হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়া নিয়ে বিতর্ক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৬ মে, ২০২২ ০০:০০
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়া এবং ছয় দিনের মধ্যে ফিরে আসা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার আইনজীবী, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও আদালতের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি মো. খুরশীদ আলম খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আইন মেনেই হাজী সেলিম বিদেশে গিয়েছিলেন এবং ফিরেও এসেছেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম ১৬ থেকে ২৫ মে’র মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
দুদকের এ মামলায় হাজী সেলিমের আপিল সংশোধন (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) করে গত বছর ৯ মার্চ হাইকোর্ট তার ১০ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় দেয়। এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ে তাকে দেওয়া ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদন্ডের রায় বহাল থাকে। এ মামলায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত যে সম্পদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। এতে হাজী সেলিমকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। গত ২৫ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌঁছায় বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
আত্মসমর্পণের আলোচনার মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল থাইল্যান্ডে যান হাজী সেলিম। এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তখন জানান চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে গেছেন এবং দ্রুতই ফিরে আসবেন। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে পৌঁছান তিনি।
হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘অবকাশ শেষে ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। ওই তারিখ থেকে ২৫ মে’র মধ্যে যে কোনোদিন তিনি (হাজী সেলিম) আত্মসমর্পণ করবেন। এরপর আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করব।’ বিদেশে যাওয়ায় আইনের ব্যত্যয় হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি জামিনে রয়েছেন। আদালতই তার আত্মসমর্পণের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। রায়ের কোথাও কি লেখা আছে যে উনার চলাফেরা সীমাবদ্ধ?’
তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তার (হাজী সেলিম) আত্মসমর্পণের কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে তিনি দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও আদালতের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে গিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন। আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।’
এর আগে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দুদকের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, দন্ড বহাল থাকায় সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
অন্যদিকে হাজী সেলিমের আইনজীবী বলেছিলেন, আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে থাকতে আইনি বাধা নেই।
দন্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আইন মেনেই দেশের বাইরে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘হাজী সেলিম জরুরি চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলেন। আবার ফেরত চলে এসেছেন। আইনগতভাবে যেটুকু প্রশ্ন আসে, তিনি একজন সংসদ সদস্য, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইনকে মাথায় রেখেই হাজী সেলিম গিয়েছেন। তিনি আইন মেনেই গিয়েছেন, আইন মেনেই আবার চলে এসেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টে ভারডিক্ট (রায়) হলে তার অফিশিয়াল রায় চলে আসে। ভারডিক্ট হয়েছিল, অফিশিয়ালি কিন্তু ওটা ইমপ্লিমেন্ট হওয়ার আগেই তিনি গিয়েছেন আবার চলেও এসেছেন।’
৬৭ কোটি ৪৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে তখনকার দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুদক)। বিচার কার্যক্রম শেষে ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত তাকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছর এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদন্ডাদেশ দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট সাজা বাতিল করে তাকে খালাস দেয়। এরপর হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি আপিল বিভাগ হাজী সেলিমকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল করে আপিলের পুনঃশুনানি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় এ রায় ও আত্মসমর্পণের নির্দেশনা আসে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৬ মে, ২০২২ ০০:০০

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়া এবং ছয় দিনের মধ্যে ফিরে আসা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার আইনজীবী, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও আদালতের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি মো. খুরশীদ আলম খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আইন মেনেই হাজী সেলিম বিদেশে গিয়েছিলেন এবং ফিরেও এসেছেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম ১৬ থেকে ২৫ মে’র মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
দুদকের এ মামলায় হাজী সেলিমের আপিল সংশোধন (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) করে গত বছর ৯ মার্চ হাইকোর্ট তার ১০ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় দেয়। এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ে তাকে দেওয়া ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদন্ডের রায় বহাল থাকে। এ মামলায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত যে সম্পদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। এতে হাজী সেলিমকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। গত ২৫ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌঁছায় বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
আত্মসমর্পণের আলোচনার মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল থাইল্যান্ডে যান হাজী সেলিম। এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তখন জানান চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে গেছেন এবং দ্রুতই ফিরে আসবেন। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে পৌঁছান তিনি।
হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘অবকাশ শেষে ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। ওই তারিখ থেকে ২৫ মে’র মধ্যে যে কোনোদিন তিনি (হাজী সেলিম) আত্মসমর্পণ করবেন। এরপর আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করব।’ বিদেশে যাওয়ায় আইনের ব্যত্যয় হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি জামিনে রয়েছেন। আদালতই তার আত্মসমর্পণের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। রায়ের কোথাও কি লেখা আছে যে উনার চলাফেরা সীমাবদ্ধ?’
তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তার (হাজী সেলিম) আত্মসমর্পণের কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে তিনি দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও আদালতের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে গিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন। আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।’
এর আগে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দুদকের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, দন্ড বহাল থাকায় সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
অন্যদিকে হাজী সেলিমের আইনজীবী বলেছিলেন, আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে থাকতে আইনি বাধা নেই।
দন্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আইন মেনেই দেশের বাইরে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘হাজী সেলিম জরুরি চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলেন। আবার ফেরত চলে এসেছেন। আইনগতভাবে যেটুকু প্রশ্ন আসে, তিনি একজন সংসদ সদস্য, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইনকে মাথায় রেখেই হাজী সেলিম গিয়েছেন। তিনি আইন মেনেই গিয়েছেন, আইন মেনেই আবার চলে এসেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টে ভারডিক্ট (রায়) হলে তার অফিশিয়াল রায় চলে আসে। ভারডিক্ট হয়েছিল, অফিশিয়ালি কিন্তু ওটা ইমপ্লিমেন্ট হওয়ার আগেই তিনি গিয়েছেন আবার চলেও এসেছেন।’
৬৭ কোটি ৪৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে তখনকার দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুদক)। বিচার কার্যক্রম শেষে ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত তাকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছর এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদন্ডাদেশ দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট সাজা বাতিল করে তাকে খালাস দেয়। এরপর হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি আপিল বিভাগ হাজী সেলিমকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল করে আপিলের পুনঃশুনানি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় এ রায় ও আত্মসমর্পণের নির্দেশনা আসে।