রোহিঙ্গাদের ১৪০২ মামলা তদন্তে আটকা
সরোয়ার আলম | ৬ মে, ২০২২ ০০:০০
মাস ছয়েক আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬০৭০টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক সাদ্দাম হোসেন ও আল-আমিন। এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। আড়াই বছর আগেও টেকনাফে ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। কিন্তু কোনো মামলারই অভিযোগপত্র আদালতে এখনো দাখিল করা হয়নি। ২০১৮ সালে ৮০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার হন রোহিঙ্গা মনসুর আলী। এই মামলারও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
এই দুটি মামলার মতোই বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন থানায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে করা ১৪০২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। এসব মামলার বেশিরভাগই মাদক ও মানব পাচারের অভিযোগ দায়ের করা।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বেও একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধ রুখতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএনসহ সবকটি সংস্থা কাজ করছে। কতিপয় রোহিঙ্গা মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেসব অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে তার সবই তদন্ত করা হচ্ছে। ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেসব অপরাধী রোহিঙ্গা আছে তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ ঠেকাতে একাধিক বৈঠক হয়েছে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে। কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে যৌথ ক্যাম্প বসবে ক্যাম্পের ভেতর। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করবেন পুলিশ সদর দপ্তর ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট ও জাতীয় ন্যাশনাল কার্ড (এনআইডি) ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিতে বলা হয় বৈঠকে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের অনেকে মাদক কারবার, মানব পাচার, ডাকাতি, হত্যাকান্ডসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। আধিপত্য ও মাদক কারবার নিয়ে খুনাখুনিতেও জড়িয়ে পড়ছে। গত চার বছরে বিভিন্ন ঘটনায় দেড়শ’র বেশি রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। তা ছাড়া অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ‘বন্দকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। আর এ সময়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৪০২টি মামলা হয়েছে কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, ঢাকার বিমানবন্দর থানাসহ দেশের কয়েকটি থানায়। দীর্ঘদিন ধরেই এসব মামলার তদন্ত নেই বললেই চলে। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবেও তাও কেউ বলতে পারছেন না।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বৈঠক হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দিতে বলা হয়েছে। তবে কিছু সমস্যাও আছে। তারা ভিনদেশি নাগরিক হওয়ায় হিসাবনিকাশ করেই এগোচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই কর্মকর্তা বলেন, গত চার বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৪০২টি মামলার মধ্যে ৮১২টি মাদক, ৮২টি মানব পাচার, দেড়শ অস্ত্র, ১২১টি ধর্ষণ ও ৩৭টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। ৮৪টি মামলা হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায়। অন্যান্য অপরাধে মামলা আছে ১১৬টি।
গত বছরের অক্টোবরে একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, অন্তত ১২ ধরনের অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গারা। ওই সময় পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৭১টি খুনের ঘটনা ঘটে।
বছরভিত্তিক অপরাধের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার বছর নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি। আসামি ছিলেন ১৫৯ জন। ২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ২০৮। আসামির সংখ্যা ছিল ৪১৪। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বাড়ে আরও ৫৫টি। ২৬৩ মামলায় আসামি করা হয় ৬৪৯ রোহিঙ্গাকে। ২০২০ সালে মামলার সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। ৪৪৯ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৮৪টি। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৭০টি। আসামি করা হয়েছে ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজ) আনোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিশাল একটি অংশ কক্সবাজারসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। তাদের অনেকেই খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে সেগুলো নিয়ে তারা কিছুটা বেকায়দায় আছেন। তারপরও দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা জানান, এখনো রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে বলে তথ্য আছে। তাদের প্রতিরোধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে। নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত রোহিঙ্গা অপরাধীদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার করুন
সরোয়ার আলম | ৬ মে, ২০২২ ০০:০০

মাস ছয়েক আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬০৭০টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক সাদ্দাম হোসেন ও আল-আমিন। এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। আড়াই বছর আগেও টেকনাফে ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। কিন্তু কোনো মামলারই অভিযোগপত্র আদালতে এখনো দাখিল করা হয়নি। ২০১৮ সালে ৮০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার হন রোহিঙ্গা মনসুর আলী। এই মামলারও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
এই দুটি মামলার মতোই বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন থানায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে করা ১৪০২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। এসব মামলার বেশিরভাগই মাদক ও মানব পাচারের অভিযোগ দায়ের করা।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বেও একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধ রুখতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএনসহ সবকটি সংস্থা কাজ করছে। কতিপয় রোহিঙ্গা মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেসব অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে তার সবই তদন্ত করা হচ্ছে। ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেসব অপরাধী রোহিঙ্গা আছে তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ ঠেকাতে একাধিক বৈঠক হয়েছে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে। কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে যৌথ ক্যাম্প বসবে ক্যাম্পের ভেতর। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করবেন পুলিশ সদর দপ্তর ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট ও জাতীয় ন্যাশনাল কার্ড (এনআইডি) ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিতে বলা হয় বৈঠকে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের অনেকে মাদক কারবার, মানব পাচার, ডাকাতি, হত্যাকান্ডসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। আধিপত্য ও মাদক কারবার নিয়ে খুনাখুনিতেও জড়িয়ে পড়ছে। গত চার বছরে বিভিন্ন ঘটনায় দেড়শ’র বেশি রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। তা ছাড়া অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ‘বন্দকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। আর এ সময়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৪০২টি মামলা হয়েছে কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, ঢাকার বিমানবন্দর থানাসহ দেশের কয়েকটি থানায়। দীর্ঘদিন ধরেই এসব মামলার তদন্ত নেই বললেই চলে। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবেও তাও কেউ বলতে পারছেন না।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বৈঠক হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দিতে বলা হয়েছে। তবে কিছু সমস্যাও আছে। তারা ভিনদেশি নাগরিক হওয়ায় হিসাবনিকাশ করেই এগোচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই কর্মকর্তা বলেন, গত চার বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৪০২টি মামলার মধ্যে ৮১২টি মাদক, ৮২টি মানব পাচার, দেড়শ অস্ত্র, ১২১টি ধর্ষণ ও ৩৭টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। ৮৪টি মামলা হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায়। অন্যান্য অপরাধে মামলা আছে ১১৬টি।
গত বছরের অক্টোবরে একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, অন্তত ১২ ধরনের অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গারা। ওই সময় পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৭১টি খুনের ঘটনা ঘটে।
বছরভিত্তিক অপরাধের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার বছর নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি। আসামি ছিলেন ১৫৯ জন। ২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ২০৮। আসামির সংখ্যা ছিল ৪১৪। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বাড়ে আরও ৫৫টি। ২৬৩ মামলায় আসামি করা হয় ৬৪৯ রোহিঙ্গাকে। ২০২০ সালে মামলার সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। ৪৪৯ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৮৪টি। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৭০টি। আসামি করা হয়েছে ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজ) আনোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিশাল একটি অংশ কক্সবাজারসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। তাদের অনেকেই খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে সেগুলো নিয়ে তারা কিছুটা বেকায়দায় আছেন। তারপরও দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা জানান, এখনো রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে বলে তথ্য আছে। তাদের প্রতিরোধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে। নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত রোহিঙ্গা অপরাধীদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।