নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে বিদেশিদের
উম্মুল ওয়ারা সুইটি | ২৬ মে, ২০২২ ০০:০০
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ বাড়ছে। বরাবরের মতো এবারও তারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের অবস্থান নিয়ে আলোচনায় সরব হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র কথা বলতে শুরু করেছে। তারা জানতে চায়, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে কী না। একই সঙ্গে সংসদের বাইরে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে বিদেশিদের চাপ ও আগ্রহ ততই বাড়বে। এরই মধ্যে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ। পাশাপাশি বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে ইউরোপের ২৭টি দেশ নিয়ে গড়ে উঠা এই জোটটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানতে চায় বিএনপি বা সব দলকে নির্বাচনে আনতে সরকারের উদ্যোগ কী? যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে কথা বলছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা সংলাপেও এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৌশলী জবাব দিয়ে বলেছেন, “আপনারা চেষ্টা করুন”।’
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমেই নির্বাচনকে ঘিরে সরকারকে এক ধরনের চাপে ফেলার কাজ শুরু করেছে।
গত শুক্রবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ কমিশনের দশম বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ইইউর বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পোলোনি।
এরপর ইইউর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বলেছে, সরকার সংবিধানে বর্ণিত সবার মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও ঘুরেফিরে আগামী নির্বাচনের বিষয়টি উঠে আসছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে তার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসে এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইট ইভান্সের সঙ্গে তার ক্যাপিটল হিলের লংওয়ার্থ অফিসে বৈঠককালেও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন ও বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন বলেন, ‘আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের মনোভাবতো অবশ্যই তুলে ধরছি। আর যুক্তরাষ্ট্রে আমাকে মিসকোড করা হয়েছে। আমরা বলেছি, আমরা চাই সব দল নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কোনো কোনো দল নিজেরাই জনগণের সাথে বিচ্ছিন্ন, তাই আসতে চায় না। সেই রকম একটা আলোচনার এক পর্যায়ে আমি বলেছি, আপনারা চেষ্টা করে দেখেন।’
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি উর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, কোনো কোনো মহলের আগ্রহ ততই বাড়বে। সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চায় বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। আমাদের সরকারও পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সংসদীয় প্রতিনিধিদল সফর করছে। দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিধিদল আলোচনা করছে। ইইউ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেটিও আমরা দেখছি। কেন কোন কারণে পক্ষগুলো সক্রিয় হচ্ছে সেটি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে।’
শেয়ার করুন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি | ২৬ মে, ২০২২ ০০:০০

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ বাড়ছে। বরাবরের মতো এবারও তারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের অবস্থান নিয়ে আলোচনায় সরব হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র কথা বলতে শুরু করেছে। তারা জানতে চায়, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে কী না। একই সঙ্গে সংসদের বাইরে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে বিদেশিদের চাপ ও আগ্রহ ততই বাড়বে। এরই মধ্যে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ। পাশাপাশি বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে ইউরোপের ২৭টি দেশ নিয়ে গড়ে উঠা এই জোটটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানতে চায় বিএনপি বা সব দলকে নির্বাচনে আনতে সরকারের উদ্যোগ কী? যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে কথা বলছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা সংলাপেও এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৌশলী জবাব দিয়ে বলেছেন, “আপনারা চেষ্টা করুন”।’
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমেই নির্বাচনকে ঘিরে সরকারকে এক ধরনের চাপে ফেলার কাজ শুরু করেছে।
গত শুক্রবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ কমিশনের দশম বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ইইউর বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পোলোনি।
এরপর ইইউর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বলেছে, সরকার সংবিধানে বর্ণিত সবার মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও ঘুরেফিরে আগামী নির্বাচনের বিষয়টি উঠে আসছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে তার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসে এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইট ইভান্সের সঙ্গে তার ক্যাপিটল হিলের লংওয়ার্থ অফিসে বৈঠককালেও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন ও বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন বলেন, ‘আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের মনোভাবতো অবশ্যই তুলে ধরছি। আর যুক্তরাষ্ট্রে আমাকে মিসকোড করা হয়েছে। আমরা বলেছি, আমরা চাই সব দল নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কোনো কোনো দল নিজেরাই জনগণের সাথে বিচ্ছিন্ন, তাই আসতে চায় না। সেই রকম একটা আলোচনার এক পর্যায়ে আমি বলেছি, আপনারা চেষ্টা করে দেখেন।’
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি উর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, কোনো কোনো মহলের আগ্রহ ততই বাড়বে। সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চায় বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। আমাদের সরকারও পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সংসদীয় প্রতিনিধিদল সফর করছে। দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিধিদল আলোচনা করছে। ইইউ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেটিও আমরা দেখছি। কেন কোন কারণে পক্ষগুলো সক্রিয় হচ্ছে সেটি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে।’