ইভিএমে আস্থা চায় সরকার
পাভেল হায়দার চৌধুরী | ২৮ মে, ২০২২ ০০:০০
সরকারি দল আওয়ামী লীগ চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হোক। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে বড় বিরোধী দল বিএনপি ও এর মিত্ররা ইভিএমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবশ্য তারা বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না তারা। ইভিএম তো পরের কথা। এ ছাড়া বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ইভিএম বিতর্ক দূর করতে চায়। ভোটাররা যাতে এই যন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হয় সে জন্য সরকার, আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে কাজ করবে।
গত ৭ মে সরকারি দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ইভিএমেই হবে। তারপর থেকে বিএনপির ইভিএম-বিরোধী অবস্থান আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। আবার রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি না হওয়ায় ইভিএম প্রশ্নে নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছে।
বিএনপি ও তার মিত্রসহ সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি দল ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করছে। বিএনপি ইভিএমকে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র’ হিসেবেই দেখে আসছে। তারা বলছে, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এটা করা যায় যে, ভোটার যে প্রতীকেই ভোট দিক না কেন, নির্দিষ্ট প্রতীকেই ভোট পড়বে। কোন প্রতীকে ভোট পড়েছে তার কোনো কাগজের প্রমাণও থাকে না। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমূর আলম খন্দকার (স্বতন্ত্র প্রার্থী) অভিযোগ করেছিলেন, ইভিএম কারসাজিতে তিনি হেরেছেন।
নবনিযুক্ত কমিশনের অধীনে আগামী ১৫ জুন প্রথম নির্বাচন হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। ওই নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
এখনো অবশ্য জাতীয় নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম ব্যবহার নিয়ে খোলাসা করে কোনো কথা বলছে না নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক ইভিএম মেশিন কমিশনের কাছে যে নেই সেটা পরিষ্কারভাবে জানা গেছে। তবে কমিশনের ঝোঁক ইভিএমের দিকেই বেশি এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাদের কর্মকান্ডে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইভিএমে অনাস্থা দূর করতে কমিশন এরই মধ্যে কাজে নেমে পড়েছে। গত বুধবার একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেছে সংস্থাটি। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ, নির্বাচন কমিশনের ইভিএম সংশ্লিষ্ট সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভা শেষে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেছেন, এটা অত্যন্ত চমৎকার মেশিন। এখানে ম্যানিপুলেশন (কারচুপি) করার জায়গা নেই। তবে একটি মেশিনকে কখনোই শতভাগ বিশ্বাস করা উচিত হবে না।
ইভিএমের সবদিক বিশ্লেষণ করে মতবিনিময় সভা শেষে জাফর ইকবাল আরও বলেন, তাদের জন্য রাখা মেশিন খুলে দেখেছেন। ভেতরের খুঁটিনাটি, কারিগরি বিষয় যা আছে, তাও জেনেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে যন্ত্রটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোকেও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেওয়ার অনুরোধ রাখেন এই লেখক ও শিক্ষাবিদ।
প্রযুক্তিবিদদের ওই মতের ওপর আস্থা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
জানা গেছে, ইভিএম নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহল, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে তা দূর করবে কমিশন। এর পরেই আগামী নির্বাচন ইভিএমেই হবে এমন ঘোষণা দিতে চায় সিইসি আউয়াল। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইভিএম নিয়ে দেশের প্রযুক্তিবিদ ও বিভিন্ন পেশার সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আরও বৈঠক করবে। মূলত ইভিএমেই ভোট হবে, তা চূড়ান্ত করার আগে এই নিয়ে বিতর্ক দূর করতে চায় কমিশন। বড় ধরনের সমালোচনা এড়াতেই এই কৌশলে হাঁটছে আউয়াল কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরামর্শে ইভিএমের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতেও আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন কাজ করবে।
কমিশন বলছে, বিরোধী দল থেকে আসা অভিযোগ ছাড়া ইভিএম নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস বা বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে না কমিশন। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই কমিশন নিজেরা কিছু বৈঠক করেছে। আরও করবে। যাদের কাছ থেকে জানা প্রয়োজন আরও জানবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে একটা দ্বিমত রয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে বসছি মূলত ইভিএম সম্পর্কে বুঝতে। প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বসেছি। তারা এটা বুঝেছেন। আমরাও বুঝেছি। ওনারা কনভিন্সড। আমরাও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসব। আমরা নিজেরাও প্রযুক্তিটি সম্পর্কে আরও বুঝতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘যন্ত্রটির ত্রুটি-বিচ্যুতি কী আছে। সুবিধা কী, অসুবিধা কী এ সম্পর্কে আমাদের বোঝাতে কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বসতে চাইলে তাদের সঙ্গেও আমরা বসব।’
