কর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০
বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের কাছে বাংলাদেশের চাওয়া সহযোগিতাবিষয়ক প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। র্যাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, এই প্রশ্ন আপনারা ড. মোমেনকে করেন। ওই সময় পাশ থেকে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান ঢাকা সফররত এস জয়শঙ্কর। তিনি এ বিষয়ে হ্যাঁ কিংবা না-সূচক কোনো জবাবও দেননি। এর আগে গতকাল বিকেলে জয়শঙ্কর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ভারত সফরে মোদির আমন্ত্রণ বার্তা পৌঁছে দেন। এ সময় ভূরাজনৈতিক বিষয় ও দুদেশের মধ্যকার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
এদিকে এদিন বিকেলে নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীও নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কোনো জবাব দেননি, আবার অস্বীকারও করেননি। অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘কোনো দেশ যদি আমাদের এ রকম অনুরোধ জানিয়েও থাকে এবং তার ভিত্তিতে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিয়েও থাকি সেটা বোধ হয় প্রকাশ্যে নাও জানাতে পারি।’
ঢাকায় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, করোনায় থমকে যাওয়া উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ, কানেক্টিভিটি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ নিয়মিত বৈঠকগুলো আরও জোরদার হবে।
তিনি বলেন, ‘যখনই বাংলাদেশে আসি আমার ভালো লাগে। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আমি ঢাকায় এসেছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গত করোনা মহামারীর মধ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি এবং আমাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল। এ সময়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। গত বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন, যা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘আজকের সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; যা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে, আরও এগিয়ে নেবে। আমাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আজকে দুপুরে আমি প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত বার্তা ও শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, তার আসন্ন ভারতের সফরের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও আলাপ করেছি এবং আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছ থেকে অঙ্গীকার পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সপ্তমবারের মতো জেসিসি বৈঠকের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এই বৈঠকের পর আমাদের সম্পর্কের মাত্রা নতুন স্তরে উন্নীত হবে। আমরা আবার কভিডের পূর্ব অবস্থার কানেক্টিভিটিতে ফিরে যাব। আমরা ঈদের পর শিগগিরই দুদেশের মধ্যে বাস-রেল যোগাযোগ চালু করব আমাদের শীর্ষ নেতারা গত বছর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্বের ১৮টি দেশে মৈত্রী দিবস পালন করেছি, বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী করেছি। এগুলো সম্ভব হয়েছিল, আমাদের সম্পর্কের আস্থার কারণে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, প্রকল্প উন্নয়নের ঋণ, ভ্রমণ পরিষেবা এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ বিষয়গুলো কভিডের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। গত দুই বছরে আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে প্রকল্পগুলো উন্নয়ন করেছি, তা চালু করতে চাই। ভারত উপ-আঞ্চলিক একাধিক খাতে সংযোগ এবং সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে চাই। বিশেষ করে জ্বালানি খাতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আমরা আঞ্চলিকভাবে সহযোগিতা করে একসঙ্গে উপকৃত হতে পারি। ভারত এ অঞ্চলে জ্বালানি খাতের বড় উৎপাদক ও ভোক্তা। এই খাতে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করতে চাই। ভারত এ বিষয়ে উপ-আঞ্চলিক ফোরাম, বিবিআইএনের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় এ ইস্যুতে কাজ করতে চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত যেভাবে একসঙ্গে কাজ করেছি এটা বেশ গতিশীল ছিল। এটা একটা ইতিহাস। এর আগে আমরা বহু বড় বিষয় সমাধান করেছি, আরও যেসব ছোটখাটো বিষয় রয়েছে সেগুলোও সমাধান হয়ে যাবে।’
পারস্পরিক স্বার্থে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দেশ দুটির মধ্যে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া আন্তঃসীমান্ত রুটগুলো আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। যদি দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, তবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসাম ও ত্রিপুরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।’
গতকাল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে তারা দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশগুলোর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে। ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা, কুশিয়ারা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন, বর্তমান কভিড পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালো রয়েছে এবং জয়শঙ্কর বলেন, ভারতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল দুপুরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ যানে কুর্মিটোলা বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এসে পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতেই মূলত এক দিনের ঝটিকা সফরে ঢাকা এসেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন তিনি।
ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনের মাঝামাঝি সময়ে ভারত সফর করতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০

বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের কাছে বাংলাদেশের চাওয়া সহযোগিতাবিষয়ক প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। র্যাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, এই প্রশ্ন আপনারা ড. মোমেনকে করেন। ওই সময় পাশ থেকে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান ঢাকা সফররত এস জয়শঙ্কর। তিনি এ বিষয়ে হ্যাঁ কিংবা না-সূচক কোনো জবাবও দেননি। এর আগে গতকাল বিকেলে জয়শঙ্কর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ভারত সফরে মোদির আমন্ত্রণ বার্তা পৌঁছে দেন। এ সময় ভূরাজনৈতিক বিষয় ও দুদেশের মধ্যকার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
এদিকে এদিন বিকেলে নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীও নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কোনো জবাব দেননি, আবার অস্বীকারও করেননি। অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘কোনো দেশ যদি আমাদের এ রকম অনুরোধ জানিয়েও থাকে এবং তার ভিত্তিতে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিয়েও থাকি সেটা বোধ হয় প্রকাশ্যে নাও জানাতে পারি।’
ঢাকায় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, করোনায় থমকে যাওয়া উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ, কানেক্টিভিটি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ নিয়মিত বৈঠকগুলো আরও জোরদার হবে।
তিনি বলেন, ‘যখনই বাংলাদেশে আসি আমার ভালো লাগে। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আমি ঢাকায় এসেছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গত করোনা মহামারীর মধ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি এবং আমাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল। এ সময়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। গত বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন, যা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘আজকের সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; যা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে, আরও এগিয়ে নেবে। আমাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আজকে দুপুরে আমি প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত বার্তা ও শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, তার আসন্ন ভারতের সফরের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও আলাপ করেছি এবং আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছ থেকে অঙ্গীকার পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সপ্তমবারের মতো জেসিসি বৈঠকের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এই বৈঠকের পর আমাদের সম্পর্কের মাত্রা নতুন স্তরে উন্নীত হবে। আমরা আবার কভিডের পূর্ব অবস্থার কানেক্টিভিটিতে ফিরে যাব। আমরা ঈদের পর শিগগিরই দুদেশের মধ্যে বাস-রেল যোগাযোগ চালু করব আমাদের শীর্ষ নেতারা গত বছর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্বের ১৮টি দেশে মৈত্রী দিবস পালন করেছি, বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী করেছি। এগুলো সম্ভব হয়েছিল, আমাদের সম্পর্কের আস্থার কারণে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, প্রকল্প উন্নয়নের ঋণ, ভ্রমণ পরিষেবা এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ বিষয়গুলো কভিডের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। গত দুই বছরে আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে প্রকল্পগুলো উন্নয়ন করেছি, তা চালু করতে চাই। ভারত উপ-আঞ্চলিক একাধিক খাতে সংযোগ এবং সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে চাই। বিশেষ করে জ্বালানি খাতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আমরা আঞ্চলিকভাবে সহযোগিতা করে একসঙ্গে উপকৃত হতে পারি। ভারত এ অঞ্চলে জ্বালানি খাতের বড় উৎপাদক ও ভোক্তা। এই খাতে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করতে চাই। ভারত এ বিষয়ে উপ-আঞ্চলিক ফোরাম, বিবিআইএনের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় এ ইস্যুতে কাজ করতে চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত যেভাবে একসঙ্গে কাজ করেছি এটা বেশ গতিশীল ছিল। এটা একটা ইতিহাস। এর আগে আমরা বহু বড় বিষয় সমাধান করেছি, আরও যেসব ছোটখাটো বিষয় রয়েছে সেগুলোও সমাধান হয়ে যাবে।’
পারস্পরিক স্বার্থে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দেশ দুটির মধ্যে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া আন্তঃসীমান্ত রুটগুলো আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। যদি দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, তবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসাম ও ত্রিপুরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।’
গতকাল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে তারা দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশগুলোর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে। ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা, কুশিয়ারা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন, বর্তমান কভিড পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালো রয়েছে এবং জয়শঙ্কর বলেন, ভারতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল দুপুরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ যানে কুর্মিটোলা বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এসে পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতেই মূলত এক দিনের ঝটিকা সফরে ঢাকা এসেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন তিনি।
ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনের মাঝামাঝি সময়ে ভারত সফর করতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।