নির্বাচনী অঙ্কে নতুন মোড়
বিএনপি বলছে, ফাঁদে পা দেবে না তারা
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, এবার নির্বাচন সহজ হবে না। বিএনপির নির্বাচনে আসা না আসা নিয়ে করা হচ্ছে নতুন অঙ্ক
রেজাউল করিম লাবলু | ৯ মে, ২০২২ ০০:০০
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনার বিষয়ে আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না দলটি। আওয়ামী লীগের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও গতকাল রবিবার বিএনপির কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, তারা মনে করছেন যে এটা সরকারের ফাঁদ। এতে পা দেবেন না।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থান জানানোর পাশাপাশি তারা ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে যেসব বক্তব্য এসেছে সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটি ভার্চুয়াল সভা করবে। আলোচনা শেষে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।
জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চাই সরকার আগে পদত্যাগ করুক। তারপর নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন হোক।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। বিএনপি জনগণের দল হিসেবে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এজন্য আমরা আন্দোলনে আছি। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার বিএনপি তাই করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যপট নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। সরকার বিদেশি নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার দায়সারা কিছু কথাবার্তা বলছে। এগুলো সব ভাঁওতাবাজি। বিএনপি এবার সরকারের ফাঁদে পা দেবে না।
গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে গতকাল গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) একটা মুনাফেক দল এবং তারা এ কথাটা বলতেই থাকে। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে, দেখলে মনে হয় যে, এদের মতো ভালো মানুষ আর নাই। আর ভেতরে ভেতরে যা করার তা করে যাবে। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের মতো কথা বলে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কথা বলে কোনো দিন, কখনো তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। জনগণের সঙ্গে তারা শুরু থেকেই প্রতারণা করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা প্রতারণা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমি মনে করি, কোনো কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। নির্বাচনে তো আমরা যাবই না শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকেন।’
আগামী নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভিএম তো পরে, ইলেকশনেই তো আমরা যাব না যদি শেখ হাসিনা সরকারে থাকেন।’
বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের আশ্বাসে ভরসা রাখছে না বিএনপি। দলটির কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতারা যা বলেন তার উল্টো করেন। বাস্তবতা হলো, সরকার বিরোধী দলগুলোকে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতে দেয় না, ঈদ-পুনর্মিলনী ও দোয়া মাহফিলে তারা আক্রমণ করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির একটাই চাওয়া আর সেটা হলো সরকারের পদত্যাগ ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন।’
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বৈঠক করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা আগামীকাল (আজ সোমবার) বৈঠক করব। বৈঠকে আলোচনা করে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার ওপর আস্থা রাখতে বলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয় তুলে ধরা হলে তা দেখার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে নির্বাচনের সময় দেখা গেল আমাদের এমপি প্রার্থীসহ সারা দেশে বেশ কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপি প্রার্থীদের নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখেন।’ সে সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ অনেক প্রার্থীকে নিজ নিজ বাড়িতে আটকে রাখা হয় বলে দাবি করেন বুলু।
শেয়ার করুন
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, এবার নির্বাচন সহজ হবে না। বিএনপির নির্বাচনে আসা না আসা নিয়ে করা হচ্ছে নতুন অঙ্ক
রেজাউল করিম লাবলু | ৯ মে, ২০২২ ০০:০০

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনার বিষয়ে আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না দলটি। আওয়ামী লীগের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও গতকাল রবিবার বিএনপির কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, তারা মনে করছেন যে এটা সরকারের ফাঁদ। এতে পা দেবেন না।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থান জানানোর পাশাপাশি তারা ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে যেসব বক্তব্য এসেছে সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটি ভার্চুয়াল সভা করবে। আলোচনা শেষে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।
জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চাই সরকার আগে পদত্যাগ করুক। তারপর নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন হোক।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। বিএনপি জনগণের দল হিসেবে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এজন্য আমরা আন্দোলনে আছি। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার বিএনপি তাই করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যপট নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। সরকার বিদেশি নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার দায়সারা কিছু কথাবার্তা বলছে। এগুলো সব ভাঁওতাবাজি। বিএনপি এবার সরকারের ফাঁদে পা দেবে না।
গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে গতকাল গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) একটা মুনাফেক দল এবং তারা এ কথাটা বলতেই থাকে। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে, দেখলে মনে হয় যে, এদের মতো ভালো মানুষ আর নাই। আর ভেতরে ভেতরে যা করার তা করে যাবে। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের মতো কথা বলে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কথা বলে কোনো দিন, কখনো তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। জনগণের সঙ্গে তারা শুরু থেকেই প্রতারণা করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা প্রতারণা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমি মনে করি, কোনো কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। নির্বাচনে তো আমরা যাবই না শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকেন।’
আগামী নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভিএম তো পরে, ইলেকশনেই তো আমরা যাব না যদি শেখ হাসিনা সরকারে থাকেন।’
বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের আশ্বাসে ভরসা রাখছে না বিএনপি। দলটির কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতারা যা বলেন তার উল্টো করেন। বাস্তবতা হলো, সরকার বিরোধী দলগুলোকে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতে দেয় না, ঈদ-পুনর্মিলনী ও দোয়া মাহফিলে তারা আক্রমণ করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির একটাই চাওয়া আর সেটা হলো সরকারের পদত্যাগ ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন।’
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বৈঠক করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা আগামীকাল (আজ সোমবার) বৈঠক করব। বৈঠকে আলোচনা করে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার ওপর আস্থা রাখতে বলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয় তুলে ধরা হলে তা দেখার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে নির্বাচনের সময় দেখা গেল আমাদের এমপি প্রার্থীসহ সারা দেশে বেশ কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপি প্রার্থীদের নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখেন।’ সে সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ অনেক প্রার্থীকে নিজ নিজ বাড়িতে আটকে রাখা হয় বলে দাবি করেন বুলু।