এই ধারাবাহিক বৈঠক ইভিএমের প্রতি আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ কি-না জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘না। ইভিএম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার উদ্যোগ ছাড়া আর কিছুই না।’
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইভিএম নিয়ে বিএনপি মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। ইভিএমে ভোট জালিয়াতির সুযোগ থাকে বলে যে প্রচারণায় বিএনপি নেমেছে তা দূর করতে সরকারের কিছু মন্ত্রণালয়ও কাজ করবে। কিছু সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা হবে। ইভিএম মূলত কী তা তুলে ধরে মানুষকে যন্ত্রটি সম্পর্কে বোঝানো হবে। ইভিএমে আস্থা আনতে জাতীয় নির্বাচনের আগে সকল স্থানীয় নির্বাচন ইভিএমই হবে। সেসব নির্বাচনের পরিবেশ ও ফল সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরবেন। এরমধ্য দিয়ে কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে সরকারের।
ওই দুই মন্ত্রী আরও বলেন, ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কারচুপির সুযোগ নেই সেটাই বোঝানো হবে মানুষকে।
আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে ইভিএম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দেবে। যৌক্তিক দিক তুলে ধরে ইভিএম নিয়ে যে মিথ্যাচার চলছে সেদিক থেকে জনগণকে সচেতন করে তুলবে। আগামী নির্বাচনের আগে যেসব স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেসব নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সে নির্বাচনগুলোতে জয়-পরাজয়ের কোনো হিসাব না করে ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই, তা স্পষ্ট করবে ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি ইভিএমে ভোটের ফল ও ভোটগ্রহণ দ্রুত সম্ভব হয় এই প্রচারণাও চালাবে আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইভিএমে ভোট কারচুপির কথা বলে বিএনপি মানুষকে ধোঁকা দিতে চায়। আমরা মানুষকে বোঝাতে চাই বৈজ্ঞানিক এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বিজ্ঞানের যুগকে অস্বীকার করতে চায়। পৃথিবীতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা চাইলেই কী থামানো যাবে?’
শেয়ার করুন
পাভেল হায়দার চৌধুরী | ২৮ মে, ২০২২ ০০:০০

সরকারি দল আওয়ামী লীগ চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হোক। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে বড় বিরোধী দল বিএনপি ও এর মিত্ররা ইভিএমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবশ্য তারা বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না তারা। ইভিএম তো পরের কথা। এ ছাড়া বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ইভিএম বিতর্ক দূর করতে চায়। ভোটাররা যাতে এই যন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হয় সে জন্য সরকার, আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে কাজ করবে।
গত ৭ মে সরকারি দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ইভিএমেই হবে। তারপর থেকে বিএনপির ইভিএম-বিরোধী অবস্থান আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। আবার রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি না হওয়ায় ইভিএম প্রশ্নে নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছে।
বিএনপি ও তার মিত্রসহ সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি দল ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করছে। বিএনপি ইভিএমকে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র’ হিসেবেই দেখে আসছে। তারা বলছে, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এটা করা যায় যে, ভোটার যে প্রতীকেই ভোট দিক না কেন, নির্দিষ্ট প্রতীকেই ভোট পড়বে। কোন প্রতীকে ভোট পড়েছে তার কোনো কাগজের প্রমাণও থাকে না। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমূর আলম খন্দকার (স্বতন্ত্র প্রার্থী) অভিযোগ করেছিলেন, ইভিএম কারসাজিতে তিনি হেরেছেন।
নবনিযুক্ত কমিশনের অধীনে আগামী ১৫ জুন প্রথম নির্বাচন হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। ওই নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
এখনো অবশ্য জাতীয় নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম ব্যবহার নিয়ে খোলাসা করে কোনো কথা বলছে না নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক ইভিএম মেশিন কমিশনের কাছে যে নেই সেটা পরিষ্কারভাবে জানা গেছে। তবে কমিশনের ঝোঁক ইভিএমের দিকেই বেশি এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাদের কর্মকান্ডে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইভিএমে অনাস্থা দূর করতে কমিশন এরই মধ্যে কাজে নেমে পড়েছে। গত বুধবার একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেছে সংস্থাটি। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ, নির্বাচন কমিশনের ইভিএম সংশ্লিষ্ট সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভা শেষে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেছেন, এটা অত্যন্ত চমৎকার মেশিন। এখানে ম্যানিপুলেশন (কারচুপি) করার জায়গা নেই। তবে একটি মেশিনকে কখনোই শতভাগ বিশ্বাস করা উচিত হবে না।
