নাম পদ্মা সেতুই
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০
স্বপ্নের পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী ২৫ জুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন সকাল ১০টায় সেতু উদ্বোধন করবেন। নানা বিতর্ক ও সমালোচনার পর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই থাকছে। গতকাল মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং নামকরণের বিষয়ে সারসংক্ষেপ নিয়ে গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবন যান ওবায়দুল কাদের।
গণভবন থেকে বের হয়ে সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু, সেটা কবে উদ্বোধন হবে জানার আগ্রহ সবার মধ্যে। সেই সুসংবাদ আপনাদের দিচ্ছি। ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা দুটো সামারি নিয়ে এসেছিলাম, একটি সামারি উদ্বোধন, তিনি তারিখ দিয়ে সই করেছেন। আরেকটি সামারি, সেটাতে তিনি স্বাক্ষর করেননি। ওই সামারির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে। এটা আমি অন্য কারও নামে দেব না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারও নামেও হবে না।’সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে, যারা বেশি বিরুদ্ধে বলছে, তাদের আগে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
পদ্মা নদীর বুকে নির্মিত পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করবে। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে পিছিয়ে পড়া ওই ১৯ জেলার মানুষের স্বপ্ন ছিল এই সেতু।
প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য নদীর অংশে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই সেতুর নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার কারণে কাজের গতি কমে আসে। সব বাধা পেরিয়ে গত অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন পদ্মা সেতু চালু হতে পারে বলে একটি আলোচনা ছিল। তবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরে জানিয়ে দেন, জুনেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে, তবে ২৩ জুন নয়।
এই সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ করার দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতর থেকে। এর বাইরেও নানা মহল থেকে পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করার প্রস্তাব আসতে থাকে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চাননি বলে শেষ পর্যন্ত সেতুর নাম পদ্মা সেতুই থাকল।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ধারণা অনুযায়ী, শুরুর দিকে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। এখন যেসব যাত্রী বা পণ্যবাহী গাড়ি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়, সেসব যানবাহন সেতু দিয়ে পদ্মা পার হবে। তাতে আর ফেরি পার হতে হবে না, যাত্রার সময় কমে আসবে।
ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু পার হতে যানবাহনের টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা আর পিকআপের জন্য ১২০০ টাকা দিতে হবে। মাইক্রোবাসে লাগবে ১৩০০ টাকা। বাসের জন্য আসন ভেদে ১৪০০ টাকা, ২০০০ টাকা ও ২৪০০ টাকা দিতে হবে। পণ্যবাহী বাহনের ক্ষেত্রে ছোট ট্রাক ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাক ৫৫০০ টাকা এবং ট্রেইলার পার হতে ৬০০০ টাকা দিতে হবে। ৪ এক্সেলের বেশি হলে ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলে বাড়তি ১৫০০ টাকা দিতে হবে টোল বাবদ।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০

স্বপ্নের পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী ২৫ জুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন সকাল ১০টায় সেতু উদ্বোধন করবেন। নানা বিতর্ক ও সমালোচনার পর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই থাকছে। গতকাল মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং নামকরণের বিষয়ে সারসংক্ষেপ নিয়ে গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবন যান ওবায়দুল কাদের।
গণভবন থেকে বের হয়ে সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু, সেটা কবে উদ্বোধন হবে জানার আগ্রহ সবার মধ্যে। সেই সুসংবাদ আপনাদের দিচ্ছি। ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা দুটো সামারি নিয়ে এসেছিলাম, একটি সামারি উদ্বোধন, তিনি তারিখ দিয়ে সই করেছেন। আরেকটি সামারি, সেটাতে তিনি স্বাক্ষর করেননি। ওই সামারির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে। এটা আমি অন্য কারও নামে দেব না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারও নামেও হবে না।’সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে, যারা বেশি বিরুদ্ধে বলছে, তাদের আগে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
পদ্মা নদীর বুকে নির্মিত পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করবে। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে পিছিয়ে পড়া ওই ১৯ জেলার মানুষের স্বপ্ন ছিল এই সেতু।
প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য নদীর অংশে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই সেতুর নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার কারণে কাজের গতি কমে আসে। সব বাধা পেরিয়ে গত অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন পদ্মা সেতু চালু হতে পারে বলে একটি আলোচনা ছিল। তবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরে জানিয়ে দেন, জুনেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে, তবে ২৩ জুন নয়।
এই সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ করার দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতর থেকে। এর বাইরেও নানা মহল থেকে পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করার প্রস্তাব আসতে থাকে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চাননি বলে শেষ পর্যন্ত সেতুর নাম পদ্মা সেতুই থাকল।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ধারণা অনুযায়ী, শুরুর দিকে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। এখন যেসব যাত্রী বা পণ্যবাহী গাড়ি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়, সেসব যানবাহন সেতু দিয়ে পদ্মা পার হবে। তাতে আর ফেরি পার হতে হবে না, যাত্রার সময় কমে আসবে।
ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু পার হতে যানবাহনের টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা আর পিকআপের জন্য ১২০০ টাকা দিতে হবে। মাইক্রোবাসে লাগবে ১৩০০ টাকা। বাসের জন্য আসন ভেদে ১৪০০ টাকা, ২০০০ টাকা ও ২৪০০ টাকা দিতে হবে। পণ্যবাহী বাহনের ক্ষেত্রে ছোট ট্রাক ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাক ৫৫০০ টাকা এবং ট্রেইলার পার হতে ৬০০০ টাকা দিতে হবে। ৪ এক্সেলের বেশি হলে ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলে বাড়তি ১৫০০ টাকা দিতে হবে টোল বাবদ।