ইভিএমের সবদিক বিশ্লেষণ করে মতবিনিময় সভা শেষে জাফর ইকবাল আরও বলেন, তাদের জন্য রাখা মেশিন খুলে দেখেছেন। ভেতরের খুঁটিনাটি, কারিগরি বিষয় যা আছে, তাও জেনেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে যন্ত্রটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোকেও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেওয়ার অনুরোধ রাখেন এই লেখক ও শিক্ষাবিদ।
প্রযুক্তিবিদদের ওই মতের ওপর আস্থা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
জানা গেছে, ইভিএম নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহল, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে তা দূর করবে কমিশন। এর পরেই আগামী নির্বাচন ইভিএমেই হবে এমন ঘোষণা দিতে চায় সিইসি আউয়াল। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইভিএম নিয়ে দেশের প্রযুক্তিবিদ ও বিভিন্ন পেশার সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আরও বৈঠক করবে। মূলত ইভিএমেই ভোট হবে, তা চূড়ান্ত করার আগে এই নিয়ে বিতর্ক দূর করতে চায় কমিশন। বড় ধরনের সমালোচনা এড়াতেই এই কৌশলে হাঁটছে আউয়াল কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরামর্শে ইভিএমের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতেও আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন কাজ করবে।
কমিশন বলছে, বিরোধী দল থেকে আসা অভিযোগ ছাড়া ইভিএম নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস বা বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে না কমিশন। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই কমিশন নিজেরা কিছু বৈঠক করেছে। আরও করবে। যাদের কাছ থেকে জানা প্রয়োজন আরও জানবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে একটা দ্বিমত রয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে বসছি মূলত ইভিএম সম্পর্কে বুঝতে। প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বসেছি। তারা এটা বুঝেছেন। আমরাও বুঝেছি। ওনারা কনভিন্সড। আমরাও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসব। আমরা নিজেরাও প্রযুক্তিটি সম্পর্কে আরও বুঝতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘যন্ত্রটির ত্রুটি-বিচ্যুতি কী আছে। সুবিধা কী, অসুবিধা কী এ সম্পর্কে আমাদের বোঝাতে কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বসতে চাইলে তাদের সঙ্গেও আমরা বসব।’
এই ধারাবাহিক বৈঠক ইভিএমের প্রতি আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ কি-না জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘না। ইভিএম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার উদ্যোগ ছাড়া আর কিছুই না।’
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইভিএম নিয়ে বিএনপি মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। ইভিএমে ভোট জালিয়াতির সুযোগ থাকে বলে যে প্রচারণায় বিএনপি নেমেছে তা দূর করতে সরকারের কিছু মন্ত্রণালয়ও কাজ করবে। কিছু সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা হবে। ইভিএম মূলত কী তা তুলে ধরে মানুষকে যন্ত্রটি সম্পর্কে বোঝানো হবে। ইভিএমে আস্থা আনতে জাতীয় নির্বাচনের আগে সকল স্থানীয় নির্বাচন ইভিএমই হবে। সেসব নির্বাচনের পরিবেশ ও ফল সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরবেন। এরমধ্য দিয়ে কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে সরকারের।
ওই দুই মন্ত্রী আরও বলেন, ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কারচুপির সুযোগ নেই সেটাই বোঝানো হবে মানুষকে।
আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে ইভিএম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দেবে। যৌক্তিক দিক তুলে ধরে ইভিএম নিয়ে যে মিথ্যাচার চলছে সেদিক থেকে জনগণকে সচেতন করে তুলবে। আগামী নির্বাচনের আগে যেসব স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেসব নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সে নির্বাচনগুলোতে জয়-পরাজয়ের কোনো হিসাব না করে ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই, তা স্পষ্ট করবে ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি ইভিএমে ভোটের ফল ও ভোটগ্রহণ দ্রুত সম্ভব হয় এই প্রচারণাও চালাবে আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইভিএমে ভোট কারচুপির কথা বলে বিএনপি মানুষকে ধোঁকা দিতে চায়। আমরা মানুষকে বোঝাতে চাই বৈজ্ঞানিক এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বিজ্ঞানের যুগকে অস্বীকার করতে চায়। পৃথিবীতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা চাইলেই কী থামানো যাবে?’